তুমব্রু সীমান্তের তিনশ’ পরিবারকে সরিয়ে নেয়া হতে পারে 

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। গতকাল সকাল থেকেও মায়ানমারের অভ্যন্তরে থেমে থেমে গোলার আওয়াজ শোনা গেছে। সীমান্তের আশপাশে কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। নিরাপত্তা টহল জোরদার করা হয়েছে। সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিজিবি ও স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক রয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে তুমব্রু সীমান্তের ৩০০ পরিবারকে সরিয়ে নেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে প্রশাসন। সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়াসংলগ্ন তুমব্রু, ঘুমধুম, হেডম?্যান পাড়া, ফাত্রা ঝিড়ি, রেজু আমতলী এলাকায় বসবাসকারী এসব পরিবারের প্রায় দেড় হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া যায় কি-না, পর্যালোচনা চলছে।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন, গতকাল প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর এমন চিন্তা-ভাবনা চলছে। তবে বৈঠকে জানানো হয়, ঘুমধুম ইউনিয়নে কোন আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় পরিবারগুলো সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি কঠিন হয়ে যাবে। এছাড়া স্কুলগুলোতেও থাকার কোন পরিবেশ নেই। এ অবস্থায় সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়।

গতকাল সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনদের সঙ্গে বৈঠকটি হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ইউএনও সালমা ফেরদৌস। রুদ্ধধার এই বৈঠকে সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলাপ-আলোচনা হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের বিভিন্ন সুপারিশনামা লিখিত আকারে জেলা প্রশাসক বরাবরে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরী। তিনি আরও জানান, সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতি সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। সাধারণ মানুষদের নিরাপদে রাখতে এবং চলমান এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করার জন্য স্থানীয় সরকারদলীয় নেতারা এবং জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে উপজেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।

এদিকে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গোলাগুলি থেমে নেই। গত শুক্রবার একটি মর্টার শেল সীমান্তঘেঁষা নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের কোনারপাড়া এলাকায় এসে পড়ে। এটি বিস্ফোরণ ঘটলে একজন নিহত ও পাঁচ জন আহত হন। এরপর থেকে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। তবে সীমান্তে অবস্থান করা অনেক মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনের কাছে আশ্রয় নিচ্ছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে।

ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘মায়ানমারের বাহিনী কী চায় তা বুঝতে পারছি না। তবে সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত আছে বলে, জানিয়েছে বিজিবি। তাদের টহলও আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস জানান, সীমান্তের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হচ্ছে এবং স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছে।

জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ‘সীমান্তের নিরাপত্তায় বিজিবি সদস্যরা কাজ করছে। এছাড়া পুলিশ ও গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে তৎপর আছে। স্থানীয়রা যাতে আতঙ্কিত না হয় সে ব্যাপারে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, চলমান প?রি?স্থি?তি?তে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের আজ কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পুতুবপালং সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা নেয়া হবে। পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ৯ সেপ্টেম্বর বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের বাংলাদেশ অভ্যন্তরে মায়ানমার থেকে ছোড়া একটি বুলেট এসে পড়ে। ৩ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় মায়ানমারের যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া দুটি গোলা নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম এলাকায় পড়ে। তার আগে ২৮ আগস্ট বিকেল ৩টার দিকে মায়ানমার থেকে নিক্ষেপ করা একটি মর্টার শেল অবিস্ফোরিত অবস্থায় ঘুমধুমের তুমব্রু উত্তর মসজিদের কাছে পড়েছিল। ১৬ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টায় সীমান্তের কোনাপাতায় ২টি মর্টার শেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে ৫ জন আহত ও একজন নিহত হন। তুমব্রু সীমান্তের জিরো পয়েন্ট ৫ বছর ধরে আশ্রয়ক্যাম্পে বসবাস করছেন মায়ানমারে বাড়িঘরহারা ৪ হাজার ২০০ জনের বেশি রোহিঙ্গা। এই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পেছনেই মায়ানমারের কাঁটাতারের বেড়া ও রাখাইন রাজ্যের একাধিক পাহাড়।

সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৩ আশ্বিন ১৪২৯ ২১ সফর ১৪৪৪

গোলাগুলি থেমে নেই

তুমব্রু সীমান্তের তিনশ’ পরিবারকে সরিয়ে নেয়া হতে পারে 

প্রতিনিধি, বান্দরবান ও কক্সবাজার

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। গতকাল সকাল থেকেও মায়ানমারের অভ্যন্তরে থেমে থেমে গোলার আওয়াজ শোনা গেছে। সীমান্তের আশপাশে কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। নিরাপত্তা টহল জোরদার করা হয়েছে। সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিজিবি ও স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক রয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে তুমব্রু সীমান্তের ৩০০ পরিবারকে সরিয়ে নেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে প্রশাসন। সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়াসংলগ্ন তুমব্রু, ঘুমধুম, হেডম?্যান পাড়া, ফাত্রা ঝিড়ি, রেজু আমতলী এলাকায় বসবাসকারী এসব পরিবারের প্রায় দেড় হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া যায় কি-না, পর্যালোচনা চলছে।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন, গতকাল প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর এমন চিন্তা-ভাবনা চলছে। তবে বৈঠকে জানানো হয়, ঘুমধুম ইউনিয়নে কোন আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় পরিবারগুলো সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি কঠিন হয়ে যাবে। এছাড়া স্কুলগুলোতেও থাকার কোন পরিবেশ নেই। এ অবস্থায় সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়।

গতকাল সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনদের সঙ্গে বৈঠকটি হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ইউএনও সালমা ফেরদৌস। রুদ্ধধার এই বৈঠকে সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলাপ-আলোচনা হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের বিভিন্ন সুপারিশনামা লিখিত আকারে জেলা প্রশাসক বরাবরে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরী। তিনি আরও জানান, সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতি সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। সাধারণ মানুষদের নিরাপদে রাখতে এবং চলমান এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করার জন্য স্থানীয় সরকারদলীয় নেতারা এবং জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে উপজেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।

এদিকে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গোলাগুলি থেমে নেই। গত শুক্রবার একটি মর্টার শেল সীমান্তঘেঁষা নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের কোনারপাড়া এলাকায় এসে পড়ে। এটি বিস্ফোরণ ঘটলে একজন নিহত ও পাঁচ জন আহত হন। এরপর থেকে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। তবে সীমান্তে অবস্থান করা অনেক মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনের কাছে আশ্রয় নিচ্ছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে।

ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘মায়ানমারের বাহিনী কী চায় তা বুঝতে পারছি না। তবে সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত আছে বলে, জানিয়েছে বিজিবি। তাদের টহলও আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস জানান, সীমান্তের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হচ্ছে এবং স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছে।

জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ‘সীমান্তের নিরাপত্তায় বিজিবি সদস্যরা কাজ করছে। এছাড়া পুলিশ ও গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে তৎপর আছে। স্থানীয়রা যাতে আতঙ্কিত না হয় সে ব্যাপারে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, চলমান প?রি?স্থি?তি?তে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের আজ কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পুতুবপালং সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা নেয়া হবে। পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ৯ সেপ্টেম্বর বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের বাংলাদেশ অভ্যন্তরে মায়ানমার থেকে ছোড়া একটি বুলেট এসে পড়ে। ৩ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় মায়ানমারের যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া দুটি গোলা নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম এলাকায় পড়ে। তার আগে ২৮ আগস্ট বিকেল ৩টার দিকে মায়ানমার থেকে নিক্ষেপ করা একটি মর্টার শেল অবিস্ফোরিত অবস্থায় ঘুমধুমের তুমব্রু উত্তর মসজিদের কাছে পড়েছিল। ১৬ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টায় সীমান্তের কোনাপাতায় ২টি মর্টার শেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে ৫ জন আহত ও একজন নিহত হন। তুমব্রু সীমান্তের জিরো পয়েন্ট ৫ বছর ধরে আশ্রয়ক্যাম্পে বসবাস করছেন মায়ানমারে বাড়িঘরহারা ৪ হাজার ২০০ জনের বেশি রোহিঙ্গা। এই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পেছনেই মায়ানমারের কাঁটাতারের বেড়া ও রাখাইন রাজ্যের একাধিক পাহাড়।