এডিশ মশার বিস্তার, ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি

হালকা বৃষ্টি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিশ মশার বিস্তার বেড়েই চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মহল্লায় মহল্লায় কমিটি গঠন করে এডিশ মশা দমনে পদক্ষেপ না নিলে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। সিটি করপোরেশনকে মশা দমনে আরও উদ্যোগী হওয়া দরকার। না হলে পরিস্থিতি আগামী শীত মৌসুম আসার আগ পর্যন্ত বাড়তে থাকবে বলে কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।

মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমাজেন্সি ও অপারেশন সেন্টার এবং কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. জাহিদুল ইসলামের দেয়া তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৯৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ২৮০ জন ও ঢাকার বাইরে ১১৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এখন মোট ভর্তি আছে এক হাজার ৪৮৩ জন। চলতি বছরের শুরু থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে মোট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১১ হাজার ১১৭ জন।

গতকাল সকাল পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ৪৫ জন। এভাবে প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালের তথ্য মতে, ভর্তিকৃতদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ২৫ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪ জন, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ১৬ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১৩ জন, হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১১ জন, ইবনে সিনা হাসপাতালে ১৮ জন, ইসলামী বাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ১১ জন, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২ জন ভর্তি হয়েছে।

জেলার পাওয়া তথ্য মতে, কক্সবাজারে ৩৩ জন ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে মোট ভর্তি ৯৫৭ জন। কক্সবাজারে মারা গেছে মোট ১৮ জন। কুমিল্লায় ৯ জন, কিশোরগঞ্জে ৬ জন, ময়মনসিংহে ৫ জন, যশোরে ২৫ জন, ভোলায় ৪ জন, পিরোজপুরে ২ জন, বরগুনায় ৩ জন ভর্তি আছে। এভাবে সারাদেশে জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

মাসিক তথ্যে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত শুরু হয়। জানুয়ারি মাসে ছিল ১২৬ জন। আর আগস্ট মাসে তা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজআর ৫২১ জন। আর আগস্ট মাসে মারা গেছে ১১ জন। আর চলতি মাসের গতকাল পর্যন্ত মোট হাসপাতালে ভর্তি ৪ হাজার ৯৯৬ জন। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ২৪ জন।

ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান, শিশু হাসপাতালে এখন ৪৮ জন শিশু ভর্তি আছে। চলতি মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট ৩৩০ জন ভর্তি হয়েছে। তার মতে, বৃষ্টির কারণে এডিশ মশার উপদ্রব বাড়ছে। আর বাড়ছে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যাও।

কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ খলিলুর রহমান জানান, বর্তমান আবহাওয়া এডিশ মশার বংশ বিস্তারের জন্য অনুকূল। হালকা বৃষ্টিতে মশার প্রজনন ও বংশ বিস্তার বাড়ছে। মশা দমনে আরও উদ্যোগী না হলে চলতি মাসজুড়ে পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকবে।

এখন সবার উচিত নিজ নিজ এলাকায় বা মহল্লায় কমিটি করে মশা দমন ও সবাইকে আরও সতর্ক হওয়া। আর নির্মাণাধীন বাড়ির ছাদে জমে থাকা পানিতে এডিশ মশার বংশ বিস্তার ঘটছে। এছাড়া বাড়িতে জমে থাকা পানিতে মশার বংশ বিস্তার হচ্ছে। তাই মশা দমনে সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে। শিশুদের মশারি টানিয়ে ঘুমাতে দিতে হবে। ঘরে যাতে মশা না থাকে সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হাসপাতালে ভর্তি ছাড়াও বিশেষজ্ঞদের চেম্বারে প্রতিদিন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীরা যান। সেখানে রোগীদের গাইডলাইন ও চিকিৎসাপত্র দেয়া হয়। ওইসব রোগীদের হিসাব নেই। এভাবে রাজধানীসহ সারাদেশে চিকিৎসকদের চেম্বারে প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসার জন্য যায়। আবার বহু রোগী হাসপাতালের বহিঃবিভাগে ডাক্তার দেখাতে যান। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। জরুরি ভিত্তিতে মশার ওষুধ দেয়া আরও বাড়াতে হবে। আর মশার প্রজনন স্থান ধ্বংস করতে হবে। তাহলে মশার বিস্তার কমতে পারে।

সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৩ আশ্বিন ১৪২৯ ২১ সফর ১৪৪৪

এডিশ মশার বিস্তার, ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি

বাকী বিল্লাহ

হালকা বৃষ্টি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিশ মশার বিস্তার বেড়েই চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মহল্লায় মহল্লায় কমিটি গঠন করে এডিশ মশা দমনে পদক্ষেপ না নিলে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। সিটি করপোরেশনকে মশা দমনে আরও উদ্যোগী হওয়া দরকার। না হলে পরিস্থিতি আগামী শীত মৌসুম আসার আগ পর্যন্ত বাড়তে থাকবে বলে কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।

মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমাজেন্সি ও অপারেশন সেন্টার এবং কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. জাহিদুল ইসলামের দেয়া তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৯৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ২৮০ জন ও ঢাকার বাইরে ১১৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এখন মোট ভর্তি আছে এক হাজার ৪৮৩ জন। চলতি বছরের শুরু থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে মোট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১১ হাজার ১১৭ জন।

গতকাল সকাল পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ৪৫ জন। এভাবে প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালের তথ্য মতে, ভর্তিকৃতদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ২৫ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪ জন, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ১৬ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১৩ জন, হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১১ জন, ইবনে সিনা হাসপাতালে ১৮ জন, ইসলামী বাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ১১ জন, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২ জন ভর্তি হয়েছে।

জেলার পাওয়া তথ্য মতে, কক্সবাজারে ৩৩ জন ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে মোট ভর্তি ৯৫৭ জন। কক্সবাজারে মারা গেছে মোট ১৮ জন। কুমিল্লায় ৯ জন, কিশোরগঞ্জে ৬ জন, ময়মনসিংহে ৫ জন, যশোরে ২৫ জন, ভোলায় ৪ জন, পিরোজপুরে ২ জন, বরগুনায় ৩ জন ভর্তি আছে। এভাবে সারাদেশে জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

মাসিক তথ্যে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত শুরু হয়। জানুয়ারি মাসে ছিল ১২৬ জন। আর আগস্ট মাসে তা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজআর ৫২১ জন। আর আগস্ট মাসে মারা গেছে ১১ জন। আর চলতি মাসের গতকাল পর্যন্ত মোট হাসপাতালে ভর্তি ৪ হাজার ৯৯৬ জন। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ২৪ জন।

ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান, শিশু হাসপাতালে এখন ৪৮ জন শিশু ভর্তি আছে। চলতি মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট ৩৩০ জন ভর্তি হয়েছে। তার মতে, বৃষ্টির কারণে এডিশ মশার উপদ্রব বাড়ছে। আর বাড়ছে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যাও।

কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ খলিলুর রহমান জানান, বর্তমান আবহাওয়া এডিশ মশার বংশ বিস্তারের জন্য অনুকূল। হালকা বৃষ্টিতে মশার প্রজনন ও বংশ বিস্তার বাড়ছে। মশা দমনে আরও উদ্যোগী না হলে চলতি মাসজুড়ে পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকবে।

এখন সবার উচিত নিজ নিজ এলাকায় বা মহল্লায় কমিটি করে মশা দমন ও সবাইকে আরও সতর্ক হওয়া। আর নির্মাণাধীন বাড়ির ছাদে জমে থাকা পানিতে এডিশ মশার বংশ বিস্তার ঘটছে। এছাড়া বাড়িতে জমে থাকা পানিতে মশার বংশ বিস্তার হচ্ছে। তাই মশা দমনে সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে। শিশুদের মশারি টানিয়ে ঘুমাতে দিতে হবে। ঘরে যাতে মশা না থাকে সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হাসপাতালে ভর্তি ছাড়াও বিশেষজ্ঞদের চেম্বারে প্রতিদিন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীরা যান। সেখানে রোগীদের গাইডলাইন ও চিকিৎসাপত্র দেয়া হয়। ওইসব রোগীদের হিসাব নেই। এভাবে রাজধানীসহ সারাদেশে চিকিৎসকদের চেম্বারে প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসার জন্য যায়। আবার বহু রোগী হাসপাতালের বহিঃবিভাগে ডাক্তার দেখাতে যান। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। জরুরি ভিত্তিতে মশার ওষুধ দেয়া আরও বাড়াতে হবে। আর মশার প্রজনন স্থান ধ্বংস করতে হবে। তাহলে মশার বিস্তার কমতে পারে।