নলিনীরঞ্জনের পৈতৃক বাড়ি অস্তিত্ব সংকটে

নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার চিরাং ইউনিয়নের সাজিউড়া গ্রামে উপস্থিত অবিভক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রী প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ নলিনীরঞ্জনের পৈতৃক বাড়িটি মামলা জটিলতা এবং সংস্কারের অভাবে অবহেলার ফলে শিকড়-বাকড় ও আগাছার দখলে অস্তিত্ব হারাচ্ছে বসেছে।

বাড়িটি উপজেলা সদর থেকে ৪ কিলোমিটার পুর্বদিকে উপজেলা চিরাং ইউনিয়নের সাজিউড়া গ্রামে। সেই গ্রামে প্রকৃতির সঙ্গে অনেকটা যুদ্ধ করে কালের সাক্ষী হিসেবে এখনও দাঁড়িয়ে আছে।

এককালের ঐতিহ্যবাহী নলিনী রঞ্জন সরকারের পৈতৃক বাড়ি। এক একর জমিতে অবস্থিত দ্বিতল ভবনের বাড়িটি অযতেœ, অবহেলা আর রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে তার আগের জৌলুস হারিয়ে ফেলছে এই বাড়িটি।

জানা যায়, সাজিউড়া গ্রামে ১৮৭২ সালের সনাতন ধর্মাবলম্বী এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে নলিনীরঞ্জন সরকার জন্মগ্রহণ করেন।

তার পিতার নাম চন্দ্রনাথ সরকার। ১১ ভাইবোনের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই নলিনীরঞ্জন সরকার ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। পরবর্তীতে তিনি কলকাতায় চলে যান। সেই সময় তিনি ব্রিটিশ সরকারের শাসনামলে তরুণ বয়সেই কলকাতা শহরে রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকা-ে জড়িয়ে অল্প সময়ের মধ্যে তিনি জনপ্রিয় নেতা হয়ে

কলকাতা সিটি কপোরেশনের প্রথম বাঙালি মেয়র হন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর পুনরায় পশ্চিমবঙ্গ বিধান রায়ের মন্ত্রিসভার অর্থ ও বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং তিনি অবিভক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পরবর্তী সময়ে ভারত বিভক্তের পর নলিনীরঞ্জন সরকারের পুরো পরিবার জায়গা জমি রেখে ভারতে চলে যান। সেই থেকে তাদের ঘরবাড়ি সহায় সম্পত্তি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে।

বাড়িটি সবুজে ঘেরা বাড়ির মূল ফটকে রয়েছে বিশাল পুকুর, বসত ঘরসহ বিভিন্ন দেবদেবীর মন্দির ও পাশেই একটি পোস্ট অফিস। বাড়ির দেয়াল ও ছাদ থেকে প্লাস্টার খসে পড়ছে। লতাপাতার শেকড়-বাকড়ে ক্রমশ বন্দি হয়ে বিলীন হতে চলেছে বাড়িটির অস্তিত্ব। বাড়িটি নিয়ে স্থানীয় দিলীপ সরকার নামে এক ব্যক্তি

নলিনীরঞ্জন সরকারের নাতি দাবি করে আদালতে মামলা করেছেন, মামলা আদালতে চলমান থাকায় বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার করা যাচ্ছেনা বলে জানান তিনি। কেন্দুয়া সরকারি কলেজের প্রভাষক আব্দুর মান্নান ভূঁইয়া বলেন, সরকার এবং একটা পক্ষ এই বাড়িটা নিয়ে আদালতে মামলা হচ্ছে তাই এই বাড়িটি এখন বিলিনের পথে, তাই মামলা জটিলতা কাটিয়ে অবিভক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রীর নলিনীরঞ্জন সরকারের বাড়িটির রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার করার জন্য সরকারের কাছে দাবী তিনি দাবী জানান।

অবিভক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রীর নলিনীরঞ্জন সরকারের রেখে যাওয়া বাড়িটি সংস্কার করে তার সৃতিটুকু ধরে রাখতে বাড়িটিকে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলার দাবী জানান স্থানীয় লোকজন। স্থানীয় ইউপি সদস্য সহ এলাকার সচেতন মহলের দাবি, নলিনীরঞ্জন সরকারের পরিবারের রেখে যাওয়া কয়েক একর জায়গা জমি ও বাড়িটি, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে মামলা জটিলতার অবসান ঘটিয়ে নলিনীরঞ্জন সরকারের পৈতৃক বাড়িটি যথাযথ সংস্কার ও সংরক্ষণের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবেন এমনটাই আশাবাদী এলাকার লোকজনের।

মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৪ আশ্বিন ১৪২৯ ২২ সফর ১৪৪৪

অবিভক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রী

নলিনীরঞ্জনের পৈতৃক বাড়ি অস্তিত্ব সংকটে

প্রতিনিধি, কেন্দুয়া (নেত্রকোণা)

নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার চিরাং ইউনিয়নের সাজিউড়া গ্রামে উপস্থিত অবিভক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রী প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ নলিনীরঞ্জনের পৈতৃক বাড়িটি মামলা জটিলতা এবং সংস্কারের অভাবে অবহেলার ফলে শিকড়-বাকড় ও আগাছার দখলে অস্তিত্ব হারাচ্ছে বসেছে।

বাড়িটি উপজেলা সদর থেকে ৪ কিলোমিটার পুর্বদিকে উপজেলা চিরাং ইউনিয়নের সাজিউড়া গ্রামে। সেই গ্রামে প্রকৃতির সঙ্গে অনেকটা যুদ্ধ করে কালের সাক্ষী হিসেবে এখনও দাঁড়িয়ে আছে।

এককালের ঐতিহ্যবাহী নলিনী রঞ্জন সরকারের পৈতৃক বাড়ি। এক একর জমিতে অবস্থিত দ্বিতল ভবনের বাড়িটি অযতেœ, অবহেলা আর রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে তার আগের জৌলুস হারিয়ে ফেলছে এই বাড়িটি।

জানা যায়, সাজিউড়া গ্রামে ১৮৭২ সালের সনাতন ধর্মাবলম্বী এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে নলিনীরঞ্জন সরকার জন্মগ্রহণ করেন।

তার পিতার নাম চন্দ্রনাথ সরকার। ১১ ভাইবোনের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই নলিনীরঞ্জন সরকার ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। পরবর্তীতে তিনি কলকাতায় চলে যান। সেই সময় তিনি ব্রিটিশ সরকারের শাসনামলে তরুণ বয়সেই কলকাতা শহরে রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকা-ে জড়িয়ে অল্প সময়ের মধ্যে তিনি জনপ্রিয় নেতা হয়ে

কলকাতা সিটি কপোরেশনের প্রথম বাঙালি মেয়র হন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর পুনরায় পশ্চিমবঙ্গ বিধান রায়ের মন্ত্রিসভার অর্থ ও বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং তিনি অবিভক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পরবর্তী সময়ে ভারত বিভক্তের পর নলিনীরঞ্জন সরকারের পুরো পরিবার জায়গা জমি রেখে ভারতে চলে যান। সেই থেকে তাদের ঘরবাড়ি সহায় সম্পত্তি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে।

বাড়িটি সবুজে ঘেরা বাড়ির মূল ফটকে রয়েছে বিশাল পুকুর, বসত ঘরসহ বিভিন্ন দেবদেবীর মন্দির ও পাশেই একটি পোস্ট অফিস। বাড়ির দেয়াল ও ছাদ থেকে প্লাস্টার খসে পড়ছে। লতাপাতার শেকড়-বাকড়ে ক্রমশ বন্দি হয়ে বিলীন হতে চলেছে বাড়িটির অস্তিত্ব। বাড়িটি নিয়ে স্থানীয় দিলীপ সরকার নামে এক ব্যক্তি

নলিনীরঞ্জন সরকারের নাতি দাবি করে আদালতে মামলা করেছেন, মামলা আদালতে চলমান থাকায় বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার করা যাচ্ছেনা বলে জানান তিনি। কেন্দুয়া সরকারি কলেজের প্রভাষক আব্দুর মান্নান ভূঁইয়া বলেন, সরকার এবং একটা পক্ষ এই বাড়িটা নিয়ে আদালতে মামলা হচ্ছে তাই এই বাড়িটি এখন বিলিনের পথে, তাই মামলা জটিলতা কাটিয়ে অবিভক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রীর নলিনীরঞ্জন সরকারের বাড়িটির রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার করার জন্য সরকারের কাছে দাবী তিনি দাবী জানান।

অবিভক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রীর নলিনীরঞ্জন সরকারের রেখে যাওয়া বাড়িটি সংস্কার করে তার সৃতিটুকু ধরে রাখতে বাড়িটিকে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলার দাবী জানান স্থানীয় লোকজন। স্থানীয় ইউপি সদস্য সহ এলাকার সচেতন মহলের দাবি, নলিনীরঞ্জন সরকারের পরিবারের রেখে যাওয়া কয়েক একর জায়গা জমি ও বাড়িটি, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে মামলা জটিলতার অবসান ঘটিয়ে নলিনীরঞ্জন সরকারের পৈতৃক বাড়িটি যথাযথ সংস্কার ও সংরক্ষণের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবেন এমনটাই আশাবাদী এলাকার লোকজনের।