লাম্পি স্কিন রোগে লাখ লাখ গরু আক্রান্ত, মারাও যাচ্ছে

আতঙ্কে ক্ষুদ্র গরু খামারিরা, চিকিৎসায় জেলায় জেলায় গাইডলাইন -মন্ত্রণালয়

মশা ও মাছি থেকে গরুর লাম্পি স্কিন রোগ হচ্ছে। ভাইরাসবাহী এই রোগে আক্রান্ত গরুর শরীরে জ্বর, ব্যথা ও গুটি বসন্তের মতো ফুলে যায়। আবার ক্ষতের সৃষ্টি হয়।

দেশের অনেক জেলায় এ রোগ দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে খামারিরা বিপাকে আছেন। তবে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর থেকে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসায় জেলা ও উপজেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত পশু ডাক্তারদেরকে গাইডলাইন দেয়া হয়েছে।

এছাড়াও আক্রান্ত এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ভ্যাক্সিন বা টিকা সরবরাহ করা শুরু হয়েছে। বেশি দরকার হলে টিকা আমদানি করা হবে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে আক্রান্ত ও মৃত্যু গরুর সঠিক তথ্য জানা যায়নি।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় খামারিদের গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজ বা এলএসডিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এটা একটি ভাইরাসবাহিত চর্মরোগ। যা গরু খামারিদের মারাত্মক ক্ষতি করে।

আফ্রিকায় এ রোগে মহামারী আকার দেখা গেলেও বাংলাদেশে এ রোগের মহামারী কখনো দেখা যায়নি। তবে গরুর খামারকে অর্থনৈতিকভাবে ধসিয়ে দেয়ার জন্য গরুর অন্য রোগের চেয়ে এ রোগ অনেক বেশি মারাত্মক হিসেবে ধরা হয়।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের একজন উপ-পরিচালক জানান, এ রোগ আগে আফ্রিকায় ছিল। ২০১৯ সালে প্রথম বাংলাদেশে দেখা দেয়। ওই সময় চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় খামারের গরুতে এই রোগ দেখা দেয়। বাংলাদেশের আবহাওয়া বর্তমানে মশা ও মাছির উপদ্রব বাড়ার জন্য উপযোগী। আর শীত মৌসুমে এ রোগ কিছুটা কমে যায়।

রোগের লক্ষণ : এই রোগে আক্রান্ত গরুর শরীরে প্রথমে জ্বর হয়। এরপর গায়ে ব্যথা হয়, শরীর ফুলে যায়। ক্ষত সৃষ্টি হয়। শরীরে গুটি গুটি বসন্তের মতো দেখা যায়। গরুর খাবারের রুচি কমে যায়। জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে মুখ ও নাক দিয়ে লালা বের হয়। পা ফুলে যায়। সামনের দুই পায়ের মাঝখানে পানি জমে যায়। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চামড়া পি- আকৃতি ধারণ করে। লোম উঠে যায়। ক্ষত শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষত মুখের মধ্যেও হয়। এতে গরুর পানি পানে অনীহা দেখা দেয়। এটা গরু থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগের বাহক মশা ও মাছি।

অন্য কীটপতঙ্গের মাধ্যমেও ভাইরাসটি আক্রান্ত গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়ায়। আক্রান্ত গরুর দুধ থেকে গরুর বাছুরও আক্রান্ত হয়। আর আক্রান্ত গরুকে ইনজেকশন দিয়ে সে ইনজেকশন অন্য গরুতে ব্যবহার করলে তাতেও রোগ ছড়ায়।

গতকাল সন্ধ্যায় ঝিনাইদাহের শৈলকুপা এলাকার একজন পশু ডাক্তার মুঠোফোনে জানান, গতকাল সন্ধ্যায়ও তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা করেছেন। একটি উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা আছে।

সেখানে কম-বেশি প্রায় ৫ লাখ গরু থাকলে তার মধ্যে ২ লাখ গরু আক্রান্ত। আক্রান্ত গরুর মধ্যে শতকরা ২ ভাগ গরু মারা যাচ্ছে। অন্যগুলোর অবস্থাও কাহিল।

ইতোমধ্যে স্থানীয় একটি গ্রামে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪টি গরু মারা গেছে। ভাইরাসে আক্রান্ত গরুতে ইনফেকশান দেখা দিলে সমস্যা হয়। তিনি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা করছেন।

