ঢাবি ছাত্রদলের কমিটিতে সাবেক ছাত্রলীগ!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রদলের সদ্য ঘোষিত কমিটি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, নতুন কমিটির সভাপতিসহ বেশকয়েকজন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। তবে নতুন দায়িত্ব পাওয়া সভাপতির দাবি, একটি মহল তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

গত রোববার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ৩০২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সঙ্গে ঢাবি শাখার ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী খোরশেদ আলম সোহেল সভাপতি ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলামকে সম্পাদক করে দেয়া এই কমিটি নিয়েই বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

কমিটিতে পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া একাধিক নেতা সংবাদকে বলেন, কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ‘নিজেদের লোক’ আনতে গিয়ে ঢাবি ছাত্রদলের নেতৃত্ব তুলে দিয়েছে ‘বিতর্কিতদের’ হাতে। সংগঠনের সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল ০৮-০৯ সেশনে ভর্তি হওয়ার পর হল ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হয়। একসময় সে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী হয়। হল কমিটিতে কাক্সিক্ষত পদ না পাওয়ায় জড়িত হয় ছাত্রদলের রাজনীতিতে। পরবর্তীতে মাস্টার্স শেষ করে ২০১৬ সালে হল থেকে বের হয়ে শেখ মুজিব হল ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক পদলাভের মাধ্যমে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় হয় বলে জানা গেছে।

তবে খোরশেদ আলম সোহেল বলেন, ‘আমাকে ২০১০ সালে হল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে ছাত্রদল করার কারণে। তাছাড়া ছাত্রদল একটি বৃহৎ সংগঠন। অনেকেই নেতা হওয়ার মতো যোগ্য থাকে। কিন্তু সবাইতো আর নেতা হতে পারে না। নেতা হয় দু’জন। সেই হতাশা থেকে হয়তো কেউ এসব বলে বেড়াচ্ছে।’

‘আমার বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ করার অভিযোগ নিতান্তই হাস্যকর। আমার বিরুদ্ধে একটা কুচক্রী মহল ষড়যন্ত্র করে এসব বলে বেড়াচ্ছে। তারা পারলে এর প্রমাণ দিক। আমার সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে যোগ্য মনে করেছে বিধায় আমাকে সভাপতি বানানো হয়েছে। যোগ্য মনে না হলে আমাকে নেতা বানানো হতো না।’ আর সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম ২০১৬ সালে একই হলে ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক পদলাভের পর প্রায় তিন বছর রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিল বলেও অভিযোগ।

কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ (এফ রহমান হল), তারিকুল ইসলাম তারিক এবং নাছির উদ্দিন শাওনেরও একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার অভিযোগ রয়েছে।

মাসুম বিল্লাহর বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে ছাত্রলীগের হয়ে বিভিন্ন ‘অপকর্মে’ জড়িত থাকায় একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ওরা এখন ছাত্রদলে’ শিরোনামে লীড নিউজ হয়েছিল।

সহ-সভাপতি মশিউর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক ইউসুফ হোসেন খান, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাসুদুর রহমান বাবু, সহ সাধারণ সম্পাদক আফছার উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় এবং আরেক সহ সাধারণ সম্পাদক মুন্সি সোহাগ মাত্র ছয় মাসের রাজনীতিতে বড় ভাইয়ের কল্যাণে দুটি পদবী লাভ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

আরও অভিযোগ শীর্ষ নেতার ‘ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার’ হয়ে জগন্নাথ হলের সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিয় শান্ত, মুহসীন হলের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম, জিয়া হলের সভাপতি তারেক হাসান মামুন, সাবেক আহ্বায়ক সদস্য আব্দুর রহিম রনি, সাকিব ইসলাম এবং শাহিনুর ইসলাম সহ আরও বেশকয়েকজনের কমিটিতে জায়গা হয়নি।

এক ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে কোন কথা বললেই তারা আমাদের সাংগঠনিক অভিভাবকের কাছে নালিশ দিয়ে বহিষ্কার করবে বলে হুমকি দিয়ে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করে। আমরা স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত মামলা হামলার শিকার হচ্ছি অথচ নিজ সংগঠনের শীর্ষ নেতারা দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতাদের সঙ্গে স্বৈরাচারী আচরণ করছে।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে এবং ম্যাসেঞ্জারে বার্তা দিয়েও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।

বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০১ আশ্বিন ১৪২৯ ১৭ সফর ১৪৪৪

ঢাবি ছাত্রদলের কমিটিতে সাবেক ছাত্রলীগ!

