গজারিয়ায় ৬০ মেগাওয়াটের একটি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করবে রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল)। প্রকল্প স্থাপনে ১৮০ একর জমি প্রস্তুত আছে। এখন প্রকল্প নির্মাণ ব্যয় কত হতে পারে, হিসাব করে বিদ্যুৎ বিভাগে প্রস্তাব জমা দেবে আরপিসিএল। এই প্রকল্পে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নের সম্ভাবনা দেখছে সরকার।
আরপিসিএল সূত্রে জানা যায়, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ৬০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছিল আরপিসিএল।
দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়াতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এ খাতে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগ্রহী করতে বিনিয়োগ নিরাপত্তাসহ ১৫ বছরের শুল্ক ছাড়, আমদানি শুল্কে রেয়াতসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে।
এসব বিবেচনায় গজারিয়ায় যৌথ-অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপনে দেশি-বিদেশি কিছু প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছিল।
তবে সম্প্রতি প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটির (পিইসি) সভায় যৌথ-অংশীদারিত্বে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের বিষয়টি বাতিলের সুপারিশ করা হয়। গত ৭ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত একটি নোটিশ জারি করে আরপিসিএল সংশ্লিষ্টদের জানায়, পিইসির সুপারিশক্রমে কর্তৃপক্ষ সব ইওআই (এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট) প্রস্তাব বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরপিসিএলের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘সরকার মনে করছে নিজেদের জমিতে বিদেশিদের অংশীদারিত্ব যত কমানো যায়, তা দেশের জন্য মঙ্গল। সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে, বিশেষ করে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। গজারিয়ায় ইইউর অর্থায়নে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের চিন্তা করছেন সংশ্লিষ্টরা।’
তিনি বলেন, ‘জমি যেহেতু আগে থেকেই প্রস্তুত, শীঘ্রই প্রকল্প নির্মাণ ব্যয়ের হিসাব বিদ্যুৎ বিভাগে জমা দেয়া হবে।’
গজারিয়া উপজেলায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থাপনে জমি অধিগ্রহণ করেছিল সরকার। পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়।
পরে স্থানীয়দের বিরোধিতা এবং কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতকে অগ্রাধিকার; দুটো বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকার সেখানে গ্যাস বা এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়।
উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের ষোলআনী ও দৌলতপুর মৌজায় অধিগ্রহণ করা ২৫২ দশমিক ৫৬ একর ভূমির উন্নয়ন, ভূমি সুরক্ষা, নদী তীরে ব্লক বসানোসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজ আরও আগেই সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে ৬০০ মেগাওয়াটের একটি গ্যাস/এলএনজিভিত্তিক ৬০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র (ফেজ-১) নির্মাণের প্রাথমিক কাজ চলছে।
সাধারণত, কয়লার চেয়ে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে জমি কম লাগে। এই বিবেচনায় আরপিসিএল সেখানে ১৮০ একর জমিতে ৬০ মেগাওয়াটের একটি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের উদ্যোগ নেয়।
আরপিসিএলের নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী মো. সেলিম ভূঁইয়া সংবাদকে বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের অন্তত ২০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। ইতোমধ্যে জামালপুরে ১০০ মেগাওয়াটের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া, পঞ্চগড়ে একটি ৪০ মেগাওয়াটের এবং গজারিয়ায় ৬০ মেগাওয়াটের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
ভবিষ্যতে গজারিয়ার একটি বিদ্যুৎ হাব নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) অধীনস্থ বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আরপিসিএল। কোম্পানি সূত্র জানায়, এখানে পর্যায়ক্রমে আরও কয়েকটি বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করা হবে; যেখান থেকে জাতীয় গ্রিডে তিন থেকে চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৪ আশ্বিন ১৪২৯ ২২ সফর ১৪৪৪
ফয়েজ আহমেদ তুষার
গজারিয়ায় ৬০ মেগাওয়াটের একটি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করবে রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল)। প্রকল্প স্থাপনে ১৮০ একর জমি প্রস্তুত আছে। এখন প্রকল্প নির্মাণ ব্যয় কত হতে পারে, হিসাব করে বিদ্যুৎ বিভাগে প্রস্তাব জমা দেবে আরপিসিএল। এই প্রকল্পে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নের সম্ভাবনা দেখছে সরকার।
আরপিসিএল সূত্রে জানা যায়, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ৬০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছিল আরপিসিএল।
দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়াতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এ খাতে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগ্রহী করতে বিনিয়োগ নিরাপত্তাসহ ১৫ বছরের শুল্ক ছাড়, আমদানি শুল্কে রেয়াতসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে।
এসব বিবেচনায় গজারিয়ায় যৌথ-অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপনে দেশি-বিদেশি কিছু প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছিল।
তবে সম্প্রতি প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটির (পিইসি) সভায় যৌথ-অংশীদারিত্বে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের বিষয়টি বাতিলের সুপারিশ করা হয়। গত ৭ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত একটি নোটিশ জারি করে আরপিসিএল সংশ্লিষ্টদের জানায়, পিইসির সুপারিশক্রমে কর্তৃপক্ষ সব ইওআই (এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট) প্রস্তাব বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরপিসিএলের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘সরকার মনে করছে নিজেদের জমিতে বিদেশিদের অংশীদারিত্ব যত কমানো যায়, তা দেশের জন্য মঙ্গল। সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে, বিশেষ করে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। গজারিয়ায় ইইউর অর্থায়নে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের চিন্তা করছেন সংশ্লিষ্টরা।’
তিনি বলেন, ‘জমি যেহেতু আগে থেকেই প্রস্তুত, শীঘ্রই প্রকল্প নির্মাণ ব্যয়ের হিসাব বিদ্যুৎ বিভাগে জমা দেয়া হবে।’
গজারিয়া উপজেলায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থাপনে জমি অধিগ্রহণ করেছিল সরকার। পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়।
পরে স্থানীয়দের বিরোধিতা এবং কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতকে অগ্রাধিকার; দুটো বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকার সেখানে গ্যাস বা এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়।
উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের ষোলআনী ও দৌলতপুর মৌজায় অধিগ্রহণ করা ২৫২ দশমিক ৫৬ একর ভূমির উন্নয়ন, ভূমি সুরক্ষা, নদী তীরে ব্লক বসানোসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজ আরও আগেই সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে ৬০০ মেগাওয়াটের একটি গ্যাস/এলএনজিভিত্তিক ৬০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র (ফেজ-১) নির্মাণের প্রাথমিক কাজ চলছে।
সাধারণত, কয়লার চেয়ে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে জমি কম লাগে। এই বিবেচনায় আরপিসিএল সেখানে ১৮০ একর জমিতে ৬০ মেগাওয়াটের একটি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের উদ্যোগ নেয়।
আরপিসিএলের নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী মো. সেলিম ভূঁইয়া সংবাদকে বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের অন্তত ২০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। ইতোমধ্যে জামালপুরে ১০০ মেগাওয়াটের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া, পঞ্চগড়ে একটি ৪০ মেগাওয়াটের এবং গজারিয়ায় ৬০ মেগাওয়াটের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
ভবিষ্যতে গজারিয়ার একটি বিদ্যুৎ হাব নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) অধীনস্থ বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আরপিসিএল। কোম্পানি সূত্র জানায়, এখানে পর্যায়ক্রমে আরও কয়েকটি বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করা হবে; যেখান থেকে জাতীয় গ্রিডে তিন থেকে চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।