স্ট্রিটফুডে যত বিপত্তি

রাজধানীর ফুটপাতে খোলামেলা জায়গায় বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার খেলে পেটের নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। গরমে তৈলাক্ত ও বেশি ঝালযুক্ত খাবার পরিমিত খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ খাবারগুলো পোকা-মাকড় ধুলাবালি মাছি দ্বারা দূষিত। রাস্তার পাশে প্রায় সব দোকানের খাবার খোলা আকাশের নিচে উন্মুক্ত অবস্থায় তৈরি, বিক্রি ও সাজিয়ে রাখা হয়।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ঝালমুড়ি খাওয়া ক্ষতিকর কিছু না, যদি মুড়িটা প্যাকেটে রাখা যায়। তাইলে মুড়িটা খাওয়া যাবে। ফুটপাতের চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই যদি গরম গরম খাওয়া যায় আর পোড়া তেলে ভাজা না হয় তাহলে খাওয়া যাবে। এর ফলে স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা কম থাকে। শরবতের ক্ষেত্রে পানিটা ভালো হতে হবে।’

সরেজমিন ফুটপাতে বা রাস্তার মোড়ে খোলা জায়গায় বিভিন্ন পদের মুখরোচক খাবার বিক্রি করতে দেখা গেছে। আলুর চপ ও ছোলা নিয়ে লালন নামে এক বিক্রেতা বলেন, ‘আমার যতটুকু সম্ভব ঢেকে রেখে বেচাকেনা করি। আর আমার দোকান চারধারে গ্লাস দিয়ে ঢাকা আছে। তারপরও ধুলাবালি ঢুকলে আমার কিছু করার নাই।’ এভাবেই কথাগুলো বলেছেন এ বিক্রেতা। তিনি আরও জানান, তার সারাদিন হাজার টাকার মতো বেচাকেনা হয়। গেন্ডারিয়া এলাকায় এক বস্তিতে স্ত্রী ও এক মেয়ে নিয়ে কোনরকম জীবন বাঁচে। তার একমাত্র আয় এখান থেকে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিনের খাবার প্রতিদিনই বিক্রি করি। আমরা গরিব মানুষ ছোট ব্যবস্যা করে কোনরকম মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় এই শহরে। তাই একটু স্বাস্থসম্মতভাবে ভালো খাবার বিক্রি করার চেষ্টা করি।’

কামাল নামে এক বিক্রেতা বলেন, ‘ভাই আমরা ছোট দোকানদার, ফুটপাতে ট্যাক্স দিয়ে কোনরকম খাবার বিক্রি করে সংসার চালাই। হোটেলে গিয়ে দেখেন, পোড়া তেল দিয়ে সারাদিন পার করে দেয়। আমার কথা লিখে লাভ নাই, আমরা তো ছোট দোকানদারি করি।’

আতাউর রহমান গুলিস্তান এলাকায় ১০ বছর ধরে চিকেন রোলসহ বিভিন্ন মুখরোচক খাবার উন্মুক্ত স্থানে বিক্রি করেন। তার খাবার খেয়ে কেউ অসুস্থ হয়েছে এমন কোন রেকর্ড নেই বলে দাবি তার।

তিনি বলেন, ‘আমার কম দামের খাবার খেয়ে হাসপাতালে থাকতে হয় না। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেন, বড় বড় হোটেলে পোড়া তেলের খাবার খেয়ে কয়জন অসুস্থ হয়।’

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) করা ২০১০ সালের এক গবেষণায় উঠে আসে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার রাস্তার পাশের এসব খাবার পরিবেশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ২৫ ভাগ মানুষই অশিক্ষিত, যাদের নেই কোন একাডেমিক যোগ্যতা।

আরও বলা হয়েছে, এদের অধিকাংশই দিনে ১৩ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজে নিয়োজিত থাকেন টয়লেট সুবিধা ছাড়াই। এই দোকানগুলোর ৬৮ ভাগ দোকান ফুটপাতে অবস্থিত। আর ৩০ ভাগ দোকান ড্রেনের কাছাকাছি অবস্থিত।

সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২৮ ভাদ্র ১৪২৯ ১৫ সফর ১৪৪৪

স্ট্রিটফুডে যত বিপত্তি

মো. ওসমান গনি

image

রাজধানীর ফুটপাতে খোলামেলা জায়গায় বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার খেলে পেটের নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। গরমে তৈলাক্ত ও বেশি ঝালযুক্ত খাবার পরিমিত খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ খাবারগুলো পোকা-মাকড় ধুলাবালি মাছি দ্বারা দূষিত। রাস্তার পাশে প্রায় সব দোকানের খাবার খোলা আকাশের নিচে উন্মুক্ত অবস্থায় তৈরি, বিক্রি ও সাজিয়ে রাখা হয়।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ঝালমুড়ি খাওয়া ক্ষতিকর কিছু না, যদি মুড়িটা প্যাকেটে রাখা যায়। তাইলে মুড়িটা খাওয়া যাবে। ফুটপাতের চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই যদি গরম গরম খাওয়া যায় আর পোড়া তেলে ভাজা না হয় তাহলে খাওয়া যাবে। এর ফলে স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা কম থাকে। শরবতের ক্ষেত্রে পানিটা ভালো হতে হবে।’

সরেজমিন ফুটপাতে বা রাস্তার মোড়ে খোলা জায়গায় বিভিন্ন পদের মুখরোচক খাবার বিক্রি করতে দেখা গেছে। আলুর চপ ও ছোলা নিয়ে লালন নামে এক বিক্রেতা বলেন, ‘আমার যতটুকু সম্ভব ঢেকে রেখে বেচাকেনা করি। আর আমার দোকান চারধারে গ্লাস দিয়ে ঢাকা আছে। তারপরও ধুলাবালি ঢুকলে আমার কিছু করার নাই।’ এভাবেই কথাগুলো বলেছেন এ বিক্রেতা। তিনি আরও জানান, তার সারাদিন হাজার টাকার মতো বেচাকেনা হয়। গেন্ডারিয়া এলাকায় এক বস্তিতে স্ত্রী ও এক মেয়ে নিয়ে কোনরকম জীবন বাঁচে। তার একমাত্র আয় এখান থেকে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিনের খাবার প্রতিদিনই বিক্রি করি। আমরা গরিব মানুষ ছোট ব্যবস্যা করে কোনরকম মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় এই শহরে। তাই একটু স্বাস্থসম্মতভাবে ভালো খাবার বিক্রি করার চেষ্টা করি।’

কামাল নামে এক বিক্রেতা বলেন, ‘ভাই আমরা ছোট দোকানদার, ফুটপাতে ট্যাক্স দিয়ে কোনরকম খাবার বিক্রি করে সংসার চালাই। হোটেলে গিয়ে দেখেন, পোড়া তেল দিয়ে সারাদিন পার করে দেয়। আমার কথা লিখে লাভ নাই, আমরা তো ছোট দোকানদারি করি।’

আতাউর রহমান গুলিস্তান এলাকায় ১০ বছর ধরে চিকেন রোলসহ বিভিন্ন মুখরোচক খাবার উন্মুক্ত স্থানে বিক্রি করেন। তার খাবার খেয়ে কেউ অসুস্থ হয়েছে এমন কোন রেকর্ড নেই বলে দাবি তার।

তিনি বলেন, ‘আমার কম দামের খাবার খেয়ে হাসপাতালে থাকতে হয় না। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেন, বড় বড় হোটেলে পোড়া তেলের খাবার খেয়ে কয়জন অসুস্থ হয়।’

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) করা ২০১০ সালের এক গবেষণায় উঠে আসে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার রাস্তার পাশের এসব খাবার পরিবেশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ২৫ ভাগ মানুষই অশিক্ষিত, যাদের নেই কোন একাডেমিক যোগ্যতা।

আরও বলা হয়েছে, এদের অধিকাংশই দিনে ১৩ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজে নিয়োজিত থাকেন টয়লেট সুবিধা ছাড়াই। এই দোকানগুলোর ৬৮ ভাগ দোকান ফুটপাতে অবস্থিত। আর ৩০ ভাগ দোকান ড্রেনের কাছাকাছি অবস্থিত।