সতর্কতার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ

জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সতর্কতার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এ খাতের বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, পেট্রোবাংলার পরিকল্পনামাফিক ২০২৫ সালের মধ্যে ৬১৮ এমএমসিএফডি গ্যাস যুক্ত করার পরিকল্পনা অতি আশাবাদী। ফলে এই সময়কালে গ্যাস সংকট আরও বৃদ্ধি পাবে।

তারা বলছেন, ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে গ্যাসের সিস্টেম লস ১০ শতাংশ থেকে ২ শতাংশে নামিয়ে এনে প্রতিদিন ২৫০-৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সাশ্রয় করা সম্ভব। যা স্পটবাজার থেকে এলএনজি কেনার বিকল্প হবে, শিল্পে আরও বেশি গ্যাস সরবরাহ করা যাবে। অন্যদিকে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নির্ধারিত সরকারি ও বেসরকারি জায়গায় মধ্য মেয়াদে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিলে ৩ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত সৌরবিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির আওতায় নিজস্ব কয়লা উত্তোলন ও ব্যবহার করার কাজ শুরু করার পাশাপাশি স্থল ও জলভাগে বাপেক্স ও পাশাপাশি আইওসিদের এনে ব্যাপকভিত্তিক অনুসন্ধান শুরু করা উচিত বলে মনে করছেন তারা।

বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটে বাংলাদেশের করণীয় বিষয়ে গতকাল বাংলাদেশ এনার্জি সোসাইটির (বিইএস) আয়োজনে ‘প্রেজেন্ট এনার্জি ক্রাইসিস-ওয়ে ফরওয়ার্ড ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বীর বিক্রম ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী প্রায় সকল খাতেই ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে, যা এই অস্থিতিশীল ও সংকটময় অবস্থা সৃষ্টি করেছে এবং বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। তাই কীভাবে বর্তমান সংকট কাটিয়ে ওঠা যায় এবং ভবিষ্যতে এরূপ পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায় আমরা সে চেষ্টাই করছি।’

নিজস্ব গ্যাসসম্পদ অনুসন্ধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গত ১০ বছর সময়কালে ৫০টি কূপ খনন করার পরও বড় কেন সাফল্য পাওয়া যায়নি। তারপরও স্থলভাগে চেষ্টা অব্যাহত আছে। সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্যও প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু সাফল্য কতটা পাওয়া যাবে এবং পরিবর্তিত বিশ্ব প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিকে আকর্ষণ করা যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় আছে।’

বুয়েটের প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ম. তামিম বলন, ‘বাংলাদেশ আমদানিকৃত এবং নিজস্ব উভয় জ্বালানিই ব্যবহার করে। তবে চলমান সংকট মোকাবিলায় আমাদের আরও গুরুত্বের সঙ্গে নিজস্ব জ্বালানির উৎপাদন বৃদ্ধিতে মনোযোগী হতে হবে। বিশেষ করে নবায়নযোগ্য শক্তি ও জ্বালানির দক্ষ ব্যবহারের দিকে আমাদের বাড়তি নজর দিতে হবে। নিজস্ব গ্যাস ও কয়লা দিয়ে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না। এলএনজি আমদানি করতেই হবে। তবে কয়লা আমদানির ওপর চাপ কমাতে নিজেদের কয়লা কীভাবে ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যদিকে সাগরে সার্ভে করে ডাটা প্যাকেজ তৈরির আগে অপশোর বিডিংয়ে গেলে আমাদের নেগোসিয়েশন সক্ষমতা কমে যাবে।’

তিনি মনে করেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানির দামের অস্থিরতা স্থায়ী হবে না। তাই সতর্কতার সঙ্গে বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদে জ্বালানি জোগান পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

বিইএস সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান এএসএম আলমগীর কবিরের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিইএস সভাপতি ও সাবেক মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ। আলোচনা ও সমাপনী বক্তব্যের সারাংশ উপস্থাপন করেন ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিইএস সদস্য মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন (অব.)। মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন বিইএস সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম।

বিইএস সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব কয়লা উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে। লিকেজ কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এলএন গ্যাসের পরিবর্তে এলপি গ্যাস ব্যবহার করে সংকট মোকবিলা করা যেতে পারে। জ্বালানির সিস্টেম-লস কমিয়ে সেই পরিমাণ বিদ্যুৎ অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহার করা গেলে পরিস্থিতি সামলানো সম্ভব।’

এফবিসিসিআইয়ের এনার্জি স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ও এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ুন রশিদ বলেন, ‘জ্বালানির দক্ষ ব্যবহার করতে উদ্যোক্তারা আগ্রহী। কিন্তু তার ওওপর উচ্চ শুল্ক থাকার কারণে শিল্প জ্বালানি দক্ষ হতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারের উচিত জ্বালানির দক্ষ ব্যবহারে শুল্ক রেয়াত দেয়া।’

বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান করিম বলেন, ‘ফার্নেস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে উচ্চ দাম তার পেছনে আছে ৩০ শতাংশ শুল্ক ও ভ্যাট। তিনি মনে করেন, শুল্ক-ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলে ফার্নেস বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ আমদানি করা কয়লার চেয়ে কম পড়বে। জ্বালানির উচ্চমূল্যের চাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিজস্ব জ্বালানির জোগান বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই।’

সামিট গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ ফয়সাল করিম খান

বলেন, ‘আগামী দিনের জ্বালানি এলএনজি। দেশের গ্যাসনির্ভর কাঠামো বিবেচনায় রেখে এলএনজি আমদানি অবকাঠামো সম্প্রসারণ করা দরকার। আগামী দিনে এই অবকাঠামো অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেন আমদানিতে রূপান্তর করা সম্ভব।’

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী খন্দকার আবদুস সালেক (সুফি) বলেন, ‘গ্যাসের সিস্টেম লস বর্তমান পর্যায় থেকে ২ শতাংশ নামিয়ে আনলে ২৫০-৩০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সাশ্রয় করা সম্ভব। যা দিয়ে শিল্পে বাড়তি গ্যাসের জোগান দেয়ার মাধ্যমে উৎপাদন গতিশীল করা সম্ভব।’

ওয়েবিনারের সুপারিশে সরকারকে জ্বালানি সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সময়কাল বেঁধে দিয়ে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়ার কথা বলা হয়। স্বল্প মেয়াদে ডিমান্ড সাইড লোড ব্যবস্থাপনা, গ্যাসের সিস্টেম লস কমানো ও জ্বালানির দক্ষ ব্যবহার ও সংরক্ষণের কথা বলা হয়। বলা হয়, এককভাবে নিজস্ব জ্বালানি দিয়ে বাংলাদেশের চলবে না। তাই এলএনজি ও কয়লা আমদানি অবকাঠামো গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি কয়লা ও এলএনজি কেনার জন্য দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষরের পরামর্শও দেয়া হয়।

সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৩ আশ্বিন ১৪২৯ ২১ সফর ১৪৪৪

জ্বালানি নিরাপত্তা

সতর্কতার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সতর্কতার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এ খাতের বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, পেট্রোবাংলার পরিকল্পনামাফিক ২০২৫ সালের মধ্যে ৬১৮ এমএমসিএফডি গ্যাস যুক্ত করার পরিকল্পনা অতি আশাবাদী। ফলে এই সময়কালে গ্যাস সংকট আরও বৃদ্ধি পাবে।

তারা বলছেন, ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে গ্যাসের সিস্টেম লস ১০ শতাংশ থেকে ২ শতাংশে নামিয়ে এনে প্রতিদিন ২৫০-৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সাশ্রয় করা সম্ভব। যা স্পটবাজার থেকে এলএনজি কেনার বিকল্প হবে, শিল্পে আরও বেশি গ্যাস সরবরাহ করা যাবে। অন্যদিকে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নির্ধারিত সরকারি ও বেসরকারি জায়গায় মধ্য মেয়াদে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিলে ৩ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত সৌরবিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির আওতায় নিজস্ব কয়লা উত্তোলন ও ব্যবহার করার কাজ শুরু করার পাশাপাশি স্থল ও জলভাগে বাপেক্স ও পাশাপাশি আইওসিদের এনে ব্যাপকভিত্তিক অনুসন্ধান শুরু করা উচিত বলে মনে করছেন তারা।

বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটে বাংলাদেশের করণীয় বিষয়ে গতকাল বাংলাদেশ এনার্জি সোসাইটির (বিইএস) আয়োজনে ‘প্রেজেন্ট এনার্জি ক্রাইসিস-ওয়ে ফরওয়ার্ড ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বীর বিক্রম ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী প্রায় সকল খাতেই ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে, যা এই অস্থিতিশীল ও সংকটময় অবস্থা সৃষ্টি করেছে এবং বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। তাই কীভাবে বর্তমান সংকট কাটিয়ে ওঠা যায় এবং ভবিষ্যতে এরূপ পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায় আমরা সে চেষ্টাই করছি।’

নিজস্ব গ্যাসসম্পদ অনুসন্ধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গত ১০ বছর সময়কালে ৫০টি কূপ খনন করার পরও বড় কেন সাফল্য পাওয়া যায়নি। তারপরও স্থলভাগে চেষ্টা অব্যাহত আছে। সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্যও প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু সাফল্য কতটা পাওয়া যাবে এবং পরিবর্তিত বিশ্ব প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিকে আকর্ষণ করা যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় আছে।’

বুয়েটের প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ম. তামিম বলন, ‘বাংলাদেশ আমদানিকৃত এবং নিজস্ব উভয় জ্বালানিই ব্যবহার করে। তবে চলমান সংকট মোকাবিলায় আমাদের আরও গুরুত্বের সঙ্গে নিজস্ব জ্বালানির উৎপাদন বৃদ্ধিতে মনোযোগী হতে হবে। বিশেষ করে নবায়নযোগ্য শক্তি ও জ্বালানির দক্ষ ব্যবহারের দিকে আমাদের বাড়তি নজর দিতে হবে। নিজস্ব গ্যাস ও কয়লা দিয়ে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না। এলএনজি আমদানি করতেই হবে। তবে কয়লা আমদানির ওপর চাপ কমাতে নিজেদের কয়লা কীভাবে ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যদিকে সাগরে সার্ভে করে ডাটা প্যাকেজ তৈরির আগে অপশোর বিডিংয়ে গেলে আমাদের নেগোসিয়েশন সক্ষমতা কমে যাবে।’

তিনি মনে করেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানির দামের অস্থিরতা স্থায়ী হবে না। তাই সতর্কতার সঙ্গে বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদে জ্বালানি জোগান পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

বিইএস সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান এএসএম আলমগীর কবিরের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিইএস সভাপতি ও সাবেক মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ। আলোচনা ও সমাপনী বক্তব্যের সারাংশ উপস্থাপন করেন ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিইএস সদস্য মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন (অব.)। মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন বিইএস সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম।

বিইএস সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব কয়লা উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে। লিকেজ কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এলএন গ্যাসের পরিবর্তে এলপি গ্যাস ব্যবহার করে সংকট মোকবিলা করা যেতে পারে। জ্বালানির সিস্টেম-লস কমিয়ে সেই পরিমাণ বিদ্যুৎ অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহার করা গেলে পরিস্থিতি সামলানো সম্ভব।’

এফবিসিসিআইয়ের এনার্জি স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ও এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ুন রশিদ বলেন, ‘জ্বালানির দক্ষ ব্যবহার করতে উদ্যোক্তারা আগ্রহী। কিন্তু তার ওওপর উচ্চ শুল্ক থাকার কারণে শিল্প জ্বালানি দক্ষ হতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারের উচিত জ্বালানির দক্ষ ব্যবহারে শুল্ক রেয়াত দেয়া।’

বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান করিম বলেন, ‘ফার্নেস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে উচ্চ দাম তার পেছনে আছে ৩০ শতাংশ শুল্ক ও ভ্যাট। তিনি মনে করেন, শুল্ক-ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলে ফার্নেস বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ আমদানি করা কয়লার চেয়ে কম পড়বে। জ্বালানির উচ্চমূল্যের চাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিজস্ব জ্বালানির জোগান বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই।’

সামিট গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ ফয়সাল করিম খান

বলেন, ‘আগামী দিনের জ্বালানি এলএনজি। দেশের গ্যাসনির্ভর কাঠামো বিবেচনায় রেখে এলএনজি আমদানি অবকাঠামো সম্প্রসারণ করা দরকার। আগামী দিনে এই অবকাঠামো অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেন আমদানিতে রূপান্তর করা সম্ভব।’

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী খন্দকার আবদুস সালেক (সুফি) বলেন, ‘গ্যাসের সিস্টেম লস বর্তমান পর্যায় থেকে ২ শতাংশ নামিয়ে আনলে ২৫০-৩০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সাশ্রয় করা সম্ভব। যা দিয়ে শিল্পে বাড়তি গ্যাসের জোগান দেয়ার মাধ্যমে উৎপাদন গতিশীল করা সম্ভব।’

ওয়েবিনারের সুপারিশে সরকারকে জ্বালানি সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সময়কাল বেঁধে দিয়ে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়ার কথা বলা হয়। স্বল্প মেয়াদে ডিমান্ড সাইড লোড ব্যবস্থাপনা, গ্যাসের সিস্টেম লস কমানো ও জ্বালানির দক্ষ ব্যবহার ও সংরক্ষণের কথা বলা হয়। বলা হয়, এককভাবে নিজস্ব জ্বালানি দিয়ে বাংলাদেশের চলবে না। তাই এলএনজি ও কয়লা আমদানি অবকাঠামো গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি কয়লা ও এলএনজি কেনার জন্য দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষরের পরামর্শও দেয়া হয়।