৬ হাজার বর্গ কি.মি. এলাকা পুনরুদ্ধারের দাবি জেলেনস্কির

রুশ এই আগ্রাসনের শুরুতেই ইউক্রেন কোণঠাসা অবস্থায় থাকলেও দেশটি এখন পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে। ইউক্রেনীয় বাহিনী পুনরুদ্ধার করেছে রাশিয়ার দখলে থাকা ৬ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এসব তথ্য জানিয়েছে।

জেলেনস্কি দাবি করেন, তার দেশের সেনারা এখন পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ থেকে ৬০০০ বর্গকিলোমিটারের (২,৩১৭ বর্গমাইল) চেয়ে বেশি এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে। ত্রিশটির বেশি শহর ও গ্রাম দখলদার রুশবাহিনীর কাছ থেকে মুক্ত করা হয়েছে। এসব এলাকা থেকে রুশ সেনারা আরও পূর্বদিকে পালিয়েছে। রুশরা তেমন কোনও বা একেবারেই প্রতিরোধের চেষ্টা করেনি। এমনটিই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

জার্মানির ইউনিভার্সিটির অব ব্রেমেন-এর রাশিয়া বিশেষজ্ঞ নিকোলায় মিত্রোখিন বলেন, ব্যাপক হতাহতের পর চার মাসে রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইউক্রেনে যে সাফল্য অর্জন করেছিল মাত্র চারদিনে ইউক্রেন তা ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। তবে জেলেনস্কির এই দাবি ও পরিসংখ্যান স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি বিবিসি।

এর আগে ইউক্রেনীয় বাহিনীর তীব্র হামলার মুখে উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভ প্রদেশের ইজিয়ামে নিজেদের প্রধান ঘাঁটি পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয় রাশিয়া। ইউক্রেনের এই অঞ্চলটি চলমান যুদ্ধের প্রধান ফ্রন্ট লাইনগুলোর একটি। চলমান সামরিক অভিযানে ইজিয়ামকে লজিস্টিক বেস হিসাবে ব্যবহার করছিল রাশিয়ান বাহিনী। এখান থেকেই রুশ সেনারা দোনেতস্ক এবং লুহানস্ক

নিয়ে গঠিত ডনবাস অঞ্চলে কয়েক মাস ধরে আক্রমণ পরিচালনা করে আসছিল।

এমনকি রাশিয়াও উত্তর-পূর্ব খারকিভ অঞ্চলের প্রধান শহরগুলো হারানোর কথা স্বীকার করে নিয়েছে। যা কিছু সামরিক বিশেষজ্ঞরা যুদ্ধে ইউক্রেনের সম্ভাব্য অগ্রগতি হিসাবে দেখছেন।

জেলেনস্কি বলেছিলেন, গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনীয় বাহিনী এক হাজার বর্গ কিলোমিটার পুনরুদ্ধার করেছে। তবে রোববারের মধ্যে সেই সংখ্যা তিনগুণ বেড়ে ৩ হাজার বর্গ কিলোমিটারে পৌঁছে যায়। আর এখন ইউক্রেনীয় বাহিনীর পুনরুদ্ধার করা ভূখ-ের পরিমাণ ৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার বলে দাবি করলেন জেলেনস্কি।

ভাষণে জেলেনস্কি পাল্টা আক্রমণে জড়িত ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি ব্রিগেডকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এমনকি ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের ‘সত্যিকারের বীর’ হিসাবেও বর্ণনা করেছেন তিনি। অবশ্য রাশিয়ার কবল থেকে ইউক্রেনের কোন শহর ও গ্রাম মুক্ত করা হয়েছে তা প্রকাশ করেননি জেলেনস্কি।

এর আগে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী স্বীকার করে যে, তাদের সৈন্যদের খারকিভ অঞ্চলের বালাক্লিয়া, ইজিয়াম এবং কুপিয়ানস্কের প্রধান শহরগুলো ছেড়ে যেতে হয়েছিল। রাশিয়া এখন এই অঞ্চলের পূর্বাঞ্চলীয় ছোট একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে।

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক সাফল্য রাশিয়ার সামগ্রিক অভিযান পরিকল্পনার ওপর ‘উল্লেখযোগ্য প্রভাব’ ফেলবে। তবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জোর দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযান ‘সব কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত’ অব্যাহত থাকবে।

পুতিনের ইউক্রেন অভিযান এরই মধ্যে ব্যর্থ বলা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (সিআইএ) প্রধান উইলিয়াম বার্নস। ইউক্রেনের সেনারা দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে এমন মন্তব্য করেন তিনি। সম্প্রতি ওয়াশিংটনে এক সম্মেলনে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

