সিরাজগঞ্জের যমুনাসহ অন্যান্য নদী, চলন বিল ও বিভিন্ন জলাশয় এখন নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জালে সয়লাব। এই বিশেষ ধরনের জাল পেতে অবাধে মাছ শিকার করছেন অসাধু শিকারিরা।
এতে ধরা পড়ছে ছোট-বড় সব ধরনের মাছ। বাদ যাচ্ছে না মাছের পোনাও। এমনকি সাপ, কাঁকড়া, ব্যাঙ, শামুকসহ অধিকাংশ জলজ প্রাণী এতে আটকা পড়ছে। ফলে হুমকিতে পড়েছে জীববৈচিত্র্য ও মৎস্য খাত। মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে চায়না দুয়ারি জব্দ ও অভিযুক্তদের জরিমানা করলেও থামছে না এই দৌরাত্ম্য।সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চায়না দুয়ারি নির্মূল করা না গেলে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের জন্য তা হুমকিস্বরূপ।
চায়না দুয়ারি জালে অবাধে মাছ শিকার করছেন অসাধু শিকারিরা। এতে ধরা পড়ছে ছোট-বড় সব ধরনের মাছ। বাদ যাচ্ছে না মাছের পোনাও। মৎস্য চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিহি, সূক্ষ্ম ও চিকন সুতার বুননে চায়না দুয়ারির দুপাশে দুই হাত পর পর লোহার তৈরি গোল রিং এবং মাঝে এক হাত পর পর ৩০টির মতো চার কোনা রিং পরানো থাকে। এর মাঝে একটি করে দুয়ার।
এই জালের বিশেষত্ব হলো, পানির তলদেশে এটি লম্বালম্বিভাবে পড়ে থাকে। ফলে কোনো প্রকার টোপ ছাড়াই দুই দিক দিয়ে মাছ ও জলজ প্রাণী জালের ভেতরে ঢুকে পড়ে।
জানা যায়, সিরাজগঞ্জের মেছড়া, কাওয়কোলা, পাইকপাড়া, বিয়াড়াসহ বিভিন্ন এলাকা, কাজীপুরের মাইজবাড়ি, নাটুয়ারপাড়া, তেকানি, মনসুরনগর, খাসরাজবাড়ি, চরগ্রিস এলাকার যমুনা নদীতে, এছাড়া চলন বিলের বিভিন্ন এলাকায় চায়না দুয়ারি পেতে ছোট-বড় সব মাছ নিধন করা হচ্ছে।
বেশির ভাগ অসাধু জেলে রাতের আঁধারে এ জাল পাতে। কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়া হাটেই গোপনে এ চায়না দুয়ারি জাল বিক্রি হয় বলে জানা গেছে। মৎস্যচাষি সুখী রঞ্জন বলেন, চায়না দুয়ারি কারেন্ট জালের চেয়েও মারাত্মক ক্ষতিকর। এ কারণে চিরায়ত মাছ ধরার যেসব কৌশলে মাছ ধরে যারা জীবিকা নির্বাহ করেন, তারা হতাশ এমন পদ্ধতিতে।
বরইতলী গ্রামের জেলে চন্দি হালদার বলেন, ‘আমরা বেড় জাল নিয়া নদীত মাছ ধইরবার গেলি ওরা (চায়না দুয়ারির মালিক) নৌকার মেশিনের হ্যান্ডেল কাইড়া নেয়। মাইরধর হরে।’
ঢেকুরিয়া গ্রামের অখিল হালদার বলেন, ‘আমাগোরে সব সময় ভয়ভীতি দেহায়। মাছ কাইড়া নেয়। জালও কাইড়া নেয়। আমরা ঠিকমতো মাছ ধইরবার পারি না ওদের জ্বালাত। ছলপাল নিয়া কষ্টে দিন পার হইরতাছি।’
সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্যজীবী সমিতির আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম মন্টু বলেন, প্রকৃত মৎস্যজীবীরা চায়না দুয়ারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রকৃত মৎস্যজীবীদের মারধর করা হয়, মাছ কেড়ে নেওয়া হয়। চায়না দুয়ারি নির্মূল করা না গেলে মৎস্যজীবীরা না খেয়ে থাকবেন।
কাজীপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) হাসান মাহমুদুল হক বলেন, প্রতি মাসেই তাঁরা অভিযান চালিয়ে চায়না দুয়ারি জব্দ করে ধ্বংস করেন। নাটুয়ারপাড়ায় নিয়মিত টহলে দেখা যায়নি জাল বিক্রি করতে। তবে এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে।
এ বিষয়ে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, কারেন্ট জাল, চায়না দুয়ারী জাল ধ্বংশ সহ মৎস্য সংক্রান্ত আইনসমূহ বাস্তবায়নে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। গত জুলাই হতে অদ্যবদি সর্বমোট ৩৫৫টি অবৈধ চায়না দুয়ারি ও ১,৮৩,৫০০ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে।
প্রাণিজ আমিষের অন্যতম প্রধান উৎস মাছ রক্ষায় এ ধরনের অভিযান/ মোবাইল কোর্ট অব্যহত থাকবে ।
বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০১ আশ্বিন ১৪২৯ ১৭ সফর ১৪৪৪
