৮ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ
মিশর থেকে দুটি উড়োজাহাজ লিজে ১১০০ কোটি টাকার দুর্নীতি ও অনিয়ম খুঁজে বের করতে এখন পর্যন্ত মহাব্যবস্থাপকসহ (অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা) ৮ কর্মকর্তা দুদকের মুখোমুখি হয়েছেন। গতকাল লিজ সংক্রান্ত দুর্নীতির ও অনিয়মের বিষয়ে বিমানের ৪ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এর আগে গত সোমবার ৩ কর্মকর্তা এবং আগের দিন এমডিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক কর্মকর্তারা। এদিকে বিমান লিজের ক্ষেত্রে কী ধরনের দুর্নীতি হয়েছে, এর সঙ্গে কাদের কী ধরনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুদক সচিব।
বিমান লিজের দুর্নীতির অনুসন্ধানের বিষয়ে গতকাল দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, জাতীয় সংসদের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির তদন্তে লিজ সংক্রান্ত অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে। স্থায়ী কমিটির পাঠানো প্রতিবেদনের আলোকে দুদক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। এখানে লিজ চুক্তি ও দরপত্রের স্পেসিফিকেশনে কোন দুর্বলতা আছে কি না সেটি অনুসন্ধান চলছে। এখন পর্যন্ত বিমানের ৮ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মিশরীয় দুটি বিমান লিজ গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
সচিব বলেন, প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তাদেরও পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। দুদক জানার চেষ্টা করছে, এখানে কোন ধরনের দুর্বলতা ছিল কি না।
দুদক সূত্রে জানা যায়, ত্রুটিযুক্ত বিমান কিনে রাষ্ট্রের ১১শ’ কোটি টাকা গচ্চা দেয়ার বিষয়ে গতকাল সকাল ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত দুদকের প্রধান কার্যালয়ে চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তারের সমন্বয়ে একটি টিম। যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তারা হলেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রিন্সিপাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর সাইফুল হক শাহ, এয়ার কনসালটেন্ট গোলাম সারওয়ার, বিমান ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টারের (বিএফসিসি) ম্যানেজার সাদেকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহমেদ। এর আগে সোমবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের রক্ষণাবেক্ষণ শাখার চিফ ইঞ্জিনিয়ার মো. এসএ সিদ্দিক, প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার এসএম হানিফ ও দেবেশ চৌধুরী। গত ১৪ সেপ্টেম্বর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা) মো. আবদুর রহমান ফারুকীকে।
দুদকে আসা অভিযোগে থেকে জানা গেছে, ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ার (মিশর) থেকে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ই আর নামে দুটি উড়োজাহাজ লিজ নেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড। লিজ আনার পর এক বছর না যেতেই ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি উড়োজাহাজের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। পরে উড়োজাহাজ সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে আরেকটি ইঞ্জিন ভাড়ায় আনা হয়। দেড় বছরের মাথায় ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যায়। তখন ইঞ্জিন মেরামত করতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। কিন্তু কোন সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাকালে ইজিপ্ট এয়ার ও মেরামতকারী কোম্পানি উভয়কেই অর্থ দিতে হয়েছে বিমানকে। এভাবে ইজিপ্ট এয়ার ও মেরামতকারী কোম্পানির পেছনে পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিমানের খরচ হয়েছে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা। দুটি উড়োজাহাজের জন্য প্রতি মাসে বিমান ১১ কোটি টাকা করে ভর্তুকি দিয়ে আসছিল। সেই দায় থেকে ২০২০ সালের মার্চ মাসে মুক্তি মিলেছে বিমানের। লিজ নেয়া বিমানের কোম্পানি ও ইঞ্জিন মেরামতকারী প্রতিষ্ঠানের পিছনে ৫ বছরে সব মিলিয়ে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা গচ্চা দেখানো ভর্তুকি নাকি দুর্নীতি তা খতিয়ে দেখে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যনটন মন্ত্রণলয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি অনুসন্ধানে নামে। অনুসন্ধানে নানা অনিয়ম পায় তদন্ত কমিটি। পরে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১নং সাব-কমিটির প্রাথমিক তদন্ত শেষ করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। দাখিল করা প্রতিবেদনে বিষয়টি আরও গভীরভাবে তদন্ত করার জন্য দুদকে পাঠানোর সুপারিশ ছিল। এ ঘটনাটি অধিকতর তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সুপারিশ পাঠায় সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। দুদক ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এরপরই দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন (বর্তমানে কিশোরগঞ্জে) ও সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তারের সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। পরে অনুসন্ধানের টিম অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালের দপ্তরে চিঠি পাঠান। দুদকের পাঠানো চিঠিতে উড়োজাহাজ লিজ নেয়ার দরপত্রসহ ১৩ ধরনের নথিপত্র দ্রুত সময়ের মধ্যে দুদকে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।
বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৫ আশ্বিন ১৪২৯ ২৩ সফর ১৪৪৪
৮ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
মিশর থেকে দুটি উড়োজাহাজ লিজে ১১০০ কোটি টাকার দুর্নীতি ও অনিয়ম খুঁজে বের করতে এখন পর্যন্ত মহাব্যবস্থাপকসহ (অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা) ৮ কর্মকর্তা দুদকের মুখোমুখি হয়েছেন। গতকাল লিজ সংক্রান্ত দুর্নীতির ও অনিয়মের বিষয়ে বিমানের ৪ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এর আগে গত সোমবার ৩ কর্মকর্তা এবং আগের দিন এমডিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক কর্মকর্তারা। এদিকে বিমান লিজের ক্ষেত্রে কী ধরনের দুর্নীতি হয়েছে, এর সঙ্গে কাদের কী ধরনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুদক সচিব।
বিমান লিজের দুর্নীতির অনুসন্ধানের বিষয়ে গতকাল দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, জাতীয় সংসদের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির তদন্তে লিজ সংক্রান্ত অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে। স্থায়ী কমিটির পাঠানো প্রতিবেদনের আলোকে দুদক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। এখানে লিজ চুক্তি ও দরপত্রের স্পেসিফিকেশনে কোন দুর্বলতা আছে কি না সেটি অনুসন্ধান চলছে। এখন পর্যন্ত বিমানের ৮ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মিশরীয় দুটি বিমান লিজ গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
সচিব বলেন, প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তাদেরও পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। দুদক জানার চেষ্টা করছে, এখানে কোন ধরনের দুর্বলতা ছিল কি না।
দুদক সূত্রে জানা যায়, ত্রুটিযুক্ত বিমান কিনে রাষ্ট্রের ১১শ’ কোটি টাকা গচ্চা দেয়ার বিষয়ে গতকাল সকাল ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত দুদকের প্রধান কার্যালয়ে চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তারের সমন্বয়ে একটি টিম। যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তারা হলেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রিন্সিপাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর সাইফুল হক শাহ, এয়ার কনসালটেন্ট গোলাম সারওয়ার, বিমান ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টারের (বিএফসিসি) ম্যানেজার সাদেকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহমেদ। এর আগে সোমবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের রক্ষণাবেক্ষণ শাখার চিফ ইঞ্জিনিয়ার মো. এসএ সিদ্দিক, প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার এসএম হানিফ ও দেবেশ চৌধুরী। গত ১৪ সেপ্টেম্বর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা) মো. আবদুর রহমান ফারুকীকে।
দুদকে আসা অভিযোগে থেকে জানা গেছে, ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ার (মিশর) থেকে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ই আর নামে দুটি উড়োজাহাজ লিজ নেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড। লিজ আনার পর এক বছর না যেতেই ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি উড়োজাহাজের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। পরে উড়োজাহাজ সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে আরেকটি ইঞ্জিন ভাড়ায় আনা হয়। দেড় বছরের মাথায় ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যায়। তখন ইঞ্জিন মেরামত করতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। কিন্তু কোন সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাকালে ইজিপ্ট এয়ার ও মেরামতকারী কোম্পানি উভয়কেই অর্থ দিতে হয়েছে বিমানকে। এভাবে ইজিপ্ট এয়ার ও মেরামতকারী কোম্পানির পেছনে পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিমানের খরচ হয়েছে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা। দুটি উড়োজাহাজের জন্য প্রতি মাসে বিমান ১১ কোটি টাকা করে ভর্তুকি দিয়ে আসছিল। সেই দায় থেকে ২০২০ সালের মার্চ মাসে মুক্তি মিলেছে বিমানের। লিজ নেয়া বিমানের কোম্পানি ও ইঞ্জিন মেরামতকারী প্রতিষ্ঠানের পিছনে ৫ বছরে সব মিলিয়ে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা গচ্চা দেখানো ভর্তুকি নাকি দুর্নীতি তা খতিয়ে দেখে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যনটন মন্ত্রণলয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি অনুসন্ধানে নামে। অনুসন্ধানে নানা অনিয়ম পায় তদন্ত কমিটি। পরে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১নং সাব-কমিটির প্রাথমিক তদন্ত শেষ করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। দাখিল করা প্রতিবেদনে বিষয়টি আরও গভীরভাবে তদন্ত করার জন্য দুদকে পাঠানোর সুপারিশ ছিল। এ ঘটনাটি অধিকতর তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সুপারিশ পাঠায় সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। দুদক ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এরপরই দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন (বর্তমানে কিশোরগঞ্জে) ও সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তারের সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। পরে অনুসন্ধানের টিম অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালের দপ্তরে চিঠি পাঠান। দুদকের পাঠানো চিঠিতে উড়োজাহাজ লিজ নেয়ার দরপত্রসহ ১৩ ধরনের নথিপত্র দ্রুত সময়ের মধ্যে দুদকে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।