বৃষ্টি ও নিম্নচাপের জোয়ারে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী ২৫ কিমি. কাঁচা-পাকা রাস্তা বিধ্বস্ত

পাথরঘাটা

প্রতিনিধি, পাথরঘাটা (বরগুনা)

বরগুনার পাথরঘাটায় বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ১০ হাজেরের অধিক পরিবার পানি বন্দীসহ ৪ শতাধিক মৎস্য ঘের ও পুকুর তলিয়ে অন্তত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।

পাথরঘাটা ৪নং সদর ইউপি চেয়ারম্যান আলমগির হোসেন জানান চরলাঠিমারা, বাদুরতলা, পদ্মা, জিনতলা, কোড়ালিয়া, টেংরা, হাড়িটানা, গহরপুর গ্রামগুলিসহ সদর ইউনিয়নের বেড়ীবাধের পাশে বসবাসকারী অন্তঃত ৩ হাজার পরিবার ৪ দিনের টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে পানি বন্দী হয়ে পড়ছেন। ৬ নং কাকচিড়া ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন পল্টু জানান কাকচিড়া ইউনিয়নের বলেশ্বর নদীর মাঝের চর নামক এলাকাটিসহ বেড়ীবাধ সংলগ্ন কাকচিড়া ইউনিয়নের প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়ছেন। ৩ নং চরদুয়ানি ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাড. আব্দুর রহমান জুয়েল বলেন চরদুয়ানি ইউনিয়নের তাফালবাড়িয়া, টেংরা গ্রামসহ বলেশ্বর নদির তীরবর্তী চরদুয়ানি ইউনিয়নের অন্তঃত ১২শ পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়ছেন।

৫ নং কালমেঘা ইউনিয়ন, ২ নং নাচনাপাড়া ইউনিয়ন, ৭ নং কাঠালতলী ইউনিয়ন ও ১ নং রায়াহানপুর ইউনিয়নসহ ৪ টি ইউনিয়নেরও অন্তঃত ১২শ পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়ছেন বলে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যাদের সূত্রে জানা গেছে। নাচনাপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: ফরিদ মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমার ইউনিয়নের ৭-৮টি পয়ন্টের পানি নিষ্কাশনের জন্য স্লুইজের ব্যবস্থা করার আবেদন করলেও কর্তৃপক্ষ কোন ভ্রুক্ষেপ না দেয়ায় নাচনাপাড়া ইউনিয়নের কৃষকদের বীজতলা পচে নষ্ট হওয়ায়সহ এলাকার সাধারণ মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তিনি বলেন, যদি কোন উপায় না পাই সাধারণ মানুষের উপকারার্থে রাস্তা কেটে পানি নিষ্কাশন করতেও পারি। এছাড়া পাথরঘাটা পৌরসভার বলেশ্বর নদির পাড়ে বসবাসকারী পরিবারসহ প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়ছেন বলে জানিয়েছেন পাথরঘাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন আকন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে পানি বন্দী হওয়া পরিবারগুলোর রান্নাঘরে পানি ঢুকে পড়ায় রান্নাকরাসহ নানা সমস্যায় পড়ছেন তারা। এতে ভুক্তভুগী পরিবারগুলোর অর্ধাহারে অনাহারেসহ চরম কষ্টে জীবন যাপন করছেন। চরদুয়ানী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড তাফালবাড়ীয়া গ্রামের মো: ইউসুফ এর মেয়ে মোসা: জেসমিন বলেন তার বাবার ও তার ভাই মো: ইব্রাহিমের বাড়ির উঠানে কোমড় সমান পানি হয়ে গেছে। এতে তারা রান্নাবান্না করতে পারছেন না।

এদিকে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ৪ শতাধিক মৎস্য ঘের ও পুকুর। এতে প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি আটকে পড়ায় রোপা আমনসহ চলতি মৌসুমের কৃষির ব্যাপক ক্ষতির সম্ভবনা মনে করছেন পাথরঘাটা উপজেলার চেয়ারম্যানগনসহ কৃষকরা। তবে বৃষ্টি হওয়া বন্ধ হলে এবং জোয়ারের পানি নেমে গেলে কৃষিসহ আমন বীজতলার কোন ক্ষতির সম্ভবনা নাই বলে জানিয়েছেন পাথরঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিশির কুমার বড়াল।

