বোধ
শেলী সেনগুপ্তা
কী যায় আসে,
ঘড়ির কাঁটা স্থির কি সচল
আমি শুধু কান পেতে
শুনি পদধ্বনি,
আলোটা নিভলো কি জ্বললো
কি যায় আসে,
দেখছি
অন্ধকারেও ঝলসে উঠছ
অম্লান শরীরী কথার ঘ্রাণ,
কথা বললো কি বললো না
তাতে কি
কাছে এলে
অন্ধকারেও বেজে ওঠে
অশরীরী ভায়োলিন,
কান পাতলেই
ঢেউ তোলে নীরবতার অমীমাংসিত ভাষা...
সব কিছুই থেমে যাক
ঘড়ির কাঁটা স্থির কি সচল
সময়ের তর্জনীতে ঝুলে থাকে
বোধের অফুরান সম্ভার...
চর দুঃখিয়ার এক অচিন গাঁ
শাহ বুলবুল
মরা প্রজাপতি আর স্টেশনের বেহুঁশ ট্রেন
জীবনের শিকে ধরা পেনশনভোগী আর তেতো সিগারেট।
স্মৃতির পুকুরে খোয়া তোমার নাকফুল
প্রতিটি কষ্টকে বলেছি বিদায়
সাঁঝের পিঁড়িতে বসে ব্যর্থতার দাওয়ায়।
দেখেছি নিখোঁজ ছায়া ধুলোয় মিশে গেছে...
একটু পরেই রাত্রিরা নামবে
আমায় নিয়ে যাবে
কতকাল পড়ে রবো...
চর দুঃখিয়ার এক অচিন গাঁয়ে
একজীবনের সবকিছু ভুুলে রবো।
কালের পর কাল তোমাদের স্মৃতি হবো
আমাদের ভুলে গেলে
চর দুঃখিয়ার এক অচিন গাঁয়ে।
ঘরের ভেতর ঘর
হাশিম কিয়াম
ঘরের ভেতর ঘর তুলে আকাশের নীল রঙে
সবুজ সাগরের ক্যানভাসে যারা আঁকতে চায়
শিশু চাঁদের ছবি, তারা শুধু নরকের আগুনের
জোছনারঙা ধুমো দেখে, ঝুল-কালিতে ডুবে
গোঙায় শান্তির খইফোটা নাচের আসর
তবু জীবন কাবার হয়ে যায় ইশারা-ইঙ্গিতের
চাকায় পিষে, অবহেলার বেড়ায় ঘেরা বাগানে
অপুষ্ট কুঁড়ির দল ফুটতে চায়, পারে না...
অহম-ছুরি কচুকাটা করে
মনাকাশের কিশোর সূর্যের টকটকে লাল আলো
রঙিন ভোরগুলো দিনের কবরে বিচ্ছেদের
কাফন পরে স্বেচ্ছায় ঘুমিয়ে পড়ে
পঙ্গপালের মতো তেড়ে আসে নিকষ অন্ধকার
কথা ছিলো
শ্যামল নাথ
কথা ছিলো দেখা হবে অলকানন্দার জলে, লিখে পাঠাবো চিঠির ওপরে খাম
সাময়িকী জুড়ে লেখা থাকবে কেবল তোমার আমার নাম
কথা ছিলো ভাসতে ভাসতে দেখতে যাবো মতিরহাটে জোয়ার ভাটার ঝোঁক
খুঁজতে খুঁজতে মুখোমুখি এসে দাঁড়াবো বিনিময় হবে শোক।
কথা ছিলো রোদ হেসে যাবে, কেয়া পাতায় ভেসে যাবে
ঢেউয়ের মাথায় ফুটবে হাসি, চিন্তার ধারা হবে রীতিহীন-
কথা ছিলো গান শুনাবে, গল্প হবে ভীষণ, আকাশের চাঁদ হবে,
পথের দু’ধারে ছায়া ফেলে দেবদারুর দীর্ঘ রহস্য হবে, আনন্দে কাঁদবে যখন তখন।
