হংকং-বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে সেমিনার

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং হংকং ট্রেড ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল (এইচকেটিডিসি) যৌথভাবে আয়োজিত ‘হংকং-এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ’ শীর্ষক সেমিনার সম্প্রতি রাজধানীর লেকশোর হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি প্রধান অতিথি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)-এর সচিব শরিফা খান বিশেষ অতিথি হিসেবে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘হংকং, ইতোমধ্যে বাংলাদেশে প্রায় ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ করেছে, যার বেশিরভাগই টেক্সটাইল ও জ¦ালানিখাতে এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনসহ নানাবিধ শুল্ক সুবিধা প্রদান করেছে, যার সুযোগ নিয়ে হংকং-এর উদ্যোক্তাগণ এদেশে আরও বেশি হারে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে।’ বাংলাদেশে হংকং-এর বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং এদেশের উদ্যোক্তাদের হংকং-এ বাণিজ্যিক কর্মকা- সম্প্রসারণে এইচকেটিডিসি-কে কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান ডিসিসিআই সভাপতি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের অভিযাত্রাকে সক্রিয় করতে বিশেষকরে অবকাঠামো, আর্থিক, সেবা, উৎপাদনশীল প্রভৃতি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। আমাদের রয়েছে তরুণ ও দক্ষ শ্রমিক, সেই সঙ্গে বর্তমান সরকার বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত ইতিবাচক, যার ফলে বিদেশি উদ্যোক্তাগণ আত্মবিশ^াসের সঙ্গে এখানে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজার বেশ বড় ও শক্তিশালী, যেটি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে এগিয়ে আসার বিষয়টিকে উদ্বুুদ্ধ করবে। দেশে স্থানীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকে আরও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সরকার প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট আইনের সংস্কার ও নতুন নীতিমালা প্রণয়নে কাজ করে যাচ্ছে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইআরডি সচিব শরিফা খান বলেন, ‘বাংলাদেশ ও হংকং-এর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতি অত্যন্ত বেশি এবং তা কমিয়ে আনতে বেসরকারিখাতের উদ্যোক্তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কার্যক্রম সম্প্রসারণে আরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশের বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ এবং দক্ষ শ্রমিকের পর্যাপ্তকে কাজে লাগিয়ে বিশেষকরে উৎপাদনশীলখাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার জন্য তিনি হংকং-এর উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার দেশের অবকাঠামোখাতের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে বেশকিছু বৃহৎ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছে। প্রয়োজনের নিরিখে আরও নতুন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। এ ধরনের প্রকল্পের অর্থায়ন নিশ্চিতকল্পের হংকং-এর স্বনামধন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিকখাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে। দেশের ব্যবসা সহায়ক পরিবেশের অধিকতর উন্নয়নে বিশেষকরে আমাদের বন্দরসমূহের আধুনিকায়ন, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং লজেস্টিকখাতে পিপিপি’র আওতায় যৌথ বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।’

অনুষ্ঠানে এইচকেটিডিসি’র দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক কনসালটেন্ট রাজেশ ভাগত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, ‘সহজতর কর ও শুল্ক কাঠামো, প্রায় ৭০টি বৈশি^ক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও নামিদামি ব্র্যান্ডের কার্যালয়, বৃহত্তর পুঁজিবাজার, আধুনিক অবকাঠামো ও বন্দর সুবিধার উপস্থিতি হংকং-কে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিগণিত করেছে। হংকং-এর বেশকিছু বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের ১৫০টি প্রকল্পে ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করে, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারী দেশসমূহের মধ্যে হংকং ৮ম স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের তৈরি পোষাক, জাহাজ নির্মাণ, ওষুধ, কৃষি, চামড়া ও পাদুকা, হালকা প্রকৌশল, অটোমোটিভ, ইলেকট্রিকাল ও ইলেকট্রনিক্স, লজিস্টিক অবকাঠামো, আর্থিকখাত, স্বাস্থ্য প্রভৃতি বিদেশি বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়।’

সেমিনারের নির্ধারিত আলোচনায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) জনেন্দ্র নাথ সরকার এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)-এর অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ ইরফান শরীফ অংশগ্রহণ করেন। ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি আরমান হক সেমিনার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

ইনসার্ট: ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, হংকং ইতোমধ্যে বাংলাদেশে প্রায় ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ করেছে, যার বেশিরভাগই টেক্সটাইল ও জ¦ালানিখাতে এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।

বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৩০ ভাদ্র ১৪২৯ ১৭ সফর ১৪৪৪

হংকং-বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে সেমিনার

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং হংকং ট্রেড ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল (এইচকেটিডিসি) যৌথভাবে আয়োজিত ‘হংকং-এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ’ শীর্ষক সেমিনার সম্প্রতি রাজধানীর লেকশোর হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি প্রধান অতিথি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)-এর সচিব শরিফা খান বিশেষ অতিথি হিসেবে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘হংকং, ইতোমধ্যে বাংলাদেশে প্রায় ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ করেছে, যার বেশিরভাগই টেক্সটাইল ও জ¦ালানিখাতে এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনসহ নানাবিধ শুল্ক সুবিধা প্রদান করেছে, যার সুযোগ নিয়ে হংকং-এর উদ্যোক্তাগণ এদেশে আরও বেশি হারে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে।’ বাংলাদেশে হংকং-এর বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং এদেশের উদ্যোক্তাদের হংকং-এ বাণিজ্যিক কর্মকা- সম্প্রসারণে এইচকেটিডিসি-কে কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান ডিসিসিআই সভাপতি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের অভিযাত্রাকে সক্রিয় করতে বিশেষকরে অবকাঠামো, আর্থিক, সেবা, উৎপাদনশীল প্রভৃতি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। আমাদের রয়েছে তরুণ ও দক্ষ শ্রমিক, সেই সঙ্গে বর্তমান সরকার বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত ইতিবাচক, যার ফলে বিদেশি উদ্যোক্তাগণ আত্মবিশ^াসের সঙ্গে এখানে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজার বেশ বড় ও শক্তিশালী, যেটি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে এগিয়ে আসার বিষয়টিকে উদ্বুুদ্ধ করবে। দেশে স্থানীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকে আরও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সরকার প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট আইনের সংস্কার ও নতুন নীতিমালা প্রণয়নে কাজ করে যাচ্ছে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইআরডি সচিব শরিফা খান বলেন, ‘বাংলাদেশ ও হংকং-এর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতি অত্যন্ত বেশি এবং তা কমিয়ে আনতে বেসরকারিখাতের উদ্যোক্তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কার্যক্রম সম্প্রসারণে আরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশের বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ এবং দক্ষ শ্রমিকের পর্যাপ্তকে কাজে লাগিয়ে বিশেষকরে উৎপাদনশীলখাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার জন্য তিনি হংকং-এর উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার দেশের অবকাঠামোখাতের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে বেশকিছু বৃহৎ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছে। প্রয়োজনের নিরিখে আরও নতুন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। এ ধরনের প্রকল্পের অর্থায়ন নিশ্চিতকল্পের হংকং-এর স্বনামধন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিকখাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে। দেশের ব্যবসা সহায়ক পরিবেশের অধিকতর উন্নয়নে বিশেষকরে আমাদের বন্দরসমূহের আধুনিকায়ন, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং লজেস্টিকখাতে পিপিপি’র আওতায় যৌথ বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।’

অনুষ্ঠানে এইচকেটিডিসি’র দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক কনসালটেন্ট রাজেশ ভাগত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, ‘সহজতর কর ও শুল্ক কাঠামো, প্রায় ৭০টি বৈশি^ক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও নামিদামি ব্র্যান্ডের কার্যালয়, বৃহত্তর পুঁজিবাজার, আধুনিক অবকাঠামো ও বন্দর সুবিধার উপস্থিতি হংকং-কে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিগণিত করেছে। হংকং-এর বেশকিছু বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের ১৫০টি প্রকল্পে ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করে, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারী দেশসমূহের মধ্যে হংকং ৮ম স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের তৈরি পোষাক, জাহাজ নির্মাণ, ওষুধ, কৃষি, চামড়া ও পাদুকা, হালকা প্রকৌশল, অটোমোটিভ, ইলেকট্রিকাল ও ইলেকট্রনিক্স, লজিস্টিক অবকাঠামো, আর্থিকখাত, স্বাস্থ্য প্রভৃতি বিদেশি বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়।’

সেমিনারের নির্ধারিত আলোচনায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) জনেন্দ্র নাথ সরকার এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)-এর অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ ইরফান শরীফ অংশগ্রহণ করেন। ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি আরমান হক সেমিনার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

ইনসার্ট: ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, হংকং ইতোমধ্যে বাংলাদেশে প্রায় ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ করেছে, যার বেশিরভাগই টেক্সটাইল ও জ¦ালানিখাতে এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।