এ ব্যাপারে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুফল চন্দ্র গোলদার ও পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির এর কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, নদী সংলগ্ন বসবাসকারী লোকজনের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে এবং ভুক্তভুগীদের জন্য ইতোমধ্যে বরগুনা জেলা প্রশাসক দুই টন চাল বরাদ্দ দিয়েছেন, যা তালিকা করে বিতরণ করা হবে।

মোরেলগঞ্জ

প্রতিনিধি , মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট)

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে সাগরের সৃষ্ট লগুচাপ ও টানা ৪ দিনের অতি বর্ষনে জোয়ারের পানি বৃদ্ধিতে নদীর তীরবর্তী ১০টি গ্রামের ২৫ কিলোমিটার কাঁচা পাকা রাস্তা বিধস্ত হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ৫ শতাধিক মৎস্য ঘের পুকুর পানিতে তলিয়ে গিয়ে ভেসে গেছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বিভিন্ন সেক্টরে।

হুমকির মুখে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্রীজ। স্থায়ী ভেড়িবাঁধের কার্যক্রম শুরুর দাবি গ্রামবাসীদের। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, উপকূলীয় অঞ্চল এ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার নদীর তীরবর্তী ৬ ইউনিয়নে অতিরিক্ত জোয়ারের পানি বৃদ্ধির ফলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

ভেঙ্গে গেছে বহরবুনিয়া ইউনিয়নের ফুলহাতা, ঘষিয়াখালী, বারইখালী ইউনিয়নের উত্তর বারইখালী, উত্তর সুতালড়ি, কাষ্মির, তুলাতলা, বলইবুনিয়া ইউনিয়নের শ্রেনীখালী, সদর ইউনিয়নের গাবতলা, খাউলিয়া ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া, সন্ন্যাসী, হোগলাবুনিয়ার বদনীভাঙ্গা, পাঠামারা ও সানকিভাঙ্গাসহ বিভিন্ন গ্রামের ১০ কিলোমিটারের ৪/৫টি ইট ¯্রােলিং রাস্তা বিভিন্ন স্থান থেকে ভেঙ্গে গেছে। এ ছাড়াও ১৫ কিলোমিটারের ৮/১০টি কাঁচা রাস্তা ধসে গেছে। এসবি বাজারের দুই মাস পূর্বে ভেঙ্গে যাওয়া ব্রীজটি পুননির্মাণ না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে দুই ইউনিয়নের মানুষের। গ্রামের পর গ্রামজুড়ে প্রবেশ করছে জোয়ারের পানি। জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে পড়েছে নিম্নাঞ্চলে। শত শত পরিবারের দুপুরে রান্না হচ্ছেনা জোয়ারের সময়। ৪৫০ হেক্টর সবজি ফসলে ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বহরবুনিয়ার, জিউধরা ও বারইখালীর ৫ শতাধিক মৎস্য ঘের ও ছোট বড় পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে কোটি টাকারও বেশী ক্ষতির আশংকায় পড়েছে ঘের ব্যবসায়ীরা।

কৃষি কর্মকর্তা আকাশ বৈরাগী জানান, লঘুচাপ ও জোয়ারের পানি বৃদ্ধির কারনে কৃষি সেক্টরে ধান ফসলের তেমন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। তবে, ৪৫০ হেক্টর সবজি ফসলী জমিতে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। ২/১ দিনের মধ্যে পানি নেমে গেলে তেমন ক্ষতি হবে না।

এ সম্পর্কে উপজেলা প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, জোয়ারের পানি বৃদ্ধির কারনে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটের তালিকা করা হচ্ছে। এসবি বাজারের ব্রিজটির বিষয়ে জরুরী ভিত্তিতে নির্মাণের তালিকা পাঠানো হয়েছে।

উপজেলা মৎস্য অফিসার বিনয় কুমার রায় বলেন, বিশেষ করে বহরবুনিয়া ও জিউধরা ইউনিয়নে মৎস্য ঘেরের ক্ষতির তালিকায় ৩৬৪ মৎস্য ঘের ও ১৬০টি পুকুর তলিয়ে গিয়ে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার ক্ষতির তালিকা করে উর্দ্ধতন দপ্তরে ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে।

এ সর্ম্পকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত ৪ দিনের পানি বৃদ্ধির কারনে রাস্তাঘাট সহ বিভিন্ন সেক্টরে ক্ষতির বিষয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে খোঁজ খবর নিয়ে তালিকা করা হচ্ছে। স্থায়ী ভেড়িবাঁধের বিষয়ে বাজেটের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০২ আশ্বিন ১৪২৯ ১৮ সফর ১৪৪৪

