বিদেশি ঋণ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই : মান্নান

বিদেশি ঋণ নিয়ে আমাদের কোন ভয় নেই বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তবে বিদেশি ঋণে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে বলে তিনি তাগিদ দিয়েছেন। গতকাল রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে ‘সুশাসন নিশ্চিতকরণে বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক এক সেমিনার শেষে তিনি এ কথা বলেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে আমরা ঋণের অংশীদার ছিলাম। স্বাধীনতার পরেও দেশের উন্নয়নে ঋণ নেয়া হচ্ছে। বিদেশি ঋণ দেশের উন্নয়নে কেন্দ্রীয়ভাবে ভূমিকা পালন করছে। তবে বিদেশি ঋণে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিদেশি ঋণ নিয়ে কোন ভয় নেই। যেকোন দেশের অর্থনীতির জন্য ঋণ নিতে হয়। তবে তা জেনে বুঝে শুনে নিতে হবে। অনেকে ভয় দেখায়। যা ঠিক নয়। বিদেশি ঋণের কোন বিকল্প নেই।’

ফিজিবিলিটি স্টাডিজ ছাড়া প্রকল্প নেয়া হয় না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে বাছাই প্রক্রিয়া করেই নেয়া হয়। তারপরও অনেকে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করে। আর এসব থাকবেই। তবে প্লানিং কমিশন এখন অনেক শক্তিশালী। ভালোভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেছেন, ‘আজকে বিদেশি ঋণের ব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা উঠেছে। আমরা ঋণ নেব কেন? আজকে যে বঙ্গবন্ধু সেতু সেটা কিন্তু বিদেশি ঋণে হয়েছে। আমি যে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি এটাও ইউএসআইডি’র সহায়তায় স্থাপিত হয়েছিল। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কৃষির উন্নয়নে কাজ করছে। এটা সম্ভব হয়েছিল বৈদেশিক ঋণ সহায়তায়। বিআইসিসি, মেট্রোরেল, ন্যাশনাল হাইওয়ে হচ্ছে বৈদেশিক ঋণে। বিদেশি সহায়তা আমাদের উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করছে। আমাদের প্রচুর ঋণ নেয়া দরকার, যতোক্ষণ পর্যন্ত উন্নত দেশ না হতে পারব।’

বৈদেশিক ঋণ নেয়ার যুক্তি তুলে ধরে ড. শামসুল আলম বলেন, ‘বৈদেশিক ঋণে সুদ কম, পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে পরিশোধ করতে হয়। বৈদেশিক ঋণে সুদ ০ দশমিক ৭৫ থেকে দেড় শতাংশ। এই ঋণ পরিশোধ করার সময়টাও অনেক বড়। অনেক ঋণ আবার ৩১ বছরে পরিশোধ করতে হয়। আর দেশীয় ঋণ যদি ব্যাংক থেকে নেয়া হয় তাহলে সাড়ে ৭ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দেয়া লাগে। বিদেশে যখন কম সুদ পাব তাহলে নেয়া উচিত। এর মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলার ২০২২ সালে পেয়েছি। যেহেতু স্বস্তায় ঋণ পাওয়া যাচ্ছে, সেহেতু দীর্ঘমেয়াদি নিতে হবে।’

ঋণের সঠিক ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশি ঋণ নেয়ার কারণে অনেক সমালোচনা হয়। শ্রীলঙ্কা কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার সব থেকে উন্নত দেশ ছিল, মাথাপিছু আয় ও শিক্ষার হার ভালো ছিল। বেশকিছু ভুলের জন্য তাদের এখন দুরাবস্থা। দক্ষিণ কোরিয়াও ঋণ নিয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। তবে কিছু দেশ প্রচুর বৈদেশিক ঋণ নিয়েও কিছু করতে পারেনি, যেমন পাকিস্তান। তার অন্যতম কারণ ঋণ ব্যবস্থাপনার অভাব। কতগুলো ভুল করে তারা সমস্যায় পড়েছে, তাই আমাদের বৈদেশিক ঋণের বিষয়ে সাবধান হতে হবে।’ সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, ইআরডি সচিব শরীফ খান, পরিকল্পনা সচিব মামুন আল রশীদ, আইএমইডি সচিব আবুহেনা মোরশেদ জামান।

সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৩ আশ্বিন ১৪২৯ ২১ সফর ১৪৪৪

বিদেশি ঋণ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই : মান্নান

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

বিদেশি ঋণ নিয়ে আমাদের কোন ভয় নেই বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তবে বিদেশি ঋণে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে বলে তিনি তাগিদ দিয়েছেন। গতকাল রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে ‘সুশাসন নিশ্চিতকরণে বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক এক সেমিনার শেষে তিনি এ কথা বলেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে আমরা ঋণের অংশীদার ছিলাম। স্বাধীনতার পরেও দেশের উন্নয়নে ঋণ নেয়া হচ্ছে। বিদেশি ঋণ দেশের উন্নয়নে কেন্দ্রীয়ভাবে ভূমিকা পালন করছে। তবে বিদেশি ঋণে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিদেশি ঋণ নিয়ে কোন ভয় নেই। যেকোন দেশের অর্থনীতির জন্য ঋণ নিতে হয়। তবে তা জেনে বুঝে শুনে নিতে হবে। অনেকে ভয় দেখায়। যা ঠিক নয়। বিদেশি ঋণের কোন বিকল্প নেই।’

ফিজিবিলিটি স্টাডিজ ছাড়া প্রকল্প নেয়া হয় না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে বাছাই প্রক্রিয়া করেই নেয়া হয়। তারপরও অনেকে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করে। আর এসব থাকবেই। তবে প্লানিং কমিশন এখন অনেক শক্তিশালী। ভালোভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেছেন, ‘আজকে বিদেশি ঋণের ব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা উঠেছে। আমরা ঋণ নেব কেন? আজকে যে বঙ্গবন্ধু সেতু সেটা কিন্তু বিদেশি ঋণে হয়েছে। আমি যে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি এটাও ইউএসআইডি’র সহায়তায় স্থাপিত হয়েছিল। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কৃষির উন্নয়নে কাজ করছে। এটা সম্ভব হয়েছিল বৈদেশিক ঋণ সহায়তায়। বিআইসিসি, মেট্রোরেল, ন্যাশনাল হাইওয়ে হচ্ছে বৈদেশিক ঋণে। বিদেশি সহায়তা আমাদের উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করছে। আমাদের প্রচুর ঋণ নেয়া দরকার, যতোক্ষণ পর্যন্ত উন্নত দেশ না হতে পারব।’

বৈদেশিক ঋণ নেয়ার যুক্তি তুলে ধরে ড. শামসুল আলম বলেন, ‘বৈদেশিক ঋণে সুদ কম, পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে পরিশোধ করতে হয়। বৈদেশিক ঋণে সুদ ০ দশমিক ৭৫ থেকে দেড় শতাংশ। এই ঋণ পরিশোধ করার সময়টাও অনেক বড়। অনেক ঋণ আবার ৩১ বছরে পরিশোধ করতে হয়। আর দেশীয় ঋণ যদি ব্যাংক থেকে নেয়া হয় তাহলে সাড়ে ৭ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দেয়া লাগে। বিদেশে যখন কম সুদ পাব তাহলে নেয়া উচিত। এর মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলার ২০২২ সালে পেয়েছি। যেহেতু স্বস্তায় ঋণ পাওয়া যাচ্ছে, সেহেতু দীর্ঘমেয়াদি নিতে হবে।’

ঋণের সঠিক ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশি ঋণ নেয়ার কারণে অনেক সমালোচনা হয়। শ্রীলঙ্কা কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার সব থেকে উন্নত দেশ ছিল, মাথাপিছু আয় ও শিক্ষার হার ভালো ছিল। বেশকিছু ভুলের জন্য তাদের এখন দুরাবস্থা। দক্ষিণ কোরিয়াও ঋণ নিয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। তবে কিছু দেশ প্রচুর বৈদেশিক ঋণ নিয়েও কিছু করতে পারেনি, যেমন পাকিস্তান। তার অন্যতম কারণ ঋণ ব্যবস্থাপনার অভাব। কতগুলো ভুল করে তারা সমস্যায় পড়েছে, তাই আমাদের বৈদেশিক ঋণের বিষয়ে সাবধান হতে হবে।’ সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, ইআরডি সচিব শরীফ খান, পরিকল্পনা সচিব মামুন আল রশীদ, আইএমইডি সচিব আবুহেনা মোরশেদ জামান।