নিম্নচাপ লঘুচাপে পরিণত কালও থাকবে বৃষ্টি, ৩ নম্বর সংকেত বহাল

রাজধানীর আকাশে গতকাল সারাদিনই ছিল মেঘের ঘনঘটা। গত সোমবার রাত থেকে শুরু হয়ে গতকাল সারাদিনই কখনো ভারি, কখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হয়েছে। আগামীকাল পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

ভারতের দক্ষিণ মধ্য প্রদেশে অবস্থানরত স্থল নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে; এর প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় চলছে বর্ষণ। সেই সঙ্গে উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকায় সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত বহাল রেখেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে ৩২ মিলিমিটিার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই সময়ে দেশের সর্বোচ্চ ১১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে খেপুপাড়ায়।

আগামীকাল পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম জানান, ‘লঘুচাপের প্রভাবে সাগর সংলগ্ন এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। দেশের সমুদ্রবন্দর ও উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।’‘সুস্পষ্ট লঘুচাপটি স্থলভাগের ওপর দিয়ে পশ্চিম উত্তর পশ্চিমে অগ্রসর হয়ে ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়বে’ বলে জানান এই আবহাওয়াবিদ।

আবহাওয়া অফিস বলছে, পূর্ণিমা ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের কারণে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে এক থেকে দুই ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি আসতে বলা হয়েছে ও তাদের সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন জানান, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা ধীরে ধীরে কমে আসবে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপের প্রভাবে গতকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়া জেলার অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শহরের প্রায় সব রাস্তায় পানি জমে যাওয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি স্কুল কলেজেও পানি জমে যায়। জেলা কালেক্টরেট চত্বর ও জজকোর্ট এলাকায় হাঁটু পানি জমে গিয়ে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে।

পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, নি¤œচাপের প্রভাবে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর বেশ উত্তাল রয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় এলাকায় টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে পটুয়াখালীর প্রধান নদ-নদীর পানি বেড়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় পায়রাসহ দেশের অন্য সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এরই মধ্যে সাগরে মাছ ধরার ট্রলার এবং নৌকা নিরাপদে আশ্রয় ফিরতে শুরু করেছে।

এছাড়া আগামী এক, দুইদিন এমন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলেও জানান পটুয়াখালী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবা সুখী।

বৃষ্টির পাশাপাশি জেলার প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া টানা বৃষ্টিতে পটুয়াখালী শহরের বেশকিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানি নদীতে নামতে না পারায় এবং জোয়ারের পানি শহরে প্রবেশ করায় বেশকিছু এলাকার সড়কে পানি উঠে গেছে।

বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৩০ ভাদ্র ১৪২৯ ১৭ সফর ১৪৪৪

নিম্নচাপ লঘুচাপে পরিণত কালও থাকবে বৃষ্টি, ৩ নম্বর সংকেত বহাল

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রাজধানীর আকাশে গতকাল সারাদিনই ছিল মেঘের ঘনঘটা। গত সোমবার রাত থেকে শুরু হয়ে গতকাল সারাদিনই কখনো ভারি, কখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হয়েছে। আগামীকাল পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

ভারতের দক্ষিণ মধ্য প্রদেশে অবস্থানরত স্থল নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে; এর প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় চলছে বর্ষণ। সেই সঙ্গে উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকায় সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত বহাল রেখেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে ৩২ মিলিমিটিার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই সময়ে দেশের সর্বোচ্চ ১১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে খেপুপাড়ায়।

আগামীকাল পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম জানান, ‘লঘুচাপের প্রভাবে সাগর সংলগ্ন এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। দেশের সমুদ্রবন্দর ও উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।’‘সুস্পষ্ট লঘুচাপটি স্থলভাগের ওপর দিয়ে পশ্চিম উত্তর পশ্চিমে অগ্রসর হয়ে ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়বে’ বলে জানান এই আবহাওয়াবিদ।

আবহাওয়া অফিস বলছে, পূর্ণিমা ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের কারণে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে এক থেকে দুই ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি আসতে বলা হয়েছে ও তাদের সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন জানান, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা ধীরে ধীরে কমে আসবে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপের প্রভাবে গতকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়া জেলার অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শহরের প্রায় সব রাস্তায় পানি জমে যাওয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি স্কুল কলেজেও পানি জমে যায়। জেলা কালেক্টরেট চত্বর ও জজকোর্ট এলাকায় হাঁটু পানি জমে গিয়ে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে।

পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, নি¤œচাপের প্রভাবে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর বেশ উত্তাল রয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় এলাকায় টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে পটুয়াখালীর প্রধান নদ-নদীর পানি বেড়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় পায়রাসহ দেশের অন্য সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এরই মধ্যে সাগরে মাছ ধরার ট্রলার এবং নৌকা নিরাপদে আশ্রয় ফিরতে শুরু করেছে।

এছাড়া আগামী এক, দুইদিন এমন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলেও জানান পটুয়াখালী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবা সুখী।

বৃষ্টির পাশাপাশি জেলার প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া টানা বৃষ্টিতে পটুয়াখালী শহরের বেশকিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানি নদীতে নামতে না পারায় এবং জোয়ারের পানি শহরে প্রবেশ করায় বেশকিছু এলাকার সড়কে পানি উঠে গেছে।