প্রশিক্ষিত নার্স ও মিডওয়াইফের প্রয়োজনীয়তা

মতিউর রহমান

নার্সিং একটি সেবামূলক পেশা। অন্যান্য পেশার মতই এই পেশাও দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশেই নার্সের চাহিদা রয়েছে। এটি এমন একটি পেশা যার চাহিদা কোনো নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। একদিকে বিদেশে এ পেশায় কাজ করার সুযোগ রয়েছে; অন্যদিকে দেশে কাজ করার অপার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।

আমাদের দেশের জনসংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে নানা রোগব্যাধি। রোগব্যাধির চিকিৎসায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক গড়ে ওঠছে। এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসকদের পাশাপাশি নার্স ও মিডওয়াইফদের চাহিদাও বাঙছে। তবে দুংখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশের হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে পর্যাপ্ত ও উপযুক্ত মানসম্পন্ন নার্স ও মিডওয়াইফদের সংকট রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করেন কিন্তু তেমন কোনো উদ্যোগ চেখে পড়েনা। নার্স ও মিডওয়াইফারি শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও সেগুলো চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত এবং তাদের শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, নার্সিং নাউ এবং ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ নার্সেসসহ (আইসিএন) জাতিসংঘের একটি সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি স্বাস্থ্যকর্মী নার্স। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী নার্সের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। গত পাঁচ বছরে এই সংখ্যা বেড়েছে ৪.৭ মিলিয়ন। কিন্তু স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার জন্য তা যথেষ্ট নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বে আরও ৬০ মিলিয়ন নার্সের প্রয়োজন।

বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের সর্বশেষ তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রায় ৮৪,০০০ নিবন্ধিত নার্স ও মিডওয়াইফারি রয়েছেন, যা চাহিদার তুলনায় নগণ্য। এ কারণে প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবার স্বাভাবিক গতি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালের বেড, ডাক্তার ও নার্সের অনুপাত ১:৩ হওয়া উচিত। অর্থাৎ একজন চিকিৎসকের সঙ্গে অন্তত তিনজন নার্স থাকতে হবে। সেই অনুযায়ী, দেশে ৩০৮,৯৯১ জন নার্সের প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে নার্সিং সংকট নিরসনে আরও ২০ বছর সময় লাগবে। নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শিক্ষার জন্য দেশে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের ৯ মার্চ, ২০২২ এর তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে, আমাদের দেশে সরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি ইনস্টিটিউটের সংখ্যা ৬৮টি এবং সরকারি নার্সিং কলেজের সংখ্যা ২৩টি যার মধ্যে ১৩টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সরকারি পোস্ট গ্রাজুয়েশন ইনস্টিটিউট ২টি, স্বায়ত্তশাসিত/সামরিক প্রতিষ্ঠান ৮টি যার মধ্যে ৬টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৬০টি।

এসব প্রতিষ্ঠান ৩ বছর মেয়াদি নার্সিং ইন সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি, ৩ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি শিক্ষা প্রদান করে। এছাড়াও ৪ বছর মেয়াদি বিএসসি ইন নার্সিং, ২ বছর মেয়াদি বিএসসি ইন নার্সিং এবং দুই বছর মেয়াদি এমএসসি ইন নার্সিং কোর্স প্রদান প্রদান করে। এছাড়াও পোস্ট-বেসিক বিএসসি ইন নার্সিং ও পোস্ট-বেসিক বিএসসি ইন পাবলিক হেলথ নার্সিং, পোস্ট-বেসিক বিএসসি ইন মিডওয়াইফারি, এমএসসি ইন নার্সিং ইত্যাদি প্রদান করে। এভাবে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি বছরই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নার্স ও মিডওয়াইফ পাশ করে বের হচ্ছে। এটা সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন- পাশ করা নার্সদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা খুবই নগণ্য। আবাসন সংকট, অপর্যাপ্ত পরিবহন সুবিধা, ভাল কাজের মূল্যায়ন না করা এবং যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাবে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়াও নার্সরা তাদের পেশাকে চাকরি হিসাবেই বিবেচনা করে, পরিষেবা নয়।

