স্বামীর নির্মম নির্যাতনে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন গৃহবধূ

নড়াইল সদর উপজেলার পইলডাঙ্গা গ্রামে স্বামীকে মাদকসেবনে বাধা দেয়ায় স্ত্রীকে অমানবিক নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখন শারীরিক যন্ত্রণায় নড়াইল সদর হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন নির্যাতিতা গৃহবধূ কাজী সুমাইয়া ইসলাম। বৃহস্পতিবার বিকেলে মাদকসেবনে বাধা দেয়ায় কথাকাটির জের ধরে আশিক তার স্ত্রীকে কিল-ঘুষি ছাড়াও রড দিয়ে বেদম মারধর করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় স্বামী আশিকসহ শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদ পালিয়েছে। মেধাবী সুমাইয়া ইসলাম লোহাগড়া সরকারি আদর্শ কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। এসএসসিতে জিপিএ-৪ পেয়েছিল। স্বামী আশিক নড়াইলে নির্মাণাধীন রেলওয়ে প্রকল্পে চীনাদের সঙ্গে দোভাষী হিসেবে কাজ করেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১১ মাস আগে নড়াইল সদরের পইলডাঙ্গা গ্রামের মনসুর খানের ছেলে আশিক খানের সঙ্গে লোহাগড়া উপজেলার শামুকখোলা গ্রামের নজরুল ইসলাম বাদশার মেয়ে কাজী সুমাইয়া ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের পর সুমাইয়া জানতে পারেন তার স্বামী মাদকাসক্ত। সংসারের সুখের কথা বিবেচনায় স্বামীর মাদকাসক্তের বিষয়টি গোপন রাখলেও পরে তা জানাজানি হয়ে যায়। স্বামীকে মাদক থেকে দূরে রাখার জন্য অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন সুমাইয়া। এ কারণে প্রায়ই সুমাইয়াকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হতো। এরই জের ধরে বৃহস্পতিবার বিকেলে আশিক তার স্ত্রীকে বেদম মারধর করে পালিয়ে যায়।

এদিকে, আশিকের বাবা-মা ছেলে শাসন করেন না বলে অভিযোগ করেন গৃহবধূ সুমাইয়া। বরং সুমাইয়ার শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদ তাকে প্রায়ই শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করেন।

অন্যদিকে, প্রায় ৬ মাস আগে হঠাৎ করে আর-ওয়ান ফাইভ মোটরসাইকেলের জন্য বাহানা শুরু করে অভিযুক্ত আশিক খান। মোটরসাইকেলের এ আবদার পূরণ করতে দেরি হওয়ায় সুমাইয়ার ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।

গৃহবধূ সুমাইয়ার বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য নজরুল ইসলাম বাদশা বলেন, বিয়ের ২ মাস পর থেকেই আমার মেয়ের ওপর নির্যাতন শুরু হয়েছে। জামাই আশিক প্রায়ই সুমাইয়াকে মারধর করে। এ নিয়ে বেশকয়েকবার পারিবারিকভাবে শালিস হয়েছে। তবে আশিকের নির্যাতন বন্ধ হয়নি। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার আমার মেয়েকে রড দিয়ে বেদম মারধর করে আশিক। এতে তার তিনটি দাঁত ভেঙ্গে গেছে। ঠোঁটে ১০টি সেলাই দিতে হয়েছে। মাথা, পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত রয়েছে। আমার মেয়েটি ঠিকমতো কথা বলতে পারছে না। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

সুমাইয়ার বড় ভাই কাজী রমজান বলেন, আমার বোনকে নির্যাতনের ঘটনায় আশিকসহ তার বাবা-মা ও বোনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার পার্থ সারথি রায় জানান, সুমাইয়ার মাথা, ঠোঁটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তার সিটিস্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরিক্ষা দেয়া হয়েছে।

নড়াইল সদর থানার ওসি (চলতি দায়িত্ব) মাহমুদুর রহমান বলেন, ভুক্তভোগী গৃহবধূর বাবা বাদী হয়ে চারজনের নামে শুক্রবার রাত ৮টার দিকে মামলা করেছেন। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আসামিরা পলাতক আছেন।

রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৪ আশ্বিন ১৪২৯ ২০ সফর ১৪৪৪

স্বামীর নির্মম নির্যাতনে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন গৃহবধূ

ফরহাদ খান, নড়াইল

নড়াইল সদর উপজেলার পইলডাঙ্গা গ্রামে স্বামীকে মাদকসেবনে বাধা দেয়ায় স্ত্রীকে অমানবিক নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখন শারীরিক যন্ত্রণায় নড়াইল সদর হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন নির্যাতিতা গৃহবধূ কাজী সুমাইয়া ইসলাম। বৃহস্পতিবার বিকেলে মাদকসেবনে বাধা দেয়ায় কথাকাটির জের ধরে আশিক তার স্ত্রীকে কিল-ঘুষি ছাড়াও রড দিয়ে বেদম মারধর করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় স্বামী আশিকসহ শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদ পালিয়েছে। মেধাবী সুমাইয়া ইসলাম লোহাগড়া সরকারি আদর্শ কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। এসএসসিতে জিপিএ-৪ পেয়েছিল। স্বামী আশিক নড়াইলে নির্মাণাধীন রেলওয়ে প্রকল্পে চীনাদের সঙ্গে দোভাষী হিসেবে কাজ করেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১১ মাস আগে নড়াইল সদরের পইলডাঙ্গা গ্রামের মনসুর খানের ছেলে আশিক খানের সঙ্গে লোহাগড়া উপজেলার শামুকখোলা গ্রামের নজরুল ইসলাম বাদশার মেয়ে কাজী সুমাইয়া ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের পর সুমাইয়া জানতে পারেন তার স্বামী মাদকাসক্ত। সংসারের সুখের কথা বিবেচনায় স্বামীর মাদকাসক্তের বিষয়টি গোপন রাখলেও পরে তা জানাজানি হয়ে যায়। স্বামীকে মাদক থেকে দূরে রাখার জন্য অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন সুমাইয়া। এ কারণে প্রায়ই সুমাইয়াকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হতো। এরই জের ধরে বৃহস্পতিবার বিকেলে আশিক তার স্ত্রীকে বেদম মারধর করে পালিয়ে যায়।

এদিকে, আশিকের বাবা-মা ছেলে শাসন করেন না বলে অভিযোগ করেন গৃহবধূ সুমাইয়া। বরং সুমাইয়ার শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদ তাকে প্রায়ই শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করেন।

অন্যদিকে, প্রায় ৬ মাস আগে হঠাৎ করে আর-ওয়ান ফাইভ মোটরসাইকেলের জন্য বাহানা শুরু করে অভিযুক্ত আশিক খান। মোটরসাইকেলের এ আবদার পূরণ করতে দেরি হওয়ায় সুমাইয়ার ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।

গৃহবধূ সুমাইয়ার বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য নজরুল ইসলাম বাদশা বলেন, বিয়ের ২ মাস পর থেকেই আমার মেয়ের ওপর নির্যাতন শুরু হয়েছে। জামাই আশিক প্রায়ই সুমাইয়াকে মারধর করে। এ নিয়ে বেশকয়েকবার পারিবারিকভাবে শালিস হয়েছে। তবে আশিকের নির্যাতন বন্ধ হয়নি। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার আমার মেয়েকে রড দিয়ে বেদম মারধর করে আশিক। এতে তার তিনটি দাঁত ভেঙ্গে গেছে। ঠোঁটে ১০টি সেলাই দিতে হয়েছে। মাথা, পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত রয়েছে। আমার মেয়েটি ঠিকমতো কথা বলতে পারছে না। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

সুমাইয়ার বড় ভাই কাজী রমজান বলেন, আমার বোনকে নির্যাতনের ঘটনায় আশিকসহ তার বাবা-মা ও বোনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার পার্থ সারথি রায় জানান, সুমাইয়ার মাথা, ঠোঁটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তার সিটিস্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরিক্ষা দেয়া হয়েছে।

নড়াইল সদর থানার ওসি (চলতি দায়িত্ব) মাহমুদুর রহমান বলেন, ভুক্তভোগী গৃহবধূর বাবা বাদী হয়ে চারজনের নামে শুক্রবার রাত ৮টার দিকে মামলা করেছেন। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আসামিরা পলাতক আছেন।