রংপুরে ডিবি পুলিশের দুই এসআইয়ের ঘুষবাণিজ্য

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সিটি ডিবিতে কর্মরত দুই এসআইয়ের বিরুদ্ধে ঘুষবাণিজ্য, সাধারণ মানুষকে মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী বানিয়ে অর্থ আদায় নানা অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনায় লিখিত অভিযোগ করেও দীর্ঘ এক মাসেরও অধিক সময়ে কোন প্রতিকার পায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। উল্টো অভিযোগ পাবার পরেও কোন ব্যবস্থা না নিয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনের রিজার্ভ ইন্সপেক্টরের কাছে অভিযোগ পাঠিয়ে দেবার অভিযোগ উঠেছে পুরো ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর দেয়া ৪ আগস্ট লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৮ জুলাই রাত অনুমান সাড়ে ৯টার দিকে গোপনসংবাদের উপর ভিত্তি করে সিটি ডিবি পুলিশ রংপুর নগরীর মুলাটোল পুকুরপাড় এলাকায় জনৈক কমল পালের চার তলা বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দ্বিতীয় তলার ভাড়াটিয়া নাজমুল হোসেনকে ১০ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার করে। ওই অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিটি ডিবির দুই এস আই নাজমুল হোসেন ও গোলাম মোর্শেদসহ ডিবির সদস্যরা। ওই সময় বাড়ির নিচতলায় ব্যাচেলর ভাড়াটিয়া লিটনের রুমে ডা. জাহিদ হাসানসহ ২-৩ জনকে দেখতে পেয়ে ডিবি পুলিশ তাদের বেদম মারধর করে। এ সময় ডা. জাহিদ হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বিশ্বজিৎ কুমার দাসকে মোবাইল ফোনে জানালে সে এবং ওই এলাকার ডিশ ব্যবসায়ী সুলতানসহ সেখানে গেলে ডিবি পুলিশের দুই এসআই তাদের উদ্ধার করা ১০ বোতল ফেনসিডিলের জব্দ তালিকায় স্বাক্ষর গ্রহণ করে। এ সময় ডা. জাহিদ মাদক ব্যবসায়ী বা মাদকসেবী নয় বলে জানিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ জানালে এসআই নাজমুল ও এসআই গোলাম মোরশেদ তাদের অনুরোধ উপেক্ষা করে তারা ফোন দিলে ডিবি অফিসে গিয়ে ডা. জাহিদকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। এক ঘণ্টা পর ডিবির এসআই নাজমুল বিশ্বজিৎকে এবং এসআই মোরশেদ ডিশ ব্যবসায়ী সুলতানকে মোবাইল ফোনে ডিবি অফিসে আসতে বলে। রাত ১২টার দিকে ডিবি অফিসে গেলে ওই ডিবির দুই এসআই তাদের দু’টি অপশন দেয়। প্রথমত, তারা ডা. জাহিদকে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে কোর্টে চালান দেবে দ্বিতীয় অপশন এক লাখ টাকা ঘুষ দিলে পরের দিন ডা. জাহিদকে মাদকসেবী হিসেবে আদালত থেকে জামিন নিতে হবে। এ সময় বিশ্বজিৎ ডিশ ব্যবসায়ী সুলতানের সামনে এসআই নাজমুলের হাতে ৪০ হাজার টাকা ঘুষ প্রদান করে। এরপর দুই এসআই কোন টাকা পয়সা নেয় নাই মর্মে ডা. জাহিদ ও বিশ্বজিতের বক্তব্য ভিডিওচিত্র ধারণ করে রাখে। তারা বলেন, পরের দিন বাকী সকাল ১১টার মধ্যে বাকী ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। তাদের দেয়া শর্ত অনুযায়ী পরের দিন আবারও ৩০ হাজার টাকা তাদের দেয়া হয়। এ সময় বিশ্বজিত কৌশলে টাকা দেয়ায় এসআই নাজমুলের বক্তব্য মোবাইল ফোনে অডিও করে রাখা হয়। এর মধ্যে জানা যায়, অন্য আটককৃতদের কাছেও মোটা অংকের অর্থ ঘুষ নিয়েছে ওই দুই ডিবি পুলিশের এসআই। এরপর তারা আদালতে এক মুহুরিকে ফোন করে ৬ জন আসামিকে মাদক সেবী হিসেবে আদালতে চালান দেয় এবং তাদের যেন ছাড়িয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। অভিযোগ কারী লিখিত অভিযোগে আরও জানান, তারা বেশকয়েকবার ডিবি অফিসে যাতায়াত করার ভিডিও অফিসের সিসি ক্যামেরা পরীক্ষা করলে পাওয়া যাবে।

