প্রান্তিক খামারিরা করপোরেট কোম্পানির কাছে ‘অসহায়’

‘সিন্ডিকেট’ নির্মূলে পোল্ট্রি বোর্ড গঠনের দাবি

পোল্ট্রি খাতের সিন্ডিকেট নির্মূলে ‘পোল্ট্রি বোর্ড ’ গঠনের দাবি জানিয়েছে ডিম উৎপাদনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন। গতকাল বেলা ১১টায় পোল্ট্রি ফিড, বাচ্চার দাম নিয়ন্ত্রনহীনভাবে বৃদ্ধি ও খামারিদের উৎপাদিত ডিম, মুরগির ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার প্রতিবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি সুমন হাওলাদার এ দাবি জানান।

তিনি বলেন, ‘পোল্ট্রি বোর্ড গঠন করে সরকারের পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্নভাবে খামারি ও ভোক্তা পর্যায়ে ডিম ও মুরগির মূল্য নির্ধারণ করে দিতে হবে। প্রাণিসম্পদ, বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়, খামারি প্রতিনিধি, ফিডমিল প্রতিনিধিসহ হ্যাচারি মালিক প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করতে হবে। ওই কমিটি ১৫ দিন বা ১ মাসে উৎপাদিত পোল্ট্রির বাচ্চা ও সব পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করবে।’

সুমন হাওলাদারের অভিযোগ, ঈদ, শবে-বরাতসহ বিশেষ ৪৫ দিনে বাচ্চা বিক্রি করে প্রায় ৩২৫ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে সিন্ডিকেট। অথচ গত এক বছরে ফিডের দাম বেড়েছে ১০ বার। ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ৫০ কোজির বস্তায় দাম বাড়ানো হয়েছে ১ হাজার ৪৭ টাকা। প্রতি কেজিতে আড়াই টাকা বেড়েছে গত মাসের ৭ তারিখ থেকে চলতি মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে। কেজিতে যদি দুই টাকাও বাড়ে, তাহলে এ সময়ের মধ্যে ফিড কোম্পানিগুলো ১ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা মুনাফা তুলে নিয়েছে। ২০০৯ সালে দেশে পোল্ট্রি খামার ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার। ২০১৯ সাল পর্যন্ত খামারের সংখ্যা ছিল ১ লাখ। কিন্তু ২০২১-২২ সালের মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার খামার বন্ধ হয়ে গেছে। তার দাবি, কোন খামারি বাজারমূল্য নির্ধারণ করেন না। ঢাকার বাজারের ওপর ভিত্তি করে স্থানীয় আড়তদাররা চাহিদার ভিত্তিতে বাজারমূল্য নির্ধারণ করে থাকেন। মূল্য নির্ধারণের সময় ডিম-ব্রয়লারের উৎপাদন খরচের দিকে কোন লক্ষ্য রাখা হয় না। বাংলাদেশের কিছু করপোরেট ও বিদেশি কিছু মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি কমার্শিয়াল ফার্মিংয়ে আসায় বাজারটি তাদের হাতে চলে গেছে। কারণ মোট উৎপাদনের প্রায় ৪০ শতাংশই তাদের হাতে। তারা চাচ্ছে, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারিরা ঝরে গিয়ে বাজারের পুরো নিয়ন্ত্রণ চলে আসুক তাদের হাতে।

তিনি আরও বলেন, ‘ভোক্তা পর্যায়ে যে ডিমের মূল্য ১২-১৩ টাকা, সেখানে ওই ডিম উৎপাদনকারী সর্বোচ্চ ৯ টাকা ৫০ পয়সা পান। এর মধ্যে আড়তদার, ফড়িয়া, মুদি দোকানদাররা ডিম প্রতি আড়াই-তিন টাকা পর্যন্ত পেয়ে থাকেন।’

সুমন হাওলাদার আরও বলেন, ‘করপোরেট কোম্পানিগুলোর ডিমের উৎপাদন খরচ কম। কারণ বাচ্চা তাদের নিজস্ব হ্যাচারিতে উৎপাদিত হয়। খাদ্যের সব কাঁচামাল তারা বৃহৎ আকারে আমদানি করে নিজস্ব কারখানায় উৎপাদন করে কমার্শিয়াল ফার্মে সরবারহ করে। ফলে তাদের উৎপাদিত পণ্যমূল্যের সঙ্গে প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদিত পণ্যমূল্যের অনেক পার্থক্য তৈরি হয়ে যায়।’ তার দাবি, প্রান্তিক খামারিরা এসব করপোরেট কোম্পানির কাছে অসহায়। কোম্পানিগুলো যখন বাচ্চা ও খাদ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়, তখন সবাই একসঙ্গে বাড়ায়। এ সময় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াস খন্দকার বলেন, ‘বছরে বাচ্চার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। আর ফিডের দাম বেড়েছে ৬০ শতাংশের বেশি। এমন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জন্য দেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলো দায়ী।

এদের জন্য গত এক বছরে হাজার হাজার খামার বন্ধ হয়ে গেছে।’

এ সময় তিনি প্রান্তিক ছোট-বড়, নতুন-পুরোনো সব খামারিকে বিমার আওতায় আনা সহ সরকারের কাছে ছয়দফা দাবি জানান।

সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৩ আশ্বিন ১৪২৯ ২১ সফর ১৪৪৪

প্রান্তিক খামারিরা করপোরেট কোম্পানির কাছে ‘অসহায়’

‘সিন্ডিকেট’ নির্মূলে পোল্ট্রি বোর্ড গঠনের দাবি

অর্থনেতিক বার্তা পরিবেশক

image

পোল্ট্রি খাতের সিন্ডিকেট নির্মূলে ‘পোল্ট্রি বোর্ড ’ গঠনের দাবি জানিয়েছে ডিম উৎপাদনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন। গতকাল বেলা ১১টায় পোল্ট্রি ফিড, বাচ্চার দাম নিয়ন্ত্রনহীনভাবে বৃদ্ধি ও খামারিদের উৎপাদিত ডিম, মুরগির ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার প্রতিবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি সুমন হাওলাদার এ দাবি জানান।

তিনি বলেন, ‘পোল্ট্রি বোর্ড গঠন করে সরকারের পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্নভাবে খামারি ও ভোক্তা পর্যায়ে ডিম ও মুরগির মূল্য নির্ধারণ করে দিতে হবে। প্রাণিসম্পদ, বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়, খামারি প্রতিনিধি, ফিডমিল প্রতিনিধিসহ হ্যাচারি মালিক প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করতে হবে। ওই কমিটি ১৫ দিন বা ১ মাসে উৎপাদিত পোল্ট্রির বাচ্চা ও সব পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করবে।’

সুমন হাওলাদারের অভিযোগ, ঈদ, শবে-বরাতসহ বিশেষ ৪৫ দিনে বাচ্চা বিক্রি করে প্রায় ৩২৫ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে সিন্ডিকেট। অথচ গত এক বছরে ফিডের দাম বেড়েছে ১০ বার। ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ৫০ কোজির বস্তায় দাম বাড়ানো হয়েছে ১ হাজার ৪৭ টাকা। প্রতি কেজিতে আড়াই টাকা বেড়েছে গত মাসের ৭ তারিখ থেকে চলতি মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে। কেজিতে যদি দুই টাকাও বাড়ে, তাহলে এ সময়ের মধ্যে ফিড কোম্পানিগুলো ১ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা মুনাফা তুলে নিয়েছে। ২০০৯ সালে দেশে পোল্ট্রি খামার ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার। ২০১৯ সাল পর্যন্ত খামারের সংখ্যা ছিল ১ লাখ। কিন্তু ২০২১-২২ সালের মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার খামার বন্ধ হয়ে গেছে। তার দাবি, কোন খামারি বাজারমূল্য নির্ধারণ করেন না। ঢাকার বাজারের ওপর ভিত্তি করে স্থানীয় আড়তদাররা চাহিদার ভিত্তিতে বাজারমূল্য নির্ধারণ করে থাকেন। মূল্য নির্ধারণের সময় ডিম-ব্রয়লারের উৎপাদন খরচের দিকে কোন লক্ষ্য রাখা হয় না। বাংলাদেশের কিছু করপোরেট ও বিদেশি কিছু মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি কমার্শিয়াল ফার্মিংয়ে আসায় বাজারটি তাদের হাতে চলে গেছে। কারণ মোট উৎপাদনের প্রায় ৪০ শতাংশই তাদের হাতে। তারা চাচ্ছে, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারিরা ঝরে গিয়ে বাজারের পুরো নিয়ন্ত্রণ চলে আসুক তাদের হাতে।

তিনি আরও বলেন, ‘ভোক্তা পর্যায়ে যে ডিমের মূল্য ১২-১৩ টাকা, সেখানে ওই ডিম উৎপাদনকারী সর্বোচ্চ ৯ টাকা ৫০ পয়সা পান। এর মধ্যে আড়তদার, ফড়িয়া, মুদি দোকানদাররা ডিম প্রতি আড়াই-তিন টাকা পর্যন্ত পেয়ে থাকেন।’

সুমন হাওলাদার আরও বলেন, ‘করপোরেট কোম্পানিগুলোর ডিমের উৎপাদন খরচ কম। কারণ বাচ্চা তাদের নিজস্ব হ্যাচারিতে উৎপাদিত হয়। খাদ্যের সব কাঁচামাল তারা বৃহৎ আকারে আমদানি করে নিজস্ব কারখানায় উৎপাদন করে কমার্শিয়াল ফার্মে সরবারহ করে। ফলে তাদের উৎপাদিত পণ্যমূল্যের সঙ্গে প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদিত পণ্যমূল্যের অনেক পার্থক্য তৈরি হয়ে যায়।’ তার দাবি, প্রান্তিক খামারিরা এসব করপোরেট কোম্পানির কাছে অসহায়। কোম্পানিগুলো যখন বাচ্চা ও খাদ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়, তখন সবাই একসঙ্গে বাড়ায়। এ সময় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াস খন্দকার বলেন, ‘বছরে বাচ্চার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। আর ফিডের দাম বেড়েছে ৬০ শতাংশের বেশি। এমন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জন্য দেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলো দায়ী।

এদের জন্য গত এক বছরে হাজার হাজার খামার বন্ধ হয়ে গেছে।’

এ সময় তিনি প্রান্তিক ছোট-বড়, নতুন-পুরোনো সব খামারিকে বিমার আওতায় আনা সহ সরকারের কাছে ছয়দফা দাবি জানান।