‘বিশ্বের বিপদ’ মোকাবিলায় সহযোগিতার আহ্বান জাতিসংঘ প্রধানের

‘বিপদে পড়া বিশ্বকে’ মোকাবিলায় সংহতি ও সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশন উদ্বোধনকালে এ আহ্বান জানান তিনি।

সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন, ভঙ্গুর বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থা, দারিদ্র্য, অসমতা, ক্ষুধা ও বিভক্তির কথা উল্লেখ করে গুতেরেস বলেন, শান্তি, মানবাধিকার ও টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে আমাদের কাজ নিয়ে বিপদের মুখে পড়েছি। গতকাল এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে আল-জাজিরা।

সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন, ‘ভঙ্গুর বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থা’, দারিদ্র্য, অসমতা, ক্ষুধা এবং বিভাজনের উল্লেখ করে মঙ্গলবার আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘শান্তি, মানবাধিকার এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য কাজ করতে গিয়ে আমরা বিপদের মুখোমুখি হয়েছি।’

সাধারণ পরিষদের উচ্চপর্যায়ের অধিবেশনের আগে জাতিসংঘ প্রধান আরও বলেন, অভিন্ন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় দরকার অব্যাহত সংহতি যা আমরা এই সংস্থায় বৃহৎ অঙ্গীকার ও সম্ভাবনার মধ্য দিয়ে প্রদর্শন করি। সবার জন্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অব্যাহত সংহতির প্রয়োজন হবে বলেও জানান তিনি।

আসামি সপ্তাহে বিশ্বের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সরকার ও রাষ্ট্র্রপ্রধান জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেবেন। সেখানে তারা পর্যায়ক্রমে বক্তব্যও রাখবেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেয়ার জন্য রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভকে মস্কোর অনুরোধে ভিসা দেয়া হয়েছে বলে রাশিয়ান কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তবে অর্ধেক প্রতিনিধি দলের জন্য ভিসা ইস্যু করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার দূত ভ্যাসিলি নেবেনজয়ার গত ২ সেপ্টেম্বর গুতেরেসকে লেখা একটি চিঠির তথ্য অনুসারে, মস্কো ওয়াশিংটনের কাছে ৫৬টি ভিসা চেয়েছিল। তবে রাশিয়ার কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ২৪টি ভিসার অনুমোদন করেছে।

১৯৪৭ সালের জাতিসংঘের ‘হেডকোয়ার্টার চুক্তি’র অধীনে যুক্তরাষ্ট্রকে সাধারণত বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য জাতিসংঘে প্রবেশের অনুমতি দিতে হয়। কিন্তু ওয়াশিংটন বলছে, নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ এবং পররাষ্ট্র নীতির কারণে তারা ভিসা প্রত্যাখ্যান করতে পারে।

জাতিসংঘ এই মাসের শুরুতে বলেছিল, রাশিয়ান প্রতিনিধি দলের ভিসা ইস্যু নিয়ে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করছে। মূলত চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিবেশী ইউক্রেনে মস্কো আক্রমণ করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের উচ্চপর্যায়ের অধিবেশন আসামি ২০ সেপ্টেম্বর শুরু হবে।

ব্রিটেনের প্রয়াত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যানুষ্ঠান আসামি সোমবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে বিশ্বের শতাধিক নেতা অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। একইদিনে জাতিসংঘে শিক্ষাসংক্রান্ত একটি শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। এতে ৯০ জন নেতা অংশ নেবেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। গুতেরেসের মুখপাত্র জানান, প্রয়াত ব্রিটিশ রানীর শেষকৃত্যে যোগ দিতে লন্ডন যাবেন না আন্তোনিও গুতেরেস। এর আগে ভয়াবহ বন্যা কবলিত পাকিস্তানকে সহায়তা দেয়ার জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বন্যাকবলিত পাকিস্তান পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক সংস্থা যে সহায়তা দিয়েছে, তা সাগরে একবিন্দু পানির মতো। বন্যায় পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ তলিয়ে গেছে। প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ মারা গেছে। দেশটির শস্য এলাকা, ঘরবাড়ি, ব্যবসাকেন্দ্র, রাস্তাঘাট, সেতু সবই বিধ্বস্ত হয়েছে বন্যায়।

গুতেরেস বলেন, বন্যাবিধ্বস্ত পাকিস্তান পুনর্গঠনে কমপক্ষে এক হাজার কোটি ডলার প্রয়োজন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, তার সফরে পাকিস্তানে সহযোগিতা বাড়বে।

সিন্ধু প্রদেশের সাক্কুর শহরে দায়িত্বরত সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, পাকিস্তানের বিপর্যয়কর পরিস্থিতি ও ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে গুরুত্বসহকারে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।

জাতিসংঘ পাকিস্তানে যে সহায়তা দিয়েছে, তা সাগরে একবিন্দু পানির মতো বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আন্তোনিও গুতেরেস আরও বলেন, ‘আমাদের ক্ষমতা ও সম্পদ সীমিত। তবে আমরা পাকিস্তানের জনগণের পাশে আছি।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, তিনি এখনই পাকিস্তানে সহায়তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাবেন।

image
আরও খবর

বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০১ আশ্বিন ১৪২৯ ১৭ সফর ১৪৪৪

‘বিশ্বের বিপদ’ মোকাবিলায় সহযোগিতার আহ্বান জাতিসংঘ প্রধানের

image

‘বিপদে পড়া বিশ্বকে’ মোকাবিলায় সংহতি ও সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশন উদ্বোধনকালে এ আহ্বান জানান তিনি।

সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন, ভঙ্গুর বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থা, দারিদ্র্য, অসমতা, ক্ষুধা ও বিভক্তির কথা উল্লেখ করে গুতেরেস বলেন, শান্তি, মানবাধিকার ও টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে আমাদের কাজ নিয়ে বিপদের মুখে পড়েছি। গতকাল এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে আল-জাজিরা।

সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন, ‘ভঙ্গুর বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থা’, দারিদ্র্য, অসমতা, ক্ষুধা এবং বিভাজনের উল্লেখ করে মঙ্গলবার আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘শান্তি, মানবাধিকার এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য কাজ করতে গিয়ে আমরা বিপদের মুখোমুখি হয়েছি।’

সাধারণ পরিষদের উচ্চপর্যায়ের অধিবেশনের আগে জাতিসংঘ প্রধান আরও বলেন, অভিন্ন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় দরকার অব্যাহত সংহতি যা আমরা এই সংস্থায় বৃহৎ অঙ্গীকার ও সম্ভাবনার মধ্য দিয়ে প্রদর্শন করি। সবার জন্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অব্যাহত সংহতির প্রয়োজন হবে বলেও জানান তিনি।

আসামি সপ্তাহে বিশ্বের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সরকার ও রাষ্ট্র্রপ্রধান জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেবেন। সেখানে তারা পর্যায়ক্রমে বক্তব্যও রাখবেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেয়ার জন্য রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভকে মস্কোর অনুরোধে ভিসা দেয়া হয়েছে বলে রাশিয়ান কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তবে অর্ধেক প্রতিনিধি দলের জন্য ভিসা ইস্যু করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার দূত ভ্যাসিলি নেবেনজয়ার গত ২ সেপ্টেম্বর গুতেরেসকে লেখা একটি চিঠির তথ্য অনুসারে, মস্কো ওয়াশিংটনের কাছে ৫৬টি ভিসা চেয়েছিল। তবে রাশিয়ার কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ২৪টি ভিসার অনুমোদন করেছে।

১৯৪৭ সালের জাতিসংঘের ‘হেডকোয়ার্টার চুক্তি’র অধীনে যুক্তরাষ্ট্রকে সাধারণত বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য জাতিসংঘে প্রবেশের অনুমতি দিতে হয়। কিন্তু ওয়াশিংটন বলছে, নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ এবং পররাষ্ট্র নীতির কারণে তারা ভিসা প্রত্যাখ্যান করতে পারে।

জাতিসংঘ এই মাসের শুরুতে বলেছিল, রাশিয়ান প্রতিনিধি দলের ভিসা ইস্যু নিয়ে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করছে। মূলত চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিবেশী ইউক্রেনে মস্কো আক্রমণ করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের উচ্চপর্যায়ের অধিবেশন আসামি ২০ সেপ্টেম্বর শুরু হবে।

ব্রিটেনের প্রয়াত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যানুষ্ঠান আসামি সোমবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে বিশ্বের শতাধিক নেতা অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। একইদিনে জাতিসংঘে শিক্ষাসংক্রান্ত একটি শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। এতে ৯০ জন নেতা অংশ নেবেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। গুতেরেসের মুখপাত্র জানান, প্রয়াত ব্রিটিশ রানীর শেষকৃত্যে যোগ দিতে লন্ডন যাবেন না আন্তোনিও গুতেরেস। এর আগে ভয়াবহ বন্যা কবলিত পাকিস্তানকে সহায়তা দেয়ার জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বন্যাকবলিত পাকিস্তান পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক সংস্থা যে সহায়তা দিয়েছে, তা সাগরে একবিন্দু পানির মতো। বন্যায় পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ তলিয়ে গেছে। প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ মারা গেছে। দেশটির শস্য এলাকা, ঘরবাড়ি, ব্যবসাকেন্দ্র, রাস্তাঘাট, সেতু সবই বিধ্বস্ত হয়েছে বন্যায়।

গুতেরেস বলেন, বন্যাবিধ্বস্ত পাকিস্তান পুনর্গঠনে কমপক্ষে এক হাজার কোটি ডলার প্রয়োজন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, তার সফরে পাকিস্তানে সহযোগিতা বাড়বে।

সিন্ধু প্রদেশের সাক্কুর শহরে দায়িত্বরত সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, পাকিস্তানের বিপর্যয়কর পরিস্থিতি ও ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে গুরুত্বসহকারে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।

জাতিসংঘ পাকিস্তানে যে সহায়তা দিয়েছে, তা সাগরে একবিন্দু পানির মতো বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আন্তোনিও গুতেরেস আরও বলেন, ‘আমাদের ক্ষমতা ও সম্পদ সীমিত। তবে আমরা পাকিস্তানের জনগণের পাশে আছি।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, তিনি এখনই পাকিস্তানে সহায়তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাবেন।