‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজার : বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ গোলটেবিল বৈঠক

‘জাঙ্ক দিয়ে শেয়ারবাজার চালানো হচ্ছে’

শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ?্যাপক আবু আহমেদ বলেছেন, ‘আমাদের বাজারে কয়টা ভালো কোম্পানি আছে। এখানে নেসলে, ইউনিলিভারের মতো কোম্পানি আসছে না। জাঙ্ক শেয়ার দিয়ে মূলত শেয়ারবাজার চালানো হচ্ছে।’ গতকাল হোটেল ওয়েস্টিনে যৌথভাবে সিএমজেএফ ও বিএমবিএ আয়োজিত ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজার : বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।

আবু আহমেদ বলেন, ‘আমাদের বাজারে হতাশা এবং আশা, দুদিকই আছে। এই বাজারে ভালো কোম্পানি আনা দরকার হলেও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ব?্যবধান কমিয়ে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এটা সরকার সঠিক পলিসি নেয়নি। দেশে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো কর দেয় বেশি। এজন্য প্রণোদনা দিয়ে ভালো ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে হবে। ১০ শতাংশ গ্যাপ ছিল (তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর ব্যবধান), সেটা সাড়ে সাত শতাংশ করা হলো। আমরা যেখানে ১৫ শতাংশ গ্যাপ চেয়েছি, কিন্তু মাত্র সাড়ে সাত শতাংশ গ্যাপ করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এনবিআর’র মোট ট্যাক্সের ৮০ শতাংশ আসে তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে। সুতরাং এনবিআর’র প্রচেষ্টা থাকা উচিত বেশি কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনা। কোম্পানি কখন লিস্টিংয়ে আসবে? যখন তাদের লাভ হবে। বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে নেসলে আছে, ইউনিলিভার আছে। আমার এখানে নেই কেন? ১৭ কোটি মানুষ, এ দেশের মানুষকে অজ্ঞ, মূর্খ মনে করে তারা? পাবলিক ইন্টারেস্টে কি না করা যায়? মেটলাইফে লাইন ধরে মানুষ টাকা জমা দিচ্ছে। কিন্তু তারা লিস্টেট না। কেন? কেউ কি প্রশ্ন করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘কতোগুলো সিক ইন্ডাস্ট্রি, জাঙ্ক ইন্ডাস্ট্রি দিয়ে শেয়ারবাজারকে চালানো হচ্ছে। আপনারা দেখেন ৩৫০টার মধ্যে কয়টা যোগ্য কোম্পানি। আমাদেরকে ফোকাস করতে হবে তাদেরকে (নেসলে, ইউনিলিভারের মতো কোম্পানি) আসতেই হবে। হয় ইনসেনটিভ দিয়ে, আমি মনে করি ইনসেনটিভ ভালো উপায়। ওরা অন্যখানে থাকলে এখানে থাকতে পারবে না কেন?’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাদের সাবান ব্যবহার করি, পারফিউম ব্যবহার করি, নুডুলস খাচ্ছি। বাহিরে তাদের ২০-৩০ শতাংশ শেয়ার শেয়ারবাজারে ছাড়তে হয়। আমাদের এখানে মাত্র ১০ শতাংশ ছাড়লেই হয়। তারা আমাদের দেশে ব্যবসা করে বিপুল পরিমাণ মুনাফা নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মাত ১০ শতাংশ মালিকানা বাংলাদেশকে দিতে চায় না।’

আইপিওতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ন?্যায় বড় বিনিয়োগকারীদের কোটা সুবিধা দেয়া দরকার বলে মনে করেন আবু আহমেদ।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেছেন, ‘একজন জুয়াড়ি ধরতে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লাগে। আমরা তখন ধরতে পারি, যখন স্টক এক্সচেঞ্জ তদন্ত রিপোর্ট দ্রুত দেয়। তারপর নিয়ম অনুসারে তথ্য প্রমাণ যাচাই-বাছাই করে শাস্তি দিতে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লেগে যায়। ততক্ষণে বিনিয়োগকারী ও বাজারের যা ক্ষতি করার তা করে ফেলে। যখনি আপনারা কারসাজির কোনো তথ্য পান, তখন দ্রুত লিখে দেবেন। বিনিয়োগকারীদের সচেতন করবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুঁজিবাজারের যেকোনো বিষয়ে অর্থমন্ত্রণালয়, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী সবসময় সচেতন। ওনাকে (প্রধানমন্ত্রী) পুঁজিবাজারের কোনো বিষয় নিয়ে এসএমএস করলে সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দেন। সুতরাং এরকম একজন লিডার থাকার পর মার্কেট নিয়ে চিন্তা করার কোনো কিছু নেই। নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে আমরা গত ২ বছর ৩৬টি কোম্পানির আইপিও দিয়েছি। এই সময়ে ৩ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।’

এছাড়াও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী, ড. এম খায়রুল হোসেন, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, আইসিএবি, আইসিএমএবি, আইসিএসবির প্রতিনিধিরা উপস্থিত আছেন।

রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৪ আশ্বিন ১৪২৯ ২০ সফর ১৪৪৪

‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজার : বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ গোলটেবিল বৈঠক

‘জাঙ্ক দিয়ে শেয়ারবাজার চালানো হচ্ছে’

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ?্যাপক আবু আহমেদ বলেছেন, ‘আমাদের বাজারে কয়টা ভালো কোম্পানি আছে। এখানে নেসলে, ইউনিলিভারের মতো কোম্পানি আসছে না। জাঙ্ক শেয়ার দিয়ে মূলত শেয়ারবাজার চালানো হচ্ছে।’ গতকাল হোটেল ওয়েস্টিনে যৌথভাবে সিএমজেএফ ও বিএমবিএ আয়োজিত ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজার : বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।

আবু আহমেদ বলেন, ‘আমাদের বাজারে হতাশা এবং আশা, দুদিকই আছে। এই বাজারে ভালো কোম্পানি আনা দরকার হলেও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ব?্যবধান কমিয়ে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এটা সরকার সঠিক পলিসি নেয়নি। দেশে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো কর দেয় বেশি। এজন্য প্রণোদনা দিয়ে ভালো ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে হবে। ১০ শতাংশ গ্যাপ ছিল (তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর ব্যবধান), সেটা সাড়ে সাত শতাংশ করা হলো। আমরা যেখানে ১৫ শতাংশ গ্যাপ চেয়েছি, কিন্তু মাত্র সাড়ে সাত শতাংশ গ্যাপ করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এনবিআর’র মোট ট্যাক্সের ৮০ শতাংশ আসে তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে। সুতরাং এনবিআর’র প্রচেষ্টা থাকা উচিত বেশি কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনা। কোম্পানি কখন লিস্টিংয়ে আসবে? যখন তাদের লাভ হবে। বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে নেসলে আছে, ইউনিলিভার আছে। আমার এখানে নেই কেন? ১৭ কোটি মানুষ, এ দেশের মানুষকে অজ্ঞ, মূর্খ মনে করে তারা? পাবলিক ইন্টারেস্টে কি না করা যায়? মেটলাইফে লাইন ধরে মানুষ টাকা জমা দিচ্ছে। কিন্তু তারা লিস্টেট না। কেন? কেউ কি প্রশ্ন করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘কতোগুলো সিক ইন্ডাস্ট্রি, জাঙ্ক ইন্ডাস্ট্রি দিয়ে শেয়ারবাজারকে চালানো হচ্ছে। আপনারা দেখেন ৩৫০টার মধ্যে কয়টা যোগ্য কোম্পানি। আমাদেরকে ফোকাস করতে হবে তাদেরকে (নেসলে, ইউনিলিভারের মতো কোম্পানি) আসতেই হবে। হয় ইনসেনটিভ দিয়ে, আমি মনে করি ইনসেনটিভ ভালো উপায়। ওরা অন্যখানে থাকলে এখানে থাকতে পারবে না কেন?’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাদের সাবান ব্যবহার করি, পারফিউম ব্যবহার করি, নুডুলস খাচ্ছি। বাহিরে তাদের ২০-৩০ শতাংশ শেয়ার শেয়ারবাজারে ছাড়তে হয়। আমাদের এখানে মাত্র ১০ শতাংশ ছাড়লেই হয়। তারা আমাদের দেশে ব্যবসা করে বিপুল পরিমাণ মুনাফা নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মাত ১০ শতাংশ মালিকানা বাংলাদেশকে দিতে চায় না।’

আইপিওতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ন?্যায় বড় বিনিয়োগকারীদের কোটা সুবিধা দেয়া দরকার বলে মনে করেন আবু আহমেদ।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেছেন, ‘একজন জুয়াড়ি ধরতে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লাগে। আমরা তখন ধরতে পারি, যখন স্টক এক্সচেঞ্জ তদন্ত রিপোর্ট দ্রুত দেয়। তারপর নিয়ম অনুসারে তথ্য প্রমাণ যাচাই-বাছাই করে শাস্তি দিতে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লেগে যায়। ততক্ষণে বিনিয়োগকারী ও বাজারের যা ক্ষতি করার তা করে ফেলে। যখনি আপনারা কারসাজির কোনো তথ্য পান, তখন দ্রুত লিখে দেবেন। বিনিয়োগকারীদের সচেতন করবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুঁজিবাজারের যেকোনো বিষয়ে অর্থমন্ত্রণালয়, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী সবসময় সচেতন। ওনাকে (প্রধানমন্ত্রী) পুঁজিবাজারের কোনো বিষয় নিয়ে এসএমএস করলে সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দেন। সুতরাং এরকম একজন লিডার থাকার পর মার্কেট নিয়ে চিন্তা করার কোনো কিছু নেই। নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে আমরা গত ২ বছর ৩৬টি কোম্পানির আইপিও দিয়েছি। এই সময়ে ৩ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।’

এছাড়াও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী, ড. এম খায়রুল হোসেন, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, আইসিএবি, আইসিএমএবি, আইসিএসবির প্রতিনিধিরা উপস্থিত আছেন।