চক্রের ৪ সদস্য গ্রেপ্তার, স্বীকারোক্তি
সংঘবদ্ধ দেশি-বিদেশি জালিয়াত চক্র পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথের ভিসা কার্ডের গোপন তথ্য হাতিয়ে নিয়ে টাকা লুট করছে। গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গত দুই দিন ধরে ঢাকা, ফরিদপুর ও সাভারে টানা অভিযান চালিয়ে চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের ডিবি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জালিয়াতির নানা তথ্য স্বীকার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো সোহেল মীর, নাজমুল হোসেন, পারুল ও মো. তারা মিয়া। গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, বর্তমান ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগে ভিসা ও মাস্টার কার্ড ব্যবহার করে পৃথিবীর যেকোন দেশে ইলেকট্রনিকস পেমেন্ট, কেনাকাটা, এটিএম বুথ থেকে টাকা উঠানো, মোবাইল রিচার্জ ও বিভিন্ন কাজ করা যায়।
এ কার্ড ব্যবহার করে বিকাশ একাউন্টে টাকাও লোড করা যায়। আর এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে এসব কার্ড ব্যবহারকারীদের একাউন্ট হ্যাক করে অর্থ হাতিয়ে নেয় এই চক্র। এ ধরনের কয়েকটি ঘটনায় রাজধানীর গুলশান, বনানী, হাতিলঝিল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের এক সদস্য প্রথমে বিভিন্ন কার্ডধারীদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে গ্রেপ্তারকৃত নাজমুল ও সোহেলের কাছে পাঠায়। সোহেল ও নাজমুর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের কর্মকর্তা সেজে ভিসা ও মাস্টারকার্ড ব্যবহারকারীদের নম্বরে ফোন দিয়ে তথ্য হালনাগাদ, কার্ডের পাসওয়ার্ড চার ডিজিটের পরিবর্তে ছয় ডিজিট ও ই-মেইল আপডেট না করার কারণে কার্ডের কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে মর্মে জানায়। অনেক কার্ডধারীর একাউন্টে বড় অঙ্কের ব্যালেন্স থাকায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে প্রতারকদের কথা অনুযায়ী কাজ করতে থাকে।
এভাবে সংগৃহীত তথ্য থেকে ১৬ ডিজিটের নম্বর, কার্ডের মেয়াদ উত্তীর্র্ণের তারিখ, কার্ডের বিপরীতে পাশে উল্লিখিত সিকিউরিটি পিন নম্বর সংরক্ষণ করে। পরবর্তীতে গ্রাহকদের কাছে ওটিপি কোর্ড পাঠায়। কৌশলে পাঠানো ওটিপি কোর্ড সংগ্রহ করে বিকাশ অ্যাপে ঢুকে কার্ড টু বিকাশ অ্যাড মানি অপশনের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করে।
ইতোমধ্যে বিকাশ একাউন্ট হ্যাক করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটলেও মাস্টারকার্ড অথবা ভিসা কার্ড ব্যবহারকারীদের সঙ্গে প্রতারণার বিষয়ে নতুন হওয়ায় অনেক ব্যবহারকারী প্রাথমিকভাবে সন্দেহ প্রকাশ করে না। অনেকেই কার্ড স্থায়ীভাবে সাসপেন্ড হয়ে যাওয়া ও কার্ডে জমা অর্থের ক্ষতির আশঙ্কায় প্রতারকদের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যেই তথ্য দিয়ে দেয়।
ডিবি কর্মকর্তাদের মতে ভিসা কার্ড প্রতারণায় একধিক ধাপে কয়েকটি তথ্যের দরকার হয়। যেমন কার্ড নম্বর, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, নিরাপত্তা পিন নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও নিজেদের পাসওয়ার্ড ও ওটিপি কোর্ড কখনোই কোন ব্যক্তির সঙ্গে এমনকি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও শেয়ার না করার জন্য কার্ড ব্যবহারকারীদের অনুরোধ জানান। এ চক্রের পলাতক অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মতিঝিলে একটি বিদেশি ব্যাংকের এক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সংবাদকে জানান, ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। চক্রের দেশি-বিদেশি অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বুথগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। অপরিচিত ২ থেকে ৩ জন একসঙ্গে যাতে বুথে ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে। আর সিকিউরিটিদের আরও সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। জরুরি দরকার হলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাৎক্ষণিক আলোচনা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পাসওয়ার্ড ও পিন নম্বর নিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৪ আশ্বিন ১৪২৯ ২০ সফর ১৪৪৪
চক্রের ৪ সদস্য গ্রেপ্তার, স্বীকারোক্তি
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
সংঘবদ্ধ দেশি-বিদেশি জালিয়াত চক্র পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথের ভিসা কার্ডের গোপন তথ্য হাতিয়ে নিয়ে টাকা লুট করছে। গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গত দুই দিন ধরে ঢাকা, ফরিদপুর ও সাভারে টানা অভিযান চালিয়ে চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের ডিবি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জালিয়াতির নানা তথ্য স্বীকার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো সোহেল মীর, নাজমুল হোসেন, পারুল ও মো. তারা মিয়া। গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, বর্তমান ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগে ভিসা ও মাস্টার কার্ড ব্যবহার করে পৃথিবীর যেকোন দেশে ইলেকট্রনিকস পেমেন্ট, কেনাকাটা, এটিএম বুথ থেকে টাকা উঠানো, মোবাইল রিচার্জ ও বিভিন্ন কাজ করা যায়।
এ কার্ড ব্যবহার করে বিকাশ একাউন্টে টাকাও লোড করা যায়। আর এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে এসব কার্ড ব্যবহারকারীদের একাউন্ট হ্যাক করে অর্থ হাতিয়ে নেয় এই চক্র। এ ধরনের কয়েকটি ঘটনায় রাজধানীর গুলশান, বনানী, হাতিলঝিল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের এক সদস্য প্রথমে বিভিন্ন কার্ডধারীদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে গ্রেপ্তারকৃত নাজমুল ও সোহেলের কাছে পাঠায়। সোহেল ও নাজমুর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের কর্মকর্তা সেজে ভিসা ও মাস্টারকার্ড ব্যবহারকারীদের নম্বরে ফোন দিয়ে তথ্য হালনাগাদ, কার্ডের পাসওয়ার্ড চার ডিজিটের পরিবর্তে ছয় ডিজিট ও ই-মেইল আপডেট না করার কারণে কার্ডের কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে মর্মে জানায়। অনেক কার্ডধারীর একাউন্টে বড় অঙ্কের ব্যালেন্স থাকায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে প্রতারকদের কথা অনুযায়ী কাজ করতে থাকে।
এভাবে সংগৃহীত তথ্য থেকে ১৬ ডিজিটের নম্বর, কার্ডের মেয়াদ উত্তীর্র্ণের তারিখ, কার্ডের বিপরীতে পাশে উল্লিখিত সিকিউরিটি পিন নম্বর সংরক্ষণ করে। পরবর্তীতে গ্রাহকদের কাছে ওটিপি কোর্ড পাঠায়। কৌশলে পাঠানো ওটিপি কোর্ড সংগ্রহ করে বিকাশ অ্যাপে ঢুকে কার্ড টু বিকাশ অ্যাড মানি অপশনের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করে।
ইতোমধ্যে বিকাশ একাউন্ট হ্যাক করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটলেও মাস্টারকার্ড অথবা ভিসা কার্ড ব্যবহারকারীদের সঙ্গে প্রতারণার বিষয়ে নতুন হওয়ায় অনেক ব্যবহারকারী প্রাথমিকভাবে সন্দেহ প্রকাশ করে না। অনেকেই কার্ড স্থায়ীভাবে সাসপেন্ড হয়ে যাওয়া ও কার্ডে জমা অর্থের ক্ষতির আশঙ্কায় প্রতারকদের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যেই তথ্য দিয়ে দেয়।
ডিবি কর্মকর্তাদের মতে ভিসা কার্ড প্রতারণায় একধিক ধাপে কয়েকটি তথ্যের দরকার হয়। যেমন কার্ড নম্বর, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, নিরাপত্তা পিন নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও নিজেদের পাসওয়ার্ড ও ওটিপি কোর্ড কখনোই কোন ব্যক্তির সঙ্গে এমনকি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও শেয়ার না করার জন্য কার্ড ব্যবহারকারীদের অনুরোধ জানান। এ চক্রের পলাতক অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মতিঝিলে একটি বিদেশি ব্যাংকের এক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সংবাদকে জানান, ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। চক্রের দেশি-বিদেশি অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বুথগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। অপরিচিত ২ থেকে ৩ জন একসঙ্গে যাতে বুথে ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে। আর সিকিউরিটিদের আরও সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। জরুরি দরকার হলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাৎক্ষণিক আলোচনা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পাসওয়ার্ড ও পিন নম্বর নিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।