চট্টগ্রামে কয়েকশ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া প্রতারক গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামে প্রতারণার মাধ্যমে কয়েকশ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর অবশেষে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন প্রতারক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী (৪৬)। বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা করে আসা এই ব্যক্তিকে গত রোববার নগরীতে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গ্রেপ্তার মেজবাহ হাটহাজারীর কাটিয়াহাট এলাকার আবু তাহের চৌধুরীর ছেলে।

গতকাল চটগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৭-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ এসব তথ্য জানান।

র‌্যাব-৭-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ বলেন, ২০১৫ সালে সীতাকু-ের কুমিরায় স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রির জন্য শত কোটি টাকার একটি পুরনো জাহাজ আনে খাজা শিপইয়ার্ড। এই জাহাজটিসহ এ রকম আরও কয়েকটি জাহাজ আনার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ব্যবসার অংশীদারিত্বের প্রস্তাব দেয় প্রতারক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। কেউ খবর নিতে গেলে যেন তার পক্ষে তথ্য দেয় এমন ২০-২৫ জনকে মাসিক বেতন দিয়ে নিয়োগ দেন মেজবাহ। তার দেয়া তথ্য যাচাই করতে গেলে নিয়োগপ্রাপ্ত লোকেরা তার ব্যবসার সব তথ্য সঠিক বলে জানিয়ে দিতো। এভাবে সে আবদুল হাকিমের কাছ থেকে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা, আজগর আলীর কাছ থেকে ৭০ লাখ টাকা, মো. রেজওয়ানের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা, ইব্রাহিমের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা, মো. রুমনের কাছ থেকে ৬৩ লাখ টাকা, শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ৯০ লাখ টাকা, জাহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা, আসাদের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা, বেলালের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা এবং শাহজাহানের কাছ থেকে ২ কোটি টাকাসহ অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

কর্নেল ইউসুফ আরও বলেন, মেজবাহ বাজেয়াপ্ত কন্টেইনার দেখিয়ে প্রচার করে একটি কন্টেইনারে সে প্রচুর পরিমাণ স্বর্ণ পেয়েছে যা প্রায় ৫০০ কোটি টাকায় বিদেশে বিক্রি করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক সেই টাকা জব্দ করেছে। এছাড়া সে ৫টি ডায়মন্ড পেয়েছে যার প্রতিটির মূল্য ২ হাজার কোটি টাকা। ডায়মন্ডগুলোর বিক্রির টাকা পেতে হলে বিভিন্ন মন্ত্রী এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ভাগ দিতে হবে। বিশ্বাস অর্জনের জন্য বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং মন্ত্রীর কণ্ঠস্বর নকল করে কথোপকথনের রেকর্ড শোনাত। এছাড়া একই জমি বিক্রির কথা বলে, বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে টাকা আদায় করতো। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম নগরীর বাড়াইপাড়া এলাকায় একটি জমির ভুয়া দলিল দেখিয়ে অন্তত ১০ জনের কাছে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তিনি আরও বলেন, ভুক্তভোগীরা তার কাছে পাওনা টাকা চাইতে গেলে সে ভুক্তভোগীদের আগে থেকে রাখা স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন ভুয়া দলিল দস্তাবেজ তৈরি করে তাদেরকেই উল্টো মিথ্যে মামলার ভয় ও মামলা দিয়ে নাজেহাল করত। মিথ্যে মামলার ভয়ে অনেক ভুক্তভোগীই পাওনা টাকার বিষয়ে মুখ খোলার সাহস করত না।

এমএ ইউসুফ আরও বলেন, এমন অভিযোগের খবর পেয়ে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। গোপন খবরের ভিত্তিতে গত রোববার রাত পৌনে ১০টায় নগরীর পাঁচলাইশের হামজারবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার মেজবাহ বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে প্রতারণা করে কোটি-কোটি টাকা আত্মসাৎ করার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। এছাড়া তাকে যেন সহজে কেউ খুঁজে না পায়, সেজন্য বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করতেন। তিনি সিমকার্ড ঘন-ঘন পরিবর্তন করতেন। এমনকি হেয়ার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টও করেছেন। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলায় সাজা এবং ১১টি মামলার ওয়ারেন্ট রয়েছে। তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা।

মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৪ আশ্বিন ১৪২৯ ২২ সফর ১৪৪৪

চট্টগ্রামে কয়েকশ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া প্রতারক গ্রেপ্তার

নিরুপম দাশগুপ্ত, চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রামে প্রতারণার মাধ্যমে কয়েকশ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর অবশেষে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন প্রতারক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী (৪৬)। বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা করে আসা এই ব্যক্তিকে গত রোববার নগরীতে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গ্রেপ্তার মেজবাহ হাটহাজারীর কাটিয়াহাট এলাকার আবু তাহের চৌধুরীর ছেলে।

গতকাল চটগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৭-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ এসব তথ্য জানান।

র‌্যাব-৭-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ বলেন, ২০১৫ সালে সীতাকু-ের কুমিরায় স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রির জন্য শত কোটি টাকার একটি পুরনো জাহাজ আনে খাজা শিপইয়ার্ড। এই জাহাজটিসহ এ রকম আরও কয়েকটি জাহাজ আনার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ব্যবসার অংশীদারিত্বের প্রস্তাব দেয় প্রতারক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। কেউ খবর নিতে গেলে যেন তার পক্ষে তথ্য দেয় এমন ২০-২৫ জনকে মাসিক বেতন দিয়ে নিয়োগ দেন মেজবাহ। তার দেয়া তথ্য যাচাই করতে গেলে নিয়োগপ্রাপ্ত লোকেরা তার ব্যবসার সব তথ্য সঠিক বলে জানিয়ে দিতো। এভাবে সে আবদুল হাকিমের কাছ থেকে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা, আজগর আলীর কাছ থেকে ৭০ লাখ টাকা, মো. রেজওয়ানের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা, ইব্রাহিমের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা, মো. রুমনের কাছ থেকে ৬৩ লাখ টাকা, শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ৯০ লাখ টাকা, জাহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা, আসাদের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা, বেলালের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা এবং শাহজাহানের কাছ থেকে ২ কোটি টাকাসহ অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

কর্নেল ইউসুফ আরও বলেন, মেজবাহ বাজেয়াপ্ত কন্টেইনার দেখিয়ে প্রচার করে একটি কন্টেইনারে সে প্রচুর পরিমাণ স্বর্ণ পেয়েছে যা প্রায় ৫০০ কোটি টাকায় বিদেশে বিক্রি করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক সেই টাকা জব্দ করেছে। এছাড়া সে ৫টি ডায়মন্ড পেয়েছে যার প্রতিটির মূল্য ২ হাজার কোটি টাকা। ডায়মন্ডগুলোর বিক্রির টাকা পেতে হলে বিভিন্ন মন্ত্রী এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ভাগ দিতে হবে। বিশ্বাস অর্জনের জন্য বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং মন্ত্রীর কণ্ঠস্বর নকল করে কথোপকথনের রেকর্ড শোনাত। এছাড়া একই জমি বিক্রির কথা বলে, বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে টাকা আদায় করতো। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম নগরীর বাড়াইপাড়া এলাকায় একটি জমির ভুয়া দলিল দেখিয়ে অন্তত ১০ জনের কাছে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তিনি আরও বলেন, ভুক্তভোগীরা তার কাছে পাওনা টাকা চাইতে গেলে সে ভুক্তভোগীদের আগে থেকে রাখা স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন ভুয়া দলিল দস্তাবেজ তৈরি করে তাদেরকেই উল্টো মিথ্যে মামলার ভয় ও মামলা দিয়ে নাজেহাল করত। মিথ্যে মামলার ভয়ে অনেক ভুক্তভোগীই পাওনা টাকার বিষয়ে মুখ খোলার সাহস করত না।

এমএ ইউসুফ আরও বলেন, এমন অভিযোগের খবর পেয়ে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। গোপন খবরের ভিত্তিতে গত রোববার রাত পৌনে ১০টায় নগরীর পাঁচলাইশের হামজারবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার মেজবাহ বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে প্রতারণা করে কোটি-কোটি টাকা আত্মসাৎ করার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। এছাড়া তাকে যেন সহজে কেউ খুঁজে না পায়, সেজন্য বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করতেন। তিনি সিমকার্ড ঘন-ঘন পরিবর্তন করতেন। এমনকি হেয়ার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টও করেছেন। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলায় সাজা এবং ১১টি মামলার ওয়ারেন্ট রয়েছে। তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা।