শিক্ষা প্রশাসনে প্রস্তুতির ঘাটতি, নতুন শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন ব্যাহত

মাত্র তিন মাস বাকি, এখনও অনেক বইয়ের পা-ুলিপিই তৈরি হয়নি

শিক্ষা প্রশাসনের প্রস্তুতির ঘাটতিতে নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন হোঁচট খেয়েছে। নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে তিন মাসের একটু বেশি সময় বাকি থাকলেও সপ্তম শ্রেণীর ১০টি বইয়ের একটিরও পা-ুলিপি এখনও তৈরি হয়নি। আবার ৬২টি বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ‘পাইলটিং’ বা পরীক্ষামূলক শ্রেণী কার্যক্রম হয়েছিল। কিন্তু বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে পাইলটিং বন্ধ হয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সংবাদকে জানিয়েছেন।

এছাড়া প্রাথমিকের দুই শ্রেণীতেও আগামী বছর নতুন শিক্ষাক্রমে পুরোপুরি শ্রেণী কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এই স্তরেও পাইলটিং পিছিয়ে আগামী বছর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে আগামী শিক্ষাক্রমে নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমের পুরো বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর ২০২৪ সালে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণী এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণী, ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণী, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে।

২০১২ সালে সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনা হয়। এর আগে ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয়। সরকার ২০১০ সালে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ প্রণয়ন করলেও এর অনেক কিছুই বাস্তবায়নের বাকি রয়েছে।

২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রম প্রস্তুত না হওয়ায় এই কার্যক্রম পিছিয়ে নেয়া হয়েছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র জানিয়েছে, নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে বাকি রয়েছে মাত্র সাড়ে তিন মাসেরও কম। এখন পর্যন্ত সংস্থাটি ষষ্ঠ শ্রেণীর পা-ুলিপি কোনক্রমে প্রস্তুত করেছে। তবে সপ্তম শ্রেণীর বইয়ের পা-ুলিপি গত ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রস্তুত করতে পারেনি সংস্থার বিশেষজ্ঞরা।

নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে মোট ১০টি করে বই থাকছে। এসব বইয়ের পা-ুলিপি সম্প্রতি প্রস্তুত করেছেন এনসিটিবির বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তারা। বইগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, জীবন ও জীবিকা, ধর্ম এবং শিল্প ও সংস্কৃতি।

এই দুই শ্রেণীর নতুন বইয়ের পা-ুলিপি প্রস্তুতের বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘ষষ্ঠ শ্রেণীর বইয়ের পা-ুলিপি রেডি হয়েছে। সপ্তম শ্রেণীর বইয়ের পা-ুলিপি এখনও হয়নি।’

কবে নাগাদ সপ্তম শ্রেণীর নতুন বইয়ের পা-ুলিপি প্রস্তুত হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা বলা যাচ্ছে না; কারণ এগুলো মেধাভিত্তিক কাজ; তাড়াহুড়ো করলে বড় ধরনের ভুলত্রুটি থেকে যেতে পারে। পাইলটিং একটু দেরিতে হলেও কোন সমস্যা নেই।’

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সাম্প্রতিক এক বক্তব্যেও নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন পিছিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

মন্ত্রী গত ১৩ সেপ্টেম্বর ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১’ বিস্তরণে অনলাইন শিক্ষক প্রশিক্ষণ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জানান, আগামী জানুয়ারির ১ তারিখে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর যে বই হাতে পাবে, সেটিই ‘চূড়ান্ত রূপ’ নয়। তিনি বলেন, ‘সেটিকে একেবারে চূড়ান্ত রূপ ভাববেন না। এটিই চূড়ান্ত রূপ নয়। এর ওপর আরও কাজ করার আছে। শিক্ষক প্রশিক্ষণে আরও পরিবর্তন নিয়ে আসব। এটি অনেক বড় কাজ।’

শিক্ষায় পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সংস্কারের কথা বলছি না। আমরা শিক্ষায় রূপান্তরের কথা বলছি। আমরা দুই/তিন বছরের চেষ্টায় একেবারে নিখুঁত একটা পরিকল্পনা করে ফেলব, সেটা বলার ধৃষ্টতা আমার নেই। তবে আমরা সবাই মিলে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে পারব এটি আমার বিশ্বাস।’

এদিকে আগাম প্রস্তুতির ঘাটতির কারণে প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতেও এবার পাইলটিং (পরীক্ষামূলক শ্রেণী কার্যক্রম) শুরু করতে পারেনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তারা এ কার্যক্রম পিছিয়ে দিয়েছেন। একইসঙ্গে তারা একেবারে নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন না করে প্রথম শ্রেণীর বিদ্যমান শিক্ষাক্রমের কিছুটা পরিমার্জন করে আগামী বছর পাইলটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান সংবাদকে বলেন, ‘তাড়াহুড়োর কিছু নেই। আগামী বছর পুরো সময় আমরা পাইলটিং করব। এতে শিক্ষাক্রমের ভুলত্রুটি থাকলে তা ধরা পরবে; যুগোপযোগী কিছু বিষয় থাকলে সেটিও সংযোজন করা যাবে।’ এর আগেই শিক্ষক প্রশিক্ষণ দেয়া হবে জানিয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্রাথমিকের নতুন শিক্ষাক্রমের বই তৈরি (পরিমার্জিত) হয়েছে। শিক্ষক নির্দেশিকাও তৈরির কাজ শেষের পথে। এই কাজ শেষ হলে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হবে।’

রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৪ আশ্বিন ১৪২৯ ২০ সফর ১৪৪৪

শিক্ষা প্রশাসনে প্রস্তুতির ঘাটতি, নতুন শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন ব্যাহত

মাত্র তিন মাস বাকি, এখনও অনেক বইয়ের পা-ুলিপিই তৈরি হয়নি

রাকিব উদ্দিন

শিক্ষা প্রশাসনের প্রস্তুতির ঘাটতিতে নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন হোঁচট খেয়েছে। নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে তিন মাসের একটু বেশি সময় বাকি থাকলেও সপ্তম শ্রেণীর ১০টি বইয়ের একটিরও পা-ুলিপি এখনও তৈরি হয়নি। আবার ৬২টি বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ‘পাইলটিং’ বা পরীক্ষামূলক শ্রেণী কার্যক্রম হয়েছিল। কিন্তু বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে পাইলটিং বন্ধ হয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সংবাদকে জানিয়েছেন।

এছাড়া প্রাথমিকের দুই শ্রেণীতেও আগামী বছর নতুন শিক্ষাক্রমে পুরোপুরি শ্রেণী কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এই স্তরেও পাইলটিং পিছিয়ে আগামী বছর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে আগামী শিক্ষাক্রমে নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমের পুরো বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর ২০২৪ সালে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণী এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণী, ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণী, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে।

২০১২ সালে সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনা হয়। এর আগে ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয়। সরকার ২০১০ সালে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ প্রণয়ন করলেও এর অনেক কিছুই বাস্তবায়নের বাকি রয়েছে।

২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রম প্রস্তুত না হওয়ায় এই কার্যক্রম পিছিয়ে নেয়া হয়েছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র জানিয়েছে, নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে বাকি রয়েছে মাত্র সাড়ে তিন মাসেরও কম। এখন পর্যন্ত সংস্থাটি ষষ্ঠ শ্রেণীর পা-ুলিপি কোনক্রমে প্রস্তুত করেছে। তবে সপ্তম শ্রেণীর বইয়ের পা-ুলিপি গত ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রস্তুত করতে পারেনি সংস্থার বিশেষজ্ঞরা।

নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে মোট ১০টি করে বই থাকছে। এসব বইয়ের পা-ুলিপি সম্প্রতি প্রস্তুত করেছেন এনসিটিবির বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তারা। বইগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, জীবন ও জীবিকা, ধর্ম এবং শিল্প ও সংস্কৃতি।

এই দুই শ্রেণীর নতুন বইয়ের পা-ুলিপি প্রস্তুতের বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘ষষ্ঠ শ্রেণীর বইয়ের পা-ুলিপি রেডি হয়েছে। সপ্তম শ্রেণীর বইয়ের পা-ুলিপি এখনও হয়নি।’

কবে নাগাদ সপ্তম শ্রেণীর নতুন বইয়ের পা-ুলিপি প্রস্তুত হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা বলা যাচ্ছে না; কারণ এগুলো মেধাভিত্তিক কাজ; তাড়াহুড়ো করলে বড় ধরনের ভুলত্রুটি থেকে যেতে পারে। পাইলটিং একটু দেরিতে হলেও কোন সমস্যা নেই।’

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সাম্প্রতিক এক বক্তব্যেও নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন পিছিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

মন্ত্রী গত ১৩ সেপ্টেম্বর ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১’ বিস্তরণে অনলাইন শিক্ষক প্রশিক্ষণ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জানান, আগামী জানুয়ারির ১ তারিখে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর যে বই হাতে পাবে, সেটিই ‘চূড়ান্ত রূপ’ নয়। তিনি বলেন, ‘সেটিকে একেবারে চূড়ান্ত রূপ ভাববেন না। এটিই চূড়ান্ত রূপ নয়। এর ওপর আরও কাজ করার আছে। শিক্ষক প্রশিক্ষণে আরও পরিবর্তন নিয়ে আসব। এটি অনেক বড় কাজ।’

শিক্ষায় পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সংস্কারের কথা বলছি না। আমরা শিক্ষায় রূপান্তরের কথা বলছি। আমরা দুই/তিন বছরের চেষ্টায় একেবারে নিখুঁত একটা পরিকল্পনা করে ফেলব, সেটা বলার ধৃষ্টতা আমার নেই। তবে আমরা সবাই মিলে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে পারব এটি আমার বিশ্বাস।’

এদিকে আগাম প্রস্তুতির ঘাটতির কারণে প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতেও এবার পাইলটিং (পরীক্ষামূলক শ্রেণী কার্যক্রম) শুরু করতে পারেনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তারা এ কার্যক্রম পিছিয়ে দিয়েছেন। একইসঙ্গে তারা একেবারে নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন না করে প্রথম শ্রেণীর বিদ্যমান শিক্ষাক্রমের কিছুটা পরিমার্জন করে আগামী বছর পাইলটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান সংবাদকে বলেন, ‘তাড়াহুড়োর কিছু নেই। আগামী বছর পুরো সময় আমরা পাইলটিং করব। এতে শিক্ষাক্রমের ভুলত্রুটি থাকলে তা ধরা পরবে; যুগোপযোগী কিছু বিষয় থাকলে সেটিও সংযোজন করা যাবে।’ এর আগেই শিক্ষক প্রশিক্ষণ দেয়া হবে জানিয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্রাথমিকের নতুন শিক্ষাক্রমের বই তৈরি (পরিমার্জিত) হয়েছে। শিক্ষক নির্দেশিকাও তৈরির কাজ শেষের পথে। এই কাজ শেষ হলে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হবে।’