উড়োজাহাজ লিজ, ১১শ’ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ

মিশর থেকে বোয়িংয়ের দুটি উড়োজাহাজ লিজ সংক্রান্ত ১১শ’ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা) মো. আবদুর রহমান ফারুকীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তারের নেতৃত্বে একটি টিম জিজ্ঞাসাবাদ করে। আজ বিমানের আরও কিছু কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে।

মিশর থেকে বোয়িংয়ের দুটি উড়োজাহাজ লিজ সংক্রান্ত ১১শ’ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রধান কার্যালয়ে গত ১ জুন অভিযান পরিচালনা করেছিল দুদক উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন টিম। সে সময় লিজ সংক্রান্ত নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়। এর আগে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ক্রটিযুক্ত বিমান এসে রাষ্ট্রের ১১শ’ কোটি টাকা গচ্চার অভিযোগে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত করতে ২০১৪ সালে মিশরীয় দুটি বিমান লিজ নেয়া হয়। কিন্তু সেই বিমান দুটি ছিল ত্রুটিযুক্ত। কয়েকদিন চলার পরই পর্যায়ক্রমে দুটি বিমানের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। বিকল হওয়া ইঞ্জিন ৫ বছরেও ঠিক না হলেও প্রতি মাসে ১১ কোটি টাকা করে গচ্চা দেখায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। লিজ নেয়া বিমানের কোম্পানি ও ইঞ্জিন মেরামতকারী প্রতিষ্ঠানের পিছনে ৫ বছরে সব মিলিয়ে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা গচ্চা দেখানো ভর্তুকি নাকি দুর্নীতি তা খতিয়ে দেখে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যনটন মন্ত্রণলয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি অনুসন্ধানে নামে। অনুসন্ধানে নানা অনিয়ম পায় তদন্ত কমিটি। পরে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১নং সাব-কমিটির প্রাথমিক তদন্ত শেষ করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। দাখিল করা প্রতিবেদনে বিষয়টি আরও গভীরভাবে তদন্ত করার জন্য দুদকে পাঠানোর সুপারিশ ছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।

দুদকে আসা অভিযোগে থেকে জানা গেছে, ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ার (মিশর) থেকে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর নামে দুটি উড়োজাহাজ লিজ নেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড। লিজ আনার পর এক বছর না যেতেই ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি উড়োজাহাজের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। পরে উড়োজাহাজ সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে আরেকটি ইঞ্জিন ভাড়ায় আনা হয়। দেড় বছরের মাথায় ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যায় তখন ইঞ্জিন মেরামত করতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। কিন্তু কোন সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাকালে ইজিপ্ট এয়ার ও মেরামতকারী কোম্পানি– উভয়কেই অর্থ দিতে হয়েছে বিমানকে। এভাবে ইজিপ্ট এয়ার ও মেরামতকারী কোম্পানির পেছনে পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিমানের খরচ হয়েছে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা। দুটি উড়োজাহাজের জন্য প্রতি মাসে বিমান ১১ কোটি টাকা করে ভর্তুকি দিয়ে আসছিল। সেই দায় থেকে ২০২০ সালের মার্চ মাসে মুক্তি মিলেছে বিমানের। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তদন্তে এ পরিমাণ অর্থ তছরুপের তথ্য বেরিয়ে আসে।

এ ঘটনাটি অধিকতর তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সুপারিশ পাঠায় সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। দুদক ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এরপরই দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন ও সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তারের সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। পরে অনুসন্ধানের টিম অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ্? মোস্তফা কামালের দপ্তরে চিঠি পাঠান। দুদকের পাঠানো চিঠিতে উড়োজাহাজ লিজ নেয়ার দরপত্রসহ ১৩ ধরনের নথিপত্র দ্রুত সময়ের মধ্যে দুদকে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।

দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, দুদকের চাহিদা অনুযায়ী নথিপত্র পর্যালোচনার পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে গতকাল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (অভ্যন্তরীণ নীরিক্ষা) আবদুর রহমান ফারুকীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ১১ কোটি টাকা গচ্চা, ত্রুটিযুক্ত বিমান কেনাসহ নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তােেক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেয়া হবে। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০১ আশ্বিন ১৪২৯ ১৭ সফর ১৪৪৪

