নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে বিএনপি কোন নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘যখন একটি সরকার জনগণের সমর্থন হারিয়ে রাষ্ট্রীয় যন্ত্রগুলোকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকে, পাশাপাশি নির্বাচনও করে, কিন্তু সেই নির্বাচনকেও নিয়ন্ত্রণ করে আবারও ক্ষমতায় যায়, তখন এই শাসনব্যবস্থার পুরো সিস্টেমটা সরকারের পক্ষে চলে যায়। এই সরকারও এভাবে পুরো সিস্টেমটাই তাদের পক্ষে নিয়ে গেছে। আমরা এটার প্রতিবাদেই আন্দোলন করছি।’ গতকাল ঠাকুরগাঁও শহরে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান যখন বাতিল করা হয়েছে, তখন থেকেই মূলত ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।’

‘হাইব্রিড শাসনব্যবস্থায় পরিকল্পিতভাবে একটি সুবিধাভোগী গোষ্ঠী সৃষ্টি করা হয়। এসব মানুষকে বিভিন্ন সুবিধা দেয়া হয়েছে, ঢাকায় প্লট দেয়া হয়েছে। এসব দিয়ে তাদের খুশি রাখা হচ্ছে। এই যে সুবিধাভোগী শ্রেণীটা গড়ে উঠে, এই শ্রেণীটা আর ওই জায়গা থেকে সরতে চায় না। তারা ভাবে, এ সরকারই তো ভালো। তাহলে আমাদের চুরি নিয়ে কেউ প্রশ্ন করবে না। এটা বন্ধে দেশপ্রেমিক জনগণকে বেরিয়ে আসতে হবে’, যোগ করেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশে কোন গণতন্ত্র নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকারি কর্মকর্তারা কী করছেন তার হিসাব-নিকাশও নেই। বর্তমানে যারা এমপি, চেয়ারম্যান আছেন তাদের কাজের কোন জবাবদিহিতা নেই। তারা যা খুশি তা করছেন। ফলে গোটা সিস্টেম ধ্বংস হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যা যা করা দরকার সে কাজগুলো করে যাচ্ছে। জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করছে না। তারা মুক্ত গণতন্ত্রকে বহু আগেই বিনষ্ট করে ফেলেছে।’

দেশে কারও নিরাপত্তা বা বিচার নেই মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিচার বিভাগ, পুলিশ বিভাগ, প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়কেও দলীয়করণ করা হয়েছে। এখানে (ঠাকুরগাঁওয়ে) শুনলাম প্রাথমিক সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে। যে দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে ঘুষ দিয়ে চাকরি পেতে হয়, সেখানে তাহলে সে কী পড়াবে?’

‘এই সরকার বাংলাদেশকে যে ডাস্টবিনে নামিয়ে দিয়েছে, আমাদের নেতা তারেক রহমান এ দেশকে সেখান থেকে তুলে আনতে টেক ব্যাক বাংলাদেশের ডাক দিয়েছেন। আমরা দেশকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে আসতে চাই, গণতন্ত্রের মধ্যে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে চাই, মুক্ত সমাজ ব্যবস্থায় ফিরতে চাই’, যোগ করেন তিনি।

দেশের বর্তমান অবস্থার কথা বলতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশের মানুষের বেঁচে থাকাই এখন কষ্টকর হয়ে পড়েছে। চাল, ডাল, তেল, লবণের দাম তো আকাশচুম্বী হয়েছেই, সেই সঙ্গে অন্য বিষয়ে যেমন শিক্ষা ক্ষেত্রে খরচ অনেক বেশি বেড়ে গেছে। এখন শিক্ষাব্যবস্থাকে একটা পণ্যে পরিণত করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘একইভাবে হাসপাতালে গিয়ে মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে না। কয়দিন আগে বিভিন্ন ধরনের ৫০টি ওষুধের দাম ৫৪ থেকে ১৩৫ শতাংশ বেড়েছে, যা মানুষের জন্য ভয়ঙ্কর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে মূল্য বৃদ্ধি করে মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করা হয়নি।

প্রচ- মূল্যস্ফীতি ঘটেছে। এটা সত্যি কথা, এখন মানুষ সাধারণ জীবন চালাতেই হিমশিম খাচ্ছে। এর প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।’

আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহ-সভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হকসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতারা।