শ্রমের ফাঁদে আটকা ৩০ লাখেরও বেশি : ইউনিসেফ জরিপ
দেশে ১৫ বছরের কম বয়সী ৮৯ শতাংশ শিশু বাড়িতে সহিংসতার শিকার হয় অর্থাৎ সংখ্যার বিচারে সাড়ে ৪ কোটি শিশু নিয়মিত বাড়িতে সহিংসতার শিকার হয়। ৩০ লাখেরও বেশি শিশু শিশুশ্রমের ফাঁদে আটকে আছে, যাদের মধ্যে ১৩ লাখ শিশু আবার ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত।
ইউনিসেফের করা এক জরিপে আরও বলা হয়, প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করে না। প্রায় অর্ধেক শিশুর জন্ম নিবন্ধন নেই। এক লাখের বেশি শিশু প্রাতিষ্ঠানিক যাতে রয়েছে এবং তাদের পারিবারিক সহায়তার অভাব রয়েছে। প্রতি দু’জন মেয়ের মধ্যে একজনকে বিয়ে দেয়া হয় শিশু থাকা অবস্থায়। লাখ লাখ শিশু রাস্তায় বসবাস করে।
গতকাল ঢাকায় প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশে শিশু সুরক্ষাবিষয়ক জাতীয় সম্মেলন’-এ শিশু সুরক্ষা পরিষেবা জোরদার করা এবং সমাজকর্মীর সংখ্যা ২০০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়। ইউনিসেফ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সম্মেলনটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকারের লক্ষ্য একটি পেশাদার সমাজসেবামূলক কর্মীবাহিনী গড়ে তোলা। যা স্বেচ্ছাসেবক, কিশোর-কিশোরী ও কমিউনিটির লোকজনদের সম্পৃক্ত করে ‘চাইল্ড হেল্পলাইন’-১০৯৮, ‘চাইল্ড প্রটেকশন এওয়ারনেস’ ও কমিউনিটি-ভিত্তিক বিস্তৃত পরিষেবাগুলোর মতো শিশু সুরক্ষা সেবা দক্ষতার সঙ্গে নিশ্চিত ও বৃদ্ধি করবে। যাতে কোন শিশু এর থেকে বাদ না পড়ে।’
তিনি কমিউনিটি পর্যায়ে শিশু সুরক্ষা সেবা সহজলভ্য করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
সম্মেলনটিতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সূচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালকের মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম বিষয়ক উপদেষ্টা সায়মা ওয়াজেদ। এ সময় তিনি বলেন, পুরো বিশ্বজুড়েই অনেক চ্যালেঞ্জ আছে, বাংলাদেশেও আছে। শিশুরা কতটুকু সহিংসতার সম্মুখীন হয় তা নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা করি না আমরা। সহিংসতা শিশুর প্রতিভা বিকাশে কোনও সহায়তা করে না।
সমাজকর্মী বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে সায়মা বলেন, শুধু সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে শিশুদের জন্য বিনিয়োগ করলে হবে না। আমাদের প্রত্যেককে এ নিয়ে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশে অনেক এলাকায় এমন মানুষ আছেন, যারা সত্যিই জানেন না শিশুদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে। ঢাকার দিকে তাকালে দেখা যায় তাদের অবস্থা। শিশুদের জন্য নিরাপদ খেলার জায়গা কোথায়? শিশুরা নীতি নির্ধারণ করে না, তারা পরিবেশও তৈরি করতে পারে না। পরিবেশ আমরা তৈরি করি এবং শিশুরা তাতে মিলিত হয়।
সমাজকর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, ‘সমাজকর্মীরা কমিউনিটির গভীরে পৌঁছে যান যেখানে শিশুদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় তাদের। গুরুত্বপূর্ণ পেশাগত যতœ থেকে যাতে আরও বেশিসংখ্যক শিশু উপকৃত হয়, সেই লক্ষ্যে সহায়তা করতে সমাজকর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য আমি বাংলাদেশ সরকারকে অভিনন্দন জানাই।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ প্রতিনিধিদলের প্রধান রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে শিশুরা একটি উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। শিশুদের, বিশেষ করে সবচেয়ে অরক্ষিত এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের সহিংসতা, শোষণ ও নিগ্রহ থেকে সুরক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের আজকের আয়োজন একটি অনন্য সুযোগ তৈরি করেছে। বাংলাদেশে শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে ইইউ সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
শিশু সুরক্ষায় সমাজসেবা কর্মীবাহিনীকে শক্তিশালী করতে ৬ হাজার নতুন সমাজকর্মী নিয়োগ দেবে সরকার, যা কর্মী সংখ্যাকে ৩ হাজার থেকে ৯ হাজারে উন্নীত করবে। একটি বিস্তৃত জাতীয় গৃহস্থালি জরিপ প্রকাশের পর শিশুদের বিষয়ে সরকারের এমন প্রতিশ্রুতিকে যুগান্তকারী প্রতিশ্রুতি বলে মনে করছে ইউনিসেফ।
মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৪ আশ্বিন ১৪২৯ ২২ সফর ১৪৪৪
শ্রমের ফাঁদে আটকা ৩০ লাখেরও বেশি : ইউনিসেফ জরিপ
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
দেশে ১৫ বছরের কম বয়সী ৮৯ শতাংশ শিশু বাড়িতে সহিংসতার শিকার হয় অর্থাৎ সংখ্যার বিচারে সাড়ে ৪ কোটি শিশু নিয়মিত বাড়িতে সহিংসতার শিকার হয়। ৩০ লাখেরও বেশি শিশু শিশুশ্রমের ফাঁদে আটকে আছে, যাদের মধ্যে ১৩ লাখ শিশু আবার ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত।
ইউনিসেফের করা এক জরিপে আরও বলা হয়, প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করে না। প্রায় অর্ধেক শিশুর জন্ম নিবন্ধন নেই। এক লাখের বেশি শিশু প্রাতিষ্ঠানিক যাতে রয়েছে এবং তাদের পারিবারিক সহায়তার অভাব রয়েছে। প্রতি দু’জন মেয়ের মধ্যে একজনকে বিয়ে দেয়া হয় শিশু থাকা অবস্থায়। লাখ লাখ শিশু রাস্তায় বসবাস করে।
গতকাল ঢাকায় প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশে শিশু সুরক্ষাবিষয়ক জাতীয় সম্মেলন’-এ শিশু সুরক্ষা পরিষেবা জোরদার করা এবং সমাজকর্মীর সংখ্যা ২০০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়। ইউনিসেফ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সম্মেলনটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকারের লক্ষ্য একটি পেশাদার সমাজসেবামূলক কর্মীবাহিনী গড়ে তোলা। যা স্বেচ্ছাসেবক, কিশোর-কিশোরী ও কমিউনিটির লোকজনদের সম্পৃক্ত করে ‘চাইল্ড হেল্পলাইন’-১০৯৮, ‘চাইল্ড প্রটেকশন এওয়ারনেস’ ও কমিউনিটি-ভিত্তিক বিস্তৃত পরিষেবাগুলোর মতো শিশু সুরক্ষা সেবা দক্ষতার সঙ্গে নিশ্চিত ও বৃদ্ধি করবে। যাতে কোন শিশু এর থেকে বাদ না পড়ে।’
তিনি কমিউনিটি পর্যায়ে শিশু সুরক্ষা সেবা সহজলভ্য করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
সম্মেলনটিতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সূচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালকের মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম বিষয়ক উপদেষ্টা সায়মা ওয়াজেদ। এ সময় তিনি বলেন, পুরো বিশ্বজুড়েই অনেক চ্যালেঞ্জ আছে, বাংলাদেশেও আছে। শিশুরা কতটুকু সহিংসতার সম্মুখীন হয় তা নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা করি না আমরা। সহিংসতা শিশুর প্রতিভা বিকাশে কোনও সহায়তা করে না।
সমাজকর্মী বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে সায়মা বলেন, শুধু সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে শিশুদের জন্য বিনিয়োগ করলে হবে না। আমাদের প্রত্যেককে এ নিয়ে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশে অনেক এলাকায় এমন মানুষ আছেন, যারা সত্যিই জানেন না শিশুদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে। ঢাকার দিকে তাকালে দেখা যায় তাদের অবস্থা। শিশুদের জন্য নিরাপদ খেলার জায়গা কোথায়? শিশুরা নীতি নির্ধারণ করে না, তারা পরিবেশও তৈরি করতে পারে না। পরিবেশ আমরা তৈরি করি এবং শিশুরা তাতে মিলিত হয়।
সমাজকর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, ‘সমাজকর্মীরা কমিউনিটির গভীরে পৌঁছে যান যেখানে শিশুদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় তাদের। গুরুত্বপূর্ণ পেশাগত যতœ থেকে যাতে আরও বেশিসংখ্যক শিশু উপকৃত হয়, সেই লক্ষ্যে সহায়তা করতে সমাজকর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য আমি বাংলাদেশ সরকারকে অভিনন্দন জানাই।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ প্রতিনিধিদলের প্রধান রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে শিশুরা একটি উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। শিশুদের, বিশেষ করে সবচেয়ে অরক্ষিত এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের সহিংসতা, শোষণ ও নিগ্রহ থেকে সুরক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের আজকের আয়োজন একটি অনন্য সুযোগ তৈরি করেছে। বাংলাদেশে শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে ইইউ সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
শিশু সুরক্ষায় সমাজসেবা কর্মীবাহিনীকে শক্তিশালী করতে ৬ হাজার নতুন সমাজকর্মী নিয়োগ দেবে সরকার, যা কর্মী সংখ্যাকে ৩ হাজার থেকে ৯ হাজারে উন্নীত করবে। একটি বিস্তৃত জাতীয় গৃহস্থালি জরিপ প্রকাশের পর শিশুদের বিষয়ে সরকারের এমন প্রতিশ্রুতিকে যুগান্তকারী প্রতিশ্রুতি বলে মনে করছে ইউনিসেফ।