স্বনামধন্য ‘অনেকেরই’ অর্থপাচারের তথ্য আছে : প্রধানমন্ত্রী

দেশের ‘স্বনামধন্য’ ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই অর্থপাচারে জড়িত আছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, তার হাতে এ সম্পর্কিত তথ্য আছে। দুর্নীতি দমন কমিশন ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা খতিয়ে দেখছে। সামনে এসব প্রকাশ করা হবে।

তবে গণমাধ্যম ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে লিখবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সরকারপ্রধান।

‘সাম্প্রতিক ভারত সফর’ নিয়ে বিস্তারিত জানাতে গতকাল গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বিকেল ৪টা ৮ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন। পরনে ছিল হালকা সোনালি রঙের জামদানি শাড়ি। তার একপাশে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, অন্যপাশে সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত সফর বাংলাদেশের জন্য নতুন দিগন্তের সূচনা। সম্পর্ক সুসংহত করে এগিয়ে যেতে চাই। সফরের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন হলে দুই দেশের মানুষ উপকৃত হবে আশাবাদ ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সফরে সহযোগিতার যেসব ক্ষেত্র চিহ্নিত হয়েছে এবং বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করলে উভয় দেশের জনগণ উপকৃত হবে বলে আমি মনে করি।’

তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে এ সফরের মাধ্যমে দুই দেশের একসঙ্গে নতুনভাবে এগিয়ে চলার গতি সঞ্চার হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, উভয় দেশের জনগণের কল্যাণে এই সহযোগিতার ধারা অব্যাহত থাকবে এবং বাংলাদেশ ও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়া অচিরেই একটি সমৃদ্ধশালী অঞ্চলে পরিণত হবে।’

বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তব্য শুরু করেন। ১৫ মিনিটের বক্তেব্যে ভারত সফরের বিস্তারিত তথ্য এবং বাংলাদেশের অর্জন তুলে ধরেন তিনি। বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। প্রধানমন্ত্রী একে একে বিভিন্ন পত্রিকা, টেলিভিশন ও বার্তা সংস্থার শীর্ষ পদে থাকা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়া শুরু করেন।

প্রশ্ন করতে গিয়ে এক সাংবাদিক বলেন, ‘অর্থ পাচারের সবচেয়ে বড় উৎসব আমরা দেখেছি হাওয়া ভবনের মাধ্যমে, যদিও তারা এখন অর্থপাচার নিয়ে কথা বলে- নানা প্রসঙ্গ তুলে। সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকের প্রসঙ্গ এসেছে। সর্বশেষ আমরা দেখলাম করোনা মোকাবিলার যে সফলতা, সেটা অনেকখানি ম্লান হয়ে যাচ্ছে ডলার সংকটের কারণে।’

এরপর সম্প্রতি সিআইডির অভিযানে উঠে আসা বিকাশের মাধ্যমে পাচার হয়ে যাওয়া ৭৫ হাজার কোটি টাকার বিষয়টি উল্লেখ করে ওই সাংবাদিক বলেন, ‘যখন নির্বাচন সামনে, এইসব মাধ্যমে জঙ্গিবাদের অর্থ যায়, লন্ডনে অর্থ যায়।’

বিকাশসহ সংশ্লিষ্ট খাতের অন্যান্য প্রতিষ্ঠাগুলোকে নজরদারির আওতায় আনা হবে কি না এবং অর্থ পাচার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য জানতে চান তিনি।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই এটা নজরদারিতে আনা হয়েছে বলেই তো আপনারা জানতে পারলেন। আপনারা খুঁজে বের করেননি তো, সাংবাদিকরা বের করেনি। আবার এমন এমন অনেকেরই অর্থ পাচারের তথ্য আছে। ওটা আপনারা লিখবেন কি না আমার সন্দেহ আছে। আমি সোজা কথা বলি।

বহু তথ্য আমার কাছে... অনেকের বেপারেই... অনেক স্বনামধন্যদের ব্যাপারেও আছে। তবে হ্যাঁ, এটা দুর্নীতি দমন কমিশন এবং আমাদের ব্যাংক থেকেও এটা খোঁজ নেয়া হচ্ছে। আসবে সামনে একদিন আসবে। তবে আপনারা এটা লিখবেন কি না, আমি সেটা দেখবো।’

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (জাপা) কিংবা আওয়ামী লীগের মিত্র দলগুলো প্রতিপক্ষ বিএনপির জোটে চলে যাবে কি না সেটা ‘সময়ই বলে দেবে’ বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে তার দল আওয়ামী লীগের ‘দরজা খোলা থাকবে’ বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।

এক প্রশ্নের জবাবে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আগামী নির্বাচনে আমরা জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করব কি না সেটা সময় বলে দেবে। ভবিষ্যতে কীভাবে করব সেটি ভবিষ্যৎ বলে দেবে। আমরা পরিবেশ পরিস্থিতির আলোকে সিদ্ধান্ত নেব। তবে কেউ পৃথক নির্বাচন করলে আমাদের আপত্তি নেই। কোন দল স্বেচ্ছায় নির্বাচনে না এলে গণতন্ত্রের ধারা থেমে থাকবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ চায় সব দল নির্বাচনে আসুক। কেউ না আসলে সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। উন্নয়নের ধারাবাহিকতার কারণে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনবে জনগণ।

একজন সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, ‘ভারত সফরে বাংলাদেশ কী পেল’।

উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কী পেলাম, এই প্রশ্নটা খুব আপেক্ষিক। এটা আপনার নিজের ওপর নির্ভর করছে, আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখছেন। ভাগ্যিস প্রশ্ন করেননি কী দিলাম।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশের যে ভৌগোলিক অবস্থা, চারিদিকে ভারত, একটুখানি মায়ানমার, তারপর বে অব বেঙ্গল। বন্ধুপ্রতীম দেশ থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, যোগাযোগ সব বিষয়ে সহযোগিতাটা আমরা পাই।

নুমালিগড় থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল নিয়ে আসছি। সেই লাইনটা কিন্তু ভারত নির্মাণ করে দিচ্ছে। দিনাজপুরের পার্বতীপুর ডিপোতে এই তেলটা থাকবে। উত্তরবঙ্গে আর সুদূর চট্টগ্রাম থেকে বাঘাবাড়ি হয়ে তেল যেতে হবে না। রিফাইন করা তেল ওখান থেকেই আসবে। অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য আরও বাড়বে। উত্তরবঙ্গের মঙ্গা আমরা দূর করেছি।

পাশাপাশি ভারত থেকে এলএনজি আমদানির ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে। ভারত যে এলএনজি নিয়ে আসছে সেখান থেকে খুলনা অঞ্চলের জন্য যেন এলএনজি পেতে পারি সেই আলোচনা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মনে হয় না যে একেবারে শূন্য হাতে ফিরে এসেছি।’

ভারতের আন্তরিকতার বিষয়ে অন্য এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যথেষ্ট আন্তরিকতা আমি পেয়েছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট বা অন্য যার যার সঙ্গে কথা হয়েছে, তাদের আন্তরিকতা সবসময় ছিল, আছে। আপনারা জানেন একটা বিষয়, বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের সব দল-মত এক থাকে। এটা হলো বড় কথা।’

অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭১ সালে ভারতের সব দল-মত, জনগণ এক হয়ে আমাদের সমর্থন দিয়েছিল। আবার আমরা যখন স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়ন করি, যখন ছিটমহল বিনিময় করি, তখন দেখেছেন, ভারতের পার্লামেন্টে যখন আইনটা পাস হয়, তখন কিন্তু সব দল এক হয়ে স্থল সীমান চুক্তি আইন তারা পাস করেছিল। বন্ধুপ্রতীম দেশ তাদের সঙ্গে অবশ্যই সুসম্পর্ক থাকবে।’

তবে তিস্তা চুক্তির মতো কিছু বিষয় যে আটকে আছে, সেদিকে ইঙ্গিত করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এটা বাস্তব যে, পাশাপাশি একটি দেশের সঙ্গে নানা সমস্যা থাকতে পারে। আমি সবসময় মনে করি, সমস্যাগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়।

১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যে যুদ্ধ হয়েছিল, সেই যুদ্ধের ফলে আমাদের অনেক রেল যোগাযোগ, সড়ক যোগাযোগ অনেক কিছু বন্ধ ছিল। আমরা একে একে সেগুলো উন্মুক্ত করে দিচ্ছি এই কারণে যে, আমাদের যেসব জেলাগুলো আছে, ওই অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক কর্মকা- যা আছে, আরও যাতে গতিশীল হয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তরিকতার কোন অভাব দেখিনি। আমি যদি নিজে ভালো বন্ধু হন তবে সবাই ভালো থাকবে। আর যদি নিজে এদিক-ওদিক করেন তবে সম্পর্ক ভালো থাকে না। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত স্পষ্ট। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়।’

ক্ষমতায় আসার পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকার এ নীতিই মেনে চলেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ বলতে পারবে না এ শত্রু ও বন্ধু, তা নয়। সবারর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই আমাদের সব সমস্যার সমাধান করছি। বিশাল সমুদ্রসীমা.. ৯৬ সালের আগে তো এ ব্যাপারে কোন আলোচনাই হয়নি। ৯৬ সালে আমরা কাজ শুরু করেছিলাম।

২০০১-এ বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসলো। তারা কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেয়নি। দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পর আমরা যখন উদ্যোগ নিলাম, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেই ভারত-মায়ানমারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়ে সমাধান হয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়েছি সত্য, আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে ফাটল ধরেনি।’

সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনায় ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর স্পিচরাইটার (সচিব পদমর্যাদা) মো. নজরুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রীকে এরপর অন্য একটি অনুষ্ঠনে যোগ দিতে হবে জানিয়ে এক পর্যায়ে সঞ্চালক ‘আর একটি প্রশ্ন’ নিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ করার কথা বলেন।

তখন প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি আরও প্রশ্নের উত্তর দিতে চান। কারণ সাংবাদিকরা সচরাচর তাকে প্রশ্ন করার সুযোগ পান না। অনেকদিন পর পর তাদের সঙ্গে দেখা হয়। এরপর আরও প্রায় ২২ মিনিট চলে প্রশ্নোত্তর পর্ব। টানা এক ঘণ্টা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়ে বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নেন। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম, বেসরকারি টেলিভিশন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংবাদ সম্মেলন সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।

লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় মোট ১৩১.৫৭ কিলোমিটার (বাংলাদেশ অংশে ১২৬.৫৭ কিলোমিটার এবং ভারতের অংশে ৫ কিলোমিটার) পাইপলাইন ভারত সরকারেরর অর্থায়নে নির্মাণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ অংশের ১২৬.৫০ কিলোমিটার পাইপলাইনের মধ্যে ১২৫ কিলোমিটার পাইপালাইন স্থাপন শেষ হয়েছে। পাইপলাইন নির্মাণের ফলে জ্বালানি তেলের পরিবহন ব্যয় সাশ্রয় হবে এবং সহজে, দ্রুততম সময়ে ও প্রতিকূল পরিবেশেও দেশের উত্তরাঞ্চলের রেলের চাহিদা মোতাবেক ডিজেল ভারত থেকে আমদানি করা যাবে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে রেলওয়ে ওয়াগনের মাধ্যমে ভারত থেকে বার্ষিক ৬০-৮০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা হয়। পাইপলাইন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে বার্ষিক প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ভারত হতে ডিজেল আমদানি করা সম্ভব হবে। পার্বতীপুরে বর্তমানে স্টোরেজ ক্যাপাসিটি ১৫ হাজার মেট্রিক টন। চলমান প্রকল্পের আওতায় ২৮ হাজার ৮শ’ মেট্রিক টন স্টোরেজ ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি পাবে।

অর্থ পাচার সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘সুইস ব্যাংককে আমরা বহু আগে আমাদের ডিমান্ড পাঠিয়েছিলাম, তালিকা চেয়েছিলাম। কিন্তু আসে নাই। অনেকে কথা বলে, কথা বলে চলে যায় কিন্তু সঠিক তথ্য দিতে পারে না। আমরা মানি লন্ডারিং বন্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি।’

ডলার সংকটের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা শুধু বাংলাদেশের না। এটা বিশ্বব্যাপী দেখা দিয়েছে।’

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারতের সঙ্গে কথা হয়েছে এবং ভারত এ বিষয়ে ইতিবাচক। ভারত মনে করে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান প্রয়োজন। তবে মায়ানমারকে নিয়ে মূল সমস্যা। এ বিষয়ে একেবারেই ভ্রƒক্ষেপ নেই মায়ানমারের। তারা এ বিষয়ে কারও কথা শুনছে না।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করতে না পারায় তারা সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবে যেহেতু তারাও মানুষ এজন্য তাদের ফেলে দেয়া যাবে না।

একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক ‘মুজিব : দ্য মেকিং অব আ নেশন’ ছবিটির ফাইনাল কপি দেখেছেন কি না এবং ছবিটি কবে মুক্তি পাবে?

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক যতটুকু দেখেছেন তা ভালো লেগেছে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের শিল্পীরা দারুণ অভিনয় করেছে। আর ট্রেলার নিয়ে কিছু কথা উঠলেও মনে রাখতে হবে ট্রেলার প্রেজেন্টেবল না হলে কান চলচ্চিত্র উৎসবের মতো এত বড় উৎসবে দেখানোর অনুমতি পেত না। ‘মুজিব : দ্য মেকিং অব আ নেশন’ একটি সিনেমা এবং এটাকে সিনেমা হিসেবে দেখারই আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী ভারতে বাংলাদেশি জামদানি শাড়ির ব্যান্ডিংয়ের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, এতে বাংলাদেশের তাঁতিরা লাভবান হবে।

প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ৫ সেপ্টেম্বর চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফর শেষে গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০১ আশ্বিন ১৪২৯ ১৭ সফর ১৪৪৪

স্বনামধন্য ‘অনেকেরই’ অর্থপাচারের তথ্য আছে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

দেশের ‘স্বনামধন্য’ ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই অর্থপাচারে জড়িত আছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, তার হাতে এ সম্পর্কিত তথ্য আছে। দুর্নীতি দমন কমিশন ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা খতিয়ে দেখছে। সামনে এসব প্রকাশ করা হবে।

তবে গণমাধ্যম ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে লিখবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সরকারপ্রধান।

‘সাম্প্রতিক ভারত সফর’ নিয়ে বিস্তারিত জানাতে গতকাল গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বিকেল ৪টা ৮ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন। পরনে ছিল হালকা সোনালি রঙের জামদানি শাড়ি। তার একপাশে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, অন্যপাশে সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত সফর বাংলাদেশের জন্য নতুন দিগন্তের সূচনা। সম্পর্ক সুসংহত করে এগিয়ে যেতে চাই। সফরের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন হলে দুই দেশের মানুষ উপকৃত হবে আশাবাদ ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সফরে সহযোগিতার যেসব ক্ষেত্র চিহ্নিত হয়েছে এবং বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করলে উভয় দেশের জনগণ উপকৃত হবে বলে আমি মনে করি।’

তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে এ সফরের মাধ্যমে দুই দেশের একসঙ্গে নতুনভাবে এগিয়ে চলার গতি সঞ্চার হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, উভয় দেশের জনগণের কল্যাণে এই সহযোগিতার ধারা অব্যাহত থাকবে এবং বাংলাদেশ ও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়া অচিরেই একটি সমৃদ্ধশালী অঞ্চলে পরিণত হবে।’

বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তব্য শুরু করেন। ১৫ মিনিটের বক্তেব্যে ভারত সফরের বিস্তারিত তথ্য এবং বাংলাদেশের অর্জন তুলে ধরেন তিনি। বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। প্রধানমন্ত্রী একে একে বিভিন্ন পত্রিকা, টেলিভিশন ও বার্তা সংস্থার শীর্ষ পদে থাকা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়া শুরু করেন।

প্রশ্ন করতে গিয়ে এক সাংবাদিক বলেন, ‘অর্থ পাচারের সবচেয়ে বড় উৎসব আমরা দেখেছি হাওয়া ভবনের মাধ্যমে, যদিও তারা এখন অর্থপাচার নিয়ে কথা বলে- নানা প্রসঙ্গ তুলে। সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকের প্রসঙ্গ এসেছে। সর্বশেষ আমরা দেখলাম করোনা মোকাবিলার যে সফলতা, সেটা অনেকখানি ম্লান হয়ে যাচ্ছে ডলার সংকটের কারণে।’

এরপর সম্প্রতি সিআইডির অভিযানে উঠে আসা বিকাশের মাধ্যমে পাচার হয়ে যাওয়া ৭৫ হাজার কোটি টাকার বিষয়টি উল্লেখ করে ওই সাংবাদিক বলেন, ‘যখন নির্বাচন সামনে, এইসব মাধ্যমে জঙ্গিবাদের অর্থ যায়, লন্ডনে অর্থ যায়।’

বিকাশসহ সংশ্লিষ্ট খাতের অন্যান্য প্রতিষ্ঠাগুলোকে নজরদারির আওতায় আনা হবে কি না এবং অর্থ পাচার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য জানতে চান তিনি।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই এটা নজরদারিতে আনা হয়েছে বলেই তো আপনারা জানতে পারলেন। আপনারা খুঁজে বের করেননি তো, সাংবাদিকরা বের করেনি। আবার এমন এমন অনেকেরই অর্থ পাচারের তথ্য আছে। ওটা আপনারা লিখবেন কি না আমার সন্দেহ আছে। আমি সোজা কথা বলি।

বহু তথ্য আমার কাছে... অনেকের বেপারেই... অনেক স্বনামধন্যদের ব্যাপারেও আছে। তবে হ্যাঁ, এটা দুর্নীতি দমন কমিশন এবং আমাদের ব্যাংক থেকেও এটা খোঁজ নেয়া হচ্ছে। আসবে সামনে একদিন আসবে। তবে আপনারা এটা লিখবেন কি না, আমি সেটা দেখবো।’

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (জাপা) কিংবা আওয়ামী লীগের মিত্র দলগুলো প্রতিপক্ষ বিএনপির জোটে চলে যাবে কি না সেটা ‘সময়ই বলে দেবে’ বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে তার দল আওয়ামী লীগের ‘দরজা খোলা থাকবে’ বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।

এক প্রশ্নের জবাবে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আগামী নির্বাচনে আমরা জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করব কি না সেটা সময় বলে দেবে। ভবিষ্যতে কীভাবে করব সেটি ভবিষ্যৎ বলে দেবে। আমরা পরিবেশ পরিস্থিতির আলোকে সিদ্ধান্ত নেব। তবে কেউ পৃথক নির্বাচন করলে আমাদের আপত্তি নেই। কোন দল স্বেচ্ছায় নির্বাচনে না এলে গণতন্ত্রের ধারা থেমে থাকবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ চায় সব দল নির্বাচনে আসুক। কেউ না আসলে সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। উন্নয়নের ধারাবাহিকতার কারণে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনবে জনগণ।

একজন সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, ‘ভারত সফরে বাংলাদেশ কী পেল’।

উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কী পেলাম, এই প্রশ্নটা খুব আপেক্ষিক। এটা আপনার নিজের ওপর নির্ভর করছে, আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখছেন। ভাগ্যিস প্রশ্ন করেননি কী দিলাম।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশের যে ভৌগোলিক অবস্থা, চারিদিকে ভারত, একটুখানি মায়ানমার, তারপর বে অব বেঙ্গল। বন্ধুপ্রতীম দেশ থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, যোগাযোগ সব বিষয়ে সহযোগিতাটা আমরা পাই।

নুমালিগড় থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল নিয়ে আসছি। সেই লাইনটা কিন্তু ভারত নির্মাণ করে দিচ্ছে। দিনাজপুরের পার্বতীপুর ডিপোতে এই তেলটা থাকবে। উত্তরবঙ্গে আর সুদূর চট্টগ্রাম থেকে বাঘাবাড়ি হয়ে তেল যেতে হবে না। রিফাইন করা তেল ওখান থেকেই আসবে। অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য আরও বাড়বে। উত্তরবঙ্গের মঙ্গা আমরা দূর করেছি।

পাশাপাশি ভারত থেকে এলএনজি আমদানির ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে। ভারত যে এলএনজি নিয়ে আসছে সেখান থেকে খুলনা অঞ্চলের জন্য যেন এলএনজি পেতে পারি সেই আলোচনা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মনে হয় না যে একেবারে শূন্য হাতে ফিরে এসেছি।’

ভারতের আন্তরিকতার বিষয়ে অন্য এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যথেষ্ট আন্তরিকতা আমি পেয়েছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট বা অন্য যার যার সঙ্গে কথা হয়েছে, তাদের আন্তরিকতা সবসময় ছিল, আছে। আপনারা জানেন একটা বিষয়, বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের সব দল-মত এক থাকে। এটা হলো বড় কথা।’

অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭১ সালে ভারতের সব দল-মত, জনগণ এক হয়ে আমাদের সমর্থন দিয়েছিল। আবার আমরা যখন স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়ন করি, যখন ছিটমহল বিনিময় করি, তখন দেখেছেন, ভারতের পার্লামেন্টে যখন আইনটা পাস হয়, তখন কিন্তু সব দল এক হয়ে স্থল সীমান চুক্তি আইন তারা পাস করেছিল। বন্ধুপ্রতীম দেশ তাদের সঙ্গে অবশ্যই সুসম্পর্ক থাকবে।’

তবে তিস্তা চুক্তির মতো কিছু বিষয় যে আটকে আছে, সেদিকে ইঙ্গিত করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এটা বাস্তব যে, পাশাপাশি একটি দেশের সঙ্গে নানা সমস্যা থাকতে পারে। আমি সবসময় মনে করি, সমস্যাগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়।

১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যে যুদ্ধ হয়েছিল, সেই যুদ্ধের ফলে আমাদের অনেক রেল যোগাযোগ, সড়ক যোগাযোগ অনেক কিছু বন্ধ ছিল। আমরা একে একে সেগুলো উন্মুক্ত করে দিচ্ছি এই কারণে যে, আমাদের যেসব জেলাগুলো আছে, ওই অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক কর্মকা- যা আছে, আরও যাতে গতিশীল হয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তরিকতার কোন অভাব দেখিনি। আমি যদি নিজে ভালো বন্ধু হন তবে সবাই ভালো থাকবে। আর যদি নিজে এদিক-ওদিক করেন তবে সম্পর্ক ভালো থাকে না। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত স্পষ্ট। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়।’

ক্ষমতায় আসার পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকার এ নীতিই মেনে চলেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ বলতে পারবে না এ শত্রু ও বন্ধু, তা নয়। সবারর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই আমাদের সব সমস্যার সমাধান করছি। বিশাল সমুদ্রসীমা.. ৯৬ সালের আগে তো এ ব্যাপারে কোন আলোচনাই হয়নি। ৯৬ সালে আমরা কাজ শুরু করেছিলাম।

২০০১-এ বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসলো। তারা কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেয়নি। দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পর আমরা যখন উদ্যোগ নিলাম, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেই ভারত-মায়ানমারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়ে সমাধান হয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়েছি সত্য, আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে ফাটল ধরেনি।’

সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনায় ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর স্পিচরাইটার (সচিব পদমর্যাদা) মো. নজরুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রীকে এরপর অন্য একটি অনুষ্ঠনে যোগ দিতে হবে জানিয়ে এক পর্যায়ে সঞ্চালক ‘আর একটি প্রশ্ন’ নিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ করার কথা বলেন।

তখন প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি আরও প্রশ্নের উত্তর দিতে চান। কারণ সাংবাদিকরা সচরাচর তাকে প্রশ্ন করার সুযোগ পান না। অনেকদিন পর পর তাদের সঙ্গে দেখা হয়। এরপর আরও প্রায় ২২ মিনিট চলে প্রশ্নোত্তর পর্ব। টানা এক ঘণ্টা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়ে বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নেন। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম, বেসরকারি টেলিভিশন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংবাদ সম্মেলন সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।

লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় মোট ১৩১.৫৭ কিলোমিটার (বাংলাদেশ অংশে ১২৬.৫৭ কিলোমিটার এবং ভারতের অংশে ৫ কিলোমিটার) পাইপলাইন ভারত সরকারেরর অর্থায়নে নির্মাণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ অংশের ১২৬.৫০ কিলোমিটার পাইপলাইনের মধ্যে ১২৫ কিলোমিটার পাইপালাইন স্থাপন শেষ হয়েছে। পাইপলাইন নির্মাণের ফলে জ্বালানি তেলের পরিবহন ব্যয় সাশ্রয় হবে এবং সহজে, দ্রুততম সময়ে ও প্রতিকূল পরিবেশেও দেশের উত্তরাঞ্চলের রেলের চাহিদা মোতাবেক ডিজেল ভারত থেকে আমদানি করা যাবে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে রেলওয়ে ওয়াগনের মাধ্যমে ভারত থেকে বার্ষিক ৬০-৮০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা হয়। পাইপলাইন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে বার্ষিক প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ভারত হতে ডিজেল আমদানি করা সম্ভব হবে। পার্বতীপুরে বর্তমানে স্টোরেজ ক্যাপাসিটি ১৫ হাজার মেট্রিক টন। চলমান প্রকল্পের আওতায় ২৮ হাজার ৮শ’ মেট্রিক টন স্টোরেজ ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি পাবে।

অর্থ পাচার সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘সুইস ব্যাংককে আমরা বহু আগে আমাদের ডিমান্ড পাঠিয়েছিলাম, তালিকা চেয়েছিলাম। কিন্তু আসে নাই। অনেকে কথা বলে, কথা বলে চলে যায় কিন্তু সঠিক তথ্য দিতে পারে না। আমরা মানি লন্ডারিং বন্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি।’

ডলার সংকটের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা শুধু বাংলাদেশের না। এটা বিশ্বব্যাপী দেখা দিয়েছে।’

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারতের সঙ্গে কথা হয়েছে এবং ভারত এ বিষয়ে ইতিবাচক। ভারত মনে করে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান প্রয়োজন। তবে মায়ানমারকে নিয়ে মূল সমস্যা। এ বিষয়ে একেবারেই ভ্রƒক্ষেপ নেই মায়ানমারের। তারা এ বিষয়ে কারও কথা শুনছে না।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করতে না পারায় তারা সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবে যেহেতু তারাও মানুষ এজন্য তাদের ফেলে দেয়া যাবে না।

একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক ‘মুজিব : দ্য মেকিং অব আ নেশন’ ছবিটির ফাইনাল কপি দেখেছেন কি না এবং ছবিটি কবে মুক্তি পাবে?

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক যতটুকু দেখেছেন তা ভালো লেগেছে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের শিল্পীরা দারুণ অভিনয় করেছে। আর ট্রেলার নিয়ে কিছু কথা উঠলেও মনে রাখতে হবে ট্রেলার প্রেজেন্টেবল না হলে কান চলচ্চিত্র উৎসবের মতো এত বড় উৎসবে দেখানোর অনুমতি পেত না। ‘মুজিব : দ্য মেকিং অব আ নেশন’ একটি সিনেমা এবং এটাকে সিনেমা হিসেবে দেখারই আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী ভারতে বাংলাদেশি জামদানি শাড়ির ব্যান্ডিংয়ের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, এতে বাংলাদেশের তাঁতিরা লাভবান হবে।

প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ৫ সেপ্টেম্বর চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফর শেষে গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।