স্বাভাবিক জীবনে ফেরাই কাল হল ইয়ার আলীর

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত ইয়ার আলী প্রামানিক (৫৫) নামের এক আত্মসমর্পনকরী চরমপন্থী টানা ৮দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে রোববার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন।

জানা যায়, জীবনের শুরুতেই সর্বহারা পার্টির চরমপন্থী রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন গোয়ালন্দের ইয়ার আলী প্রামানিক। দীর্ঘদিন সেই চরমপন্থী রাজনীতি করতে গিয়ে কখনো জেলে আবার কখনো আত্মগোপনে থেকে এক পর্যায়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। এরই মাঝে ২০১৯ সালে সরকার আর্থিক সহায়তা দিয়ে পুনর্বাসন করে চরমপন্থীদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ ঘোষণা করেন। তখন ইয়ার আলী প্রামানিক জেলে থাকা অবস্থায় আত্মসমর্পন করেন। এর পর জেল থেকে বের হয়ে রাজবাড়ী গোয়ালন্দ উপজেলার অন্তার মোড় এলাকায় ছোট্ট একটি চায়ের দোকান করে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন যাপন করছিলেন। ইয়ার আলী প্রামানিক (৫৫) গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের চর বরাট গ্রামের মৃত ফেরদৌস প্রামানিকের ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, ইয়ার আলী প্রামানিক প্রতিদিনের মত ১০ সেপ্টেম্বর দিনগত রাত ১০টার দিকে চায়ের দোকান বন্ধ করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। এসময় আনুমানিক ৪শ গজ দুরে গেলে দূর্বৃত্তরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোরে। এতে তার পেটে ও হাতে গুলিবিদ্ধ হয়। এসময় তিনি জীবন রক্ষায় পাশের জৈনক হারু সরদারের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। দুর্বৃত্তরা আরো কয়েক রাউন্ড গুলি ছুরে পদ্মা নদীর দিকে চলে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তার অবস্থার আরো অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে স্থানান্তর করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) ভোরে তার মৃত্যু হয়।

স্থানীয়রা জানান, ইয়ার আলী পূর্বে যাই করুক আর না করুক এখন কোন ঝামেলার মধ্যেই যেতেন না। কিন্তু ভালো স্বাভাবিক জীবন নিয়ে তিনি বাঁচতে পারলেন না।

পরিবারের সদস্যরা জানান, আত্মসমর্পনের সময় সরকার তাদেরকে দেড় লাখ টাকা অনুদান দেয়। সে টাকা তার জামিন করাতেই সেই সময় খরচ হয়ে যায়। এরপর একটি চায়ের দোকান করে পরিবার পরিজন নিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছিলেন। আত্মসমর্পনের পরে তার সাথে কারো কোন ঝগড়া-বিবাদ নেই। পূর্বের কোন শত্রুতার জেরে তাকে গুলি করা হয়েছিল।

তার সাথে আত্মসমর্পন করা অন্যান্য চরমপন্থীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ইয়ার আলী হত্যার ঘটনায় তারা সবাই চরম আতঙ্কের মধ্যে আছেন। স্বাভাবিক জীবনে ফেরাই যেহেতু ইয়ার আলীর কাল হলো, তারাও চরম ঝুকির মধ্যে আছেন।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের জানান, ইয়ার আলী নিষিদ্ধ ঘোষিত সর্বহারা দলের সদস্য ছিলেন। ২০১৯ সালে চরমপন্থী বেশকিছু সদস্যের সাথে তিনিও সরকারের কাছে আত্মসমর্পন করেন। গুলি করে আহত করার ঘটনায় গত ১১ সেপ্টেম্বর তার স্ত্রী ৯ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। ইতোমধ্যে মতিন শেখ (৩৫) ও মাজেদ শেখ (৩৫) নামের দুইজন আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যান্য আসামীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। ইতোপূর্বের মামলাটিই এখন হত্যা মামলা হিসেবে বিবেচিত হবে বলে তিনি জানান।

মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৪ আশ্বিন ১৪২৯ ২২ সফর ১৪৪৪

গুলিতে আহত আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থীর মৃত্যু

স্বাভাবিক জীবনে ফেরাই কাল হল ইয়ার আলীর

প্রতিনিধি, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত ইয়ার আলী প্রামানিক (৫৫) নামের এক আত্মসমর্পনকরী চরমপন্থী টানা ৮দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে রোববার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন।

জানা যায়, জীবনের শুরুতেই সর্বহারা পার্টির চরমপন্থী রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন গোয়ালন্দের ইয়ার আলী প্রামানিক। দীর্ঘদিন সেই চরমপন্থী রাজনীতি করতে গিয়ে কখনো জেলে আবার কখনো আত্মগোপনে থেকে এক পর্যায়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। এরই মাঝে ২০১৯ সালে সরকার আর্থিক সহায়তা দিয়ে পুনর্বাসন করে চরমপন্থীদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ ঘোষণা করেন। তখন ইয়ার আলী প্রামানিক জেলে থাকা অবস্থায় আত্মসমর্পন করেন। এর পর জেল থেকে বের হয়ে রাজবাড়ী গোয়ালন্দ উপজেলার অন্তার মোড় এলাকায় ছোট্ট একটি চায়ের দোকান করে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন যাপন করছিলেন। ইয়ার আলী প্রামানিক (৫৫) গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের চর বরাট গ্রামের মৃত ফেরদৌস প্রামানিকের ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, ইয়ার আলী প্রামানিক প্রতিদিনের মত ১০ সেপ্টেম্বর দিনগত রাত ১০টার দিকে চায়ের দোকান বন্ধ করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। এসময় আনুমানিক ৪শ গজ দুরে গেলে দূর্বৃত্তরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোরে। এতে তার পেটে ও হাতে গুলিবিদ্ধ হয়। এসময় তিনি জীবন রক্ষায় পাশের জৈনক হারু সরদারের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। দুর্বৃত্তরা আরো কয়েক রাউন্ড গুলি ছুরে পদ্মা নদীর দিকে চলে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তার অবস্থার আরো অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে স্থানান্তর করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) ভোরে তার মৃত্যু হয়।

স্থানীয়রা জানান, ইয়ার আলী পূর্বে যাই করুক আর না করুক এখন কোন ঝামেলার মধ্যেই যেতেন না। কিন্তু ভালো স্বাভাবিক জীবন নিয়ে তিনি বাঁচতে পারলেন না।

পরিবারের সদস্যরা জানান, আত্মসমর্পনের সময় সরকার তাদেরকে দেড় লাখ টাকা অনুদান দেয়। সে টাকা তার জামিন করাতেই সেই সময় খরচ হয়ে যায়। এরপর একটি চায়ের দোকান করে পরিবার পরিজন নিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছিলেন। আত্মসমর্পনের পরে তার সাথে কারো কোন ঝগড়া-বিবাদ নেই। পূর্বের কোন শত্রুতার জেরে তাকে গুলি করা হয়েছিল।

তার সাথে আত্মসমর্পন করা অন্যান্য চরমপন্থীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ইয়ার আলী হত্যার ঘটনায় তারা সবাই চরম আতঙ্কের মধ্যে আছেন। স্বাভাবিক জীবনে ফেরাই যেহেতু ইয়ার আলীর কাল হলো, তারাও চরম ঝুকির মধ্যে আছেন।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের জানান, ইয়ার আলী নিষিদ্ধ ঘোষিত সর্বহারা দলের সদস্য ছিলেন। ২০১৯ সালে চরমপন্থী বেশকিছু সদস্যের সাথে তিনিও সরকারের কাছে আত্মসমর্পন করেন। গুলি করে আহত করার ঘটনায় গত ১১ সেপ্টেম্বর তার স্ত্রী ৯ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। ইতোমধ্যে মতিন শেখ (৩৫) ও মাজেদ শেখ (৩৫) নামের দুইজন আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যান্য আসামীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। ইতোপূর্বের মামলাটিই এখন হত্যা মামলা হিসেবে বিবেচিত হবে বলে তিনি জানান।