উড়োজাহাজ লিজ, ১১শ’ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

মিশর থেকে বোয়িংয়ের দুটি উড়োজাহাজ লিজ সংক্রান্ত ১১শ’ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা) মো. আবদুর রহমান ফারুকীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তারের নেতৃত্বে একটি টিম জিজ্ঞাসাবাদ করে। আজ বিমানের আরও কিছু কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে।

মিশর থেকে বোয়িংয়ের দুটি উড়োজাহাজ লিজ সংক্রান্ত ১১শ’ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রধান কার্যালয়ে গত ১ জুন অভিযান পরিচালনা করেছিল দুদক উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন টিম। সে সময় লিজ সংক্রান্ত নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়। এর আগে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ক্রটিযুক্ত বিমান এসে রাষ্ট্রের ১১শ’ কোটি টাকা গচ্চার অভিযোগে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত করতে ২০১৪ সালে মিশরীয় দুটি বিমান লিজ নেয়া হয়। কিন্তু সেই বিমান দুটি ছিল ত্রুটিযুক্ত। কয়েকদিন চলার পরই পর্যায়ক্রমে দুটি বিমানের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। বিকল হওয়া ইঞ্জিন ৫ বছরেও ঠিক না হলেও প্রতি মাসে ১১ কোটি টাকা করে গচ্চা দেখায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। লিজ নেয়া বিমানের কোম্পানি ও ইঞ্জিন মেরামতকারী প্রতিষ্ঠানের পিছনে ৫ বছরে সব মিলিয়ে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা গচ্চা দেখানো ভর্তুকি নাকি দুর্নীতি তা খতিয়ে দেখে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যনটন মন্ত্রণলয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি অনুসন্ধানে নামে। অনুসন্ধানে নানা অনিয়ম পায় তদন্ত কমিটি। পরে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১নং সাব-কমিটির প্রাথমিক তদন্ত শেষ করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। দাখিল করা প্রতিবেদনে বিষয়টি আরও গভীরভাবে তদন্ত করার জন্য দুদকে পাঠানোর সুপারিশ ছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।

দুদকে আসা অভিযোগে থেকে জানা গেছে, ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ার (মিশর) থেকে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর নামে দুটি উড়োজাহাজ লিজ নেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড। লিজ আনার পর এক বছর না যেতেই ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি উড়োজাহাজের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। পরে উড়োজাহাজ সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে আরেকটি ইঞ্জিন ভাড়ায় আনা হয়। দেড় বছরের মাথায় ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যায় তখন ইঞ্জিন মেরামত করতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। কিন্তু কোন সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাকালে ইজিপ্ট এয়ার ও মেরামতকারী কোম্পানি– উভয়কেই অর্থ দিতে হয়েছে বিমানকে। এভাবে ইজিপ্ট এয়ার ও মেরামতকারী কোম্পানির পেছনে পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিমানের খরচ হয়েছে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা। দুটি উড়োজাহাজের জন্য প্রতি মাসে বিমান ১১ কোটি টাকা করে ভর্তুকি দিয়ে আসছিল। সেই দায় থেকে ২০২০ সালের মার্চ মাসে মুক্তি মিলেছে বিমানের। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তদন্তে এ পরিমাণ অর্থ তছরুপের তথ্য বেরিয়ে আসে।

এ ঘটনাটি অধিকতর তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সুপারিশ পাঠায় সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। দুদক ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এরপরই দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন ও সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তারের সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। পরে অনুসন্ধানের টিম অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ্? মোস্তফা কামালের দপ্তরে চিঠি পাঠান। দুদকের পাঠানো চিঠিতে উড়োজাহাজ লিজ নেয়ার দরপত্রসহ ১৩ ধরনের নথিপত্র দ্রুত সময়ের মধ্যে দুদকে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।

দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, দুদকের চাহিদা অনুযায়ী নথিপত্র পর্যালোচনার পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে গতকাল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (অভ্যন্তরীণ নীরিক্ষা) আবদুর রহমান ফারুকীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ১১ কোটি টাকা গচ্চা, ত্রুটিযুক্ত বিমান কেনাসহ নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তােেক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেয়া হবে। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।