টেন্ডারে নিষেধাজ্ঞা, খাবার সরবরাহে অনিশ্চয়তা

পাবনা মানসিক হাসপাতালে টেন্ডার কার্যক্রমে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় খাবার সরবরাহে অনিশ্চিয়তা দেখে দিয়েছে। এতে তৈরি হয়েছে নানামুখি জটিলতা। বন্ধ রয়েছে নতুন করে রোগী ভর্তিও।

হাসপাতালের অফিস আদেশে বলা হয়েছে, আদালত হাসপাতালের টেন্ডার কার্যক্রম অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করায় রোগীদের খাবার সরবরাহের জন্য ঠিকাদার নিযুক্ত হয়নি। এ ব্যাপারে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় খাবার সরবরাহ চলমান রাখা সম্ভব নয়। তাই পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত হাসপাতালের বহিঃবিভাগে রোগী ভর্তি বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করা হলো। একই সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের পর্যায়ক্রমে বাড়িতে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কনসালট্যান্ট ও ওয়ার্ড ডাক্তারদের নির্দেশ প্রদান করা হলো।

হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. রতন কুমার রায় জানান, ‘বিষয়টি সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বার বার জানানোর পরও কোন সমাধান হচ্ছে না। কঠিন সিদ্ধান্ত হলেও আমরা ১১ সেপ্টেম্বর থেকে বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত নতুন রোগী ভর্তি করা বন্ধ রাখছি। আমরা চাই দ্রুত বিষয়টি সমাধান হোক। ’

গত ১৪ জুন ‘রোজ এন্টারপ্রাইজ’ নামে পাবনা মানসিক হাসপাতালে রোগীদের খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে দ্রব্যের নাম উল্লেখ করার জটিলতা নিয়ে পাবনা জজকোর্টে একটি মামলা দায়ের করে। রোজ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এএইচএম ফয়সাল হোসেন বাদী হয়ে হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. আবুল বাসার মো. আসাদুজ্জামানকে বিবাদী করে মামলাটি করেন। আদালত ২৯ জুন পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বিবাদীর বিরুদ্ধে অন্তঃবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

মামলার বিষয়ে জানতে বাদী ফয়সাল হোসেনের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি গ্রহণ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. আবুল বাসার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমি এখন অবসরে আছি। আগে কী হয়েছে বলতে পারব না।’ এটুকু বলেই তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এদিকে ৩০ জুন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডা. একেএম শফিউল আযমকে স্থানীয় ক্রয় ও বাজারদর যাচাই কমিটির সভাপতি করে সাত সদস্যের কমিটি করে রোগীদের খাবার সরবরাহ করার আদেশ দেয়।

ডা. শফিউল আযম বলেন, ‘সরকারি বিধি অনুযায়ী বছরে নগদ ১০ লাখ টাকার বেশি খরচ করা যায় না। সেখানে প্রতি মাসে ৫০০ রোগীকে খাওয়াতে খরচ হচ্ছে প্রায় ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। আর এগুলো করা হচ্ছে বাকিতে। দোকানদাররাও বাকি দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তাহলে আমরা কিভাবে খাওয়াব? আমরা দ্রুত এই জটিলতা থেকে বের হতে চাই।’

এদিকে রোগী নিয়ে এসে ভর্তি করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে আসা মো. মোবারক হোসেন বলেন, ‘মেয়েকে নিয়ে এসেছি ভর্তি করতে। এসে জানলাম রোগী ভর্তি বন্ধ রয়েছে। এত কষ্ট করে এসে যদি রোগী ভর্তি করতে না পারি তাহলে এর চেয়ে কষ্টের আর কী থাকতে পারে!’