এ দিকে শৈলকুপা পৌরসভার খামারি সাদেকুর রহমান মুঠোফোনে জানান, তার একটি গরু। দাম এক লাখ টাকার বেশি হবে। গত এক সপ্তাহ ধরে গরুটি আক্রান্ত। তার মতো আরও অনেকের গরু একই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এভাবে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিচ্ছিন্ন ভাবে এই ভাইরাসে অনেক খামারিদের গরু আক্রান্ত হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, গরু আক্রান্ত হচ্ছে। খামারিদের আতঙ্কিত না হয়ে লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা দেয়া দরকার। আর অপচিকিৎসা হলে গরু মৃত্যুও হতে পারে। সারাদেশের জেলা-উপজেলা ও কেন্দ্রীয় ভাবে পশু হাসপাতাল ও পশু চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। খামারিরা দ্রুত পশু ডাক্তারের কাছে গিয়ে গরুর চিকিৎসার গাইডলাইন নিতে পারেন।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য মতে, গরুর চিকিৎসার পাশাপাশি সুস্থ গরু যাতে আক্রান্ত না হয় তার জন্য টিকা দেয়া হচ্ছে। টিকা দিলে আর আক্রান্ত হবে না বলে পশু ডাক্তাররা মনে করেন। যার কারণে টিকা বা ভ্যাক্সিনের চাহিদা বাড়ছে। এদিকে খামারিদের সচেতন ও সতর্ক হওয়ার জন্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নতুন এ রোগের চিকিৎসায় গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে।

এ সম্পর্কে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ডিজির সঙ্গে মুঠোফোনে (মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া নম্বরে) বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এমনকি তার মোবাইলে পরিচয় দিয়ে ম্যাসেজ পাঠানো হয়েছে, তাতেও পাওয়া যায়নি। তাই তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

আরও খবর
ইউএনজিএ অধিবেশনে অংশ নিতে নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী
আগের প্রকল্প প্রশ্নবিদ্ধ, ফের জলাবদ্ধতায় বড় বরাদ্দ সিসিকের
সাকিব দুদকের শুভেচ্ছাদূত থাকা নিয়ে বিতর্ক
জেলা পরিষদ নির্বাচন : উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদনে নিষেধাজ্ঞা
একদিনে রেকর্ড ৪৩৮ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি
জীবন বাজি রেখে কাজ করতে চাই : আইভী
হয়রানি বন্ধের দাবিতে আমরণ অনশনে ঢাবি শিক্ষার্থী হাসনাত
যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে গলা কেটে খুন, স্বামীর যাবজ্জীবন
গায়ে গরম চা ঢেলে নির্যাতনের অভিযোগ ইডেন ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে
রংপুরে তথ্য অধিকার আইন মানছে না পুলিশ
‘বিএনপি নেতাদের বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে যুবলীগ-ছাত্রলীগ’
যশোর থেকে চুরি হওয়া ১৫৩ বস্তা চাল পাবনায় উদ্ধার
‘চারটি বড় ঝুঁকির মুখে বিশ্ব অর্থনীতি’

বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৫ আশ্বিন ১৪২৯ ২৩ সফর ১৪৪৪

লাম্পি স্কিন রোগে লাখ লাখ গরু আক্রান্ত, মারাও যাচ্ছে

আতঙ্কে ক্ষুদ্র গরু খামারিরা, চিকিৎসায় জেলায় জেলায় গাইডলাইন -মন্ত্রণালয়

বাকী বিল্লাহ

মশা ও মাছি থেকে গরুর লাম্পি স্কিন রোগ হচ্ছে। ভাইরাসবাহী এই রোগে আক্রান্ত গরুর শরীরে জ্বর, ব্যথা ও গুটি বসন্তের মতো ফুলে যায়। আবার ক্ষতের সৃষ্টি হয়।

দেশের অনেক জেলায় এ রোগ দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে খামারিরা বিপাকে আছেন। তবে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর থেকে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসায় জেলা ও উপজেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত পশু ডাক্তারদেরকে গাইডলাইন দেয়া হয়েছে।

এছাড়াও আক্রান্ত এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ভ্যাক্সিন বা টিকা সরবরাহ করা শুরু হয়েছে। বেশি দরকার হলে টিকা আমদানি করা হবে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে আক্রান্ত ও মৃত্যু গরুর সঠিক তথ্য জানা যায়নি।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় খামারিদের গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজ বা এলএসডিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এটা একটি ভাইরাসবাহিত চর্মরোগ। যা গরু খামারিদের মারাত্মক ক্ষতি করে।

আফ্রিকায় এ রোগে মহামারী আকার দেখা গেলেও বাংলাদেশে এ রোগের মহামারী কখনো দেখা যায়নি। তবে গরুর খামারকে অর্থনৈতিকভাবে ধসিয়ে দেয়ার জন্য গরুর অন্য রোগের চেয়ে এ রোগ অনেক বেশি মারাত্মক হিসেবে ধরা হয়।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের একজন উপ-পরিচালক জানান, এ রোগ আগে আফ্রিকায় ছিল। ২০১৯ সালে প্রথম বাংলাদেশে দেখা দেয়। ওই সময় চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় খামারের গরুতে এই রোগ দেখা দেয়। বাংলাদেশের আবহাওয়া বর্তমানে মশা ও মাছির উপদ্রব বাড়ার জন্য উপযোগী। আর শীত মৌসুমে এ রোগ কিছুটা কমে যায়।

রোগের লক্ষণ : এই রোগে আক্রান্ত গরুর শরীরে প্রথমে জ্বর হয়। এরপর গায়ে ব্যথা হয়, শরীর ফুলে যায়। ক্ষত সৃষ্টি হয়। শরীরে গুটি গুটি বসন্তের মতো দেখা যায়। গরুর খাবারের রুচি কমে যায়। জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে মুখ ও নাক দিয়ে লালা বের হয়। পা ফুলে যায়। সামনের দুই পায়ের মাঝখানে পানি জমে যায়। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চামড়া পি- আকৃতি ধারণ করে। লোম উঠে যায়। ক্ষত শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষত মুখের মধ্যেও হয়। এতে গরুর পানি পানে অনীহা দেখা দেয়। এটা গরু থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগের বাহক মশা ও মাছি।

অন্য কীটপতঙ্গের মাধ্যমেও ভাইরাসটি আক্রান্ত গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়ায়। আক্রান্ত গরুর দুধ থেকে গরুর বাছুরও আক্রান্ত হয়। আর আক্রান্ত গরুকে ইনজেকশন দিয়ে সে ইনজেকশন অন্য গরুতে ব্যবহার করলে তাতেও রোগ ছড়ায়।

গতকাল সন্ধ্যায় ঝিনাইদাহের শৈলকুপা এলাকার একজন পশু ডাক্তার মুঠোফোনে জানান, গতকাল সন্ধ্যায়ও তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা করেছেন। একটি উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা আছে।

সেখানে কম-বেশি প্রায় ৫ লাখ গরু থাকলে তার মধ্যে ২ লাখ গরু আক্রান্ত। আক্রান্ত গরুর মধ্যে শতকরা ২ ভাগ গরু মারা যাচ্ছে। অন্যগুলোর অবস্থাও কাহিল।

ইতোমধ্যে স্থানীয় একটি গ্রামে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪টি গরু মারা গেছে। ভাইরাসে আক্রান্ত গরুতে ইনফেকশান দেখা দিলে সমস্যা হয়। তিনি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা করছেন।

এ দিকে শৈলকুপা পৌরসভার খামারি সাদেকুর রহমান মুঠোফোনে জানান, তার একটি গরু। দাম এক লাখ টাকার বেশি হবে। গত এক সপ্তাহ ধরে গরুটি আক্রান্ত। তার মতো আরও অনেকের গরু একই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এভাবে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিচ্ছিন্ন ভাবে এই ভাইরাসে অনেক খামারিদের গরু আক্রান্ত হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, গরু আক্রান্ত হচ্ছে। খামারিদের আতঙ্কিত না হয়ে লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা দেয়া দরকার। আর অপচিকিৎসা হলে গরু মৃত্যুও হতে পারে। সারাদেশের জেলা-উপজেলা ও কেন্দ্রীয় ভাবে পশু হাসপাতাল ও পশু চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। খামারিরা দ্রুত পশু ডাক্তারের কাছে গিয়ে গরুর চিকিৎসার গাইডলাইন নিতে পারেন।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য মতে, গরুর চিকিৎসার পাশাপাশি সুস্থ গরু যাতে আক্রান্ত না হয় তার জন্য টিকা দেয়া হচ্ছে। টিকা দিলে আর আক্রান্ত হবে না বলে পশু ডাক্তাররা মনে করেন। যার কারণে টিকা বা ভ্যাক্সিনের চাহিদা বাড়ছে। এদিকে খামারিদের সচেতন ও সতর্ক হওয়ার জন্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নতুন এ রোগের চিকিৎসায় গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে।

এ সম্পর্কে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ডিজির সঙ্গে মুঠোফোনে (মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া নম্বরে) বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এমনকি তার মোবাইলে পরিচয় দিয়ে ম্যাসেজ পাঠানো হয়েছে, তাতেও পাওয়া যায়নি। তাই তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।