ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত আবার পর্যালোচনা করবে ইসি

জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত আবার পর্যালোচনা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানিয়েছেন দুই নির্বাচন কমিশনার।

সংলাপে বেশিরভাগ দল ইভিএমের বিপক্ষে ছিল। তবে ইসির রোডম্যাপে বলা হয়েছে, অধিকাংশ দল ইভিএমের পক্ষে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন সংবাদের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে নিজ দপ্তরে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো যে মতামত দিয়েছিল, তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিছু দল লিখিত যে প্রস্তাব দিয়েছে, আলোচনার পর মতামত বদলেছে।’

‘তিনটি দল বলেছে, তারা লিখিত এবং মৌখিকভাবে বলেছিল, তারা ইভিএমের বিপক্ষে। কিন্তু ইসি তাদের পক্ষে দেখিয়েছে’- এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মো. আলমগীর বলেন, ‘হয়তো তারা (ওই তিনটি দল) লিখিত দিয়েছিল বিপক্ষে। কিন্তু আলোচনার পর তারা যেভাবে কথা বলেছে, সেটা পক্ষে এসেছে। হয়তো এখন তারা আবার বিপক্ষে বলতে পারে, সেটা তো তাদের অধিকার আছে।’

মো. আলমগীর বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো যে মতামত দিয়েছিল, তার ডকুমেন্ট (অডিও-ভিডিও রেকর্ড) আছে। সেগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো পর্যালোচনা করা হবে। এগুলো ইসির ওয়েবসাইট বা ফেইসবুক পেজে প্রকাশ করা হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা, ৯০০টি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা মিলিয়ে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাকে যদি ৩০০ আসনের টাকা দিতে পারে এবং যারা নির্বাচন করবে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন তাহলে সব আসনেই ইভিএমে ভোট করব আমরা।’

একই বিষয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আরেক নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘তারা মনে করছেন তারা যেটা করেছেন তা ঠিক আছে। রাজনৈতিক দল অনেক কথা বলছে। ইসি যাচাই-বাছাই করে দেখবে। যদি ভুল ধরা পড়ে, ভুল তো ভুলই।’

তবে তিনি জানান, রাজনৈতিক দল নয়, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্তেই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার হবে। রাশিদা সুলতানা বলেন, ‘আমরা বিভিন্নভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে দেখেছি ইভিএম অত্যন্ত সুন্দর একটি যন্ত্র এবং এটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে সহায়ক হবে। আমরা যদি মনে করি ইভিএমে ভোট সুষ্ঠু হয় তাহলে রাজনৈতিক দল চান বা না চান, আমরা অবশ্যই ইভিএমে ভোট করব।’

রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘ইভিএমে সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন করা সম্ভব এটা বোঝার পর ইসি কেন সে যন্ত্র নেবে না? অন্য অনেক দেশের ইভিএমের সঙ্গে এই ইভিএমের মিল নেই। এখানে বায়োমেট্রিক যাচাইয়ের ব্যবস্থা আছে। কে ইভিএম চাইল, কে চাইল না, সেটা কি বেশি গুরুত্ব দেয়া দরকার? ইসির কি এতটুকু স্বাধীনতা নেই?’

প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রকাশ করা নিজেদের কর্মপরিকল্পনায় ইসি বলেছে, সংলাপে অংশগ্রহণকারী ২৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১৭টি দল ইভিএমের পক্ষে মত দিয়েছে। বিপক্ষে মত দিয়েছে ১২টি দল। বেশিরভাগ দলের মত ইভিএমের পক্ষে থাকায় ইভিএম ব্যবহার না করা যুক্তিসংগত হবে না বলে কমিশন মনে করে।

তবে একাধিক গণমাধ্যম তাদের প্রতিবেদনে বলছে, ‘সংলাপে দেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর লিখিত প্রস্তাব পর্যালোচনা এবং দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ইসি যে ১৭টি দলকে ইভিএমের পক্ষে বলে প্রচার করেছে, তার মধ্যে ৩টি দল সরাসরি ইভিএমের বিপক্ষে। একটি দলের ইভিএম নিয়ে কোন মতামত ছিল না। আর ৯টি দল ইভিএম নিয়ে বিভিন্ন শর্তের কথা বলেছিল। সরাসরি ইভিএমের পক্ষে অবস্থান ছিল মাত্র চারটি দলের।’

সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৩ আশ্বিন ১৪২৯ ২১ সফর ১৪৪৪

ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত আবার পর্যালোচনা করবে ইসি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত আবার পর্যালোচনা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানিয়েছেন দুই নির্বাচন কমিশনার।

সংলাপে বেশিরভাগ দল ইভিএমের বিপক্ষে ছিল। তবে ইসির রোডম্যাপে বলা হয়েছে, অধিকাংশ দল ইভিএমের পক্ষে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন সংবাদের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে নিজ দপ্তরে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো যে মতামত দিয়েছিল, তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিছু দল লিখিত যে প্রস্তাব দিয়েছে, আলোচনার পর মতামত বদলেছে।’

‘তিনটি দল বলেছে, তারা লিখিত এবং মৌখিকভাবে বলেছিল, তারা ইভিএমের বিপক্ষে। কিন্তু ইসি তাদের পক্ষে দেখিয়েছে’- এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মো. আলমগীর বলেন, ‘হয়তো তারা (ওই তিনটি দল) লিখিত দিয়েছিল বিপক্ষে। কিন্তু আলোচনার পর তারা যেভাবে কথা বলেছে, সেটা পক্ষে এসেছে। হয়তো এখন তারা আবার বিপক্ষে বলতে পারে, সেটা তো তাদের অধিকার আছে।’

মো. আলমগীর বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো যে মতামত দিয়েছিল, তার ডকুমেন্ট (অডিও-ভিডিও রেকর্ড) আছে। সেগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো পর্যালোচনা করা হবে। এগুলো ইসির ওয়েবসাইট বা ফেইসবুক পেজে প্রকাশ করা হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা, ৯০০টি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা মিলিয়ে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাকে যদি ৩০০ আসনের টাকা দিতে পারে এবং যারা নির্বাচন করবে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন তাহলে সব আসনেই ইভিএমে ভোট করব আমরা।’

একই বিষয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আরেক নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘তারা মনে করছেন তারা যেটা করেছেন তা ঠিক আছে। রাজনৈতিক দল অনেক কথা বলছে। ইসি যাচাই-বাছাই করে দেখবে। যদি ভুল ধরা পড়ে, ভুল তো ভুলই।’

তবে তিনি জানান, রাজনৈতিক দল নয়, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্তেই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার হবে। রাশিদা সুলতানা বলেন, ‘আমরা বিভিন্নভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে দেখেছি ইভিএম অত্যন্ত সুন্দর একটি যন্ত্র এবং এটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে সহায়ক হবে। আমরা যদি মনে করি ইভিএমে ভোট সুষ্ঠু হয় তাহলে রাজনৈতিক দল চান বা না চান, আমরা অবশ্যই ইভিএমে ভোট করব।’

রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘ইভিএমে সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন করা সম্ভব এটা বোঝার পর ইসি কেন সে যন্ত্র নেবে না? অন্য অনেক দেশের ইভিএমের সঙ্গে এই ইভিএমের মিল নেই। এখানে বায়োমেট্রিক যাচাইয়ের ব্যবস্থা আছে। কে ইভিএম চাইল, কে চাইল না, সেটা কি বেশি গুরুত্ব দেয়া দরকার? ইসির কি এতটুকু স্বাধীনতা নেই?’

প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রকাশ করা নিজেদের কর্মপরিকল্পনায় ইসি বলেছে, সংলাপে অংশগ্রহণকারী ২৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১৭টি দল ইভিএমের পক্ষে মত দিয়েছে। বিপক্ষে মত দিয়েছে ১২টি দল। বেশিরভাগ দলের মত ইভিএমের পক্ষে থাকায় ইভিএম ব্যবহার না করা যুক্তিসংগত হবে না বলে কমিশন মনে করে।

তবে একাধিক গণমাধ্যম তাদের প্রতিবেদনে বলছে, ‘সংলাপে দেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর লিখিত প্রস্তাব পর্যালোচনা এবং দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ইসি যে ১৭টি দলকে ইভিএমের পক্ষে বলে প্রচার করেছে, তার মধ্যে ৩টি দল সরাসরি ইভিএমের বিপক্ষে। একটি দলের ইভিএম নিয়ে কোন মতামত ছিল না। আর ৯টি দল ইভিএম নিয়ে বিভিন্ন শর্তের কথা বলেছিল। সরাসরি ইভিএমের পক্ষে অবস্থান ছিল মাত্র চারটি দলের।’