গ্রামীণ টেলিকমের দুর্নীতি : এবার জমি কেনাবেচার হিসাব চেয়েছে দুদক

শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশের অর্থ আত্মসাৎসহ গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালনা পর্ষদের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অনুসন্ধানে নেমে দুদক এবার সংস্থাটির জমি ক্রয় বিক্রয়ের হিসাব চেয়েছে। জমি ক্রয়ের টাকা কোথা থেকে এসেছে, বিক্রয়ের টাকা কোথায় আছে এমন বেশকিছু তথ্য চেয়ে দুদক পরিচালক গুলশান আনোয়ার সংস্থার দায়িত্বশীলদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যাবতীয় নথি দুদক প্রধান কার্যালয়ে জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, গ্রামীণ টেলিকমসহ স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের কোন কোন জায়গায় কত মূল্যে কি পরিমাণ জমি ক্রয় করা হয়েছে, যা পরে বিক্রি করা হয়েছে এবং নিজেদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ক্রয় করা জমিগুলো কীভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট ছকসহ দলিলের সত্যায়িত ফটোকপি। একই সঙ্গে জমি ক্রয়ের টাকা প্রতিষ্ঠানগুলো কোথা থেকে পেয়েছে ও জমি বিক্রির টাকা কোথায় কীভাবে রক্ষিত আছে। আর লাভ কোথায় কীভাবে খরচ করা হয়েছে তার বিবরণ। এছাড়া নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে জমি হাতবদল হলে কিসের ভিত্তিতে হয়েছে, এসব জমিতে কোন ভৌত অবকাঠামো নির্মিত হলে ওই অবকাঠামোর বিস্তাারিত খরচের সব হিসাবসহ এ সংক্রান্ত অর্থ কোথা থেকে এসেছে তার বিস্তারিত তথ্য দিতে বলা হয়েছে।

চিঠিতে অভিযোগের বিষয়ে বলা হয়েছে, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দ করা সুদসহ ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৩ টাকা বিতরণ না করে আত্মসাৎ ও কোম্পানি থেকে ২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা মানিলন্ডারিংয়ের উদ্দেশে বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, গত ৬ সেপ্টেম্বর আদালতের মাধ্যমে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক ইউনিয়নের তিন নেতা ও আইনজীবী ইউসুফ আলীসহ ৮ ব্যক্তির ১৯টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ৩৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা অবরুদ্ধ করা হয়। হিসাবগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রামীণ টেলিকমের আইনজীবী ইউসুফ আলী, জাফরুল হাসান শরীফ ও ইউসুফ আলীর ল’ ফার্মের অ্যাকাউন্ট, শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নেতা কামরুজ্জামান, ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও মাইনুল ইসলামের ব্যাংক হিসাব।

দুদক জানায়, চলতি বছরের ২৮ জুলাই গ্রামীণ টেলিকম পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে সংস্থাটি। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ সংবলিত একটি প্রতিবেদন দুদকে পাঠালে কমিশন পর্যালোচনা করে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। দুদক টিমে তৎকালীন পরিচালক (বর্তমানে মহাপরিচালক) সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে তদারককারী কর্মকর্তা এবং সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তার ও নূরে আলম সিদ্দিকীকে সহযোগী রাখা হয়। এর মধ্যে দুদকের অনুসন্ধানে আসে শ্রমিক-কর্মচারীদের একাউন্ডে লভ্যাংশের টাকা জমা দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয় মাত্র ১৮ কোটি টাকা। সেই টাকা দুই শ্রমিক নেতা ও আইনজীবীর একাউন্টে জমা করেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) দুদকের অণুসন্ধানের মধ্যে গ্রামীণ টেলিকমের দুই শ্রমিক নেতাকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে তারা জেলে আছেন।

সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৩ আশ্বিন ১৪২৯ ২১ সফর ১৪৪৪

গ্রামীণ টেলিকমের দুর্নীতি : এবার জমি কেনাবেচার হিসাব চেয়েছে দুদক

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশের অর্থ আত্মসাৎসহ গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালনা পর্ষদের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অনুসন্ধানে নেমে দুদক এবার সংস্থাটির জমি ক্রয় বিক্রয়ের হিসাব চেয়েছে। জমি ক্রয়ের টাকা কোথা থেকে এসেছে, বিক্রয়ের টাকা কোথায় আছে এমন বেশকিছু তথ্য চেয়ে দুদক পরিচালক গুলশান আনোয়ার সংস্থার দায়িত্বশীলদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যাবতীয় নথি দুদক প্রধান কার্যালয়ে জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, গ্রামীণ টেলিকমসহ স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের কোন কোন জায়গায় কত মূল্যে কি পরিমাণ জমি ক্রয় করা হয়েছে, যা পরে বিক্রি করা হয়েছে এবং নিজেদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ক্রয় করা জমিগুলো কীভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট ছকসহ দলিলের সত্যায়িত ফটোকপি। একই সঙ্গে জমি ক্রয়ের টাকা প্রতিষ্ঠানগুলো কোথা থেকে পেয়েছে ও জমি বিক্রির টাকা কোথায় কীভাবে রক্ষিত আছে। আর লাভ কোথায় কীভাবে খরচ করা হয়েছে তার বিবরণ। এছাড়া নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে জমি হাতবদল হলে কিসের ভিত্তিতে হয়েছে, এসব জমিতে কোন ভৌত অবকাঠামো নির্মিত হলে ওই অবকাঠামোর বিস্তাারিত খরচের সব হিসাবসহ এ সংক্রান্ত অর্থ কোথা থেকে এসেছে তার বিস্তারিত তথ্য দিতে বলা হয়েছে।

চিঠিতে অভিযোগের বিষয়ে বলা হয়েছে, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দ করা সুদসহ ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৩ টাকা বিতরণ না করে আত্মসাৎ ও কোম্পানি থেকে ২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা মানিলন্ডারিংয়ের উদ্দেশে বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, গত ৬ সেপ্টেম্বর আদালতের মাধ্যমে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক ইউনিয়নের তিন নেতা ও আইনজীবী ইউসুফ আলীসহ ৮ ব্যক্তির ১৯টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ৩৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা অবরুদ্ধ করা হয়। হিসাবগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রামীণ টেলিকমের আইনজীবী ইউসুফ আলী, জাফরুল হাসান শরীফ ও ইউসুফ আলীর ল’ ফার্মের অ্যাকাউন্ট, শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নেতা কামরুজ্জামান, ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও মাইনুল ইসলামের ব্যাংক হিসাব।

দুদক জানায়, চলতি বছরের ২৮ জুলাই গ্রামীণ টেলিকম পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে সংস্থাটি। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ সংবলিত একটি প্রতিবেদন দুদকে পাঠালে কমিশন পর্যালোচনা করে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। দুদক টিমে তৎকালীন পরিচালক (বর্তমানে মহাপরিচালক) সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে তদারককারী কর্মকর্তা এবং সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তার ও নূরে আলম সিদ্দিকীকে সহযোগী রাখা হয়। এর মধ্যে দুদকের অনুসন্ধানে আসে শ্রমিক-কর্মচারীদের একাউন্ডে লভ্যাংশের টাকা জমা দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয় মাত্র ১৮ কোটি টাকা। সেই টাকা দুই শ্রমিক নেতা ও আইনজীবীর একাউন্টে জমা করেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) দুদকের অণুসন্ধানের মধ্যে গ্রামীণ টেলিকমের দুই শ্রমিক নেতাকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে তারা জেলে আছেন।