ই-বর্জ্যরে ঝুঁকি

দেশে উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে বাতিল ইলেকট্রনিক যন্ত্র থেকে সৃষ্ট বর্জ্য বা ই-বর্জ্যরে পরিমাণ। এ থেকে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ দূষণ। এই বিপদ থেকে বাঁচার উপায় হলো ই-বর্জ্যরে নিরাপদ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্ব্যবহার। কিন্তু দেশে এ পর্যস্ত ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কোন নীতিমালা গ্রহণ করা হয়নি।

মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির উৎকর্ষতা বাড়ছে। দেশে গত ১০ বছরে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ গুণ। কিন্তু এ উৎকর্ষতা অভিশাপ বয়ে আনছে ই-বর্জ্য সৃষ্টি ও যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্ব্যবহারের অভাবে। বেসরকারি সংস্থা এনভাইরনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশনের (ইএসডিও) গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর দেশে প্রায় ৪ লাখ টন ই-বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে। ২০২৩ সালে এই ই-বর্জ্যরে পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১২ লাখ টন।

প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহারের পর ফেলে দেয়া হচ্ছে ডাস্টবিনে। ফলে সেগুলো মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। তাই ই-বর্জ্যকে জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম একটি কারণ হিসেবে দেখা হয়। অটিজম ও মানসিক বিকাশ না হওয়ার একটি কারণও এটি। ই-বর্জ্য বাচ্চাদের মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলছে। মায়েদের স্তনের ক্ষতি হচ্ছে। সিসা ও পারদের মতো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পদার্থ খোলা জায়গায় ফেলে রাখায় দরুন ত্বকের বিভিন্ন রোগ এবং পরবর্তী পর্যায়ে কিডনি, ফুসফুস ও ব্রেনের মারাত্মক ক্ষতি করে এসব উপাদান। উন্মুক্ত জায়গায় ই-বর্জ্য পোড়ানো কিংবা অনিরাপদ ব্যবস্থাপনায় শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।

বুয়েটের একটি গবেষণা বলছে, মোবাইল টাওয়ার থেকে শুরু করে শিশুদের খেলনা, দেশে ই-বর্জ্যের উৎস কমপক্ষে ১৫টি। এসব উৎস বর্জ্য পুনঃপ্রক্রিয়ায় স্বর্ণ, রূপা, প্যালাডিয়ামসহ নানা ধরনের মূল্যবান ধাতু পাওয়া সম্ভব। এমনকি মিলতে পারে অতিমূল্যবান প্লাটিনামও। ফলে ই-বর্জ্যে রয়েছে বাণিজ্যের অপার সম্ভাবনা।

বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) তথ্যানুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় চার কোটি মোবাইল ফোন আমদানি হচ্ছে। এক বছর পরপর মানুষ মোবাইল পরিবর্তন করে। এ ক্ষেত্রে ই-বর্জ্য তৈরি হয়। এগুলো বেশি দামে কিনলে গ্রাহকেরাও বিক্রি করতে আগ্রহ দেখাবে। এ জন্য প্রয়োজন, দেশের প্রধান প্রধান শহরগুলো দিয়ে শুরু করে পর্যায়ক্রমে সারা দেশে নির্দিষ্ট স্পটে ই-বর্জ্য সংগ্রহ শুরু করা হবে। এজন্য বিটিআরসিসহ সরকারি সংস্থাগুলোর যেমন উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন, একইভাবে প্রযুক্তি নিয়ে কাজ বেসকরি ব্যবসায়িক ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোরও এগিয়ে আসা উচিত।

ই-বর্জ্য পুনর্ব্যবহারে নিরাপদ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না হলে শুধু পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা না, এতে করে অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক দিক থেকেও ক্ষতি হচ্ছে। যেমন একটি স্মার্টফোন তৈরিতেই পিরিয়ডিক টেবিলের অর্ধেকের বেশি পদার্থ ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে অনেক ধাতু আছে বিরল, একসময় নিঃশেষ হয়ে যাবে। নিয়ম না মেনে চললে এই ধাতুগুলোর পুনরুদ্ধার সম্ভব হয় না।