এছাড়া অনেক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক নার্সিং পাশ ছাড়াও নিবন্ধনহীন ব্যক্তিদের নার্স হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে যোগ্যতা ও সেবার মানসিকতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। যা চিকিৎসাসেবার সঙ্গে কোনোভাবেই মানানসই নয়। যার ফলে ডাক্তার ও রোগীর সর্ম্পকও ভালো যায় না এবং অনেক ক্ষেত্রে রোগী ও তার স্বজনদের সঙ্গেও নার্সদের বনিবনা হয় না।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, নার্সিং পেশার উন্নয়নে বর্তমান সরকার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখলেও রোগীরা যথাযথ সেবা পাচ্ছেন না। এমনকি সাধারণ নার্সরাও তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, প্রকৃত মেধাবী নার্সিং অফিসারদের অবমূল্যায়ন, ঘুষ ও দুর্নীতির কারণে নার্সিং পেশা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নার্সিং শিক্ষা কোর্সে বিহেভিয়ার চেঞ্জ কমিউনিকেশন (বিসিসি) অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কারণ পেশাগত জীবনে নার্সদের দায়িত্ব ও যথাযথ আচরণ সম্পর্কে শিখতে হবে। তাদের মতে, বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছাতে বড় বাধা হলো নার্সের অদক্ষতা ও ব্যাপক ঘাটতি। একজন রোগীর সুস্থতার ক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের যেমন ভূমিকা রয়েছে তেমনি নার্সের ভূমিকাও কম নয়। ডাক্তার এবং নার্স এর সম্পর্ক বিপরীতমুখী নয়। তারা পরস্পরের পরিপূরক। ডাক্তার রোগীকে দেখে প্রেসক্রিপশন লিখে দেওয়ার পর নার্স রোগীকে খাওয়ানো, স্যালাইন দেওয়া ও ক্যানোলা প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে সময়মতো রোগীকে ঔষধ খাওয়ানোর দায়িত্ব নিতে হয়। রোগীর অবস্থা খারাপ হলে নার্সই প্রথম ছুটে আসেন। সুতরাং. নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত নার্স নিয়োগ করতে হবে।

প্রায় সব জেলা ও উপজেলা শহরে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। আরও তৈরি হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতি বছর নার্সের প্রয়োজন হয় এবং বাংলাদেশ সরকারের সেবা বিভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠানে নার্স নিয়োগ করে। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমেও নার্স নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। আমাদের দেশে নার্সের সংখ্যা এখনও প্রয়োজনের তুলনায় কম। তাই নার্স হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার পর তুলনামূলক দ্রুত চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এ বিষয়ে পঙার পর দেশে বিদেশে সর্বত্রই ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে। তাই প্রশিক্ষিত ও দক্ষ নার্স এবং মিডওয়াইফ গড়ে তোলা সময়ের সময়ের চাহিদাতে পরিণত হয়েছে।

সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, সমাজসেবা বিভাগ, হোটেল, মোটেল, এনজিও, আইএনজিও, স্বাস্থ্য প্রকল্প, গবেষণা এমনকি পর্যটন কর্পোরেশনেও নার্স ও মিডওয়াইফ হিসাবে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে। আমাদের দেশে এবং বিদেশে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ নার্সিং পেশার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। নার্সিং এবং মিডওয়াইফারি পেশা একটি দায়িত্বশীল পেশা। এ পেশায় আসতে হলে মানুষের সেবা করার মানসিকতা থাকতে হবে। এখানে কেউ খুব নিবিড়ভাবে মানুষের সেবা করতে পারে। এই প্রতিশ্রুতিশীল পেশায় আর্থিক স্বচ্ছলতা এবং মর্যাদা দুটোই রয়েছে। এই সেবা পেশায় সামাজিক অবস্থার উন্নতি এবং ভালো আয়ের সুযোগও রয়েছে। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আরও নার্সিং ও মিডওয়াইফারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা জরুরি।

[লেখক : গবেষক ও উন্নয়নকর্মী]

শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০২ আশ্বিন ১৪২৯ ১৮ সফর ১৪৪৪

প্রশিক্ষিত নার্স ও মিডওয়াইফের প্রয়োজনীয়তা

মতিউর রহমান

নার্সিং একটি সেবামূলক পেশা। অন্যান্য পেশার মতই এই পেশাও দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশেই নার্সের চাহিদা রয়েছে। এটি এমন একটি পেশা যার চাহিদা কোনো নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। একদিকে বিদেশে এ পেশায় কাজ করার সুযোগ রয়েছে; অন্যদিকে দেশে কাজ করার অপার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।

আমাদের দেশের জনসংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে নানা রোগব্যাধি। রোগব্যাধির চিকিৎসায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক গড়ে ওঠছে। এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসকদের পাশাপাশি নার্স ও মিডওয়াইফদের চাহিদাও বাঙছে। তবে দুংখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশের হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে পর্যাপ্ত ও উপযুক্ত মানসম্পন্ন নার্স ও মিডওয়াইফদের সংকট রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করেন কিন্তু তেমন কোনো উদ্যোগ চেখে পড়েনা। নার্স ও মিডওয়াইফারি শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও সেগুলো চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত এবং তাদের শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, নার্সিং নাউ এবং ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ নার্সেসসহ (আইসিএন) জাতিসংঘের একটি সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি স্বাস্থ্যকর্মী নার্স। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী নার্সের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। গত পাঁচ বছরে এই সংখ্যা বেড়েছে ৪.৭ মিলিয়ন। কিন্তু স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার জন্য তা যথেষ্ট নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বে আরও ৬০ মিলিয়ন নার্সের প্রয়োজন।

বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের সর্বশেষ তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রায় ৮৪,০০০ নিবন্ধিত নার্স ও মিডওয়াইফারি রয়েছেন, যা চাহিদার তুলনায় নগণ্য। এ কারণে প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবার স্বাভাবিক গতি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালের বেড, ডাক্তার ও নার্সের অনুপাত ১:৩ হওয়া উচিত। অর্থাৎ একজন চিকিৎসকের সঙ্গে অন্তত তিনজন নার্স থাকতে হবে। সেই অনুযায়ী, দেশে ৩০৮,৯৯১ জন নার্সের প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে নার্সিং সংকট নিরসনে আরও ২০ বছর সময় লাগবে। নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শিক্ষার জন্য দেশে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের ৯ মার্চ, ২০২২ এর তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে, আমাদের দেশে সরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি ইনস্টিটিউটের সংখ্যা ৬৮টি এবং সরকারি নার্সিং কলেজের সংখ্যা ২৩টি যার মধ্যে ১৩টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সরকারি পোস্ট গ্রাজুয়েশন ইনস্টিটিউট ২টি, স্বায়ত্তশাসিত/সামরিক প্রতিষ্ঠান ৮টি যার মধ্যে ৬টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৬০টি।

এসব প্রতিষ্ঠান ৩ বছর মেয়াদি নার্সিং ইন সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি, ৩ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি শিক্ষা প্রদান করে। এছাড়াও ৪ বছর মেয়াদি বিএসসি ইন নার্সিং, ২ বছর মেয়াদি বিএসসি ইন নার্সিং এবং দুই বছর মেয়াদি এমএসসি ইন নার্সিং কোর্স প্রদান প্রদান করে। এছাড়াও পোস্ট-বেসিক বিএসসি ইন নার্সিং ও পোস্ট-বেসিক বিএসসি ইন পাবলিক হেলথ নার্সিং, পোস্ট-বেসিক বিএসসি ইন মিডওয়াইফারি, এমএসসি ইন নার্সিং ইত্যাদি প্রদান করে। এভাবে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি বছরই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নার্স ও মিডওয়াইফ পাশ করে বের হচ্ছে। এটা সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন- পাশ করা নার্সদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা খুবই নগণ্য। আবাসন সংকট, অপর্যাপ্ত পরিবহন সুবিধা, ভাল কাজের মূল্যায়ন না করা এবং যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাবে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়াও নার্সরা তাদের পেশাকে চাকরি হিসাবেই বিবেচনা করে, পরিষেবা নয়।

এছাড়া অনেক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক নার্সিং পাশ ছাড়াও নিবন্ধনহীন ব্যক্তিদের নার্স হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে যোগ্যতা ও সেবার মানসিকতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। যা চিকিৎসাসেবার সঙ্গে কোনোভাবেই মানানসই নয়। যার ফলে ডাক্তার ও রোগীর সর্ম্পকও ভালো যায় না এবং অনেক ক্ষেত্রে রোগী ও তার স্বজনদের সঙ্গেও নার্সদের বনিবনা হয় না।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, নার্সিং পেশার উন্নয়নে বর্তমান সরকার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখলেও রোগীরা যথাযথ সেবা পাচ্ছেন না। এমনকি সাধারণ নার্সরাও তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, প্রকৃত মেধাবী নার্সিং অফিসারদের অবমূল্যায়ন, ঘুষ ও দুর্নীতির কারণে নার্সিং পেশা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নার্সিং শিক্ষা কোর্সে বিহেভিয়ার চেঞ্জ কমিউনিকেশন (বিসিসি) অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কারণ পেশাগত জীবনে নার্সদের দায়িত্ব ও যথাযথ আচরণ সম্পর্কে শিখতে হবে। তাদের মতে, বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছাতে বড় বাধা হলো নার্সের অদক্ষতা ও ব্যাপক ঘাটতি। একজন রোগীর সুস্থতার ক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের যেমন ভূমিকা রয়েছে তেমনি নার্সের ভূমিকাও কম নয়। ডাক্তার এবং নার্স এর সম্পর্ক বিপরীতমুখী নয়। তারা পরস্পরের পরিপূরক। ডাক্তার রোগীকে দেখে প্রেসক্রিপশন লিখে দেওয়ার পর নার্স রোগীকে খাওয়ানো, স্যালাইন দেওয়া ও ক্যানোলা প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে সময়মতো রোগীকে ঔষধ খাওয়ানোর দায়িত্ব নিতে হয়। রোগীর অবস্থা খারাপ হলে নার্সই প্রথম ছুটে আসেন। সুতরাং. নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত নার্স নিয়োগ করতে হবে।

প্রায় সব জেলা ও উপজেলা শহরে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। আরও তৈরি হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতি বছর নার্সের প্রয়োজন হয় এবং বাংলাদেশ সরকারের সেবা বিভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠানে নার্স নিয়োগ করে। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমেও নার্স নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। আমাদের দেশে নার্সের সংখ্যা এখনও প্রয়োজনের তুলনায় কম। তাই নার্স হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার পর তুলনামূলক দ্রুত চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এ বিষয়ে পঙার পর দেশে বিদেশে সর্বত্রই ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে। তাই প্রশিক্ষিত ও দক্ষ নার্স এবং মিডওয়াইফ গড়ে তোলা সময়ের সময়ের চাহিদাতে পরিণত হয়েছে।

সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, সমাজসেবা বিভাগ, হোটেল, মোটেল, এনজিও, আইএনজিও, স্বাস্থ্য প্রকল্প, গবেষণা এমনকি পর্যটন কর্পোরেশনেও নার্স ও মিডওয়াইফ হিসাবে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে। আমাদের দেশে এবং বিদেশে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ নার্সিং পেশার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। নার্সিং এবং মিডওয়াইফারি পেশা একটি দায়িত্বশীল পেশা। এ পেশায় আসতে হলে মানুষের সেবা করার মানসিকতা থাকতে হবে। এখানে কেউ খুব নিবিড়ভাবে মানুষের সেবা করতে পারে। এই প্রতিশ্রুতিশীল পেশায় আর্থিক স্বচ্ছলতা এবং মর্যাদা দুটোই রয়েছে। এই সেবা পেশায় সামাজিক অবস্থার উন্নতি এবং ভালো আয়ের সুযোগও রয়েছে। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আরও নার্সিং ও মিডওয়াইফারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা জরুরি।

[লেখক : গবেষক ও উন্নয়নকর্মী]