একই তারিখ ৪-০৮-২২ইং তারিখে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর নগরীর মুলাটোল এলাকার ইন্টানেট ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেন অভিযোগ করেন একটি মামলায় সাক্ষী হওয়ার কারণে সাবেক এসআই এরশাদ বাদীর সাক্ষর জ্বাল করে আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দেয়ার বিরুদ্ধে আদালতে নারাজী আবেদন করেন সেই মামলার বাদী। এ ঘটনা পুলিশের ডিসিপ্লিন পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম তদন্ত করতে আসলে সোহরাব হোসেন সাক্ষ্য দেয়ায় এসআই এরশাদ তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয় ওই এসআই অনত্র বদলী হওয়ায় এসআই নাজমুল ও এসআই মোরশেদকে তাকে শায়েস্তা করার কথা বলে। এরই কারণে নগরীর মুলাটোল এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে ১০০ বোতল ফেনসিডিলসহ মাদক ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন সাকিব নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু আদালতে ১০০ বোতলের পরিবর্তে ৫৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখিয়ে এবং তাকে মুলাটোলের পরিবর্তে নগরীর টেক্সটাইল মোড় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার দেখায়। শুধু তাই নয় মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে ১০০ বোতলের স্থলে ৫৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখিয়ে মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে ফেনসিডিলসহ প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়। কিন্তু মামলা করার সময় সোহরাব হোসেনের নাম এজাহারে ঢুকিয়ে দেয়। দুই এসআই যে ১০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে তার ভিডিও চিত্র ও মাদক ব্যবসায়ীর বক্তব্য সম্বলিত ভিডিওচিত্র সংরক্ষিত আছে বলে জানায়। দুটি ঘটনার লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরেও মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার দপ্তর থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের নব নিযুক্ত কমিশনার নুরে আলম মীনার কাছে তার যোগদান উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান। পরে কমিশনার কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায় অভিযোগ দুটি রিজার্ভ ইন্সপেক্টর মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছে। কেন পাঠানো হয়েছে তার কোন সদুত্তোর মেলেনি। এমনকি কোন ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি।

সার্বিক বিষয় জানতে এসআই নাজমুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন বলে জানান অন্যদিকে এসআই মোরশেদ ফোন রিসিভ করেননি।

শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৩ আশ্বিন ১৪২৯ ১৯ সফর ১৪৪৪

রংপুরে ডিবি পুলিশের দুই এসআইয়ের ঘুষবাণিজ্য

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সিটি ডিবিতে কর্মরত দুই এসআইয়ের বিরুদ্ধে ঘুষবাণিজ্য, সাধারণ মানুষকে মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী বানিয়ে অর্থ আদায় নানা অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনায় লিখিত অভিযোগ করেও দীর্ঘ এক মাসেরও অধিক সময়ে কোন প্রতিকার পায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। উল্টো অভিযোগ পাবার পরেও কোন ব্যবস্থা না নিয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনের রিজার্ভ ইন্সপেক্টরের কাছে অভিযোগ পাঠিয়ে দেবার অভিযোগ উঠেছে পুরো ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর দেয়া ৪ আগস্ট লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৮ জুলাই রাত অনুমান সাড়ে ৯টার দিকে গোপনসংবাদের উপর ভিত্তি করে সিটি ডিবি পুলিশ রংপুর নগরীর মুলাটোল পুকুরপাড় এলাকায় জনৈক কমল পালের চার তলা বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দ্বিতীয় তলার ভাড়াটিয়া নাজমুল হোসেনকে ১০ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার করে। ওই অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিটি ডিবির দুই এস আই নাজমুল হোসেন ও গোলাম মোর্শেদসহ ডিবির সদস্যরা। ওই সময় বাড়ির নিচতলায় ব্যাচেলর ভাড়াটিয়া লিটনের রুমে ডা. জাহিদ হাসানসহ ২-৩ জনকে দেখতে পেয়ে ডিবি পুলিশ তাদের বেদম মারধর করে। এ সময় ডা. জাহিদ হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বিশ্বজিৎ কুমার দাসকে মোবাইল ফোনে জানালে সে এবং ওই এলাকার ডিশ ব্যবসায়ী সুলতানসহ সেখানে গেলে ডিবি পুলিশের দুই এসআই তাদের উদ্ধার করা ১০ বোতল ফেনসিডিলের জব্দ তালিকায় স্বাক্ষর গ্রহণ করে। এ সময় ডা. জাহিদ মাদক ব্যবসায়ী বা মাদকসেবী নয় বলে জানিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ জানালে এসআই নাজমুল ও এসআই গোলাম মোরশেদ তাদের অনুরোধ উপেক্ষা করে তারা ফোন দিলে ডিবি অফিসে গিয়ে ডা. জাহিদকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। এক ঘণ্টা পর ডিবির এসআই নাজমুল বিশ্বজিৎকে এবং এসআই মোরশেদ ডিশ ব্যবসায়ী সুলতানকে মোবাইল ফোনে ডিবি অফিসে আসতে বলে। রাত ১২টার দিকে ডিবি অফিসে গেলে ওই ডিবির দুই এসআই তাদের দু’টি অপশন দেয়। প্রথমত, তারা ডা. জাহিদকে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে কোর্টে চালান দেবে দ্বিতীয় অপশন এক লাখ টাকা ঘুষ দিলে পরের দিন ডা. জাহিদকে মাদকসেবী হিসেবে আদালত থেকে জামিন নিতে হবে। এ সময় বিশ্বজিৎ ডিশ ব্যবসায়ী সুলতানের সামনে এসআই নাজমুলের হাতে ৪০ হাজার টাকা ঘুষ প্রদান করে। এরপর দুই এসআই কোন টাকা পয়সা নেয় নাই মর্মে ডা. জাহিদ ও বিশ্বজিতের বক্তব্য ভিডিওচিত্র ধারণ করে রাখে। তারা বলেন, পরের দিন বাকী সকাল ১১টার মধ্যে বাকী ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। তাদের দেয়া শর্ত অনুযায়ী পরের দিন আবারও ৩০ হাজার টাকা তাদের দেয়া হয়। এ সময় বিশ্বজিত কৌশলে টাকা দেয়ায় এসআই নাজমুলের বক্তব্য মোবাইল ফোনে অডিও করে রাখা হয়। এর মধ্যে জানা যায়, অন্য আটককৃতদের কাছেও মোটা অংকের অর্থ ঘুষ নিয়েছে ওই দুই ডিবি পুলিশের এসআই। এরপর তারা আদালতে এক মুহুরিকে ফোন করে ৬ জন আসামিকে মাদক সেবী হিসেবে আদালতে চালান দেয় এবং তাদের যেন ছাড়িয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। অভিযোগ কারী লিখিত অভিযোগে আরও জানান, তারা বেশকয়েকবার ডিবি অফিসে যাতায়াত করার ভিডিও অফিসের সিসি ক্যামেরা পরীক্ষা করলে পাওয়া যাবে।

একই তারিখ ৪-০৮-২২ইং তারিখে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর নগরীর মুলাটোল এলাকার ইন্টানেট ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেন অভিযোগ করেন একটি মামলায় সাক্ষী হওয়ার কারণে সাবেক এসআই এরশাদ বাদীর সাক্ষর জ্বাল করে আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দেয়ার বিরুদ্ধে আদালতে নারাজী আবেদন করেন সেই মামলার বাদী। এ ঘটনা পুলিশের ডিসিপ্লিন পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম তদন্ত করতে আসলে সোহরাব হোসেন সাক্ষ্য দেয়ায় এসআই এরশাদ তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয় ওই এসআই অনত্র বদলী হওয়ায় এসআই নাজমুল ও এসআই মোরশেদকে তাকে শায়েস্তা করার কথা বলে। এরই কারণে নগরীর মুলাটোল এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে ১০০ বোতল ফেনসিডিলসহ মাদক ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন সাকিব নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু আদালতে ১০০ বোতলের পরিবর্তে ৫৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখিয়ে এবং তাকে মুলাটোলের পরিবর্তে নগরীর টেক্সটাইল মোড় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার দেখায়। শুধু তাই নয় মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে ১০০ বোতলের স্থলে ৫৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখিয়ে মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে ফেনসিডিলসহ প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়। কিন্তু মামলা করার সময় সোহরাব হোসেনের নাম এজাহারে ঢুকিয়ে দেয়। দুই এসআই যে ১০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে তার ভিডিও চিত্র ও মাদক ব্যবসায়ীর বক্তব্য সম্বলিত ভিডিওচিত্র সংরক্ষিত আছে বলে জানায়। দুটি ঘটনার লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরেও মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার দপ্তর থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের নব নিযুক্ত কমিশনার নুরে আলম মীনার কাছে তার যোগদান উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান। পরে কমিশনার কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায় অভিযোগ দুটি রিজার্ভ ইন্সপেক্টর মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছে। কেন পাঠানো হয়েছে তার কোন সদুত্তোর মেলেনি। এমনকি কোন ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি।

সার্বিক বিষয় জানতে এসআই নাজমুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন বলে জানান অন্যদিকে এসআই মোরশেদ ফোন রিসিভ করেননি।