মুহাম্মদ মিজানুর রহমান

বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৫ আশ্বিন ১৪২৯ ২৩ সফর ১৪৪৪

ই-বর্জ্যরে ঝুঁকি

image

দেশে উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে বাতিল ইলেকট্রনিক যন্ত্র থেকে সৃষ্ট বর্জ্য বা ই-বর্জ্যরে পরিমাণ। এ থেকে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ দূষণ। এই বিপদ থেকে বাঁচার উপায় হলো ই-বর্জ্যরে নিরাপদ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্ব্যবহার। কিন্তু দেশে এ পর্যস্ত ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কোন নীতিমালা গ্রহণ করা হয়নি।

মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির উৎকর্ষতা বাড়ছে। দেশে গত ১০ বছরে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ গুণ। কিন্তু এ উৎকর্ষতা অভিশাপ বয়ে আনছে ই-বর্জ্য সৃষ্টি ও যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্ব্যবহারের অভাবে। বেসরকারি সংস্থা এনভাইরনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশনের (ইএসডিও) গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর দেশে প্রায় ৪ লাখ টন ই-বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে। ২০২৩ সালে এই ই-বর্জ্যরে পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১২ লাখ টন।

প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহারের পর ফেলে দেয়া হচ্ছে ডাস্টবিনে। ফলে সেগুলো মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। তাই ই-বর্জ্যকে জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম একটি কারণ হিসেবে দেখা হয়। অটিজম ও মানসিক বিকাশ না হওয়ার একটি কারণও এটি। ই-বর্জ্য বাচ্চাদের মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলছে। মায়েদের স্তনের ক্ষতি হচ্ছে। সিসা ও পারদের মতো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পদার্থ খোলা জায়গায় ফেলে রাখায় দরুন ত্বকের বিভিন্ন রোগ এবং পরবর্তী পর্যায়ে কিডনি, ফুসফুস ও ব্রেনের মারাত্মক ক্ষতি করে এসব উপাদান। উন্মুক্ত জায়গায় ই-বর্জ্য পোড়ানো কিংবা অনিরাপদ ব্যবস্থাপনায় শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।

বুয়েটের একটি গবেষণা বলছে, মোবাইল টাওয়ার থেকে শুরু করে শিশুদের খেলনা, দেশে ই-বর্জ্যের উৎস কমপক্ষে ১৫টি। এসব উৎস বর্জ্য পুনঃপ্রক্রিয়ায় স্বর্ণ, রূপা, প্যালাডিয়ামসহ নানা ধরনের মূল্যবান ধাতু পাওয়া সম্ভব। এমনকি মিলতে পারে অতিমূল্যবান প্লাটিনামও। ফলে ই-বর্জ্যে রয়েছে বাণিজ্যের অপার সম্ভাবনা।

বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) তথ্যানুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় চার কোটি মোবাইল ফোন আমদানি হচ্ছে। এক বছর পরপর মানুষ মোবাইল পরিবর্তন করে। এ ক্ষেত্রে ই-বর্জ্য তৈরি হয়। এগুলো বেশি দামে কিনলে গ্রাহকেরাও বিক্রি করতে আগ্রহ দেখাবে। এ জন্য প্রয়োজন, দেশের প্রধান প্রধান শহরগুলো দিয়ে শুরু করে পর্যায়ক্রমে সারা দেশে নির্দিষ্ট স্পটে ই-বর্জ্য সংগ্রহ শুরু করা হবে। এজন্য বিটিআরসিসহ সরকারি সংস্থাগুলোর যেমন উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন, একইভাবে প্রযুক্তি নিয়ে কাজ বেসকরি ব্যবসায়িক ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোরও এগিয়ে আসা উচিত।

ই-বর্জ্য পুনর্ব্যবহারে নিরাপদ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না হলে শুধু পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা না, এতে করে অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক দিক থেকেও ক্ষতি হচ্ছে। যেমন একটি স্মার্টফোন তৈরিতেই পিরিয়ডিক টেবিলের অর্ধেকের বেশি পদার্থ ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে অনেক ধাতু আছে বিরল, একসময় নিঃশেষ হয়ে যাবে। নিয়ম না মেনে চললে এই ধাতুগুলোর পুনরুদ্ধার সম্ভব হয় না।

মুহাম্মদ মিজানুর রহমান