সব কাস্টমস হাউসে অভিন্ন মূল্যে শুল্কায়নের নির্দেশ

আমদানি পণ্য শুল্কায়নে নতুন নিয়ম চালু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। এখন থেকে দেশের সব কাস্টম হাউসে অভিন্ন মূল্যে পণ্যের শুল্কায়ন করতে হবে।

এনবিআর গত সোমবার এক প্রজ্ঞাপনে দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনকে অভিন্ন মূল্যে শুল্কায়নের নির্দেশ দিয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত জটিলতা বাড়বে।

এনবিআর থেকে গত সোমবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে এই আদেশ কার্যকর করতে দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে এনবিআরের এই পদক্ষেপ নিয়ে ইতোমধ্যে সমালোচনা শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, এত জটিলতা বাড়বে।

বর্তমানে প্রতিটি কাস্টম হাউস পৃথকভাবে পণ্য মূল্যের ভিত্তিতে শুল্কায়ন করে থাকে। নতুন নিয়মে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে আমদানি করা পণ্য যে মূল্যে শুল্কায়ন করা হবে, একই মূল্যে সব কাস্টমস হাউস ও শুল্ক স্টেশনে শুল্কায়ন করতে হবে।

ধরা যাক, চীন থেকে আমদানি করা ১০ সিএফটি ফ্রিজের মূল্য ২০০ ডলার। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্তৃপক্ষ ওই মূল্যের ভিত্তিতে ফ্রিজটির শুল্কায়ন করল। একই সিএফটির ফ্রিজ কেউ ভারত থেকে বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে আমদানি করল, যার দাম ২২০ ডলার। নিয়ম অনুযায়ী, বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ঘোষিত মূল্যের ভিত্তিতে শুল্কায়ন করার কথা। কিন্তু এনবিআরের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের নির্ধারিত মূল্যেই এখানেও শুল্ক আদায় করতে হবে।

বর্তমানে এনবিআরের অধীনে পূর্ণাঙ্গ কাস্টম হাউস আছে ১২টি এবং সক্রিয় শুল্ক স্টেশন ৩৬টি। প্রতিষ্ঠানটি বছরে যে পরিমাণ রাজস্ব সংগ্রহ করে তার ২৯ শতাংশই আসে আমদানি শুল্ক থেকে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘রাজস্ব আহরণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা স্বার্থে এক ও অভিন্ন মূল্যে পণ্যের শুল্কায়ন এবং শুল্কায়নযোগ্য পণ্যের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

‘এ অবস্থায় এনবিআরের অধিভুক্ত সব কাস্টম হাউস ও কাস্টমস স্টেশনে আমদানি ও রপ্তানি পণ্য চালানের যথাযথ পরিমাণ নিশ্চিতকরণ এবং এক ও অভিন্ন মূল্যে শুল্কায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ দেয়া হল।’

এদিকে সব কাস্টম হাউসে একই মূল্যে পণ্যের শুল্কায়নে এনবিআর যে নতুন আদেশ জারি করেছে তা বাস্তবসম্মত নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের দাম আর ভারতের দামের মধ্যে পার্থক্য থাকতে পারে। এছাড়া গুণগত মানেও ফারাক থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে একই মূল্যে শুল্কায়ন যুক্তিসঙ্গত নয়।

আদেশটিকে বিতর্কিত উল্লেখ করে তারা আরও বলেন, এটি ১৯৯৪ সালের গ্যাট ভ্যালুয়েশন ও বাংলাদেশ কাস্টমস ভ্যালুয়েশন বা শুল্কায়ন বিধিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে শুল্কায়নে জটিলতা বাড়বে এবং ব্যবসায়ীরা হয়রানির সম্মুখীন হবেন। এতে করে রাজস্ব আহরণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, গ্যাট ভ্যালুয়েশন চুক্তিতে কীভাবে একটি পণ্যের শুল্কায়ন করতে হবে তা বলা আছে। শুল্কায়নের বিষয়ে যে বিধিমালা আছে সে অনুযায়ী প্রত্যেক দেশের কাস্টমস বিধিমালা তৈরি করে পণ্যের শুল্কায়ন করে থাকে। বাংলাদেশ কাস্টমসও একই নীতি অনুসরণ করে পণ্য চালানে শুল্কায়ন করে আসছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কাস্টমস কমিশনার বলেন, ‘কী কারণে নতুন নিয়ম করা হল তা বোধগম্য নয়। তবে অভিন্ন মূল্যে পণ্যের শুল্কায়নের সিদ্ধান্তটি পুরোপুরি ভুল সিদ্ধান্ত। এটি গ্যাট ভ্যালুয়েশন চুক্তি ও বাংলাদেশ কাস্টমস ভ্যালুয়েশন বিধিমালার পরিপন্থী। নতুন আদেশটির প্রয়োগ শুরু হলে শুল্কায়নে জটিলতা বাড়বে।’

বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৫ আশ্বিন ১৪২৯ ২৩ সফর ১৪৪৪

সব কাস্টমস হাউসে অভিন্ন মূল্যে শুল্কায়নের নির্দেশ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

আমদানি পণ্য শুল্কায়নে নতুন নিয়ম চালু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। এখন থেকে দেশের সব কাস্টম হাউসে অভিন্ন মূল্যে পণ্যের শুল্কায়ন করতে হবে।

এনবিআর গত সোমবার এক প্রজ্ঞাপনে দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনকে অভিন্ন মূল্যে শুল্কায়নের নির্দেশ দিয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত জটিলতা বাড়বে।

এনবিআর থেকে গত সোমবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে এই আদেশ কার্যকর করতে দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে এনবিআরের এই পদক্ষেপ নিয়ে ইতোমধ্যে সমালোচনা শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, এত জটিলতা বাড়বে।

বর্তমানে প্রতিটি কাস্টম হাউস পৃথকভাবে পণ্য মূল্যের ভিত্তিতে শুল্কায়ন করে থাকে। নতুন নিয়মে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে আমদানি করা পণ্য যে মূল্যে শুল্কায়ন করা হবে, একই মূল্যে সব কাস্টমস হাউস ও শুল্ক স্টেশনে শুল্কায়ন করতে হবে।

ধরা যাক, চীন থেকে আমদানি করা ১০ সিএফটি ফ্রিজের মূল্য ২০০ ডলার। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্তৃপক্ষ ওই মূল্যের ভিত্তিতে ফ্রিজটির শুল্কায়ন করল। একই সিএফটির ফ্রিজ কেউ ভারত থেকে বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে আমদানি করল, যার দাম ২২০ ডলার। নিয়ম অনুযায়ী, বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ঘোষিত মূল্যের ভিত্তিতে শুল্কায়ন করার কথা। কিন্তু এনবিআরের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের নির্ধারিত মূল্যেই এখানেও শুল্ক আদায় করতে হবে।

বর্তমানে এনবিআরের অধীনে পূর্ণাঙ্গ কাস্টম হাউস আছে ১২টি এবং সক্রিয় শুল্ক স্টেশন ৩৬টি। প্রতিষ্ঠানটি বছরে যে পরিমাণ রাজস্ব সংগ্রহ করে তার ২৯ শতাংশই আসে আমদানি শুল্ক থেকে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘রাজস্ব আহরণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা স্বার্থে এক ও অভিন্ন মূল্যে পণ্যের শুল্কায়ন এবং শুল্কায়নযোগ্য পণ্যের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

‘এ অবস্থায় এনবিআরের অধিভুক্ত সব কাস্টম হাউস ও কাস্টমস স্টেশনে আমদানি ও রপ্তানি পণ্য চালানের যথাযথ পরিমাণ নিশ্চিতকরণ এবং এক ও অভিন্ন মূল্যে শুল্কায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ দেয়া হল।’

এদিকে সব কাস্টম হাউসে একই মূল্যে পণ্যের শুল্কায়নে এনবিআর যে নতুন আদেশ জারি করেছে তা বাস্তবসম্মত নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের দাম আর ভারতের দামের মধ্যে পার্থক্য থাকতে পারে। এছাড়া গুণগত মানেও ফারাক থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে একই মূল্যে শুল্কায়ন যুক্তিসঙ্গত নয়।

আদেশটিকে বিতর্কিত উল্লেখ করে তারা আরও বলেন, এটি ১৯৯৪ সালের গ্যাট ভ্যালুয়েশন ও বাংলাদেশ কাস্টমস ভ্যালুয়েশন বা শুল্কায়ন বিধিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে শুল্কায়নে জটিলতা বাড়বে এবং ব্যবসায়ীরা হয়রানির সম্মুখীন হবেন। এতে করে রাজস্ব আহরণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, গ্যাট ভ্যালুয়েশন চুক্তিতে কীভাবে একটি পণ্যের শুল্কায়ন করতে হবে তা বলা আছে। শুল্কায়নের বিষয়ে যে বিধিমালা আছে সে অনুযায়ী প্রত্যেক দেশের কাস্টমস বিধিমালা তৈরি করে পণ্যের শুল্কায়ন করে থাকে। বাংলাদেশ কাস্টমসও একই নীতি অনুসরণ করে পণ্য চালানে শুল্কায়ন করে আসছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কাস্টমস কমিশনার বলেন, ‘কী কারণে নতুন নিয়ম করা হল তা বোধগম্য নয়। তবে অভিন্ন মূল্যে পণ্যের শুল্কায়নের সিদ্ধান্তটি পুরোপুরি ভুল সিদ্ধান্ত। এটি গ্যাট ভ্যালুয়েশন চুক্তি ও বাংলাদেশ কাস্টমস ভ্যালুয়েশন বিধিমালার পরিপন্থী। নতুন আদেশটির প্রয়োগ শুরু হলে শুল্কায়নে জটিলতা বাড়বে।’