শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা চ্যালেঞ্জ
অবশেষে দেড় বছরেরও বেশি সময় পর দেশের শীর্ষস্থানীয় বীমা কোম্পানি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে আজ থেকে পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব নিচ্ছে। এর ফলে বীমা প্রতিষ্ঠায় প্রশাসক নিয়োগের অবসান হচ্ছে। ডেল্টা লাইফের ঊর্ধ্বতন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গতকাল বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নির্বাহী পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) এসএম শাকিল আখতারের স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এ প্রশাসক নিয়োগের অবসান এবং পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের কাছে কোম্পানির পরিচালনার দায়িত্বভার হস্তান্তর হচ্ছে।
নির্দেশক্রমে জানানো যাচ্ছে, গত ২২ আগস্ট আপিল বিভাগ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড সম্পর্কিত আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বীমা আইন অনুযায়ী ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের প্রশাসক মো. কুদ্দুস খানকে প্রশাসকের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদানপূর্বক প্রশাসক নিয়োগের অবসান করা হয়। যা আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে।
তাই ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের প্রশাসক হিসেবে কার্যক্রম পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের কাছে হস্তান্তরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
আদেশের কপি বর্তমান প্রশাসক মো. কুদ্দুস খান, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডকে দেয়া হয়েছে। আদেশের অনুলিপি অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, ইন্স্যুরেন্স ফোরামের সভাপতি, অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থমন্ত্রীর একান্ত সচিবসহ বিভিন্ন দপ্তরে দেয়া হয়েছে।
ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের একাধিক ঊর্ধ্বতন সূত্রে জানা গেছে, গত দেড় বছরের প্রশাসক আমলে দাপটশালী কোন কোন কর্মকর্তা কোম্পানির সার্ভিস রুল ভঙ্গ অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম করেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে ঘটনার সত্যতা মিলেছে। আবার তারাই কোম্পানির মালিক ও প্রতিষ্ঠানের সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে।
বীমা বিশেষজ্ঞদের মতে, পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে দেড় বছরেরও বেশি সময় সৃষ্ট প্রশাসনিক ও আর্থিক বিশৃঙ্খলা কাটিয়ে উঠে আবার প্রতিষ্ঠানটিকে চাঙ্গা করা। আর প্রতিষ্ঠানে ঘাপটি মেরে থাকা বাধ্যতামূলক ছুটিতে থাকা মাওলার মতো দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া।
অভিযোগ রয়েছে, মালিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনের মামলায় যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে তাদের অনেকেই এখনও কর্মস্থলে রয়েছে। যারা অনেকেই ডিএমডি মাওলার অনুসারী।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হলেন, হাফিজ আহমেদ মজুমদার, যিনি কোম্পানির নিরপেক্ষ পরিচালক। ভাইস-চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মো. জুনায়েদ শফিক, পরিচালক সুরাইয়া রহমান, পরিচালক আদিবা রহমান, (যিনি কোম্পানির সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা), পরিচালক জেয়াদ রহমান, (তিনি পূর্বের পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন)। নিরপেক্ষ পরিচালক সাকিব আজিজ চৌধুরী, পরিচালক চাকলাদার রেজানুল আলম ও পরিচালক সাকিব আজাদ।
উল্লেখ্য, আইডিআরএ’র সাবেক চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবি করার অভিযোগ করেন ডেল্টা লাইফ। ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর ডেল্টা লাইফ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির এ অভিযোগ করেছিল। ২০২১ সালে ৭ ফেব্রুয়ারি একটি সংবাদ সম্মেলন করেও একই অভিযোগ আনা হয়। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ দেয় ওই সময়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইডিআরএ চেয়ারম্যান। এ নিয়ে দৈনিক সংবাদসহ একাধিক জাতীয় পত্রিকায় আইডিআরএ’র ওই সময়ের চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন অনিয়ম নিয়ে একাধিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। অবশেষে নানা কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে গিয়ে তিনি পদত্যাগ করেন।
মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৪ আশ্বিন ১৪২৯ ২২ সফর ১৪৪৪
শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা চ্যালেঞ্জ
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
অবশেষে দেড় বছরেরও বেশি সময় পর দেশের শীর্ষস্থানীয় বীমা কোম্পানি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে আজ থেকে পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব নিচ্ছে। এর ফলে বীমা প্রতিষ্ঠায় প্রশাসক নিয়োগের অবসান হচ্ছে। ডেল্টা লাইফের ঊর্ধ্বতন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গতকাল বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নির্বাহী পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) এসএম শাকিল আখতারের স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এ প্রশাসক নিয়োগের অবসান এবং পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের কাছে কোম্পানির পরিচালনার দায়িত্বভার হস্তান্তর হচ্ছে।
নির্দেশক্রমে জানানো যাচ্ছে, গত ২২ আগস্ট আপিল বিভাগ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড সম্পর্কিত আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বীমা আইন অনুযায়ী ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের প্রশাসক মো. কুদ্দুস খানকে প্রশাসকের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদানপূর্বক প্রশাসক নিয়োগের অবসান করা হয়। যা আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে।
তাই ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের প্রশাসক হিসেবে কার্যক্রম পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের কাছে হস্তান্তরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
আদেশের কপি বর্তমান প্রশাসক মো. কুদ্দুস খান, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডকে দেয়া হয়েছে। আদেশের অনুলিপি অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, ইন্স্যুরেন্স ফোরামের সভাপতি, অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থমন্ত্রীর একান্ত সচিবসহ বিভিন্ন দপ্তরে দেয়া হয়েছে।
ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের একাধিক ঊর্ধ্বতন সূত্রে জানা গেছে, গত দেড় বছরের প্রশাসক আমলে দাপটশালী কোন কোন কর্মকর্তা কোম্পানির সার্ভিস রুল ভঙ্গ অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম করেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে ঘটনার সত্যতা মিলেছে। আবার তারাই কোম্পানির মালিক ও প্রতিষ্ঠানের সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে।
বীমা বিশেষজ্ঞদের মতে, পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে দেড় বছরেরও বেশি সময় সৃষ্ট প্রশাসনিক ও আর্থিক বিশৃঙ্খলা কাটিয়ে উঠে আবার প্রতিষ্ঠানটিকে চাঙ্গা করা। আর প্রতিষ্ঠানে ঘাপটি মেরে থাকা বাধ্যতামূলক ছুটিতে থাকা মাওলার মতো দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া।
অভিযোগ রয়েছে, মালিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনের মামলায় যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে তাদের অনেকেই এখনও কর্মস্থলে রয়েছে। যারা অনেকেই ডিএমডি মাওলার অনুসারী।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হলেন, হাফিজ আহমেদ মজুমদার, যিনি কোম্পানির নিরপেক্ষ পরিচালক। ভাইস-চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মো. জুনায়েদ শফিক, পরিচালক সুরাইয়া রহমান, পরিচালক আদিবা রহমান, (যিনি কোম্পানির সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা), পরিচালক জেয়াদ রহমান, (তিনি পূর্বের পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন)। নিরপেক্ষ পরিচালক সাকিব আজিজ চৌধুরী, পরিচালক চাকলাদার রেজানুল আলম ও পরিচালক সাকিব আজাদ।
উল্লেখ্য, আইডিআরএ’র সাবেক চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবি করার অভিযোগ করেন ডেল্টা লাইফ। ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর ডেল্টা লাইফ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির এ অভিযোগ করেছিল। ২০২১ সালে ৭ ফেব্রুয়ারি একটি সংবাদ সম্মেলন করেও একই অভিযোগ আনা হয়। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ দেয় ওই সময়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইডিআরএ চেয়ারম্যান। এ নিয়ে দৈনিক সংবাদসহ একাধিক জাতীয় পত্রিকায় আইডিআরএ’র ওই সময়ের চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন অনিয়ম নিয়ে একাধিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। অবশেষে নানা কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে গিয়ে তিনি পদত্যাগ করেন।