সব পদ হারালেন পঙ্কজ দেবনাথ, এলাকায় মিষ্টি বিতরণ

বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ। টানা ১৬ বছর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ আঁকড়ে ছিলেন। ক্যাসিনোকা-ে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ২০১৯ সালে পঙ্কজ দেবনাথকে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল।

এর প্রায় তিন বছর পর এবার দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আওয়ামী লীগের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো তাকে। দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিষয়টি জানা জানি হলে, পঙ্গজ দেবনাথের নির্বাচনী এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেন তার প্রতিপক্ষের লোকজন।

ক্ষমতাসীন দলের দু’বারের সংসদ সদস্য পঙ্কজ আওয়ামী লীগের বরিশাল জেলা শাখার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। তার বিরুদ্ধে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উপর হামলা, নির্যাতন এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থন দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় অনেকের অভিযোগ, বরিশাল, ঢাকার পাশাপাশি ভারতেও তার প্রচুর (আয়-বহির্ভূত) সম্পদ রয়েছে। একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করে তার অবৈধ সম্পদের চিত্র তুলে ধরেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশ।

তবে পঙ্কজ দেবনাথের অনুসারিদের দাবি, এসব কিছুই প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র। তাদের নেতা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন।

জানা গেছে, দলীয় সব ধরনের পদ থেকে পঙ্কজ দেবনাথের অব্যাহতি সংক্রান্ত ওই চিঠি গতকাল দুপুরে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুসের কাছে পৌঁছায়।

এ বিষয়ে তালুকদার মো. ইউনুস গণমাধ্যমকে বলেন, সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথকে দলীয় সব পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার একটি চিঠি তারা গতকাল পেয়েছেন।

চিঠিতে বলা হয়, ‘সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অর্পিত ক্ষমতাবলে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আপনাকে আওয়ামী লীগের বরিশাল জেলা শাখার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদসহ অন্য পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ। উপরিউক্ত বিষয়ে আপনার লিখিত জবাব আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তর বিভাগে জমা দেয়ার জন্য সাংগঠনিক নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।’

চিঠি প্রসঙ্গে পঙ্কজ দেবনাথ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পেয়েছি। এ বিষয়ে এই মুহূর্তে বেশি কিছু বলার নেই।’

চিঠি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা সংবাদকে বলেন, ‘লিখিত জবাব সন্তোষজনক না হলে তিনি (পঙ্কজ) স্থায়ীভাবে দলীয় পদ হারাবেন। এর আগেও একাধিকবার তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। যতদূর জানতে পেরেছি, এবার তার আর পদে ফেরার সম্ভাবনা নেই।’

জানা গেছে, পঙ্কজ দেবনাথকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া সুপারিশ করে সম্প্রতি বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে চিঠি পাঠায়। কেন্দ্রীয় কমিটি ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে জেলা কমিটির উপদেষ্টা পদ থেকে পঙ্কজ দেবনাথকে অপসারণ করে।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক অ্যাড. মুনসুর আহমেদের অভিযোগ, ‘এমপি (সংসদ সদস্য) পঙ্কজ দেবনাথের নির্দেশে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী হত্যার শিকার হয়েছেন। পঙ্গু হয়েছেন অসংখ্য নেতাকর্মী। তিনি (পঙ্কজ) স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড় করিয়ে তাদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার চালান।’ ‘পঙ্কজ অনেক আগেই আওয়ামী লীগে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন’, বলেন অ্যাড. মুনসুর।

পঙ্কজ দেবনাথের আস্থাভাজন মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম ভুলু বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে এমপিকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে বলে শুনেছেন। তারাও সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাচ্ছেন না। ভুলুর দাবি, এমপি পঙ্কজ ষড়যন্ত্রের শিকার।’

২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তার নির্বাচনী এলাকার আওয়ামী লীগের একাংশ সংবাদ সম্মেলন করে পঙ্কজ দেবনাথের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং ক্যাডার দিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ করেছিল। তার বিরুদ্ধে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ-হিজলা এলাকায় স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থন দেয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সর্বশেষ মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মনসুর রহমান সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, পঙ্কজ দেবনাথ বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন। নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী হয়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের দ্বন্দ্ব চলছে। এ নিয়ে প্রায়ই পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এর জেরে গত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের সময় কয়েকটি খুনের ঘটনাও ঘটে। দুই পক্ষের মধ্যে এক পক্ষে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মইদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র কামাল খান। পক্ষটি জেলা আওয়ামী লীগের সমর্থনপুষ্ট। অপরপক্ষে আছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ।

সূত্র জানায়, সর্বশেষ ২৮ আগস্ট মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিবদমান একটি পক্ষ আরেক পক্ষকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢুকে মারধর ও কুপিয়ে জখম করে। এ সময় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ছয় নেতাকর্মীকে কুপিয়ে আহত করা হয়। আহত নেতা-কর্মীদের মধ্যে চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে পাঠানো হয়েছিল। আহত নেতাকর্মীরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী। অন্যদিকে ঘটনার অভিযুক্ত ব্যক্তিরা সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের অনুসারী।

