যশোরে সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা হাসপাতালে ঠিকাদারদের টেন্ডার ফেলতে দেয়নি

পুলিশের উপস্থিতিতে সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের দাপটে ঠিকাদাররা যশোর জেনারেল হাসপাতালের টেন্ডারে অংশ নিতে পারেননি। ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার এমএসআরের মালামাল সরবরাহের টেন্ডার ছিল এটি।

ঠিকাদার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গতকাল সকালে হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলন ও যুবলীগ নেতা শাহজাহান কবীর শিপলুর নেতৃত্বে ঠিকাদারদের সিডিউল ছিনতাই করে তারা দরপত্র দাখিল করেন। এ সময় পুলিশ উপস্থিত থাকলেও ছিলেন নীরব। বিষয়টি ঠিকাদাররা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন। মাগুরার ঠিকাদার আজিজুল হক জানান, গতকাল ছিল যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের এমএসআর এর দরপত্র জমাদানের শেষ দিন। এদিন মামুন ড্রাগস ও অপরাজিতা ড্রাগসের নামে ১২টি সিডিউল জমা দিতে গেলে পুলিশের উপস্থিতিতে একদল সন্ত্রাসী ১২টি সিডিউল ছিনিয়ে নিয়ে মারধর করে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়। পরে বিষয়টি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে লিখিতভাবে জানিয়েছি। পুলিশের উপস্থিতিতে এভাবে প্রকাশ্যে দরপত্র ছিনতাইয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, শুধু আমি নই, বাইরে থেকে যারা দরপত্র জমা দিতে এসেছিলেন তাদেরকে জোর করে বের করে দেয়া হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত চলে হাসপাতালের দরপত্র দাখিলের কার্যক্রম। এই টেন্ডারের সিডিউল বিক্রি হয় ৬টি গ্রুপে মোট ১৮১টি। কিন্তু সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্য বাধার কারণে দরপত্র দাখিল হয়েছে মাত্র ১৩টি। এরমধ্যে যশোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে দাখিল হয়েছে ৬টি এবং হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ে দাখিল হয়েছে ৭টি। টেন্ডারগুলো খোলার পরে ক গ্রুপে ৩টি, খ গ্রুপে ২টি, গ গ্রুপে ২টি, ঘ গ্রুপে ২টি, ঙ গ্রুপে ২টি, চ গ্রুপে ২টি দরপত্র জমা পড়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।

যশোর শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া সড়কের বাসিন্দা ঠিকাদার হাফিজুর রহমান শিলু ঢাকার প্রতিষ্ঠান মিডফোর্ড এলাকার বনানী মেডিকেল ও গোপীবাগের আলেয়া করপোরেশন নামে দুটি লাইসেন্সে এই কাজে বাধা দিয়েছেন। তাদের প্রতিষ্ঠানের মোট ১৩টি দরপত্র জমা পড়েছে। অন্যদেরকে ফেলতে দেয়নি। সন্ত্রাসী টাক মিলন, শিপলুসহ ক্ষমতাসীন দলের লোকদেরকে দিয়ে তিনি এই দরপত্র বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন বলে ঠিকাদাররা অভিযোগ করেছে। কেননা গত এক যুগ ধরে ঠিকাদার হাফিজুর রহমান শিলু হাসপাতালের সব পথ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার হিসেবে কাজ করে আসছেন। এবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু জটিল শর্ত জুড়ে দেয়ার কারণে তিনি ঢাকার প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহার করেছেন।

এব্যাপারে যশোর আড়ইশ’ শষ্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার আক্তারুজ্জামান জানান, গতকাল ছিল হাসপাতালের পথ্যসামগ্রী সরবরাহের সাড়ে ৮ কোটি টাকার দরপত্র দাখিলের শেষ দিন। আমাদের কাছে সন্ত্রাসীরা বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে। ভিডিও চিত্রেও দেখা গেছে। এজন্য আমরা পুলিশকে আগেই অবহিত করেছিলাম। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতিতে যদি দরপত্র দাখিলে বাধার ঘটনা ঘটে তাহলে আমাদের কি করার আছে। বিষয়টি দরপত্র যাচাই বাছাই কমিটি দেখছে।

অভিযুক্ত জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলন জানান, আমি হাসপাতালে দরপত্র দাখিল করতে গিয়েছিলাম। সেখানে কোন বাধা দেবার ঘটনা ঘটেনি। কোন প্রতিষ্ঠানের নামে দরপত্র জমা দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলতে পারেননি। ঠিকাদার হাফিজুর রহমান শিলু অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, আমিতো সিডিউল সংগ্রহ করিনি। জমা দিব কিভাবে। ঢাকার প্রতিষ্ঠানের নামে জমা দিয়েছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন।

কোতোয়ালি থানার ওসি তাজুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে দরপত্র দাখিলের সময় আমাদের টিম উপস্থিত ছিল। তবে বাধার দেবার ঘটনা ব্যাপারে কেউ আমাদেরকে অভিযোগ করেনি।

মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২৯ ভাদ্র ১৪২৯ ১৬ সফর ১৪৪৪

যশোরে সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা হাসপাতালে ঠিকাদারদের টেন্ডার ফেলতে দেয়নি

যশোর অফিস

পুলিশের উপস্থিতিতে সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের দাপটে ঠিকাদাররা যশোর জেনারেল হাসপাতালের টেন্ডারে অংশ নিতে পারেননি। ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার এমএসআরের মালামাল সরবরাহের টেন্ডার ছিল এটি।

ঠিকাদার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গতকাল সকালে হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলন ও যুবলীগ নেতা শাহজাহান কবীর শিপলুর নেতৃত্বে ঠিকাদারদের সিডিউল ছিনতাই করে তারা দরপত্র দাখিল করেন। এ সময় পুলিশ উপস্থিত থাকলেও ছিলেন নীরব। বিষয়টি ঠিকাদাররা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন। মাগুরার ঠিকাদার আজিজুল হক জানান, গতকাল ছিল যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের এমএসআর এর দরপত্র জমাদানের শেষ দিন। এদিন মামুন ড্রাগস ও অপরাজিতা ড্রাগসের নামে ১২টি সিডিউল জমা দিতে গেলে পুলিশের উপস্থিতিতে একদল সন্ত্রাসী ১২টি সিডিউল ছিনিয়ে নিয়ে মারধর করে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়। পরে বিষয়টি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে লিখিতভাবে জানিয়েছি। পুলিশের উপস্থিতিতে এভাবে প্রকাশ্যে দরপত্র ছিনতাইয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, শুধু আমি নই, বাইরে থেকে যারা দরপত্র জমা দিতে এসেছিলেন তাদেরকে জোর করে বের করে দেয়া হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত চলে হাসপাতালের দরপত্র দাখিলের কার্যক্রম। এই টেন্ডারের সিডিউল বিক্রি হয় ৬টি গ্রুপে মোট ১৮১টি। কিন্তু সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্য বাধার কারণে দরপত্র দাখিল হয়েছে মাত্র ১৩টি। এরমধ্যে যশোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে দাখিল হয়েছে ৬টি এবং হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ে দাখিল হয়েছে ৭টি। টেন্ডারগুলো খোলার পরে ক গ্রুপে ৩টি, খ গ্রুপে ২টি, গ গ্রুপে ২টি, ঘ গ্রুপে ২টি, ঙ গ্রুপে ২টি, চ গ্রুপে ২টি দরপত্র জমা পড়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।

যশোর শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া সড়কের বাসিন্দা ঠিকাদার হাফিজুর রহমান শিলু ঢাকার প্রতিষ্ঠান মিডফোর্ড এলাকার বনানী মেডিকেল ও গোপীবাগের আলেয়া করপোরেশন নামে দুটি লাইসেন্সে এই কাজে বাধা দিয়েছেন। তাদের প্রতিষ্ঠানের মোট ১৩টি দরপত্র জমা পড়েছে। অন্যদেরকে ফেলতে দেয়নি। সন্ত্রাসী টাক মিলন, শিপলুসহ ক্ষমতাসীন দলের লোকদেরকে দিয়ে তিনি এই দরপত্র বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন বলে ঠিকাদাররা অভিযোগ করেছে। কেননা গত এক যুগ ধরে ঠিকাদার হাফিজুর রহমান শিলু হাসপাতালের সব পথ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার হিসেবে কাজ করে আসছেন। এবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু জটিল শর্ত জুড়ে দেয়ার কারণে তিনি ঢাকার প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহার করেছেন।

এব্যাপারে যশোর আড়ইশ’ শষ্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার আক্তারুজ্জামান জানান, গতকাল ছিল হাসপাতালের পথ্যসামগ্রী সরবরাহের সাড়ে ৮ কোটি টাকার দরপত্র দাখিলের শেষ দিন। আমাদের কাছে সন্ত্রাসীরা বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে। ভিডিও চিত্রেও দেখা গেছে। এজন্য আমরা পুলিশকে আগেই অবহিত করেছিলাম। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতিতে যদি দরপত্র দাখিলে বাধার ঘটনা ঘটে তাহলে আমাদের কি করার আছে। বিষয়টি দরপত্র যাচাই বাছাই কমিটি দেখছে।

অভিযুক্ত জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলন জানান, আমি হাসপাতালে দরপত্র দাখিল করতে গিয়েছিলাম। সেখানে কোন বাধা দেবার ঘটনা ঘটেনি। কোন প্রতিষ্ঠানের নামে দরপত্র জমা দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলতে পারেননি। ঠিকাদার হাফিজুর রহমান শিলু অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, আমিতো সিডিউল সংগ্রহ করিনি। জমা দিব কিভাবে। ঢাকার প্রতিষ্ঠানের নামে জমা দিয়েছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন।

কোতোয়ালি থানার ওসি তাজুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে দরপত্র দাখিলের সময় আমাদের টিম উপস্থিত ছিল। তবে বাধার দেবার ঘটনা ব্যাপারে কেউ আমাদেরকে অভিযোগ করেনি।