বৃষ্টি ও নিম্নচাপের জোয়ারে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী ২৫ কিমি. কাঁচা-পাকা রাস্তা বিধ্বস্ত

image

পাথরঘাটা (বরগুনা) : বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ায় ঘরবন্দী মানুষ -সংবাদ

পাথরঘাটা

প্রতিনিধি, পাথরঘাটা (বরগুনা)

বরগুনার পাথরঘাটায় বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ১০ হাজেরের অধিক পরিবার পানি বন্দীসহ ৪ শতাধিক মৎস্য ঘের ও পুকুর তলিয়ে অন্তত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।

পাথরঘাটা ৪নং সদর ইউপি চেয়ারম্যান আলমগির হোসেন জানান চরলাঠিমারা, বাদুরতলা, পদ্মা, জিনতলা, কোড়ালিয়া, টেংরা, হাড়িটানা, গহরপুর গ্রামগুলিসহ সদর ইউনিয়নের বেড়ীবাধের পাশে বসবাসকারী অন্তঃত ৩ হাজার পরিবার ৪ দিনের টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে পানি বন্দী হয়ে পড়ছেন। ৬ নং কাকচিড়া ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন পল্টু জানান কাকচিড়া ইউনিয়নের বলেশ্বর নদীর মাঝের চর নামক এলাকাটিসহ বেড়ীবাধ সংলগ্ন কাকচিড়া ইউনিয়নের প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়ছেন। ৩ নং চরদুয়ানি ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাড. আব্দুর রহমান জুয়েল বলেন চরদুয়ানি ইউনিয়নের তাফালবাড়িয়া, টেংরা গ্রামসহ বলেশ্বর নদির তীরবর্তী চরদুয়ানি ইউনিয়নের অন্তঃত ১২শ পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়ছেন।

৫ নং কালমেঘা ইউনিয়ন, ২ নং নাচনাপাড়া ইউনিয়ন, ৭ নং কাঠালতলী ইউনিয়ন ও ১ নং রায়াহানপুর ইউনিয়নসহ ৪ টি ইউনিয়নেরও অন্তঃত ১২শ পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়ছেন বলে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যাদের সূত্রে জানা গেছে। নাচনাপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: ফরিদ মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমার ইউনিয়নের ৭-৮টি পয়ন্টের পানি নিষ্কাশনের জন্য স্লুইজের ব্যবস্থা করার আবেদন করলেও কর্তৃপক্ষ কোন ভ্রুক্ষেপ না দেয়ায় নাচনাপাড়া ইউনিয়নের কৃষকদের বীজতলা পচে নষ্ট হওয়ায়সহ এলাকার সাধারণ মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তিনি বলেন, যদি কোন উপায় না পাই সাধারণ মানুষের উপকারার্থে রাস্তা কেটে পানি নিষ্কাশন করতেও পারি। এছাড়া পাথরঘাটা পৌরসভার বলেশ্বর নদির পাড়ে বসবাসকারী পরিবারসহ প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়ছেন বলে জানিয়েছেন পাথরঘাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন আকন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে পানি বন্দী হওয়া পরিবারগুলোর রান্নাঘরে পানি ঢুকে পড়ায় রান্নাকরাসহ নানা সমস্যায় পড়ছেন তারা। এতে ভুক্তভুগী পরিবারগুলোর অর্ধাহারে অনাহারেসহ চরম কষ্টে জীবন যাপন করছেন। চরদুয়ানী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড তাফালবাড়ীয়া গ্রামের মো: ইউসুফ এর মেয়ে মোসা: জেসমিন বলেন তার বাবার ও তার ভাই মো: ইব্রাহিমের বাড়ির উঠানে কোমড় সমান পানি হয়ে গেছে। এতে তারা রান্নাবান্না করতে পারছেন না।

এদিকে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ৪ শতাধিক মৎস্য ঘের ও পুকুর। এতে প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি আটকে পড়ায় রোপা আমনসহ চলতি মৌসুমের কৃষির ব্যাপক ক্ষতির সম্ভবনা মনে করছেন পাথরঘাটা উপজেলার চেয়ারম্যানগনসহ কৃষকরা। তবে বৃষ্টি হওয়া বন্ধ হলে এবং জোয়ারের পানি নেমে গেলে কৃষিসহ আমন বীজতলার কোন ক্ষতির সম্ভবনা নাই বলে জানিয়েছেন পাথরঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিশির কুমার বড়াল।