পঙ্কজ দেবনাথের বিরোধী গ্রুপের মন্তব্য এখানে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেই বিপদ। কারণ, এখানে রয়েছে ‘পঙ্কজ লীগ’। এই লীগের অনুসারি না হলেই এমপির (সংসদ সদস্য) টার্গেট হতে হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই চিঠি গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জে পঙ্কজ দেবনাথ বিরোধী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। বিভিন্ন এলাকায় মিষ্টি বিতরণের খবরও পাওয়া যায়।

এদিকে গত জুলাই মাসে পঙ্কজ দেবনাথের সঙ্গে এক পু?লিশ কর্মকর্তার কল রেকর্ড সামা?জিক যোগা?যোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। যেখানে প্রতিপক্ষের লোকজনকে ‘কোপানোর’ কথা বলেন এই সংসদ সদস্য। তবে বিষয়টি ষড়যন্ত্রমূলক, তার কণ্ঠ নকল করে বানানো বলে দাবি করে পঙ্কজ।

স্থানীয় সূত্র বলছে, গত ৪ জুলাই আওয়ামী লীগকর্মী রাতুল চৌধুরীকে কুপিয়ে জখম করার পর মেহেন্দিগঞ্জে দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি হামলার প্রস্তুতি নেয়।

তবে ভাইরাল হওয়া অডিওটি ‘সত্য’ দাবি করে মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন খান বলেন, ‘পুরো বিষয়টি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের জানিয়েছি। এক প্রান্ত থেকে রামদা দিয়ে কোপানোর নির্দেশদাতা হচ্ছেন এমপি পঙ্কজ দেবনাথ।’

নব্বইয়ের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা পঙ্কজ ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ঢাকায় পরিবহন ব্যবসা শুরু করেন। বিএনপিবিহীন দশম সংসদ নির্বাচনে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৪১৩ ভোট পেয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন পঙ্কজ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) প্রার্থী আঞ্জুমান সালাউদ্দিন পেয়েছিলেন ৫ হাজর ৬২৯ ভোট। ওই নির্বাচনে ভোটার ছিলেন প্রায় পৌনে তিন লাখ। এরপর একাদশ সংসদে দ্বিতীয়বারের মতো আইন প্রণেতা নির্বাচিত হন তিনি।

মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২৯ ভাদ্র ১৪২৯ ১৬ সফর ১৪৪৪

স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে আ’লীগ

সব পদ হারালেন পঙ্কজ দেবনাথ, এলাকায় মিষ্টি বিতরণ

সংবাদ ডেস্ক

বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ। টানা ১৬ বছর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ আঁকড়ে ছিলেন। ক্যাসিনোকা-ে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ২০১৯ সালে পঙ্কজ দেবনাথকে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল।

এর প্রায় তিন বছর পর এবার দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আওয়ামী লীগের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো তাকে। দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিষয়টি জানা জানি হলে, পঙ্গজ দেবনাথের নির্বাচনী এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেন তার প্রতিপক্ষের লোকজন।

ক্ষমতাসীন দলের দু’বারের সংসদ সদস্য পঙ্কজ আওয়ামী লীগের বরিশাল জেলা শাখার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। তার বিরুদ্ধে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উপর হামলা, নির্যাতন এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থন দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় অনেকের অভিযোগ, বরিশাল, ঢাকার পাশাপাশি ভারতেও তার প্রচুর (আয়-বহির্ভূত) সম্পদ রয়েছে। একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করে তার অবৈধ সম্পদের চিত্র তুলে ধরেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশ।

তবে পঙ্কজ দেবনাথের অনুসারিদের দাবি, এসব কিছুই প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র। তাদের নেতা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন।

জানা গেছে, দলীয় সব ধরনের পদ থেকে পঙ্কজ দেবনাথের অব্যাহতি সংক্রান্ত ওই চিঠি গতকাল দুপুরে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুসের কাছে পৌঁছায়।

এ বিষয়ে তালুকদার মো. ইউনুস গণমাধ্যমকে বলেন, সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথকে দলীয় সব পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার একটি চিঠি তারা গতকাল পেয়েছেন।

চিঠিতে বলা হয়, ‘সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অর্পিত ক্ষমতাবলে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আপনাকে আওয়ামী লীগের বরিশাল জেলা শাখার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদসহ অন্য পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ। উপরিউক্ত বিষয়ে আপনার লিখিত জবাব আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তর বিভাগে জমা দেয়ার জন্য সাংগঠনিক নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।’

চিঠি প্রসঙ্গে পঙ্কজ দেবনাথ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পেয়েছি। এ বিষয়ে এই মুহূর্তে বেশি কিছু বলার নেই।’

চিঠি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা সংবাদকে বলেন, ‘লিখিত জবাব সন্তোষজনক না হলে তিনি (পঙ্কজ) স্থায়ীভাবে দলীয় পদ হারাবেন। এর আগেও একাধিকবার তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। যতদূর জানতে পেরেছি, এবার তার আর পদে ফেরার সম্ভাবনা নেই।’

জানা গেছে, পঙ্কজ দেবনাথকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া সুপারিশ করে সম্প্রতি বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে চিঠি পাঠায়। কেন্দ্রীয় কমিটি ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে জেলা কমিটির উপদেষ্টা পদ থেকে পঙ্কজ দেবনাথকে অপসারণ করে।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক অ্যাড. মুনসুর আহমেদের অভিযোগ, ‘এমপি (সংসদ সদস্য) পঙ্কজ দেবনাথের নির্দেশে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী হত্যার শিকার হয়েছেন। পঙ্গু হয়েছেন অসংখ্য নেতাকর্মী। তিনি (পঙ্কজ) স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড় করিয়ে তাদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার চালান।’ ‘পঙ্কজ অনেক আগেই আওয়ামী লীগে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন’, বলেন অ্যাড. মুনসুর।

পঙ্কজ দেবনাথের আস্থাভাজন মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম ভুলু বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে এমপিকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে বলে শুনেছেন। তারাও সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাচ্ছেন না। ভুলুর দাবি, এমপি পঙ্কজ ষড়যন্ত্রের শিকার।’

২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তার নির্বাচনী এলাকার আওয়ামী লীগের একাংশ সংবাদ সম্মেলন করে পঙ্কজ দেবনাথের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং ক্যাডার দিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ করেছিল। তার বিরুদ্ধে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ-হিজলা এলাকায় স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থন দেয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সর্বশেষ মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মনসুর রহমান সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, পঙ্কজ দেবনাথ বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন। নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী হয়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের দ্বন্দ্ব চলছে। এ নিয়ে প্রায়ই পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এর জেরে গত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের সময় কয়েকটি খুনের ঘটনাও ঘটে। দুই পক্ষের মধ্যে এক পক্ষে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মইদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র কামাল খান। পক্ষটি জেলা আওয়ামী লীগের সমর্থনপুষ্ট। অপরপক্ষে আছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ।

সূত্র জানায়, সর্বশেষ ২৮ আগস্ট মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিবদমান একটি পক্ষ আরেক পক্ষকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢুকে মারধর ও কুপিয়ে জখম করে। এ সময় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ছয় নেতাকর্মীকে কুপিয়ে আহত করা হয়। আহত নেতা-কর্মীদের মধ্যে চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে পাঠানো হয়েছিল। আহত নেতাকর্মীরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী। অন্যদিকে ঘটনার অভিযুক্ত ব্যক্তিরা সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের অনুসারী।

পঙ্কজ দেবনাথের বিরোধী গ্রুপের মন্তব্য এখানে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেই বিপদ। কারণ, এখানে রয়েছে ‘পঙ্কজ লীগ’। এই লীগের অনুসারি না হলেই এমপির (সংসদ সদস্য) টার্গেট হতে হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই চিঠি গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জে পঙ্কজ দেবনাথ বিরোধী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। বিভিন্ন এলাকায় মিষ্টি বিতরণের খবরও পাওয়া যায়।

এদিকে গত জুলাই মাসে পঙ্কজ দেবনাথের সঙ্গে এক পু?লিশ কর্মকর্তার কল রেকর্ড সামা?জিক যোগা?যোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। যেখানে প্রতিপক্ষের লোকজনকে ‘কোপানোর’ কথা বলেন এই সংসদ সদস্য। তবে বিষয়টি ষড়যন্ত্রমূলক, তার কণ্ঠ নকল করে বানানো বলে দাবি করে পঙ্কজ।

স্থানীয় সূত্র বলছে, গত ৪ জুলাই আওয়ামী লীগকর্মী রাতুল চৌধুরীকে কুপিয়ে জখম করার পর মেহেন্দিগঞ্জে দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি হামলার প্রস্তুতি নেয়।

তবে ভাইরাল হওয়া অডিওটি ‘সত্য’ দাবি করে মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন খান বলেন, ‘পুরো বিষয়টি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের জানিয়েছি। এক প্রান্ত থেকে রামদা দিয়ে কোপানোর নির্দেশদাতা হচ্ছেন এমপি পঙ্কজ দেবনাথ।’

নব্বইয়ের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা পঙ্কজ ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ঢাকায় পরিবহন ব্যবসা শুরু করেন। বিএনপিবিহীন দশম সংসদ নির্বাচনে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৪১৩ ভোট পেয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন পঙ্কজ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) প্রার্থী আঞ্জুমান সালাউদ্দিন পেয়েছিলেন ৫ হাজর ৬২৯ ভোট। ওই নির্বাচনে ভোটার ছিলেন প্রায় পৌনে তিন লাখ। এরপর একাদশ সংসদে দ্বিতীয়বারের মতো আইন প্রণেতা নির্বাচিত হন তিনি।