টাঙ্গাইলের নাগরপুরে ১৫৫ বছরের গরিব পাঠশালা হতে পারে জেলার শিক্ষার উন্নয়ন মডেল। স্কুলের নাম গরিব পাঠশালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গরিব পাঠশালার জন্ম ১৮৬৭ সালে। তৎকালীন জমিদার শিক্ষানুরাগী বাশি মোহন প্রামাণিক সাধারণ মানুষের সন্তান যেন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয় এ মহৎ উদ্দেশে ২৮ শতাংশ জমির ওপর গরিব পাঠশালা স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে গরিব পাঠশালা সরকারিকরণ করা হয়। নামকরণ করা হয় গরিব পাঠশালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৫৫ বছরের পুরোনো এ স্কুলটির অবস্থান টাঙ্গাইলের নাগরপুরে।
জানা যায়, এখন এখানে গরিব-ধনী সবার ছেলেমেয়ে একসঙ্গে পড়াশোনা করছে। বর্তমান সরকার শিক্ষার মান বৃদ্ধি ও প্রাথমিক শিক্ষার ওপর অধিকতর গুরত্বারোপের ফলে এক একটি স্কুল যেন শিশুদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। যা শিশুদের স্কুলমুখী করতে বিশেষ অবদান রাখছে। কি নেই এ স্কুলটিতে? স্কুলের শিশুশ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণীর কক্ষের নামকরণ হয়েছে বাঙালি মনীষীদের নামে।
যেমন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্্দিন, পুষ্প কানন, বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ কর্নারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পাঠাগার। শিশু শ্রেণীর কক্ষটির চারধারে সাজানো হয়েছে শিশুমনের প্রকৃতি চিত্রকর্ম দিয়ে। মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে পাঠদানের সুব্যবস্থা ও কম্পিউটারের ধারণা দিতে ল্যাপটপের পরিচিতি করিয়ে দেয়া হয়। এজন্য রয়েছেন ইনফর্মেশন কমিউনিকেশন্স ও টেকনোলজির (আইসিটি) একজন শিক্ষক।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাহফুজা রহমান বলেন, কোমলমতি শিশুদের জীবনের শুরুতেই আগামীর ডিজিটাল পৃথিবীর ধারণা এবং বাঙালি মনীষীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। তিনি প্রায় ছয় বছর আগে যোগদান করার পর শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে স্কুলটি সাজিয়েছেন। স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০১ জন। শিক্ষার্থীরা এখন কোন ক্লাসে পড়ে এবং শ্রেণীকক্ষের নামও বলে দিতে পারে। গরিব পাঠশালায় একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকা-েও অংশ নেয়। স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা হাতে লেখা দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ করেন। যার নাম ‘মুক্তির ডাক’।
যেখানে শিশুর সৃষ্টিশীল মনোবিকাশের ধারা তৈরি করে দেয়া হয়। তারা গল্প, কবিতা, ভ্রমণ কাহিনী লেখে। যেমন কেউ আবৃত্তি, কেউ গান, কেউ নাটক, কেউ খেলাধুলা করে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাহফুজা রহমান আরও বলেন, স্কুলটির অবস্থান এমন স্থানে যার বড় একটি অংশে নি¤œআয়ের মানুষের বসবাস। ড্রপ আউট রোধে প্রত্যেক শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে উদ্বুদ্ধকরণ করতে হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বাল্যবিয়ে রোধে বিশেষ ভূমিকা নেয়া হয়।
বর্তমানে স্কুলের উপস্থিতির হার প্রায় ৭০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশ। কোন শিক্ষার্থী দীর্ঘ সময় স্কুলে না এলে বাড়িতে খোঁজ করা হয়। অভিভাবকদের বোঝানো হয়। স্কুলে নিয়মিত মা সমাবেশ, অভিভাবক সমাবেশের পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি গিয়ে উঠান বৈঠক করা হয়।
স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানায়, আমাদের বড় খেলার মাঠ নেই। স্কুলের সামনে আছে এক টুকরো উঠান। তবে স্কুলের পাশেই আছে প্রাচীন একটি আম বাগান। এছাড়া জাতীয় দিবসগুলোতে শিক্ষার্থীরা ফলদ, বনজ, ঔষধিসহ ফুল গাছের চারা রোপণ করে।
স্কুলের শিক্ষকরা বলেন, অনেকের ধারণা আছে, সরকারি প্রাথমিক স্কুলে লেখাপড়া ভালো হয় না। এই স্কুল সে ধারণা ভেঙে দিয়েছে। প্রতিবছর এই স্কুলে অধিক সংখ্যক বৃত্তি পাচ্ছে। স্কুলের শিক্ষার্থীদের একই রঙের পোশাক আছে। শিশুরা ব্যবহার করে উন্নত ওয়াশ রুম ও বেসিন। সততা স্টোরে শিশুরা পণ্য কিনে নির্দিষ্ট স্থানে অর্থ বিনিময় করে। প্রতিবছর স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন হয় জাতীয় নির্বাচনের মতো।
এ বিষয়ে নাগরপুর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা জিএম ফুয়াদ মিয়া জানান, শিশুবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হওয়াতে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী ভর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। উপস্থিতি সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় শিশুদের কলকাকলিতে মুখরিত হচ্ছে প্রতিদিন। প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিশুবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে উপজেলা শিক্ষা অফিস সহযোগিতা ও গঠনমূলক দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে।
রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৪ আশ্বিন ১৪২৯ ২০ সফর ১৪৪৪
