সাকিব দুদকের শুভেচ্ছাদূত থাকা নিয়ে বিতর্ক

জুয়াড়ি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির রেশ কাটতে না কাটতেই এবার শেয়ারবাজার কারসাজিতে জড়িত বিতর্কে জড়িয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিটেদ দলের টি-২০ ও টেস্ট দলের অধিনায়কের শাকিব আল হাসান। সম্প্রতি খবর বের হয় শেয়ার মার্কেটে কারসাজি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার নেপথ্যে সাকিব আল হাসানের কোম্পানি মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেড জড়িত। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্চের অনুসন্ধানে শেয়ার বাজারে কারসাজিতেও সাকিবের প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে আসে। এরপর বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয় শেয়ারবাজারে।

শেয়ারবাজার কারসাজিতে নাম আসায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) শুভেচ্ছাদূত থাকবে কি না তা নিয়ে দ্বিধায় পড়েছে কমিশন। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কমিশনে আলোচনা চলছে।

দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসে গতকাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ত্রিকেটার সাকিবের বিষয়ে যেকোন সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। দুদক সচিব বলেন, ‘২০১৮ সালে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে দুদকের যে চুক্তি হয়েছিল তা সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে। এছাড়া আমাদের হটলাইন-১০৬ উদ্বোধনকালেও তার সঙ্গে কাজ করা হয়। এরপর দীর্ঘদিন তার সঙ্গে কোন কার্যক্রম হয়নি’। তিনি আরও বলেন, ‘অভিযোগ এলেই তো সঙ্গে সঙ্গে কোন কিছু হয় না। একটু সময় দেন। আপনারা যেটা বললেন সে বিষয়টি প্রয়োজনে কমিশন দেখবে, সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে’।

এর আগে কারাতে ফেডারেশনের সভাপতি ও দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘সাকিবের বিষয়ে এখনই কোন মন্তব্য করা যাচ্ছে না। আমরা কমিশনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, ক্রিকেটার সাকিব বিশ্বসেরা খেলোয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের সবচেয়ে দামি ও ভালো খেলোয়ার। বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশে সাকিবের ভক্ত, শুভাকাক্সক্ষী রয়েছে। এসব কারণে সাকিবকে দুদকের শুভেচ্ছা দূত করা হয়। হটলাইনে অভিযোগের ভিত্তিতে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম কিভাবে ঘুষ, দুর্নীতির বিষয়ে অভিযানে যায়, তা নিয়ে সাকিবকে দিয়ে একটি ডকুমেন্টারি করা হয়। যা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন টেলিভিশনে দেখানো হয়ে থাকে। এসবের কারণে দুদক জনপ্রিয় হিসেবে সাকিবকে বেছে নিয়েছে। এখন যদি তার বিরুদ্ধে শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারীতে নাম আসে তাহলে এমন ব্যক্তি দুদকের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে থাকলে তা বিতর্ক তৈরি করতে পারে। অভিযোগ সত্য হলে দুদক হয়তো তার সঙ্গে সব ধরনের চুক্তি বাতিল করতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাকিব আলোচিত ‘শেয়ার কারসাজির হোতা’ বলে অভিযুক্ত সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবুল খায়ের হিরোর সঙ্গে শেয়ার কারসাজি করেছেন বলে অভিযোগ উঠে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তদন্তে ওইসব কারসাজির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট শেয়ারগুলোর শীর্ষ ক্রেতার নামের তালিকায় সাকিবের নাম পায়। সম্প্রতি এমন সাত কারসাজির ঘটনায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা জরিমানা করে যে আদেশ দিয়েছে, তার চারটিতে তদন্তের সময়ে শীর্ষ শেয়ার কেনাবেচাকারীর নামের তালিকায় ক্রিকেটার সাকিব এবং তার মালিকানাধীন ব্রোকারেজে হাউসের নাম উঠে এসেছে। যেসব শেয়ার কারসাজির ঘটনায় সাকিব আল হাসানের নাম এসেছে, সেগুলো হলো ওয়ান ব্যাংক, ফরচুন সুুজ এবং এনআরবিসি ব্যাংক। এসব কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি হয়েছিল গত বছর। এ বছরের শুরুতে তথ্য প্রযুক্তি খাতের কোম্পানি বিডি কম অনলাইনের কারসাজির ঘটনায় শীর্ষ ক্রেতার তালিকায় ছিল ব্রোকারেজ হাউস মোনার্ক হোল্ডিংস। এ ব্রোকারেজ হাউসের মালিকানায় সাকিব ছাড়াও যৌথভাবে আছেন হিরোর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে শুধু সাকিব নন, কারসাজি চক্রের অংশ হিসেবে আবুল খায়ের হিরো, বেসরকারি ব্যাংক এনআরবিসি, ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেনেপ ইনফোসিস, ফরচুন সুজ এবং সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসসহ আরও অনেকের নাম এসেছে। শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোনার্ক হোল্ডিংস ছাড়াও মোনার্ক মার্ট নামক ই-কমার্স সাইটের হিরোর ব্যবসায়িক পার্টনার সাকিব আল হাসান। নিজে কোন শেয়ার কেনাবেচা না করে তার হয়ে ব্যবসায়িক পার্টনার হিরোর মাধ্যমে কিনতেন। সাকিবের বিও একাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে বেচাকেনা সবকিছু হিরুর মাধ্যমে পরিচালনা করা হতো।

