আমদানিকৃত পণ্য দ্রুত খালাস ও নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন কার্যক্রমের স্বার্থে বন্দরেই টেস্টিং ল্যাব স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। গতকাল এফবিসিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত পোর্ট অ্যান্ড শিপিংবিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির ২য় সভায় এ দাবি জানান সভাপতি। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানিকৃত পণ্যের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রাজধানীতে পাঠাতে হয়। এতে পণ্য খালাস করতে কয়েক সপ্তাহ বা মাস সময় লেগে যায় যা ব্যবসার খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে, একই সঙ্গে কারখানার নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নয়নে বন্দরে টেস্টিং ল্যাব স্থাপন ও এ সংশ্লিষ্ট সেবার মানোন্নয়ন জরুরি।’
একই সঙ্গে যেসব আমদানিকারক বহু বছর ধরে একই পণ্য আমদানি করছেন, তাদের ক্ষেত্রে প্রতিটি চালানের পণ্য পরীক্ষা না করে দৈবচয়ন ভিত্তিতে পরীক্ষা করার সুপারিশ করেছেন সভাপতি। বন্দর ও জাহাজীকরণ সংক্রান্ত সমস্যার তালিকা করে এফবিসিসিআইকে দেয়ার আহ্বান জানান এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।
তিনি বলেন, ‘দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সুষ্ঠু বন্দর কার্যক্রম জরুরি। এ লক্ষ্যে এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত রাখা হবে। একই সঙ্গে ভারত থেকে দেয়া ট্রানজিট সুবিধা কাজে লাগিয়ে স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাড়াতে হবে।
এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি মো. হাবীব উল্লাহ ডন বলেন, ‘পণ্য পরীক্ষায় ত্রুটি না পেলেও বন্দরে ১৫/২০ দিন পণ্য আটকে থাকার ফলে বন্দরের চার্জ যেমন বাড়ে, তেমনি দেরিতে পণ্য বিক্রির কারণে লোকসানও গুনতে হয় ব্যবসায়ীদের।’
এর আগে স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা জানায়, এইচএস কোডজনিত ভুলের কারণে আরোপিত জরিমানার ওপর ১৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা পান কাস্টমস কর্মকর্তারা। অনেক ক্ষেত্রে শুধু প্রণোদনার অর্থ পেতে কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের জরিমানা আরোপ করেন। এই হয়রানি বন্ধে প্রণোদনার বিধান বাতিলের আহ্বান জানান তারা।
পণ্যের এইচএস কোড অন্তর্ভুক্তিকরণকে সহজ ও নির্ভুল করতে পুরো ব্যবস্থাকে অনলাইনের আওতায় আনার পরামর্শও দেন তারা। সাত দিন চব্বিশ ঘণ্টা বন্দর সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়িত হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা।
তারা জানান, বৃহষ্পতিবার পণ্যের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হলেও শুক্র ও শনিবার পণ্য খালাস করতে পারেন না তারা। ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে পর্যাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগের দাবি জানান।
কমিটির চেয়ারম্যান ড. মো. পারভেজ সাজ্জাদ আকতার বলেন পদ্মা সেতু, পায়রা বন্দর, মোংলা বন্দর চালু হওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এসব সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বন্দর অবকাঠামোর উন্নয়নের তাগিদ দেন তিনি। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন জেটি তৈরি জরুরি বলে মন্তব্য করেন পারভেজ সাজ্জাদ আকতার।
কমিটির ডিরেক্টর ইনচার্জ এ. এম মাহবুব চৌধুরী জানান, বন্দরে কন্টেইন জট তৈরির বড় কারণ কাস্টমসের অব্যবস্থাপনা। এসব সমস্যা সমাধানে একটি সম্ভাব্য রোডম্যাপ তৈরির কথা জানান তিনি। কমিটির সদস্যদের দাবির প্রতি একাত্মতা জানিয়ে ডিরেক্টর ইনচার্জ বলেন, ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধে কাস্টমস কর্মকর্তাদের জরিমানার ওপর প্রণোদনার বিধান বাতিল করা উচিত।
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই পরিচালক বিজয় কুমার কেজরিওয়াল, হাফেজ হারুন, মো. নাসের, আক্কাস মাহমুদ, স্ট্যান্ডিং কমিটির কো- চেয়ারম্যান শাহেদ সরোয়ার, ক্যাপ্টেন এএস চৌধুরী, সৈয়দ মো. বখতিয়ার, অঞ্জন শেখর দাস, অন্য সদস্য ও এফবিসিসিআই মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।
বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০১ আশ্বিন ১৪২৯ ১৭ সফর ১৪৪৪
অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক
আমদানিকৃত পণ্য দ্রুত খালাস ও নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন কার্যক্রমের স্বার্থে বন্দরেই টেস্টিং ল্যাব স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। গতকাল এফবিসিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত পোর্ট অ্যান্ড শিপিংবিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির ২য় সভায় এ দাবি জানান সভাপতি। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানিকৃত পণ্যের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রাজধানীতে পাঠাতে হয়। এতে পণ্য খালাস করতে কয়েক সপ্তাহ বা মাস সময় লেগে যায় যা ব্যবসার খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে, একই সঙ্গে কারখানার নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নয়নে বন্দরে টেস্টিং ল্যাব স্থাপন ও এ সংশ্লিষ্ট সেবার মানোন্নয়ন জরুরি।’
একই সঙ্গে যেসব আমদানিকারক বহু বছর ধরে একই পণ্য আমদানি করছেন, তাদের ক্ষেত্রে প্রতিটি চালানের পণ্য পরীক্ষা না করে দৈবচয়ন ভিত্তিতে পরীক্ষা করার সুপারিশ করেছেন সভাপতি। বন্দর ও জাহাজীকরণ সংক্রান্ত সমস্যার তালিকা করে এফবিসিসিআইকে দেয়ার আহ্বান জানান এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।
তিনি বলেন, ‘দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সুষ্ঠু বন্দর কার্যক্রম জরুরি। এ লক্ষ্যে এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত রাখা হবে। একই সঙ্গে ভারত থেকে দেয়া ট্রানজিট সুবিধা কাজে লাগিয়ে স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাড়াতে হবে।
এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি মো. হাবীব উল্লাহ ডন বলেন, ‘পণ্য পরীক্ষায় ত্রুটি না পেলেও বন্দরে ১৫/২০ দিন পণ্য আটকে থাকার ফলে বন্দরের চার্জ যেমন বাড়ে, তেমনি দেরিতে পণ্য বিক্রির কারণে লোকসানও গুনতে হয় ব্যবসায়ীদের।’
এর আগে স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা জানায়, এইচএস কোডজনিত ভুলের কারণে আরোপিত জরিমানার ওপর ১৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা পান কাস্টমস কর্মকর্তারা। অনেক ক্ষেত্রে শুধু প্রণোদনার অর্থ পেতে কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের জরিমানা আরোপ করেন। এই হয়রানি বন্ধে প্রণোদনার বিধান বাতিলের আহ্বান জানান তারা।
পণ্যের এইচএস কোড অন্তর্ভুক্তিকরণকে সহজ ও নির্ভুল করতে পুরো ব্যবস্থাকে অনলাইনের আওতায় আনার পরামর্শও দেন তারা। সাত দিন চব্বিশ ঘণ্টা বন্দর সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়িত হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা।
তারা জানান, বৃহষ্পতিবার পণ্যের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হলেও শুক্র ও শনিবার পণ্য খালাস করতে পারেন না তারা। ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে পর্যাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগের দাবি জানান।
কমিটির চেয়ারম্যান ড. মো. পারভেজ সাজ্জাদ আকতার বলেন পদ্মা সেতু, পায়রা বন্দর, মোংলা বন্দর চালু হওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এসব সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বন্দর অবকাঠামোর উন্নয়নের তাগিদ দেন তিনি। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন জেটি তৈরি জরুরি বলে মন্তব্য করেন পারভেজ সাজ্জাদ আকতার।
কমিটির ডিরেক্টর ইনচার্জ এ. এম মাহবুব চৌধুরী জানান, বন্দরে কন্টেইন জট তৈরির বড় কারণ কাস্টমসের অব্যবস্থাপনা। এসব সমস্যা সমাধানে একটি সম্ভাব্য রোডম্যাপ তৈরির কথা জানান তিনি। কমিটির সদস্যদের দাবির প্রতি একাত্মতা জানিয়ে ডিরেক্টর ইনচার্জ বলেন, ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধে কাস্টমস কর্মকর্তাদের জরিমানার ওপর প্রণোদনার বিধান বাতিল করা উচিত।
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই পরিচালক বিজয় কুমার কেজরিওয়াল, হাফেজ হারুন, মো. নাসের, আক্কাস মাহমুদ, স্ট্যান্ডিং কমিটির কো- চেয়ারম্যান শাহেদ সরোয়ার, ক্যাপ্টেন এএস চৌধুরী, সৈয়দ মো. বখতিয়ার, অঞ্জন শেখর দাস, অন্য সদস্য ও এফবিসিসিআই মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।