সিআইএ প্রধান উইলিয়াম বার্নস বলেন, পুতিন যখন গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেন তখন ইউক্রেনের সংকল্পকে অবমূল্যায়ন করেছিলেন। তিনি আরও বলেন এখন কিয়েভের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থনের ক্ষেত্রে একই ভুল করছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।

রুশ মনোনীত খারকিভ অঞ্চলের প্রধান ভিটালি গেনচেভ স্বীকার করেছেন ইউক্রেনীয় সেনারা রুশদের সম্মুখভাগ ভেঙে প্রবেশে করেছে। তবে রাশিয়া জানিয়েছে ইউক্রেনের পুনরুদ্ধার করা এলাকাগুলোতে হামলা চালাচ্ছে রুশ সামরিক বাহিনী।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় যে সব এলাকা থেকে রুশ বাহিনী পালিয়ে গেছে সে সব এলাকার বাসিন্দারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। খারকিভের উত্তরে অবস্থিত জলোচিভ গ্রামের ৭৬ বছর বয়সী শিক্ষক জয়া। কয়েক মাস ধরে তিনি একটি সেলারে আশ্রয় নিয়ে দিন কাটিয়েছেন। তিনি বলেন, মানুষ কাঁদছে, অবশ্যই এই কান্না আনন্দের। কেন তারা আনন্দিত হবে না!

২৮ বছর বয়সী নাসতিয়া এপ্রিলে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছিলেন। কিন্তু গত সপ্তাহে ইউক্রেনীয়দের অগ্রগতির পর গ্রামে ফিরে আসেন। তিনি বলেন, আমার মনে হয় সবার মন খুব ভালো আছে।

যুদ্ধ শেষ। অন্তত আমরা আশা করতে পারি শেষ হয়ে গেছে।

আরও উত্তরে ইউক্রেনীয় সেনারা উদি এলাকায় পৌঁছে গেছে। রণক্ষেত্রের পাশে এই এলাকাটি এতদিন পর্যন্ত নো-ম্যান্স-ল্যান্ড হিসেবে ছিল। সেখান থেকে ফেরত আসা সেনারা জানিয়েছেন, এলাকাটি এখনও নিরাপদ নয়। রুশ সেনাদের ফেলে যাওয়া অসংখ্য মাইন, গ্রেনেড ও অস্ত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। পরিত্যক্ত খামারের গবাদিপশু ঘুরে বেড়াচ্ছে।

বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৩০ ভাদ্র ১৪২৯ ১৭ সফর ১৪৪৪

৬ হাজার বর্গ কি.মি. এলাকা পুনরুদ্ধারের দাবি জেলেনস্কির

image

রাশিয়ার দখলে থাকা খারকিভের একটি গ্রাম পুনরুদ্ধারের পর পতাকা হাতে ইউক্রেনের সৈন্যদের উচ্ছ্বাস -বিবিসি

রুশ এই আগ্রাসনের শুরুতেই ইউক্রেন কোণঠাসা অবস্থায় থাকলেও দেশটি এখন পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে। ইউক্রেনীয় বাহিনী পুনরুদ্ধার করেছে রাশিয়ার দখলে থাকা ৬ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এসব তথ্য জানিয়েছে।

জেলেনস্কি দাবি করেন, তার দেশের সেনারা এখন পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ থেকে ৬০০০ বর্গকিলোমিটারের (২,৩১৭ বর্গমাইল) চেয়ে বেশি এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে। ত্রিশটির বেশি শহর ও গ্রাম দখলদার রুশবাহিনীর কাছ থেকে মুক্ত করা হয়েছে। এসব এলাকা থেকে রুশ সেনারা আরও পূর্বদিকে পালিয়েছে। রুশরা তেমন কোনও বা একেবারেই প্রতিরোধের চেষ্টা করেনি। এমনটিই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

জার্মানির ইউনিভার্সিটির অব ব্রেমেন-এর রাশিয়া বিশেষজ্ঞ নিকোলায় মিত্রোখিন বলেন, ব্যাপক হতাহতের পর চার মাসে রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইউক্রেনে যে সাফল্য অর্জন করেছিল মাত্র চারদিনে ইউক্রেন তা ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। তবে জেলেনস্কির এই দাবি ও পরিসংখ্যান স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি বিবিসি।

এর আগে ইউক্রেনীয় বাহিনীর তীব্র হামলার মুখে উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভ প্রদেশের ইজিয়ামে নিজেদের প্রধান ঘাঁটি পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয় রাশিয়া। ইউক্রেনের এই অঞ্চলটি চলমান যুদ্ধের প্রধান ফ্রন্ট লাইনগুলোর একটি। চলমান সামরিক অভিযানে ইজিয়ামকে লজিস্টিক বেস হিসাবে ব্যবহার করছিল রাশিয়ান বাহিনী। এখান থেকেই রুশ সেনারা দোনেতস্ক এবং লুহানস্ক

নিয়ে গঠিত ডনবাস অঞ্চলে কয়েক মাস ধরে আক্রমণ পরিচালনা করে আসছিল।

এমনকি রাশিয়াও উত্তর-পূর্ব খারকিভ অঞ্চলের প্রধান শহরগুলো হারানোর কথা স্বীকার করে নিয়েছে। যা কিছু সামরিক বিশেষজ্ঞরা যুদ্ধে ইউক্রেনের সম্ভাব্য অগ্রগতি হিসাবে দেখছেন।

জেলেনস্কি বলেছিলেন, গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনীয় বাহিনী এক হাজার বর্গ কিলোমিটার পুনরুদ্ধার করেছে। তবে রোববারের মধ্যে সেই সংখ্যা তিনগুণ বেড়ে ৩ হাজার বর্গ কিলোমিটারে পৌঁছে যায়। আর এখন ইউক্রেনীয় বাহিনীর পুনরুদ্ধার করা ভূখ-ের পরিমাণ ৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার বলে দাবি করলেন জেলেনস্কি।

ভাষণে জেলেনস্কি পাল্টা আক্রমণে জড়িত ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি ব্রিগেডকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এমনকি ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের ‘সত্যিকারের বীর’ হিসাবেও বর্ণনা করেছেন তিনি। অবশ্য রাশিয়ার কবল থেকে ইউক্রেনের কোন শহর ও গ্রাম মুক্ত করা হয়েছে তা প্রকাশ করেননি জেলেনস্কি।

এর আগে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী স্বীকার করে যে, তাদের সৈন্যদের খারকিভ অঞ্চলের বালাক্লিয়া, ইজিয়াম এবং কুপিয়ানস্কের প্রধান শহরগুলো ছেড়ে যেতে হয়েছিল। রাশিয়া এখন এই অঞ্চলের পূর্বাঞ্চলীয় ছোট একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে।

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক সাফল্য রাশিয়ার সামগ্রিক অভিযান পরিকল্পনার ওপর ‘উল্লেখযোগ্য প্রভাব’ ফেলবে। তবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জোর দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযান ‘সব কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত’ অব্যাহত থাকবে।

পুতিনের ইউক্রেন অভিযান এরই মধ্যে ব্যর্থ বলা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (সিআইএ) প্রধান উইলিয়াম বার্নস। ইউক্রেনের সেনারা দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে এমন মন্তব্য করেন তিনি। সম্প্রতি ওয়াশিংটনে এক সম্মেলনে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

সিআইএ প্রধান উইলিয়াম বার্নস বলেন, পুতিন যখন গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেন তখন ইউক্রেনের সংকল্পকে অবমূল্যায়ন করেছিলেন। তিনি আরও বলেন এখন কিয়েভের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থনের ক্ষেত্রে একই ভুল করছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।

রুশ মনোনীত খারকিভ অঞ্চলের প্রধান ভিটালি গেনচেভ স্বীকার করেছেন ইউক্রেনীয় সেনারা রুশদের সম্মুখভাগ ভেঙে প্রবেশে করেছে। তবে রাশিয়া জানিয়েছে ইউক্রেনের পুনরুদ্ধার করা এলাকাগুলোতে হামলা চালাচ্ছে রুশ সামরিক বাহিনী।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় যে সব এলাকা থেকে রুশ বাহিনী পালিয়ে গেছে সে সব এলাকার বাসিন্দারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। খারকিভের উত্তরে অবস্থিত জলোচিভ গ্রামের ৭৬ বছর বয়সী শিক্ষক জয়া। কয়েক মাস ধরে তিনি একটি সেলারে আশ্রয় নিয়ে দিন কাটিয়েছেন। তিনি বলেন, মানুষ কাঁদছে, অবশ্যই এই কান্না আনন্দের। কেন তারা আনন্দিত হবে না!

২৮ বছর বয়সী নাসতিয়া এপ্রিলে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছিলেন। কিন্তু গত সপ্তাহে ইউক্রেনীয়দের অগ্রগতির পর গ্রামে ফিরে আসেন। তিনি বলেন, আমার মনে হয় সবার মন খুব ভালো আছে।

যুদ্ধ শেষ। অন্তত আমরা আশা করতে পারি শেষ হয়ে গেছে।

আরও উত্তরে ইউক্রেনীয় সেনারা উদি এলাকায় পৌঁছে গেছে। রণক্ষেত্রের পাশে এই এলাকাটি এতদিন পর্যন্ত নো-ম্যান্স-ল্যান্ড হিসেবে ছিল। সেখান থেকে ফেরত আসা সেনারা জানিয়েছেন, এলাকাটি এখনও নিরাপদ নয়। রুশ সেনাদের ফেলে যাওয়া অসংখ্য মাইন, গ্রেনেড ও অস্ত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। পরিত্যক্ত খামারের গবাদিপশু ঘুরে বেড়াচ্ছে।