যখন বৃষ্টিতে ভিজতে চেয়েছি
আষাঢ়, শ্রাবণ আমার দুই প্রেমিক
কথা দিয়েছিল, বৃষ্টিতে সাজিয়ে দেবে হাত।
সে আমার সকালবেলার গল্প
তারপর দুপুর গড়িয়ে বিকেল নেমেছে
বৃষ্টিতে ভেজা হয়নি আর।
এক তীব্র মধাহ্নে
আকাশ আবৃত করে জমেছিল মেঘ
নেমে এসে ছিল আদিম দেবতা আকোটাংকা।
কিন্তু সূর্যদেব আমন-রা এসে
বাড়িয়ে দিলেন সুপ্রাচীন বর্শা।
আকোটাংকা সেই যে চলে গেল, আর ফেরেনি।
আমি যখনি বৃষ্টিতে ভিজতে চেয়েছি
রোদ্দুর বিছিয়ে দিয়েছে তার ঝলমলে চাদর
মেঘবালকের দল ফিরে গেছে মুখ ভার করে।
আহা, বলছি তো, রোদ্দুরকে ভালোবাসি আমি
তাই বলে একদিনও বৃষ্টিতে পাখা ছড়িয়ে দেবো না
তা কি হয়।
তৃষ্ণার জন্য কফি হাউজে অপেক্ষা
(উৎসর্গ: বন্ধু কবি তৃষ্ণা বসাক)
আমরা অপেক্ষা করে আছি ধূমায়িত কফির কাপের
আমরা অপেক্ষা করে আছি নুহের প্লাবন ডাকা বৃষ্টির।
স্থবির উত্তাপ আমাদের গ্রাস করেছে আপাদমস্তক
আমরা আমাদের উত্তপ্ত মনন জুড়োতে এসেছি
অথবা আমাদের সম্পর্ককে উষ্ণ করতে।
কফি হাউজে চিরদিনই তুমি উষ্ণতার স্বাদ পাবে
অবশ্য যদি তুমি সে স্বাদ চাও।
কফি হাউজ তোমাকে হয়তো শীতলও করতে পারে
যদি তোমার ধমনীতে
শরীর প্রবাহের আকাক্সক্ষা থাকে।
আমরা অপেক্ষা করছি এক রমণীয় আগ্নেয়গিরির
যিনি কখনও কখনও আইসক্রিম
আবার কখনও চিকেন চাওমিন।
অথবা এ দুটি মুখোশ তুলে রেখে
তিনি এক সরল মানবীর নির্ভেজাল অন্তঃকরণ মুঠোয় নিয়ে
চুপচাপ হেঁটে যান কলেজ স্ট্রিট ধরে।
কসম অপরাহ্ণ বেলার
কসম অপরাহ্ণ বেলার
জীবনের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে
চিরন্তন খুঁজেছি তোমাকে।
রোদজ্বলা খুব দূর শূন্য ডাঙা এক
নাওডোবা গ্রাম, পুরনো মফস্বল শহরের প্রান্ত ছুঁয়ে
পরিত্যক্ত রেলপথ।
অথবা চাতাল হাইয়ুক, আদিম গ্রামের প্রেম
প্রভুভক্ত প্রথম কুকুর
সুমেরিয়া, অগ্নিকু- ঘিরে
কোন নিবিড় সন্ধ্যায়, নিনেভা নগরে
অতি বৃদ্ধ কথকের কণ্ঠে
গিলগামেশের বীরগাথা শুনতে শুনতে
তোমাকেই দেখেছি রাত্রির আকাশে।
কর্নওয়ালে, কেল্টিক ডাইনীর চোখের তারায়
ঝলকায় কন্যারাশির পরম কুমারী।
আমি এক অন্ধ উঁই
নিশ্চিত বিনাশ জেনে
স্মিত হেসে ঝাঁপ দিই উজ্জ্বল আনন্দে।
আর্যাবর্তে আদিম গ্রামের পথে, নিভৃত আশ্রমে
নবান্ন উৎসবে ফিরে আসে পূর্বজন্ম
দশ হাজার বছর পরে আবার জন্মেছি আমি
ফসলের গান ভালোবেসে।
বিস্মরণ আপেক্ষিক
সীমানার ওপারে মহাশূন্যের শ্বাশত নীরবতা
সত্য শুধু অপরাহ্ণ বেলা
আরেকবার বলি,
চিরন্তন, খুঁজেছি তোমাকে।
চিরায়ত আশা ভৈরবী
বাসনায় কেবল তোমার তীব্র প্রতিচ্ছবি।
এখনও ডুব সাঁতারের কী অনিবার্য মোহ!
এখনও সর্প বিষে লখিন্দর মুদ্রিত নয়ন।
যবনীর আলিঙ্গনে এখনও অবরুদ্ধ জয়চন্দ্র।
যে করুণ দীর্ঘশ্বাস বয়ে আসে অশনি নরক থেকে
তার তাপে ভিজে যায় দেহ।
এখনও জ্বরের নেশায় দৃশ্যমান তোমার দেহের ঘ্রাণ
বিগত জন্মের অস্পষ্ট সংগম নিয়ে আসে।
এখনও স্তেপভূমি, ডেড সি লিপিকা, চাতাল হায়ুক, মিং পোর্সেলিন
উসকে দেয় ভিন্নতর স্মৃতি।
আদিম জলের যুগ, বৈবস্বত মনু, নুহের প্লাবনে মগ্ন যাবতীয় পাপ
সেই ঊষাযুগ থেকে অপরাহ্ণ একুশ শতক
মহামারি, অন্তিম শয়ানে বিশ্ব
পাশ ফিরে শুয়ে আছে বধির বিধাতা
ক্ষীয়মান জীবনের শিথিল তন্তুতে তবু মিলনের আর্ত তৃষ্ণা
দেখা হবে, একদিন, ঠিক দেখা হবে
কাফনের ভাঁজে বাজে শ্বাশত আশা ভৈরবী।
বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৬ আশ্বিন ১৪২৯ ২৪ সফর ১৪৪৪
যখন বৃষ্টিতে ভিজতে চেয়েছি
আষাঢ়, শ্রাবণ আমার দুই প্রেমিক
কথা দিয়েছিল, বৃষ্টিতে সাজিয়ে দেবে হাত।
সে আমার সকালবেলার গল্প
তারপর দুপুর গড়িয়ে বিকেল নেমেছে
বৃষ্টিতে ভেজা হয়নি আর।
এক তীব্র মধাহ্নে
আকাশ আবৃত করে জমেছিল মেঘ
নেমে এসে ছিল আদিম দেবতা আকোটাংকা।
কিন্তু সূর্যদেব আমন-রা এসে
বাড়িয়ে দিলেন সুপ্রাচীন বর্শা।
আকোটাংকা সেই যে চলে গেল, আর ফেরেনি।
আমি যখনি বৃষ্টিতে ভিজতে চেয়েছি
রোদ্দুর বিছিয়ে দিয়েছে তার ঝলমলে চাদর
মেঘবালকের দল ফিরে গেছে মুখ ভার করে।
আহা, বলছি তো, রোদ্দুরকে ভালোবাসি আমি
তাই বলে একদিনও বৃষ্টিতে পাখা ছড়িয়ে দেবো না
তা কি হয়।
তৃষ্ণার জন্য কফি হাউজে অপেক্ষা
(উৎসর্গ: বন্ধু কবি তৃষ্ণা বসাক)
আমরা অপেক্ষা করে আছি ধূমায়িত কফির কাপের
আমরা অপেক্ষা করে আছি নুহের প্লাবন ডাকা বৃষ্টির।
স্থবির উত্তাপ আমাদের গ্রাস করেছে আপাদমস্তক
আমরা আমাদের উত্তপ্ত মনন জুড়োতে এসেছি
অথবা আমাদের সম্পর্ককে উষ্ণ করতে।
কফি হাউজে চিরদিনই তুমি উষ্ণতার স্বাদ পাবে
অবশ্য যদি তুমি সে স্বাদ চাও।
কফি হাউজ তোমাকে হয়তো শীতলও করতে পারে
যদি তোমার ধমনীতে
শরীর প্রবাহের আকাক্সক্ষা থাকে।
আমরা অপেক্ষা করছি এক রমণীয় আগ্নেয়গিরির
যিনি কখনও কখনও আইসক্রিম
আবার কখনও চিকেন চাওমিন।
অথবা এ দুটি মুখোশ তুলে রেখে
তিনি এক সরল মানবীর নির্ভেজাল অন্তঃকরণ মুঠোয় নিয়ে
চুপচাপ হেঁটে যান কলেজ স্ট্রিট ধরে।
কসম অপরাহ্ণ বেলার
কসম অপরাহ্ণ বেলার
জীবনের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে
চিরন্তন খুঁজেছি তোমাকে।
রোদজ্বলা খুব দূর শূন্য ডাঙা এক
নাওডোবা গ্রাম, পুরনো মফস্বল শহরের প্রান্ত ছুঁয়ে
পরিত্যক্ত রেলপথ।
অথবা চাতাল হাইয়ুক, আদিম গ্রামের প্রেম
প্রভুভক্ত প্রথম কুকুর
সুমেরিয়া, অগ্নিকু- ঘিরে
কোন নিবিড় সন্ধ্যায়, নিনেভা নগরে
অতি বৃদ্ধ কথকের কণ্ঠে
গিলগামেশের বীরগাথা শুনতে শুনতে
তোমাকেই দেখেছি রাত্রির আকাশে।
কর্নওয়ালে, কেল্টিক ডাইনীর চোখের তারায়
ঝলকায় কন্যারাশির পরম কুমারী।
আমি এক অন্ধ উঁই
নিশ্চিত বিনাশ জেনে
স্মিত হেসে ঝাঁপ দিই উজ্জ্বল আনন্দে।
আর্যাবর্তে আদিম গ্রামের পথে, নিভৃত আশ্রমে
নবান্ন উৎসবে ফিরে আসে পূর্বজন্ম
দশ হাজার বছর পরে আবার জন্মেছি আমি
ফসলের গান ভালোবেসে।
বিস্মরণ আপেক্ষিক
সীমানার ওপারে মহাশূন্যের শ্বাশত নীরবতা
সত্য শুধু অপরাহ্ণ বেলা
আরেকবার বলি,
চিরন্তন, খুঁজেছি তোমাকে।
চিরায়ত আশা ভৈরবী
বাসনায় কেবল তোমার তীব্র প্রতিচ্ছবি।
এখনও ডুব সাঁতারের কী অনিবার্য মোহ!
এখনও সর্প বিষে লখিন্দর মুদ্রিত নয়ন।
যবনীর আলিঙ্গনে এখনও অবরুদ্ধ জয়চন্দ্র।
যে করুণ দীর্ঘশ্বাস বয়ে আসে অশনি নরক থেকে
তার তাপে ভিজে যায় দেহ।
এখনও জ্বরের নেশায় দৃশ্যমান তোমার দেহের ঘ্রাণ
বিগত জন্মের অস্পষ্ট সংগম নিয়ে আসে।
এখনও স্তেপভূমি, ডেড সি লিপিকা, চাতাল হায়ুক, মিং পোর্সেলিন
উসকে দেয় ভিন্নতর স্মৃতি।
আদিম জলের যুগ, বৈবস্বত মনু, নুহের প্লাবনে মগ্ন যাবতীয় পাপ
সেই ঊষাযুগ থেকে অপরাহ্ণ একুশ শতক
মহামারি, অন্তিম শয়ানে বিশ্ব
পাশ ফিরে শুয়ে আছে বধির বিধাতা
ক্ষীয়মান জীবনের শিথিল তন্তুতে তবু মিলনের আর্ত তৃষ্ণা
দেখা হবে, একদিন, ঠিক দেখা হবে
কাফনের ভাঁজে বাজে শ্বাশত আশা ভৈরবী।