রংপুরের গালিচড়া গ্রামে স্বপ্নার সাফল্যে মধ্যরাত পর্যন্ত আনন্দ মিছিল

গত সোমবার রাতে বাংলাদেশ নারী দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ইশরাত জাহান স্বপ্নার জন্মস্থান রংপুরের সদর উপজেলার পালিচড়া গ্রাম ও আশপাশের গ্রামের হাজার হাজার নারী-পুরুষ মধ্যরাত পর্যন্ত বিজয় র?্যালি করেছে। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে মিষ্টি বিতরণ আর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তারা।

এলাকাবাসী বলেন, প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের শিরোপা জিতল বাংলাদেশের মেয়েরা। এই দলে তাদের গ্রামের মেয়ে ইশরাত জাহান স্বপ্নাও খেলেছেন। এ কারণে তাদের আনন্দ অনেক বেশি। এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে চান তারা। নারী ফুটবলাররা বলছেন, স্বপ্না আমাদের সঙ্গে এই ক্লাবে খেলেছেন এখন সারাদেশ তথা গোটা বিশ্ব পালিচড়া গ্রামটিকে নতুন করে চিনবে। এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয় বলে জানান তারা।

স্বপ্নার মা লিপি বেগম মেয়ের সাফল্যে আনন্দে কেঁদে ফেলে তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে তিন মেয়েকে মানুষ করেছেন তিনি। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। স্বপ্না ফুটবল খেলুক এটা এলাকার মানুষ ও স্বজনেরা চাইত না। তারা বলতো মেয়েরা তাও আবার অজোপাড়া গ্রামের মেয়েরা কেন ফুটবল খেলবে। কিন্তু স্থানীয় ফুটবল দলের হারুন আমার কাছে এসে বলেন, তাকে ফুটবল কোচিং করাবে আমি প্রথমে রাজি না হলেও পরে রাজি হই। আমার মেয়ে দেশের জন্য সাফল্য বয়ে আনতে কাজ করেছে এতে পালিচড়া গ্রামসহ দেশবাসীর কাছে আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সকলেই তার জন্য দোয়া করবেন বলে জানান তিনি। স্বপ্নার মা লিপি বেগম আরও বলেন, আমার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ, তিনি কোন কাজকর্ম করতে পারেন না। আমি ধান শুকানোর কাজ করে চাল তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালিয়েছি। আমার ৩ মেয়ে, ছেলে নেই। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। স্বপ্না ফুটবল খেলুক আমি চাইতাম না কারণ মেয়েরা ফুটবল খেলবে এটা আমার স্বজনরা চাইত না। তার পরেও স্বপ্না অনেক সাধনা করেছে আজ সে বাংলাদেশ জাতীয় দলের খেলোয়াড় হয়েছে। সাফ ফুটবলে খেলে জয় ছিনিয়ে এনেছে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে।

এদিকে নারী ফুটবলার স্বপ্নার সতীর্থ খেলোয়াড়, আসমা, রাখী, মরিয়মসহ অনেকেই জানালো, আমাদের অজোপাড়া গাঁয়ের মেয়ে স্বপ্না দেখিয়ে দিয়েছে সাধনা করলে সফল হওয়া যায়। আমরা মনে করি তার মতো আমরাও যাতে জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাই সেজন্য কঠোর অনুশীলন করছি। স্বপ্নাকে স্যালুট তার অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করার জন্য।

কোচ রাসেল জানান, স্বপ্নার সবচেয়ে বড় গুণ সে অসম্ভব পরিশ্রমী। দীর্ঘ সাধানার ফল সে পেয়েছে। সামনে অনেক দূর এগিয়ে যাবে সে।

এলাকার আলেয়া বেগম, মমতাজ বেগমসহ অনেকে জানালো নারী ফুটবলার স্বপ্না পালিচড়া তথা বাংলাদেশের গর্ব। তার সাফল্যে আমরা গর্বিত, দোয়া করি সে অনেক দূর এগিয়ে যাক।

বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৫ আশ্বিন ১৪২৯ ২৩ সফর ১৪৪৪

রংপুরের গালিচড়া গ্রামে স্বপ্নার সাফল্যে মধ্যরাত পর্যন্ত আনন্দ মিছিল

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, রংপুর

গত সোমবার রাতে বাংলাদেশ নারী দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ইশরাত জাহান স্বপ্নার জন্মস্থান রংপুরের সদর উপজেলার পালিচড়া গ্রাম ও আশপাশের গ্রামের হাজার হাজার নারী-পুরুষ মধ্যরাত পর্যন্ত বিজয় র?্যালি করেছে। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে মিষ্টি বিতরণ আর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তারা।

এলাকাবাসী বলেন, প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের শিরোপা জিতল বাংলাদেশের মেয়েরা। এই দলে তাদের গ্রামের মেয়ে ইশরাত জাহান স্বপ্নাও খেলেছেন। এ কারণে তাদের আনন্দ অনেক বেশি। এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে চান তারা। নারী ফুটবলাররা বলছেন, স্বপ্না আমাদের সঙ্গে এই ক্লাবে খেলেছেন এখন সারাদেশ তথা গোটা বিশ্ব পালিচড়া গ্রামটিকে নতুন করে চিনবে। এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয় বলে জানান তারা।

স্বপ্নার মা লিপি বেগম মেয়ের সাফল্যে আনন্দে কেঁদে ফেলে তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে তিন মেয়েকে মানুষ করেছেন তিনি। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। স্বপ্না ফুটবল খেলুক এটা এলাকার মানুষ ও স্বজনেরা চাইত না। তারা বলতো মেয়েরা তাও আবার অজোপাড়া গ্রামের মেয়েরা কেন ফুটবল খেলবে। কিন্তু স্থানীয় ফুটবল দলের হারুন আমার কাছে এসে বলেন, তাকে ফুটবল কোচিং করাবে আমি প্রথমে রাজি না হলেও পরে রাজি হই। আমার মেয়ে দেশের জন্য সাফল্য বয়ে আনতে কাজ করেছে এতে পালিচড়া গ্রামসহ দেশবাসীর কাছে আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সকলেই তার জন্য দোয়া করবেন বলে জানান তিনি। স্বপ্নার মা লিপি বেগম আরও বলেন, আমার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ, তিনি কোন কাজকর্ম করতে পারেন না। আমি ধান শুকানোর কাজ করে চাল তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালিয়েছি। আমার ৩ মেয়ে, ছেলে নেই। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। স্বপ্না ফুটবল খেলুক আমি চাইতাম না কারণ মেয়েরা ফুটবল খেলবে এটা আমার স্বজনরা চাইত না। তার পরেও স্বপ্না অনেক সাধনা করেছে আজ সে বাংলাদেশ জাতীয় দলের খেলোয়াড় হয়েছে। সাফ ফুটবলে খেলে জয় ছিনিয়ে এনেছে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে।

এদিকে নারী ফুটবলার স্বপ্নার সতীর্থ খেলোয়াড়, আসমা, রাখী, মরিয়মসহ অনেকেই জানালো, আমাদের অজোপাড়া গাঁয়ের মেয়ে স্বপ্না দেখিয়ে দিয়েছে সাধনা করলে সফল হওয়া যায়। আমরা মনে করি তার মতো আমরাও যাতে জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাই সেজন্য কঠোর অনুশীলন করছি। স্বপ্নাকে স্যালুট তার অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করার জন্য।

কোচ রাসেল জানান, স্বপ্নার সবচেয়ে বড় গুণ সে অসম্ভব পরিশ্রমী। দীর্ঘ সাধানার ফল সে পেয়েছে। সামনে অনেক দূর এগিয়ে যাবে সে।

এলাকার আলেয়া বেগম, মমতাজ বেগমসহ অনেকে জানালো নারী ফুটবলার স্বপ্না পালিচড়া তথা বাংলাদেশের গর্ব। তার সাফল্যে আমরা গর্বিত, দোয়া করি সে অনেক দূর এগিয়ে যাক।