আরও খবর
ইউএনজিএ অধিবেশনে অংশ নিতে নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী
আগের প্রকল্প প্রশ্নবিদ্ধ, ফের জলাবদ্ধতায় বড় বরাদ্দ সিসিকের
জেলা পরিষদ নির্বাচন : উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদনে নিষেধাজ্ঞা
একদিনে রেকর্ড ৪৩৮ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি
জীবন বাজি রেখে কাজ করতে চাই : আইভী
হয়রানি বন্ধের দাবিতে আমরণ অনশনে ঢাবি শিক্ষার্থী হাসনাত
যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে গলা কেটে খুন, স্বামীর যাবজ্জীবন
গায়ে গরম চা ঢেলে নির্যাতনের অভিযোগ ইডেন ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে
রংপুরে তথ্য অধিকার আইন মানছে না পুলিশ
লাম্পি স্কিন রোগে লাখ লাখ গরু আক্রান্ত, মারাও যাচ্ছে
‘বিএনপি নেতাদের বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে যুবলীগ-ছাত্রলীগ’
যশোর থেকে চুরি হওয়া ১৫৩ বস্তা চাল পাবনায় উদ্ধার
‘চারটি বড় ঝুঁকির মুখে বিশ্ব অর্থনীতি’

বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৫ আশ্বিন ১৪২৯ ২৩ সফর ১৪৪৪

শেয়ারবাজার কারসাজি

সাকিব দুদকের শুভেচ্ছাদূত থাকা নিয়ে বিতর্ক

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

জুয়াড়ি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির রেশ কাটতে না কাটতেই এবার শেয়ারবাজার কারসাজিতে জড়িত বিতর্কে জড়িয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিটেদ দলের টি-২০ ও টেস্ট দলের অধিনায়কের শাকিব আল হাসান। সম্প্রতি খবর বের হয় শেয়ার মার্কেটে কারসাজি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার নেপথ্যে সাকিব আল হাসানের কোম্পানি মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেড জড়িত। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্চের অনুসন্ধানে শেয়ার বাজারে কারসাজিতেও সাকিবের প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে আসে। এরপর বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয় শেয়ারবাজারে।

শেয়ারবাজার কারসাজিতে নাম আসায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) শুভেচ্ছাদূত থাকবে কি না তা নিয়ে দ্বিধায় পড়েছে কমিশন। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কমিশনে আলোচনা চলছে।

দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসে গতকাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ত্রিকেটার সাকিবের বিষয়ে যেকোন সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। দুদক সচিব বলেন, ‘২০১৮ সালে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে দুদকের যে চুক্তি হয়েছিল তা সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে। এছাড়া আমাদের হটলাইন-১০৬ উদ্বোধনকালেও তার সঙ্গে কাজ করা হয়। এরপর দীর্ঘদিন তার সঙ্গে কোন কার্যক্রম হয়নি’। তিনি আরও বলেন, ‘অভিযোগ এলেই তো সঙ্গে সঙ্গে কোন কিছু হয় না। একটু সময় দেন। আপনারা যেটা বললেন সে বিষয়টি প্রয়োজনে কমিশন দেখবে, সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে’।

এর আগে কারাতে ফেডারেশনের সভাপতি ও দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘সাকিবের বিষয়ে এখনই কোন মন্তব্য করা যাচ্ছে না। আমরা কমিশনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, ক্রিকেটার সাকিব বিশ্বসেরা খেলোয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের সবচেয়ে দামি ও ভালো খেলোয়ার। বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশে সাকিবের ভক্ত, শুভাকাক্সক্ষী রয়েছে। এসব কারণে সাকিবকে দুদকের শুভেচ্ছা দূত করা হয়। হটলাইনে অভিযোগের ভিত্তিতে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম কিভাবে ঘুষ, দুর্নীতির বিষয়ে অভিযানে যায়, তা নিয়ে সাকিবকে দিয়ে একটি ডকুমেন্টারি করা হয়। যা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন টেলিভিশনে দেখানো হয়ে থাকে। এসবের কারণে দুদক জনপ্রিয় হিসেবে সাকিবকে বেছে নিয়েছে। এখন যদি তার বিরুদ্ধে শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারীতে নাম আসে তাহলে এমন ব্যক্তি দুদকের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে থাকলে তা বিতর্ক তৈরি করতে পারে। অভিযোগ সত্য হলে দুদক হয়তো তার সঙ্গে সব ধরনের চুক্তি বাতিল করতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাকিব আলোচিত ‘শেয়ার কারসাজির হোতা’ বলে অভিযুক্ত সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবুল খায়ের হিরোর সঙ্গে শেয়ার কারসাজি করেছেন বলে অভিযোগ উঠে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তদন্তে ওইসব কারসাজির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট শেয়ারগুলোর শীর্ষ ক্রেতার নামের তালিকায় সাকিবের নাম পায়। সম্প্রতি এমন সাত কারসাজির ঘটনায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা জরিমানা করে যে আদেশ দিয়েছে, তার চারটিতে তদন্তের সময়ে শীর্ষ শেয়ার কেনাবেচাকারীর নামের তালিকায় ক্রিকেটার সাকিব এবং তার মালিকানাধীন ব্রোকারেজে হাউসের নাম উঠে এসেছে। যেসব শেয়ার কারসাজির ঘটনায় সাকিব আল হাসানের নাম এসেছে, সেগুলো হলো ওয়ান ব্যাংক, ফরচুন সুুজ এবং এনআরবিসি ব্যাংক। এসব কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি হয়েছিল গত বছর। এ বছরের শুরুতে তথ্য প্রযুক্তি খাতের কোম্পানি বিডি কম অনলাইনের কারসাজির ঘটনায় শীর্ষ ক্রেতার তালিকায় ছিল ব্রোকারেজ হাউস মোনার্ক হোল্ডিংস। এ ব্রোকারেজ হাউসের মালিকানায় সাকিব ছাড়াও যৌথভাবে আছেন হিরোর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে শুধু সাকিব নন, কারসাজি চক্রের অংশ হিসেবে আবুল খায়ের হিরো, বেসরকারি ব্যাংক এনআরবিসি, ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেনেপ ইনফোসিস, ফরচুন সুজ এবং সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসসহ আরও অনেকের নাম এসেছে। শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোনার্ক হোল্ডিংস ছাড়াও মোনার্ক মার্ট নামক ই-কমার্স সাইটের হিরোর ব্যবসায়িক পার্টনার সাকিব আল হাসান। নিজে কোন শেয়ার কেনাবেচা না করে তার হয়ে ব্যবসায়িক পার্টনার হিরোর মাধ্যমে কিনতেন। সাকিবের বিও একাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে বেচাকেনা সবকিছু হিরুর মাধ্যমে পরিচালনা করা হতো।