আর একদিন আসবে বালুচরে, পাখির ছায়ায়, তুমি আসলে ছড়াবে ধুলোর হাসি
কথা ছিলো জীবন ভরে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দিবে সকল অবহেলা রাশিরাশি;
কথা ছিলো দুর্গা পুজোর বিসর্জনে প্রতিবেশীকে আড়াল রেখে দেখা হবে
কথা ছিলো আঁকাবাঁকা পথ ঘুরিয়ে পদ্মার পাড়ে গভীর জলে নামা হবে।
কথা ছিলো উতল বাতাসে কাশবনে দুলবে তোমার স্বর্গীয় চুল
তখন ভুলে যাবো বিগত জীবনের সোনার মুখে আঁকা যত ভুল।
কথা ছিলো কথা দেওয়ার মতন, বিকেলের রোদ ছেড়ে চলে আসবে সেচ্ছায়
কথা ছিলো গ্রামের মাঠে শিমের ফুলের মতন চোখ তুলে তাকাবে, মিটাবে গচ্ছায়
কথা ছিলো কথা না রাখার জন্য, যেন মানুষ নয় শবদেহ কথা দিয়েছিলো
কথা ছিলো শুনবো অবসরের গান, কথা ছিলো কথা না রাখারই জন্য।
বর্ষায় নিঃসঙ্গ পাখির গান
ফয়সল আহমেদ
যাত্রীরা পথ চলেছে দীর্ঘ-পথে
অজস্র রাত্রির পর আলো
জলকেলি করে রঙিন ডানায়
বটের পাতায় সন্ধ্যা নামে।
নীল নিনাদের জীবন আলেখ্য
স্তব্ধতায় ভাসে কাচের আকাশ
আলোর ফেরি করে না জোনাকি
প্রিয়সব রাত দেখে তাঁবুর ভেতরে।
সরব জ্যোৎস্না পান করে হেমলক
ঘুমিয়ে যায় প্রাণের স্পন্দন চোখ-
পোড়ে না, মন পোড়ে- সব দুঃখ
জানে ডালিয়ার জল ও ফড়িং;
দূরে কোথাও ওড়ে-
নিঃসঙ্গ পাখির গান
বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০১ আশ্বিন ১৪২৯ ১৭ সফর ১৪৪৪
বোধ
শেলী সেনগুপ্তা
কী যায় আসে,
ঘড়ির কাঁটা স্থির কি সচল
আমি শুধু কান পেতে
শুনি পদধ্বনি,
আলোটা নিভলো কি জ্বললো
কি যায় আসে,
দেখছি
অন্ধকারেও ঝলসে উঠছ
অম্লান শরীরী কথার ঘ্রাণ,
কথা বললো কি বললো না
তাতে কি
কাছে এলে
অন্ধকারেও বেজে ওঠে
অশরীরী ভায়োলিন,
কান পাতলেই
ঢেউ তোলে নীরবতার অমীমাংসিত ভাষা...
সব কিছুই থেমে যাক
ঘড়ির কাঁটা স্থির কি সচল
সময়ের তর্জনীতে ঝুলে থাকে
বোধের অফুরান সম্ভার...
চর দুঃখিয়ার এক অচিন গাঁ
শাহ বুলবুল
মরা প্রজাপতি আর স্টেশনের বেহুঁশ ট্রেন
জীবনের শিকে ধরা পেনশনভোগী আর তেতো সিগারেট।
স্মৃতির পুকুরে খোয়া তোমার নাকফুল
প্রতিটি কষ্টকে বলেছি বিদায়
সাঁঝের পিঁড়িতে বসে ব্যর্থতার দাওয়ায়।
দেখেছি নিখোঁজ ছায়া ধুলোয় মিশে গেছে...
একটু পরেই রাত্রিরা নামবে
আমায় নিয়ে যাবে
কতকাল পড়ে রবো...
