দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা পানির নিচে

দক্ষিণাঞ্চলসহ সমগ্র উপকূলভাগ ফুঁসে ওঠা বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের সঙ্গে গত কয়েকদিনের অতি বর্ষণের ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে ভাসছে। বিগত দুটি বছর ভাদ্রের বড় অমাবস্যায় উপকূলভাগ জোয়ারের পানিতে সয়লাব হলেও এবার শেষ শ্রাবণের মতো ভাদ্রের পূর্ণিমাতেও প্রকৃতির বিরূপ আচরণে আউশের পর কৃষকের আমনের স্বপ্ন এখন পানির নিচে। দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি ফেরি সেক্টরের ৪২টি ঘাটের প্রায় সবগুলোই জোয়ারের পানিতে সয়লাব হয়ে আছে। এতে সড়ক যোগাযোগ দিন-রাতে অর্ধেকেরও বেশি সময় বন্ধ থাকছে।

চলতি খরিপ-২ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৭ লাখ হেক্টর আমন আবাদের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের। রোপণের সময় শেষ হয়ে আসলেও বীজের অভাবে লক্ষ্যমাত্রার ২০ ভাগ পেছনে থাকা আমন আবাদ নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে কৃষকের হাহাকারের মধ্যে পূর্ণিমার ভরা কাটালে সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের জলোস্ফীতি কৃষকের স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ করে দেয়ার পাশাপাশি জনজীবনও বিপর্যস্ত। দক্ষিণাঞ্চলের জনপদের পর জনপদ এখন পানির নিচে। এমনকি বৃষ্টির অভাবে সদ্য-সমাপ্ত খরিপ-১ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে আউশের আবাদ ও উৎপাদনেও বিপর্যয় নেমে আসে। আউশ আবাদে লক্ষ্যমাত্রার অনেক পেছনে এবার দক্ষিণাঞ্চল। বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় এবার ২ লাখ ৪ হাজার ৬৭০ হেক্টরে আউশের আবাদ হলেও তা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২৪ হাজার হেক্টর পেছনে।

অন্যদিকে গত কয়েকদিনের মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস থেকে গতকাল পর্যন্ত ৩টি দিনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারিÑবেসরকারি অফিস আদালতে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের নদীবন্দরগুলোতে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত নামিয়ে ১ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে পায়রা বন্দরকে এখনও ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেতের আওতায় রাখা হয়েছে। সাগর এখনও মাঝারি মাত্রায় উত্তাল রয়েছে। গতকাল সকালের পূর্ববর্তী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের সর্বাধিক বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে কলাপাড়াতে। এর মধ্যে গতকাল সকালের পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১১৬ মিলিমিটার এবং সোমাবার একই সময়ে ১৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে সাগরপাড়ের কলাপাড়ায়। গত ২৪ ঘণ্টায় পটুয়াখালীতেও ৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ সময় বরিশালে ২৬ মিলিমিটার এবং ভোলাতে ১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

বরিশাল বন্দরে কির্তনখোলা থেকে শুরু করে সাগর উপকূলের বরগুনার পাথরঘাটায় বিষখালীসহ সবগুলো নদ-নদীর পানি গত শনিবার দুপুরেই বিপৎসীমা অতিক্রম করে। ভোলার খেয়াঘাটে তেঁতুলিয়া, দৌলতখানে মেঘনা, তজুমদ্দিনে মেঘনা ও সুরমা, ঝালকাঠীতে বিষখালী, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে পায়রা ও বুড়িশ^র এবং বরগুনার পাথরঘাটায় বিষখালী নদীর পানিও ৬০ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগ জানিয়েছে। পিরোজপুরের বলেশ^র ও কঁচা নদীর পানিও বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এ নিয়ে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে দুইবার দক্ষিণ উপকূলের নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ভারতে উড়িশ্যা উপকূল অতিক্রম করে দুর্বল হয়ে মধ্যপ্রদেশ এলাকায় অবস্থান করলেও তা আরও দুর্বল হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে। ফলে আজ দুপুর থেকেই সাগর কিছুটা শান্ত হয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর পানিও ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়ে শুক্রবার সকালের মধ্যে প্রায় স্বাভাবিক পর্যায়ে আসবে বলে আশা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল মহল। আগামীকাল থেকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতাও ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়ার কথা বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।

বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৩০ ভাদ্র ১৪২৯ ১৭ সফর ১৪৪৪

ফুঁসে ওঠা সাগর ও তিন দিনের অতিবর্ষণ

দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা পানির নিচে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, বরিশাল

দক্ষিণাঞ্চলসহ সমগ্র উপকূলভাগ ফুঁসে ওঠা বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের সঙ্গে গত কয়েকদিনের অতি বর্ষণের ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে ভাসছে। বিগত দুটি বছর ভাদ্রের বড় অমাবস্যায় উপকূলভাগ জোয়ারের পানিতে সয়লাব হলেও এবার শেষ শ্রাবণের মতো ভাদ্রের পূর্ণিমাতেও প্রকৃতির বিরূপ আচরণে আউশের পর কৃষকের আমনের স্বপ্ন এখন পানির নিচে। দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি ফেরি সেক্টরের ৪২টি ঘাটের প্রায় সবগুলোই জোয়ারের পানিতে সয়লাব হয়ে আছে। এতে সড়ক যোগাযোগ দিন-রাতে অর্ধেকেরও বেশি সময় বন্ধ থাকছে।

চলতি খরিপ-২ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৭ লাখ হেক্টর আমন আবাদের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের। রোপণের সময় শেষ হয়ে আসলেও বীজের অভাবে লক্ষ্যমাত্রার ২০ ভাগ পেছনে থাকা আমন আবাদ নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে কৃষকের হাহাকারের মধ্যে পূর্ণিমার ভরা কাটালে সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের জলোস্ফীতি কৃষকের স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ করে দেয়ার পাশাপাশি জনজীবনও বিপর্যস্ত। দক্ষিণাঞ্চলের জনপদের পর জনপদ এখন পানির নিচে। এমনকি বৃষ্টির অভাবে সদ্য-সমাপ্ত খরিপ-১ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে আউশের আবাদ ও উৎপাদনেও বিপর্যয় নেমে আসে। আউশ আবাদে লক্ষ্যমাত্রার অনেক পেছনে এবার দক্ষিণাঞ্চল। বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় এবার ২ লাখ ৪ হাজার ৬৭০ হেক্টরে আউশের আবাদ হলেও তা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২৪ হাজার হেক্টর পেছনে।

অন্যদিকে গত কয়েকদিনের মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস থেকে গতকাল পর্যন্ত ৩টি দিনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারিÑবেসরকারি অফিস আদালতে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের নদীবন্দরগুলোতে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত নামিয়ে ১ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে পায়রা বন্দরকে এখনও ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেতের আওতায় রাখা হয়েছে। সাগর এখনও মাঝারি মাত্রায় উত্তাল রয়েছে। গতকাল সকালের পূর্ববর্তী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের সর্বাধিক বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে কলাপাড়াতে। এর মধ্যে গতকাল সকালের পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১১৬ মিলিমিটার এবং সোমাবার একই সময়ে ১৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে সাগরপাড়ের কলাপাড়ায়। গত ২৪ ঘণ্টায় পটুয়াখালীতেও ৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ সময় বরিশালে ২৬ মিলিমিটার এবং ভোলাতে ১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

বরিশাল বন্দরে কির্তনখোলা থেকে শুরু করে সাগর উপকূলের বরগুনার পাথরঘাটায় বিষখালীসহ সবগুলো নদ-নদীর পানি গত শনিবার দুপুরেই বিপৎসীমা অতিক্রম করে। ভোলার খেয়াঘাটে তেঁতুলিয়া, দৌলতখানে মেঘনা, তজুমদ্দিনে মেঘনা ও সুরমা, ঝালকাঠীতে বিষখালী, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে পায়রা ও বুড়িশ^র এবং বরগুনার পাথরঘাটায় বিষখালী নদীর পানিও ৬০ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগ জানিয়েছে। পিরোজপুরের বলেশ^র ও কঁচা নদীর পানিও বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এ নিয়ে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে দুইবার দক্ষিণ উপকূলের নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ভারতে উড়িশ্যা উপকূল অতিক্রম করে দুর্বল হয়ে মধ্যপ্রদেশ এলাকায় অবস্থান করলেও তা আরও দুর্বল হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে। ফলে আজ দুপুর থেকেই সাগর কিছুটা শান্ত হয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর পানিও ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়ে শুক্রবার সকালের মধ্যে প্রায় স্বাভাবিক পর্যায়ে আসবে বলে আশা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল মহল। আগামীকাল থেকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতাও ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়ার কথা বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।