এ ব্যাপারে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুফল চন্দ্র গোলদার ও পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির এর কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, নদী সংলগ্ন বসবাসকারী লোকজনের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে এবং ভুক্তভুগীদের জন্য ইতোমধ্যে বরগুনা জেলা প্রশাসক দুই টন চাল বরাদ্দ দিয়েছেন, যা তালিকা করে বিতরণ করা হবে।

মোরেলগঞ্জ

প্রতিনিধি , মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট)

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে সাগরের সৃষ্ট লগুচাপ ও টানা ৪ দিনের অতি বর্ষনে জোয়ারের পানি বৃদ্ধিতে নদীর তীরবর্তী ১০টি গ্রামের ২৫ কিলোমিটার কাঁচা পাকা রাস্তা বিধস্ত হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ৫ শতাধিক মৎস্য ঘের পুকুর পানিতে তলিয়ে গিয়ে ভেসে গেছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বিভিন্ন সেক্টরে।

হুমকির মুখে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্রীজ। স্থায়ী ভেড়িবাঁধের কার্যক্রম শুরুর দাবি গ্রামবাসীদের। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, উপকূলীয় অঞ্চল এ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার নদীর তীরবর্তী ৬ ইউনিয়নে অতিরিক্ত জোয়ারের পানি বৃদ্ধির ফলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

ভেঙ্গে গেছে বহরবুনিয়া ইউনিয়নের ফুলহাতা, ঘষিয়াখালী, বারইখালী ইউনিয়নের উত্তর বারইখালী, উত্তর সুতালড়ি, কাষ্মির, তুলাতলা, বলইবুনিয়া ইউনিয়নের শ্রেনীখালী, সদর ইউনিয়নের গাবতলা, খাউলিয়া ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া, সন্ন্যাসী, হোগলাবুনিয়ার বদনীভাঙ্গা, পাঠামারা ও সানকিভাঙ্গাসহ বিভিন্ন গ্রামের ১০ কিলোমিটারের ৪/৫টি ইট ¯্রােলিং রাস্তা বিভিন্ন স্থান থেকে ভেঙ্গে গেছে। এ ছাড়াও ১৫ কিলোমিটারের ৮/১০টি কাঁচা রাস্তা ধসে গেছে। এসবি বাজারের দুই মাস পূর্বে ভেঙ্গে যাওয়া ব্রীজটি পুননির্মাণ না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে দুই ইউনিয়নের মানুষের। গ্রামের পর গ্রামজুড়ে প্রবেশ করছে জোয়ারের পানি। জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে পড়েছে নিম্নাঞ্চলে। শত শত পরিবারের দুপুরে রান্না হচ্ছেনা জোয়ারের সময়। ৪৫০ হেক্টর সবজি ফসলে ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বহরবুনিয়ার, জিউধরা ও বারইখালীর ৫ শতাধিক মৎস্য ঘের ও ছোট বড় পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে কোটি টাকারও বেশী ক্ষতির আশংকায় পড়েছে ঘের ব্যবসায়ীরা।

কৃষি কর্মকর্তা আকাশ বৈরাগী জানান, লঘুচাপ ও জোয়ারের পানি বৃদ্ধির কারনে কৃষি সেক্টরে ধান ফসলের তেমন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। তবে, ৪৫০ হেক্টর সবজি ফসলী জমিতে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। ২/১ দিনের মধ্যে পানি নেমে গেলে তেমন ক্ষতি হবে না।

এ সম্পর্কে উপজেলা প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, জোয়ারের পানি বৃদ্ধির কারনে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটের তালিকা করা হচ্ছে। এসবি বাজারের ব্রিজটির বিষয়ে জরুরী ভিত্তিতে নির্মাণের তালিকা পাঠানো হয়েছে।

উপজেলা মৎস্য অফিসার বিনয় কুমার রায় বলেন, বিশেষ করে বহরবুনিয়া ও জিউধরা ইউনিয়নে মৎস্য ঘেরের ক্ষতির তালিকায় ৩৬৪ মৎস্য ঘের ও ১৬০টি পুকুর তলিয়ে গিয়ে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার ক্ষতির তালিকা করে উর্দ্ধতন দপ্তরে ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে।

এ সর্ম্পকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত ৪ দিনের পানি বৃদ্ধির কারনে রাস্তাঘাট সহ বিভিন্ন সেক্টরে ক্ষতির বিষয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে খোঁজ খবর নিয়ে তালিকা করা হচ্ছে। স্থায়ী ভেড়িবাঁধের বিষয়ে বাজেটের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।