চর দুঃখিয়ার এক অচিন গাঁয়ে
একজীবনের সবকিছু ভুুলে রবো।
কালের পর কাল তোমাদের স্মৃতি হবো
আমাদের ভুলে গেলে
চর দুঃখিয়ার এক অচিন গাঁয়ে।
ঘরের ভেতর ঘর
হাশিম কিয়াম
ঘরের ভেতর ঘর তুলে আকাশের নীল রঙে
সবুজ সাগরের ক্যানভাসে যারা আঁকতে চায়
শিশু চাঁদের ছবি, তারা শুধু নরকের আগুনের
জোছনারঙা ধুমো দেখে, ঝুল-কালিতে ডুবে
গোঙায় শান্তির খইফোটা নাচের আসর
তবু জীবন কাবার হয়ে যায় ইশারা-ইঙ্গিতের
চাকায় পিষে, অবহেলার বেড়ায় ঘেরা বাগানে
অপুষ্ট কুঁড়ির দল ফুটতে চায়, পারে না...
অহম-ছুরি কচুকাটা করে
মনাকাশের কিশোর সূর্যের টকটকে লাল আলো
রঙিন ভোরগুলো দিনের কবরে বিচ্ছেদের
কাফন পরে স্বেচ্ছায় ঘুমিয়ে পড়ে
পঙ্গপালের মতো তেড়ে আসে নিকষ অন্ধকার
কথা ছিলো
শ্যামল নাথ
কথা ছিলো দেখা হবে অলকানন্দার জলে, লিখে পাঠাবো চিঠির ওপরে খাম
সাময়িকী জুড়ে লেখা থাকবে কেবল তোমার আমার নাম
কথা ছিলো ভাসতে ভাসতে দেখতে যাবো মতিরহাটে জোয়ার ভাটার ঝোঁক
খুঁজতে খুঁজতে মুখোমুখি এসে দাঁড়াবো বিনিময় হবে শোক।
কথা ছিলো রোদ হেসে যাবে, কেয়া পাতায় ভেসে যাবে
ঢেউয়ের মাথায় ফুটবে হাসি, চিন্তার ধারা হবে রীতিহীন-
কথা ছিলো গান শুনাবে, গল্প হবে ভীষণ, আকাশের চাঁদ হবে,
পথের দু’ধারে ছায়া ফেলে দেবদারুর দীর্ঘ রহস্য হবে, আনন্দে কাঁদবে যখন তখন।
আর একদিন আসবে বালুচরে, পাখির ছায়ায়, তুমি আসলে ছড়াবে ধুলোর হাসি
কথা ছিলো জীবন ভরে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দিবে সকল অবহেলা রাশিরাশি;
কথা ছিলো দুর্গা পুজোর বিসর্জনে প্রতিবেশীকে আড়াল রেখে দেখা হবে
কথা ছিলো আঁকাবাঁকা পথ ঘুরিয়ে পদ্মার পাড়ে গভীর জলে নামা হবে।
কথা ছিলো উতল বাতাসে কাশবনে দুলবে তোমার স্বর্গীয় চুল
তখন ভুলে যাবো বিগত জীবনের সোনার মুখে আঁকা যত ভুল।
কথা ছিলো কথা দেওয়ার মতন, বিকেলের রোদ ছেড়ে চলে আসবে সেচ্ছায়
কথা ছিলো গ্রামের মাঠে শিমের ফুলের মতন চোখ তুলে তাকাবে, মিটাবে গচ্ছায়
কথা ছিলো কথা না রাখার জন্য, যেন মানুষ নয় শবদেহ কথা দিয়েছিলো
কথা ছিলো শুনবো অবসরের গান, কথা ছিলো কথা না রাখারই জন্য।
বর্ষায় নিঃসঙ্গ পাখির গান
ফয়সল আহমেদ
যাত্রীরা পথ চলেছে দীর্ঘ-পথে
অজস্র রাত্রির পর আলো
জলকেলি করে রঙিন ডানায়
বটের পাতায় সন্ধ্যা নামে।
নীল নিনাদের জীবন আলেখ্য
স্তব্ধতায় ভাসে কাচের আকাশ
আলোর ফেরি করে না জোনাকি
প্রিয়সব রাত দেখে তাঁবুর ভেতরে।
সরব জ্যোৎস্না পান করে হেমলক
ঘুমিয়ে যায় প্রাণের স্পন্দন চোখ-
পোড়ে না, মন পোড়ে- সব দুঃখ
জানে ডালিয়ার জল ও ফড়িং;
দূরে কোথাও ওড়ে-
নিঃসঙ্গ পাখির গান