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নালিয়াটেকি গ্রামের সিরাজ উদ্দিন এসেছেন তার ছেলে খোকন মিয়াকে (২৫) নিয়ে। ১০ হাজার টাকা দিয়ে মাইক্রোবাস ভাড়া করে এসে জানতে পারেন রোগী ভর্তি বন্ধ। এবার তিনি অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে আবারও বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন বলে জানান।

বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০১ আশ্বিন ১৪২৯ ১৭ সফর ১৪৪৪

পাবনা মানসিক হাসপাতাল

টেন্ডারে নিষেধাজ্ঞা, খাবার সরবরাহে অনিশ্চয়তা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, পাবনা

পাবনা মানসিক হাসপাতালে টেন্ডার কার্যক্রমে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় খাবার সরবরাহে অনিশ্চিয়তা দেখে দিয়েছে। এতে তৈরি হয়েছে নানামুখি জটিলতা। বন্ধ রয়েছে নতুন করে রোগী ভর্তিও।

হাসপাতালের অফিস আদেশে বলা হয়েছে, আদালত হাসপাতালের টেন্ডার কার্যক্রম অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করায় রোগীদের খাবার সরবরাহের জন্য ঠিকাদার নিযুক্ত হয়নি। এ ব্যাপারে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় খাবার সরবরাহ চলমান রাখা সম্ভব নয়। তাই পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত হাসপাতালের বহিঃবিভাগে রোগী ভর্তি বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করা হলো। একই সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের পর্যায়ক্রমে বাড়িতে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কনসালট্যান্ট ও ওয়ার্ড ডাক্তারদের নির্দেশ প্রদান করা হলো।

হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. রতন কুমার রায় জানান, ‘বিষয়টি সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বার বার জানানোর পরও কোন সমাধান হচ্ছে না। কঠিন সিদ্ধান্ত হলেও আমরা ১১ সেপ্টেম্বর থেকে বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত নতুন রোগী ভর্তি করা বন্ধ রাখছি। আমরা চাই দ্রুত বিষয়টি সমাধান হোক। ’

গত ১৪ জুন ‘রোজ এন্টারপ্রাইজ’ নামে পাবনা মানসিক হাসপাতালে রোগীদের খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে দ্রব্যের নাম উল্লেখ করার জটিলতা নিয়ে পাবনা জজকোর্টে একটি মামলা দায়ের করে। রোজ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এএইচএম ফয়সাল হোসেন বাদী হয়ে হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. আবুল বাসার মো. আসাদুজ্জামানকে বিবাদী করে মামলাটি করেন। আদালত ২৯ জুন পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বিবাদীর বিরুদ্ধে অন্তঃবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

মামলার বিষয়ে জানতে বাদী ফয়সাল হোসেনের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি গ্রহণ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. আবুল বাসার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমি এখন অবসরে আছি। আগে কী হয়েছে বলতে পারব না।’ এটুকু বলেই তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এদিকে ৩০ জুন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডা. একেএম শফিউল আযমকে স্থানীয় ক্রয় ও বাজারদর যাচাই কমিটির সভাপতি করে সাত সদস্যের কমিটি করে রোগীদের খাবার সরবরাহ করার আদেশ দেয়।

ডা. শফিউল আযম বলেন, ‘সরকারি বিধি অনুযায়ী বছরে নগদ ১০ লাখ টাকার বেশি খরচ করা যায় না। সেখানে প্রতি মাসে ৫০০ রোগীকে খাওয়াতে খরচ হচ্ছে প্রায় ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। আর এগুলো করা হচ্ছে বাকিতে। দোকানদাররাও বাকি দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তাহলে আমরা কিভাবে খাওয়াব? আমরা দ্রুত এই জটিলতা থেকে বের হতে চাই।’

এদিকে রোগী নিয়ে এসে ভর্তি করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে আসা মো. মোবারক হোসেন বলেন, ‘মেয়েকে নিয়ে এসেছি ভর্তি করতে। এসে জানলাম রোগী ভর্তি বন্ধ রয়েছে। এত কষ্ট করে এসে যদি রোগী ভর্তি করতে না পারি তাহলে এর চেয়ে কষ্টের আর কী থাকতে পারে!’

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নালিয়াটেকি গ্রামের সিরাজ উদ্দিন এসেছেন তার ছেলে খোকন মিয়াকে (২৫) নিয়ে। ১০ হাজার টাকা দিয়ে মাইক্রোবাস ভাড়া করে এসে জানতে পারেন রোগী ভর্তি বন্ধ। এবার তিনি অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে আবারও বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন বলে জানান।