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলের নাগরপুরে ১৫৫ বছরের গরিব পাঠশালা হতে পারে জেলার শিক্ষার উন্নয়ন মডেল। স্কুলের নাম গরিব পাঠশালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গরিব পাঠশালার জন্ম ১৮৬৭ সালে। তৎকালীন জমিদার শিক্ষানুরাগী বাশি মোহন প্রামাণিক সাধারণ মানুষের সন্তান যেন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয় এ মহৎ উদ্দেশে ২৮ শতাংশ জমির ওপর গরিব পাঠশালা স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে গরিব পাঠশালা সরকারিকরণ করা হয়। নামকরণ করা হয় গরিব পাঠশালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৫৫ বছরের পুরোনো এ স্কুলটির অবস্থান টাঙ্গাইলের নাগরপুরে।
জানা যায়, এখন এখানে গরিব-ধনী সবার ছেলেমেয়ে একসঙ্গে পড়াশোনা করছে। বর্তমান সরকার শিক্ষার মান বৃদ্ধি ও প্রাথমিক শিক্ষার ওপর অধিকতর গুরত্বারোপের ফলে এক একটি স্কুল যেন শিশুদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। যা শিশুদের স্কুলমুখী করতে বিশেষ অবদান রাখছে। কি নেই এ স্কুলটিতে? স্কুলের শিশুশ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণীর কক্ষের নামকরণ হয়েছে বাঙালি মনীষীদের নামে।
যেমন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্্দিন, পুষ্প কানন, বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ কর্নারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পাঠাগার। শিশু শ্রেণীর কক্ষটির চারধারে সাজানো হয়েছে শিশুমনের প্রকৃতি চিত্রকর্ম দিয়ে। মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে পাঠদানের সুব্যবস্থা ও কম্পিউটারের ধারণা দিতে ল্যাপটপের পরিচিতি করিয়ে দেয়া হয়। এজন্য রয়েছেন ইনফর্মেশন কমিউনিকেশন্স ও টেকনোলজির (আইসিটি) একজন শিক্ষক।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাহফুজা রহমান বলেন, কোমলমতি শিশুদের জীবনের শুরুতেই আগামীর ডিজিটাল পৃথিবীর ধারণা এবং বাঙালি মনীষীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। তিনি প্রায় ছয় বছর আগে যোগদান করার পর শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে স্কুলটি সাজিয়েছেন। স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০১ জন। শিক্ষার্থীরা এখন কোন ক্লাসে পড়ে এবং শ্রেণীকক্ষের নামও বলে দিতে পারে। গরিব পাঠশালায় একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকা-েও অংশ নেয়। স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা হাতে লেখা দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ করেন। যার নাম ‘মুক্তির ডাক’।
যেখানে শিশুর সৃষ্টিশীল মনোবিকাশের ধারা তৈরি করে দেয়া হয়। তারা গল্প, কবিতা, ভ্রমণ কাহিনী লেখে। যেমন কেউ আবৃত্তি, কেউ গান, কেউ নাটক, কেউ খেলাধুলা করে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাহফুজা রহমান আরও বলেন, স্কুলটির অবস্থান এমন স্থানে যার বড় একটি অংশে নি¤œআয়ের মানুষের বসবাস। ড্রপ আউট রোধে প্রত্যেক শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে উদ্বুদ্ধকরণ করতে হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বাল্যবিয়ে রোধে বিশেষ ভূমিকা নেয়া হয়।
বর্তমানে স্কুলের উপস্থিতির হার প্রায় ৭০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশ। কোন শিক্ষার্থী দীর্ঘ সময় স্কুলে না এলে বাড়িতে খোঁজ করা হয়। অভিভাবকদের বোঝানো হয়। স্কুলে নিয়মিত মা সমাবেশ, অভিভাবক সমাবেশের পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি গিয়ে উঠান বৈঠক করা হয়।
স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানায়, আমাদের বড় খেলার মাঠ নেই। স্কুলের সামনে আছে এক টুকরো উঠান। তবে স্কুলের পাশেই আছে প্রাচীন একটি আম বাগান। এছাড়া জাতীয় দিবসগুলোতে শিক্ষার্থীরা ফলদ, বনজ, ঔষধিসহ ফুল গাছের চারা রোপণ করে।
স্কুলের শিক্ষকরা বলেন, অনেকের ধারণা আছে, সরকারি প্রাথমিক স্কুলে লেখাপড়া ভালো হয় না। এই স্কুল সে ধারণা ভেঙে দিয়েছে। প্রতিবছর এই স্কুলে অধিক সংখ্যক বৃত্তি পাচ্ছে। স্কুলের শিক্ষার্থীদের একই রঙের পোশাক আছে। শিশুরা ব্যবহার করে উন্নত ওয়াশ রুম ও বেসিন। সততা স্টোরে শিশুরা পণ্য কিনে নির্দিষ্ট স্থানে অর্থ বিনিময় করে। প্রতিবছর স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন হয় জাতীয় নির্বাচনের মতো।
এ বিষয়ে নাগরপুর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা জিএম ফুয়াদ মিয়া জানান, শিশুবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হওয়াতে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী ভর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। উপস্থিতি সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় শিশুদের কলকাকলিতে মুখরিত হচ্ছে প্রতিদিন। প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিশুবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে উপজেলা শিক্ষা অফিস সহযোগিতা ও গঠনমূলক দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে।