রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার ইউরোপ-আমেরিকা নিয়ে যখন শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন সময় আশার আলো দেখাচ্ছে অপ্রচলিত বাজার। আগে যেসব বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কম হতো এখন সেসব বাজারে রপ্তানি বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশ থেকে ১২০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে বলে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে। এ সময়ে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৩৮ শতাংশ। এ আয় বাড়াতে আরও নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। নতুন বাজার ধরার বিষয়টিকে কৌশল হিসেবে নিয়েছেন তারা।
সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই ও অগাস্টে ৭১১ কোটি ২৬ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে অপ্রচলিত বাজারের অংশ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে হয়েছে ১২০ কোটি ডলার। এসময়ে ভারতে রপ্তানি বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। জাপানের বাজারেও ভালো করেছে এদেশের পোশাক।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোই বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির মূল বাজার। এর বাইরে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, জাপান, কোরিয়া, চীন ও ভারতসহ অন্য দেশকে অপ্রচলিত বাজার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এসব দেশে এতদিন খুব বেশি পোশাক রপ্তানি না হওয়ায় চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসের রপ্তানি আয়ের তথ্যে এ ব্যবসায়ী নেতার মতো অন্য রপ্তানিকারকরাও কার্যাদেশ কমার শঙ্কার মধ্যেও আশাবাদী হচ্ছেন।
বিজিএমইএর বিশ্লেষণে দেখা যায়, অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে অন্যতম জাপানে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ২১ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের পোশাকপণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছর একই সময়ের চেয়ে ২৫ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১৭ কোটি ২৯ লাখ ডলারের পণ্য। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ভারতে পোশাক রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৯৮ দশমিক ৯২ শতাংশ বেড়ে ১৮ কোটি ৮২ লাখ ডলার হয়েছে। তবে যুদ্ধের প্রভাবে হোঁচট খেয়েছে রাশিয়ার বাজারে। সেখানে ৫৮ দশমিক ২৯ শতাংশ কমে ২ কোটি ৯০ লাখ ডলারে নেমেছে পোশাক রপ্তানি। আর অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে চীনে ১৩ দশমিক ২১ শতাংশ কমে রপ্তানি ৩ কোটি ৩৮ লাখ ডলারে ঠেকেছে।
এ সময়ের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে ৩৪৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যাতে প্রবৃদ্ধি এসেছে ২৩ দশমিক ২১ শতাংশ। ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে একক দেশ হিসেবে জার্মানিতে ১৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ, স্পেনে ২৪ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং ফ্রান্সে ৩৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ১৪১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা ২০২১-২০২২ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি। একইভাবে যুক্তরাজ্যে ৩৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং কানাডায় ১৮ দশমিক ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে পোশাক রপ্তানির বিশ্ববাজারে নিজেদের অবস্থান আরও সুসংহত করা ও রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যে নতুন রূপরেখা তৈরি করেছে বিজিএমইএ। এর মধ্যে অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বাড়ানো তাদের অন্যতম কৌশল।
দেশের অন্যতম রপ্তানি বাজার ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি ও মন্দার কারণে আগামী মৌসুমের জন্য কার্যাদেশ প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমে এসেছে বলে গত ১০ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে জানান বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। এ পরিস্থিতিতে পোশাক শিল্পের চলমান উচ্চ প্রবৃদ্ধি আগামী দুই-এক মাসের মধ্যে নেতিবাচক দিকে রূপ নিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৪ আশ্বিন ১৪২৯ ২০ সফর ১৪৪৪
অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার ইউরোপ-আমেরিকা নিয়ে যখন শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন সময় আশার আলো দেখাচ্ছে অপ্রচলিত বাজার। আগে যেসব বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কম হতো এখন সেসব বাজারে রপ্তানি বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশ থেকে ১২০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে বলে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে। এ সময়ে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৩৮ শতাংশ। এ আয় বাড়াতে আরও নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। নতুন বাজার ধরার বিষয়টিকে কৌশল হিসেবে নিয়েছেন তারা।
সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই ও অগাস্টে ৭১১ কোটি ২৬ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে অপ্রচলিত বাজারের অংশ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে হয়েছে ১২০ কোটি ডলার। এসময়ে ভারতে রপ্তানি বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। জাপানের বাজারেও ভালো করেছে এদেশের পোশাক।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোই বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির মূল বাজার। এর বাইরে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, জাপান, কোরিয়া, চীন ও ভারতসহ অন্য দেশকে অপ্রচলিত বাজার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এসব দেশে এতদিন খুব বেশি পোশাক রপ্তানি না হওয়ায় চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসের রপ্তানি আয়ের তথ্যে এ ব্যবসায়ী নেতার মতো অন্য রপ্তানিকারকরাও কার্যাদেশ কমার শঙ্কার মধ্যেও আশাবাদী হচ্ছেন।
বিজিএমইএর বিশ্লেষণে দেখা যায়, অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে অন্যতম জাপানে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ২১ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের পোশাকপণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছর একই সময়ের চেয়ে ২৫ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১৭ কোটি ২৯ লাখ ডলারের পণ্য। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ভারতে পোশাক রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৯৮ দশমিক ৯২ শতাংশ বেড়ে ১৮ কোটি ৮২ লাখ ডলার হয়েছে। তবে যুদ্ধের প্রভাবে হোঁচট খেয়েছে রাশিয়ার বাজারে। সেখানে ৫৮ দশমিক ২৯ শতাংশ কমে ২ কোটি ৯০ লাখ ডলারে নেমেছে পোশাক রপ্তানি। আর অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে চীনে ১৩ দশমিক ২১ শতাংশ কমে রপ্তানি ৩ কোটি ৩৮ লাখ ডলারে ঠেকেছে।
এ সময়ের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে ৩৪৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যাতে প্রবৃদ্ধি এসেছে ২৩ দশমিক ২১ শতাংশ। ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে একক দেশ হিসেবে জার্মানিতে ১৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ, স্পেনে ২৪ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং ফ্রান্সে ৩৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ১৪১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা ২০২১-২০২২ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি। একইভাবে যুক্তরাজ্যে ৩৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং কানাডায় ১৮ দশমিক ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে পোশাক রপ্তানির বিশ্ববাজারে নিজেদের অবস্থান আরও সুসংহত করা ও রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যে নতুন রূপরেখা তৈরি করেছে বিজিএমইএ। এর মধ্যে অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বাড়ানো তাদের অন্যতম কৌশল।
দেশের অন্যতম রপ্তানি বাজার ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি ও মন্দার কারণে আগামী মৌসুমের জন্য কার্যাদেশ প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমে এসেছে বলে গত ১০ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে জানান বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। এ পরিস্থিতিতে পোশাক শিল্পের চলমান উচ্চ প্রবৃদ্ধি আগামী দুই-এক মাসের মধ্যে নেতিবাচক দিকে রূপ নিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।