জেলা বার্তা পরিবেশক, সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জের যমুনাসহ অন্যান্য নদী, চলন বিল ও বিভিন্ন জলাশয় এখন নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জালে সয়লাব। এই বিশেষ ধরনের জাল পেতে অবাধে মাছ শিকার করছেন অসাধু শিকারিরা।
এতে ধরা পড়ছে ছোট-বড় সব ধরনের মাছ। বাদ যাচ্ছে না মাছের পোনাও। এমনকি সাপ, কাঁকড়া, ব্যাঙ, শামুকসহ অধিকাংশ জলজ প্রাণী এতে আটকা পড়ছে। ফলে হুমকিতে পড়েছে জীববৈচিত্র্য ও মৎস্য খাত। মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে চায়না দুয়ারি জব্দ ও অভিযুক্তদের জরিমানা করলেও থামছে না এই দৌরাত্ম্য।সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চায়না দুয়ারি নির্মূল করা না গেলে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের জন্য তা হুমকিস্বরূপ।
চায়না দুয়ারি জালে অবাধে মাছ শিকার করছেন অসাধু শিকারিরা। এতে ধরা পড়ছে ছোট-বড় সব ধরনের মাছ। বাদ যাচ্ছে না মাছের পোনাও। মৎস্য চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিহি, সূক্ষ্ম ও চিকন সুতার বুননে চায়না দুয়ারির দুপাশে দুই হাত পর পর লোহার তৈরি গোল রিং এবং মাঝে এক হাত পর পর ৩০টির মতো চার কোনা রিং পরানো থাকে। এর মাঝে একটি করে দুয়ার।
এই জালের বিশেষত্ব হলো, পানির তলদেশে এটি লম্বালম্বিভাবে পড়ে থাকে। ফলে কোনো প্রকার টোপ ছাড়াই দুই দিক দিয়ে মাছ ও জলজ প্রাণী জালের ভেতরে ঢুকে পড়ে।
জানা যায়, সিরাজগঞ্জের মেছড়া, কাওয়কোলা, পাইকপাড়া, বিয়াড়াসহ বিভিন্ন এলাকা, কাজীপুরের মাইজবাড়ি, নাটুয়ারপাড়া, তেকানি, মনসুরনগর, খাসরাজবাড়ি, চরগ্রিস এলাকার যমুনা নদীতে, এছাড়া চলন বিলের বিভিন্ন এলাকায় চায়না দুয়ারি পেতে ছোট-বড় সব মাছ নিধন করা হচ্ছে।
বেশির ভাগ অসাধু জেলে রাতের আঁধারে এ জাল পাতে। কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়া হাটেই গোপনে এ চায়না দুয়ারি জাল বিক্রি হয় বলে জানা গেছে। মৎস্যচাষি সুখী রঞ্জন বলেন, চায়না দুয়ারি কারেন্ট জালের চেয়েও মারাত্মক ক্ষতিকর। এ কারণে চিরায়ত মাছ ধরার যেসব কৌশলে মাছ ধরে যারা জীবিকা নির্বাহ করেন, তারা হতাশ এমন পদ্ধতিতে।
বরইতলী গ্রামের জেলে চন্দি হালদার বলেন, ‘আমরা বেড় জাল নিয়া নদীত মাছ ধইরবার গেলি ওরা (চায়না দুয়ারির মালিক) নৌকার মেশিনের হ্যান্ডেল কাইড়া নেয়। মাইরধর হরে।’
ঢেকুরিয়া গ্রামের অখিল হালদার বলেন, ‘আমাগোরে সব সময় ভয়ভীতি দেহায়। মাছ কাইড়া নেয়। জালও কাইড়া নেয়। আমরা ঠিকমতো মাছ ধইরবার পারি না ওদের জ্বালাত। ছলপাল নিয়া কষ্টে দিন পার হইরতাছি।’
সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্যজীবী সমিতির আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম মন্টু বলেন, প্রকৃত মৎস্যজীবীরা চায়না দুয়ারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রকৃত মৎস্যজীবীদের মারধর করা হয়, মাছ কেড়ে নেওয়া হয়। চায়না দুয়ারি নির্মূল করা না গেলে মৎস্যজীবীরা না খেয়ে থাকবেন।
কাজীপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) হাসান মাহমুদুল হক বলেন, প্রতি মাসেই তাঁরা অভিযান চালিয়ে চায়না দুয়ারি জব্দ করে ধ্বংস করেন। নাটুয়ারপাড়ায় নিয়মিত টহলে দেখা যায়নি জাল বিক্রি করতে। তবে এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে।
এ বিষয়ে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, কারেন্ট জাল, চায়না দুয়ারী জাল ধ্বংশ সহ মৎস্য সংক্রান্ত আইনসমূহ বাস্তবায়নে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। গত জুলাই হতে অদ্যবদি সর্বমোট ৩৫৫টি অবৈধ চায়না দুয়ারি ও ১,৮৩,৫০০ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে।
প্রাণিজ আমিষের অন্যতম প্রধান উৎস মাছ রক্ষায় এ ধরনের অভিযান/ মোবাইল কোর্ট অব্যহত থাকবে ।