চিলমারীতে জিআর প্রকল্পে নয়ছয়

নিম্নমানের চাল-ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে জিআর প্রকল্পের চাল নিয়ে হরিলুট কারবার চলছে। ২ মাসেও বিতরণ হয়নি জিআর চাল। সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে কর্তৃপক্ষ। অবশেষে উত্তোলনের ২ মাস পর বিতরণ শুরু হলেও রয়েছে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। বরাদ্দের সব চাল চেয়ারম্যানগণ উত্তোলন করেছেন । খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা বললেও চাল উত্তোলন করেনি ২ চেয়ারম্যান। নিম্নœমানের চাল ও ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন অনেক সুভিধাভোগী।

জানা গেছে, কুড়িগ্রামের চিলমারীতে বন্যার থাবায় অসহায় হয়ে পড়ে মানুষ। বন্যা কবলিত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসে সরকার। এরই প্রেক্ষিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে মানবিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে চিলমারীতে উক্ত অর্থবছরের সর্বশেষ ৩০ মে.টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয় গত ২৯ জুন। অজ্ঞাত কারণে সময়মতো বিতরণ না করেই কালক্ষেপণ করেন সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি নজরে আসলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘২ মাসেও বিতরণ হয়নি জিআর প্রকল্পের চাল’ বিভিন্ন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ পায়।

সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে কর্তৃপক্ষ। অবশেষে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মাঝে বিভাজন করে দেয়া চাল বিতরন শুরু করেন চেয়ারম্যানগণ। ইতিমধ্যে ৪টি ইউনিয়নে বিতরণ হলেও বাকি রয়েছে দুটি ইউনিয়নে বিতরণ। নয়ারহাট, থানাহাট, চিলমারী ও রমনা মডেল ইউনিয়নে বিতরণ হলেও রয়েছে নানা অভিযোগ।

নামে বে-নামে ও ওজনে কম দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয় রমনা মডেল ইউনিয়নে ৫ হাজার ৫২০ কেজি বরাদ্দ দেয়া থাকলেও বিতরণ হয়েছে ৪ হাজার কেজি চাল। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসার উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ৪ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে বাকিটা চেয়ারম্যান আর ইউএনও স্যার জানেন। এদিকে নয়ারহাট ইউনিয়নে বিতরণে অনিয়ম ও ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তালিকা আর চাল গ্রহণকারীর মধ্যে কোন মিল ছিল না। নয়ারহাট ইউনিয়নের বাসিন্দা বিদেশী, আতাউর বলেন, ৫ জন মিলে ১টি করে বস্তা দেয়া হয়। কিন্তু বস্তায় ৩ থেকে ৪ কেজি করে চাল কম পাওয়া যায়। বস্তায় ৩ থেকে ৪ কেজি চাল কম স্বীকার করে ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, এতে আমাদের কি করার আছে। কিছুটা অনিয়ম হয়েছে স্বীকার করে দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসার মো. কবিরুল ইসলাম বলেন, বিতরণের দিন দুপুরে খাইতে গিয়েছিলাম তখন কিছুটা অনিয়ম হয়েছে এবং বস্তায় দেড় দুই কেজি করে চাল কম ছিল। থানাহাট ইউনিয়নের সুবিধাভোগী বেশ কয়েকজন জানান, চাল তো দিল কিন্তু নিম্নœমানের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ইউপি সদস্য বলেন, আপনারা সংবাদ প্রকাশ না করলে তো আমরা জানতাম না, হয়তো সুবিধাভোগীরা চালও পেত না। উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, গত ৩০ জুন এর মধ্যে চাল উত্তোলন করার কথা থাকলেও প্রায় ২ মাস পর চেয়ারম্যানরা চাল উত্তোলন করেছেন।

খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা চাল উত্তোলনের কথা বললেও রাণীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান চাল উত্তোলন করেননি বলে জানান। অষ্টমীর চর ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া না গেলে দায়িত্বে থাকা ট্যাগ অফিসার উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, চাল উত্তোলন হলে আমি জানতাম। এছাড়াও চাল উত্তোলন হলে চেয়ারম্যান আমাকে জানাবে বলে জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানরা বিতরণে অনিয়ম হয়নি বলে জানান। থানাহাট ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মিলন বলেন, আমরা চিঠি দেরিতে পেয়েছি তাই বিতরণে দেরি হয়েছে। তবে রমনা মডেল ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম আশেক আঁকা বলেন, আমার বরাদ্দ থেকে ইউএনও স্যার ১টন নিয়েছেন। বিতরণে অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, রমনা ইউনিয়নের বরাদ্দ থেকে কিছু চাল এর আগে বিতরণ করা হয়েছে। তবে খাদ্য গুদাম অফিস সূত্রে জানা গেছে, রমনায় প্রথম দিন ৪ মেট্রিক টন চাল নিয়ে গেছে বাকিটা পরে নিবে।

বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৩০ ভাদ্র ১৪২৯ ১৭ সফর ১৪৪৪

চিলমারীতে জিআর প্রকল্পে নয়ছয়

নিম্নমানের চাল-ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ

প্রতিনিধি, চিলমারী (কুড়িগ্রাম)

image

চিলমারী (কুড়িগ্রাম) : বিতরণের জন্য রাখা জিআর প্রকল্পের নিম্নমানের চাল -সংবাদ

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে জিআর প্রকল্পের চাল নিয়ে হরিলুট কারবার চলছে। ২ মাসেও বিতরণ হয়নি জিআর চাল। সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে কর্তৃপক্ষ। অবশেষে উত্তোলনের ২ মাস পর বিতরণ শুরু হলেও রয়েছে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। বরাদ্দের সব চাল চেয়ারম্যানগণ উত্তোলন করেছেন । খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা বললেও চাল উত্তোলন করেনি ২ চেয়ারম্যান। নিম্নœমানের চাল ও ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন অনেক সুভিধাভোগী।

জানা গেছে, কুড়িগ্রামের চিলমারীতে বন্যার থাবায় অসহায় হয়ে পড়ে মানুষ। বন্যা কবলিত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসে সরকার। এরই প্রেক্ষিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে মানবিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে চিলমারীতে উক্ত অর্থবছরের সর্বশেষ ৩০ মে.টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয় গত ২৯ জুন। অজ্ঞাত কারণে সময়মতো বিতরণ না করেই কালক্ষেপণ করেন সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি নজরে আসলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘২ মাসেও বিতরণ হয়নি জিআর প্রকল্পের চাল’ বিভিন্ন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ পায়।

সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে কর্তৃপক্ষ। অবশেষে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মাঝে বিভাজন করে দেয়া চাল বিতরন শুরু করেন চেয়ারম্যানগণ। ইতিমধ্যে ৪টি ইউনিয়নে বিতরণ হলেও বাকি রয়েছে দুটি ইউনিয়নে বিতরণ। নয়ারহাট, থানাহাট, চিলমারী ও রমনা মডেল ইউনিয়নে বিতরণ হলেও রয়েছে নানা অভিযোগ।

নামে বে-নামে ও ওজনে কম দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয় রমনা মডেল ইউনিয়নে ৫ হাজার ৫২০ কেজি বরাদ্দ দেয়া থাকলেও বিতরণ হয়েছে ৪ হাজার কেজি চাল। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসার উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ৪ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে বাকিটা চেয়ারম্যান আর ইউএনও স্যার জানেন। এদিকে নয়ারহাট ইউনিয়নে বিতরণে অনিয়ম ও ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তালিকা আর চাল গ্রহণকারীর মধ্যে কোন মিল ছিল না। নয়ারহাট ইউনিয়নের বাসিন্দা বিদেশী, আতাউর বলেন, ৫ জন মিলে ১টি করে বস্তা দেয়া হয়। কিন্তু বস্তায় ৩ থেকে ৪ কেজি করে চাল কম পাওয়া যায়। বস্তায় ৩ থেকে ৪ কেজি চাল কম স্বীকার করে ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, এতে আমাদের কি করার আছে। কিছুটা অনিয়ম হয়েছে স্বীকার করে দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসার মো. কবিরুল ইসলাম বলেন, বিতরণের দিন দুপুরে খাইতে গিয়েছিলাম তখন কিছুটা অনিয়ম হয়েছে এবং বস্তায় দেড় দুই কেজি করে চাল কম ছিল। থানাহাট ইউনিয়নের সুবিধাভোগী বেশ কয়েকজন জানান, চাল তো দিল কিন্তু নিম্নœমানের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ইউপি সদস্য বলেন, আপনারা সংবাদ প্রকাশ না করলে তো আমরা জানতাম না, হয়তো সুবিধাভোগীরা চালও পেত না। উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, গত ৩০ জুন এর মধ্যে চাল উত্তোলন করার কথা থাকলেও প্রায় ২ মাস পর চেয়ারম্যানরা চাল উত্তোলন করেছেন।

খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা চাল উত্তোলনের কথা বললেও রাণীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান চাল উত্তোলন করেননি বলে জানান। অষ্টমীর চর ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া না গেলে দায়িত্বে থাকা ট্যাগ অফিসার উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, চাল উত্তোলন হলে আমি জানতাম। এছাড়াও চাল উত্তোলন হলে চেয়ারম্যান আমাকে জানাবে বলে জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানরা বিতরণে অনিয়ম হয়নি বলে জানান। থানাহাট ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মিলন বলেন, আমরা চিঠি দেরিতে পেয়েছি তাই বিতরণে দেরি হয়েছে। তবে রমনা মডেল ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম আশেক আঁকা বলেন, আমার বরাদ্দ থেকে ইউএনও স্যার ১টন নিয়েছেন। বিতরণে অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, রমনা ইউনিয়নের বরাদ্দ থেকে কিছু চাল এর আগে বিতরণ করা হয়েছে। তবে খাদ্য গুদাম অফিস সূত্রে জানা গেছে, রমনায় প্রথম দিন ৪ মেট্রিক টন চাল নিয়ে গেছে বাকিটা পরে নিবে।