বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্প

এক ধাপ সময় বাড়িয়েও যথাসময়ে নির্মাণ অনিশ্চিত

দিনাজপুরের পার্বতীপুর শহরের অদুরে বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশীপ পাইপলাইন স্থাপন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ৩০ জুন। ধীরগতিতে কাজ চলায় অগ্রগতি মাত্র ৫০ শতাংশ। ইতিমধ্যে প্রকল্পটি সংশোধন করে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত অর্থাৎ আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পের অন্যতম প্রধান কাজ অয়েল ট্যাংকার স্থাপন। অয়েল ট্যাংকের আরসিসি ভিত্তির কাজ শেষ হলেও এর প্রধান উপকরন ১ হাজার ৩শ’ টন ষ্টিলের পাত এখনও বিদেশ থেকে আমদানী করা সম্ভব না হওয়ায় ৮টি ট্যাংক নির্মানের কাজও বন্ধ রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন অনেকে।

এখনও নির্মাণে কাজ শেষ হয়নি পাম্প হাউজ, নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, বিদ্যুৎ সাব-ষ্টেশন ও ২৪টি ট্র্যান্সফর্মার স্থাপন, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ নির্মাণ, ফায়ার ফাইটিং পাম্প হাউজ, সিকিউরিটি পোষ্ট, সিকিউরিট গেট, ফায়ার এলার্ম সিস্টেম স্থাপন ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মান, ৫ হাজার ৬শ’ ৯০ মে.টন ধারন ক্ষমতার ৬টি ফুয়েল ট্যাংক, অগ্নিনির্বাপন কাজের জন্য ৩ হাজার লিটার ধারন ক্ষমতা দুটি ওয়াটার ট্যাংক ও অগ্নিনির্বাপক ফোম রাখার জন্য ২ হাজার ৫শ লিটার ধারন ক্ষমতার দুটি ব্লাডার ট্যাংক ও অটোমোশন সিষ্টেম স্থাপন। পার্বতীপুর শহরের অদুরে ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্পের আওতায় ৬ দশমিক ৮০ একর জমিতে রিসিপ্ট টার্মিনাল (আরটি) ও অয়েল ডিপো নির্মান করা হচ্ছে। রিসিপ্ট টার্মিনাল নির্মান কাজ করছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স দীপন গ্যাস কোম্পানী লি: এবং অয়েল ডিপো নির্মানে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্টান মেসার্স পাইপ লাইনার্স লিমিটেড।

এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পাইপ লাইনার্স লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক (পিএম) মো: তোজাম্মেল হোসেন বলেন, এসব স্টীলপাত দক্ষিণ কোরিয়া অথবা ভারত থেকে আমদানী করতে হবে। এলসি খোলায় বিলম্ব হওয়ায় সময়মতো ষ্টিলপাতের সরবরাহ না পাওয়ায় ট্যাংক নির্মান সম্ভব হচ্ছে না। প্রকল্পের সীমানা প্রাচীর ও দালান কোটা ছাড়া আর সবকিছুই আমদানি নির্ভর হওয়ায় নির্দ্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশীপ পাইপলাইন স্থাপন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) টিপু সুলতান বলেন, প্রকল্প প্রফর্মা (পিপি) অনুযায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়নের নির্দ্ধারিত সময়কাল ২০২০ থেকে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত। কিন্তু করোনাসহ কিছুৃ বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারনে নির্দ্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। আগামী ২০২৩ সালের ৩০ শে জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে তিনি জানান।

প্রকল্প সুত্রে জানা গেছে, পাইপলাইন নির্মাণের জন্য পঞ্চগড়, নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলায় ১৯৯ দশমিক ৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ, ১৩৪ দশমিক ১২ একর হুকুম দখল এবং তেল সংরক্ষণের জন্য পার্বতীপুরে ৬টি ট্যাংক নির্মাণ। ইতিমধ্যে ভারত ও বাংলাদেশ অংশে মোট ১৩০ কি: মি: পাইপলাইনের কাজ শেষ হয়েছে। ৫টি এসভি স্টেশনের (সেকশনলাইজিং ভালভ স্টেশন) কাজও শেষ হয়েছে। প্রতিটি এসভি স্টেশনের মধ্যে দূরত্ব রয়েছে প্রায় ৩০ কিলোমিটার। প্রকল্প এলাকায় সীমানা প্রাচীর নির্মান কাজ প্রায় শেষের পথে।

প্রকল্পের পিপি থেকে জানা যায়, পূর্ব ভারতের নুমালীগড় হতে শিলিগুড়ি রেল টার্মিনাল পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার পাইপ লাইন রয়েছে। শিলিগুডি মার্কেটিং টার্মিনাল হতে পার্বতীপুর পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মানে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারত সরকার দিচ্ছে ৩০৩ কোটি ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন দিচ্ছে ২১৭ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, গত ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাইপলাইন নির্মান কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ২০২০ সালের মার্চ মাসে পাইপলাইন স্থাপন কাজ শুরু হয়। ভারতের লুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড এবং বাংলাদেশের মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। পাইপলাইন চালুর পর বছরে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানি করা যাবে। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ আড়াই লাখ টনের মতো ডিজেল আমদানি করবে এবং পরের বছর গুলোতে ৪ থেকে ৫ লাখ টন পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। চুক্তির অধীনে সরবরাহ শুরু হওয়ার দিন থেকে ১৫ বছরের জন্য বাংলাদেশ ভারত থেকে ডিজেল কিনবে।

রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৪ আশ্বিন ১৪২৯ ২০ সফর ১৪৪৪

বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্প

এক ধাপ সময় বাড়িয়েও যথাসময়ে নির্মাণ অনিশ্চিত

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, দিনাজপুর

image

পাইপলাইন প্রকল্পের ডিপোতে ৬টি ফুয়েল ট্যাঙ্কের আরসিসি বেস ঢালাই হলেও স্টিলপাত আমদানি করতে না পারায় ট্যাংক নির্মাণকাজ বন্ধ -সংবাদ

দিনাজপুরের পার্বতীপুর শহরের অদুরে বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশীপ পাইপলাইন স্থাপন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ৩০ জুন। ধীরগতিতে কাজ চলায় অগ্রগতি মাত্র ৫০ শতাংশ। ইতিমধ্যে প্রকল্পটি সংশোধন করে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত অর্থাৎ আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পের অন্যতম প্রধান কাজ অয়েল ট্যাংকার স্থাপন। অয়েল ট্যাংকের আরসিসি ভিত্তির কাজ শেষ হলেও এর প্রধান উপকরন ১ হাজার ৩শ’ টন ষ্টিলের পাত এখনও বিদেশ থেকে আমদানী করা সম্ভব না হওয়ায় ৮টি ট্যাংক নির্মানের কাজও বন্ধ রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন অনেকে।

এখনও নির্মাণে কাজ শেষ হয়নি পাম্প হাউজ, নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, বিদ্যুৎ সাব-ষ্টেশন ও ২৪টি ট্র্যান্সফর্মার স্থাপন, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ নির্মাণ, ফায়ার ফাইটিং পাম্প হাউজ, সিকিউরিটি পোষ্ট, সিকিউরিট গেট, ফায়ার এলার্ম সিস্টেম স্থাপন ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মান, ৫ হাজার ৬শ’ ৯০ মে.টন ধারন ক্ষমতার ৬টি ফুয়েল ট্যাংক, অগ্নিনির্বাপন কাজের জন্য ৩ হাজার লিটার ধারন ক্ষমতা দুটি ওয়াটার ট্যাংক ও অগ্নিনির্বাপক ফোম রাখার জন্য ২ হাজার ৫শ লিটার ধারন ক্ষমতার দুটি ব্লাডার ট্যাংক ও অটোমোশন সিষ্টেম স্থাপন। পার্বতীপুর শহরের অদুরে ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্পের আওতায় ৬ দশমিক ৮০ একর জমিতে রিসিপ্ট টার্মিনাল (আরটি) ও অয়েল ডিপো নির্মান করা হচ্ছে। রিসিপ্ট টার্মিনাল নির্মান কাজ করছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স দীপন গ্যাস কোম্পানী লি: এবং অয়েল ডিপো নির্মানে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্টান মেসার্স পাইপ লাইনার্স লিমিটেড।

এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পাইপ লাইনার্স লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক (পিএম) মো: তোজাম্মেল হোসেন বলেন, এসব স্টীলপাত দক্ষিণ কোরিয়া অথবা ভারত থেকে আমদানী করতে হবে। এলসি খোলায় বিলম্ব হওয়ায় সময়মতো ষ্টিলপাতের সরবরাহ না পাওয়ায় ট্যাংক নির্মান সম্ভব হচ্ছে না। প্রকল্পের সীমানা প্রাচীর ও দালান কোটা ছাড়া আর সবকিছুই আমদানি নির্ভর হওয়ায় নির্দ্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশীপ পাইপলাইন স্থাপন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) টিপু সুলতান বলেন, প্রকল্প প্রফর্মা (পিপি) অনুযায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়নের নির্দ্ধারিত সময়কাল ২০২০ থেকে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত। কিন্তু করোনাসহ কিছুৃ বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারনে নির্দ্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। আগামী ২০২৩ সালের ৩০ শে জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে তিনি জানান।

প্রকল্প সুত্রে জানা গেছে, পাইপলাইন নির্মাণের জন্য পঞ্চগড়, নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলায় ১৯৯ দশমিক ৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ, ১৩৪ দশমিক ১২ একর হুকুম দখল এবং তেল সংরক্ষণের জন্য পার্বতীপুরে ৬টি ট্যাংক নির্মাণ। ইতিমধ্যে ভারত ও বাংলাদেশ অংশে মোট ১৩০ কি: মি: পাইপলাইনের কাজ শেষ হয়েছে। ৫টি এসভি স্টেশনের (সেকশনলাইজিং ভালভ স্টেশন) কাজও শেষ হয়েছে। প্রতিটি এসভি স্টেশনের মধ্যে দূরত্ব রয়েছে প্রায় ৩০ কিলোমিটার। প্রকল্প এলাকায় সীমানা প্রাচীর নির্মান কাজ প্রায় শেষের পথে।

প্রকল্পের পিপি থেকে জানা যায়, পূর্ব ভারতের নুমালীগড় হতে শিলিগুড়ি রেল টার্মিনাল পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার পাইপ লাইন রয়েছে। শিলিগুডি মার্কেটিং টার্মিনাল হতে পার্বতীপুর পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মানে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারত সরকার দিচ্ছে ৩০৩ কোটি ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন দিচ্ছে ২১৭ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, গত ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাইপলাইন নির্মান কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ২০২০ সালের মার্চ মাসে পাইপলাইন স্থাপন কাজ শুরু হয়। ভারতের লুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড এবং বাংলাদেশের মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। পাইপলাইন চালুর পর বছরে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানি করা যাবে। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ আড়াই লাখ টনের মতো ডিজেল আমদানি করবে এবং পরের বছর গুলোতে ৪ থেকে ৫ লাখ টন পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। চুক্তির অধীনে সরবরাহ শুরু হওয়ার দিন থেকে ১৫ বছরের জন্য বাংলাদেশ ভারত থেকে ডিজেল কিনবে।