ঘুষ ও দুর্নীতি যেকোনো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির অন্তরায়। আর বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভয়াবহ অভিশাপ। এ দেশের দুর্নীতির আওতা ও পরিধি এতটাই ব্যাপক যে, তা কয়েক লাইনের একটি প্রবন্ধে ব্যাখ্যা করা প্রায় অসম্ভব ও দুরূহ কাজ। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য দূরীকরণসহ সর্বোপরি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে কঠিনতম অন্তরায় দুর্নীতি, তথাপি দেশের আপামর জনগণ দুর্নীতিগ্রস্ত নয়। ক্ষমতাবানদের দুর্নীতি ও তা প্রতিরোধে ব্যর্থতার কারণে দেশ বা দেশের সমগ্র জনগণকে কোনোভাবেই দুর্নীতিগ্রস্ত বলা যায় না।

সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) দুর্নীতির জাতীয় খানা জরিপ ২০২১ এর একটি উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেছে। তাতে বলা হয়েছেÑ দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়া শীর্ষ তিনে থাকা অপর দুটি সংস্থা হলো পাসপোর্ট ও বিআরটিএ। এই তিন খাতে সবচেয়ে বেশি ঘুষও নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)’ ২০২১ সালে বিশ্বজুড়ে দুর্নীতির ধারণাসূচক বা করাপশন পারসেপশনস ইনডেক্স (সিপিআই) ২০২০ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। উক্ত প্রতিবেদনে দুর্নীতির বিশ্বজনীন ধারণাসূচকে বাংলাদেশের অবস্থা দুই ধাপ পিছিয়েছে।

দুর্নীতি বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকে একটি বড় ব্যাধি। এটি দেশের সার্বিক অগ্রগতি এবং উন্নয়ন ব্যাহত করে চলছে যুগের পর যুগ। কোন সরকারের পক্ষে এককভাবে দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয়। সরকারের পাশাপাশি সর্বস্তরে মূল্যবোধ সৃষ্টি এবং সচেতনতা বাড়াতে হবে। রোগের চিকিৎসার চেয়ে যদি রোগ প্রতিরোধ করা যায়, তাহলে বেশি কাজে দেয়। আমরা যদি আমাদের শুভবুদ্ধি, মূল্যবোধ, দেশপ্রেমের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে দুর্নীতির সর্বগ্রাসী বিস্তার ও থাবা প্রতিরোধ করতে না পারি, তাহলেই দুর্নীতি নামক জাতীয় ব্যাধির বিস্তার বাড়তেই থাকবে।

জিল্লুর রহমান