খালেদ মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রদলের সদ্য ঘোষিত কমিটি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, নতুন কমিটির সভাপতিসহ বেশকয়েকজন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। তবে নতুন দায়িত্ব পাওয়া সভাপতির দাবি, একটি মহল তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

গত রোববার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ৩০২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সঙ্গে ঢাবি শাখার ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী খোরশেদ আলম সোহেল সভাপতি ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলামকে সম্পাদক করে দেয়া এই কমিটি নিয়েই বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

কমিটিতে পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া একাধিক নেতা সংবাদকে বলেন, কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ‘নিজেদের লোক’ আনতে গিয়ে ঢাবি ছাত্রদলের নেতৃত্ব তুলে দিয়েছে ‘বিতর্কিতদের’ হাতে। সংগঠনের সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল ০৮-০৯ সেশনে ভর্তি হওয়ার পর হল ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হয়। একসময় সে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী হয়। হল কমিটিতে কাক্সিক্ষত পদ না পাওয়ায় জড়িত হয় ছাত্রদলের রাজনীতিতে। পরবর্তীতে মাস্টার্স শেষ করে ২০১৬ সালে হল থেকে বের হয়ে শেখ মুজিব হল ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক পদলাভের মাধ্যমে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় হয় বলে জানা গেছে।

তবে খোরশেদ আলম সোহেল বলেন, ‘আমাকে ২০১০ সালে হল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে ছাত্রদল করার কারণে। তাছাড়া ছাত্রদল একটি বৃহৎ সংগঠন। অনেকেই নেতা হওয়ার মতো যোগ্য থাকে। কিন্তু সবাইতো আর নেতা হতে পারে না। নেতা হয় দু’জন। সেই হতাশা থেকে হয়তো কেউ এসব বলে বেড়াচ্ছে।’

‘আমার বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ করার অভিযোগ নিতান্তই হাস্যকর। আমার বিরুদ্ধে একটা কুচক্রী মহল ষড়যন্ত্র করে এসব বলে বেড়াচ্ছে। তারা পারলে এর প্রমাণ দিক। আমার সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে যোগ্য মনে করেছে বিধায় আমাকে সভাপতি বানানো হয়েছে। যোগ্য মনে না হলে আমাকে নেতা বানানো হতো না।’ আর সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম ২০১৬ সালে একই হলে ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক পদলাভের পর প্রায় তিন বছর রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিল বলেও অভিযোগ।

কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ (এফ রহমান হল), তারিকুল ইসলাম তারিক এবং নাছির উদ্দিন শাওনেরও একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার অভিযোগ রয়েছে।

মাসুম বিল্লাহর বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে ছাত্রলীগের হয়ে বিভিন্ন ‘অপকর্মে’ জড়িত থাকায় একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ওরা এখন ছাত্রদলে’ শিরোনামে লীড নিউজ হয়েছিল।

সহ-সভাপতি মশিউর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক ইউসুফ হোসেন খান, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাসুদুর রহমান বাবু, সহ সাধারণ সম্পাদক আফছার উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় এবং আরেক সহ সাধারণ সম্পাদক মুন্সি সোহাগ মাত্র ছয় মাসের রাজনীতিতে বড় ভাইয়ের কল্যাণে দুটি পদবী লাভ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

আরও অভিযোগ শীর্ষ নেতার ‘ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার’ হয়ে জগন্নাথ হলের সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিয় শান্ত, মুহসীন হলের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম, জিয়া হলের সভাপতি তারেক হাসান মামুন, সাবেক আহ্বায়ক সদস্য আব্দুর রহিম রনি, সাকিব ইসলাম এবং শাহিনুর ইসলাম সহ আরও বেশকয়েকজনের কমিটিতে জায়গা হয়নি।

এক ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে কোন কথা বললেই তারা আমাদের সাংগঠনিক অভিভাবকের কাছে নালিশ দিয়ে বহিষ্কার করবে বলে হুমকি দিয়ে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করে। আমরা স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত মামলা হামলার শিকার হচ্ছি অথচ নিজ সংগঠনের শীর্ষ নেতারা দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতাদের সঙ্গে স্বৈরাচারী আচরণ করছে।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে এবং ম্যাসেঞ্জারে বার্তা দিয়েও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।