সম্পর্কের নাম টিকে থাকা

আদিত্য নজরুল

গেস্ট চেয়ারে বসে পেপার ওয়েটের রঙিন ডলফিন নেড়েচেড়ে দেখছেন সালাম কোরেসী। হোস্ট চেয়ারে এমডি সাহেব মনের অজান্তেই তরুণী মেয়েটির বক্ষে, নিতম্বে আলতো হাত বুলাচ্ছেন। রুমজুড়ে কেবল স্তব্ধতা। দুজনের মুখেই গভীর চিন্তার ভাঁজ। দু’জনেই সামনে ঝুকে আছে শান্ত দিঘির জলের উপর নুয়ে থাকা দুটি হিজল গাছের মতো। কারো মুখে কোনো কথা নেই। দুজনেই গভীর মগ্নতায় দুজনের ভেতর ডুবে আছেন।

হঠাৎ রুমে ঢুকলেন ফারজানা রুনু ম্যাম। দু’জনেকেই ইংগীত করে বলনেন এতো চিন্তা করে কোনো লাভ নেই। বরং একটি সুইটেবল কৌশল বের করুন। একটি শব্দবোমা বিষ্ফোরণে দুজনেই রুনু ম্যামের দিকে তাকাতে বাধ্য হলেন। রুনু ম্যাডাম লিজেন্ড কনস্ট্রাশন কোম্পানির প্রধান আরকিটেক্ট। সামলাচ্ছেন এইচ আর ডিপার্ডমেন্ট। সালাম কোরেসী সেলস এন্ড মার্কেটিং ডিপার্ডমেন্টর পরিচালক। জাহি মল্লিক কোম্পানির এমডি। ফারহানা রুনু, সালাম কোরেসী, জাহিদ মল্লিক তিনজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। স্বাধীনচেতা। ইউনিভার্সিটি জীবন শেষ করে তিনজন বিজনেস শুরু করেছিলো সেই ছোট্ট বিজনেস এখন কয়েশো কোটি টাকার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি। তিন বন্ধু যখন গালগল্পে মেতে ওঠে তখন ফারহানা রুনুকে বাকি দুই বন্ধু দুকুমি করে বলে, তুই আর্কিটেক বলে নিজের শরীরটাও এমন বাঙ্গময় করে বানিয়ে নিবি তা তো হয় না বন্ধু। তারপর হো হো করে হাসি।

আজ ব্যতিক্রম। তিনজনই বেশ চিন্তিত। রুনু ম্যাম একটি জরুরি ফাইল জাহিদ মল্লিকের টেবিলে দিয়েই রুম থেকে বের হয়ে যেতে যেতে বললো ঠিক আধা ঘণ্টা। এরই মধ্যে ফাইল ওয়ার্ক শেষ করে বের হতে হবে। মনে থাকে যেনো। রুনু ম্যাম রুম থেকে বের হচ্ছেন, ঠিক তখন দুজনেই তার পেছনে মুগ্ধতা নিয়ে তাকায়। দুই বন্ধুর চোখে চোখ পড়তেই মৃদু হাসি দিয়ে পূর্বের অবস্থানে ফিরে মগ্নতায় ডুবে যায় দুজন। বক্ষ, নিতম্বÑ। হঠাৎ মল্লিক সাহেবে হাতের আঙ্গুল যেনো তাকে বললোÑ থামো। কী করে এতক্ষণ একটি মেয়ের নিতম্বে এবং বুকে হাত বুলাচ্ছিল এই নিয়ে নিজে নিজেরই কাছে লজ্জা পায় মল্লিক।

নীরবতা ভেঙে এমডি সাহেব বন্ধু মল্লিকের আচরণ নিয়ে বলে ওঠে আচ্ছা দোস্ত বল তো এই ভাস্কর্যটি বিবাহিত না অবিবাহিত? সালাম কোরেসী একটু ধমক দিয়ে বলে, এই বেটা তুই না এতোক্ষণ মজা করে হাত বুলাচ্ছিলি গোপন সব জায়গাতে, তাহলে আমি কী করে বলবো এই ভাস্কর্য বিবাহিত না অবিবাহিত? তাছাড়া ভাষ্কর্য তো নারী নয় যে, সে সংসারী হবে। বিয়ে করবে।

মল্লিক হাসতে হাসতে বললো, গতবার যখন আইভি অস্ট্রেলিয়া থেকে এলো এই ভাষ্কর্যটি আমাকে উপহার দিয়ে যায়। ভাষ্কর্যটি হাতে তুলে দিয়ে বলেছিলো নিজেকে তো পরলাম না, নাও আমার প্রিয় এই ভাষ্কর্য তোমার হাতে তুলে দিয়ে গেলাম। যতেœ রেখো। এবং গোপনেও। যাবার সময় আমাকে সে ঠিক এই প্রশ্নটি করে ধাধার মধ্যে রেখে গেছে। এটি কি বিবাহিত নাকি অবিবাহিত?

আমি বলেছিলাম ভাষ্কর্য নারী নয় যে, সে বিয়ে করবে। আইভি আমার উত্তর শুনে বলেছিলো প্রত্যেক শিল্পীই একজন মডেল সামনে রেখে তার শিল্পকর্ম তৈরি করেন। মডেলটি বিবাহিত এবং অবিবাহিতও হতে পারে। এবং ভাষ্কর্যটি হলে সেই মডেলের প্রতিকৃতি।

সালাম কোরেসী ভরা কণ্ঠে মল্লিককে বলে, রাখ মিয়া তোমার আতলমী। টেনশনে বাঁচি না। এতো বড় টেন্ডার যদি হাতছাড়া হয়ে যায় তাহলে তোমার খবর আছে! টেন্ডার নিয়ে চিন্তা বাদ দিয়ে তুমি পড়ে আছো ভাষ্কর্য বিবাহিত না কি অবিবাহিত এই নিয়ে।

জাহিদ মল্লিক এবার হাসতে হাসতে বলেন, শালা তুই এর সঠিক জবাব দে, আমি তোর টেন্ডারের ব্যবস্থা করছি। শোন, প্রেম ছাড়া এই জাহিদ মল্লিকের হাত থেকে অন্য কিছুই ফসকে যেতে পারেনি। দোস্ত টেন্ডার হবে, টেন্ডারের আব্বাও হবে। একদম চিন্তা করিস না। এরই মধ্যে ত্রিশ মিনিট কখন কী করে কেটে গেলো দুজনের কেউই টের পায়নি।

রুনু ম্যাম মল্লিকের চেম্বারে ঢুকেই পরিবেশের একটু পরিবর্তন লক্ষ্য করলেন। হেঁয়ালি করে বললেন, মিঃ এমডি সাহেব হয়েছে আমার ফাইলটি? ম্যাডাম টু পাইস ছাড়া এই জাহিদ মল্লিক ফাইল ছাড়ে না, এটা কি আপনার জানা নেই। আসেন জনাবা ফাজানা ম্যাডাম... আসেন...। আগে টু-পাইস দেন। তারপর দেখি দিলে রহম-টহম হয়নি। হাসতে হাসতে রুনু ম্যাডাম সালাম কোরেসীর পাশের চেয়ারে বসলেন। একটু হেঁয়ালী করে জানতে চাইলেন একটু আগেই দেখলাম হমহম মেঘ ডাকছে। এখন দেখছি ফুরফুরে রোদ্দুর। বিষয়টা কী? কিছুই তো বুঝলাম না! ভাষ্কর্যটি রুনু ম্যাডামের হাতে দিয়ে বন্ধুত্বের চাওয়া থেকে মল্লিক বললো আচ্ছা দোস্ত ফারহানা রুনু ম্যাডাম বলেন তো, এই মেয়েটি কি বিবাহিত না অবিবাহিত?

রুনু আড় চোখে দুজনের দিকেই তাকিয়ে বললো, অফিসের কাজ রেখে ইয়ার্কি হচ্ছে না? ভাবীকে কি একটি ফোন দিবো? এবার জাহিদ মল্লিক হাসতে হাসতে বললো রুটি পোড়া ম্যাডামের ভয় দেখিয়ে সুন্দর মুহূর্তকে কেন ম্লান্ত করে দিতে চাচ্ছ জিরো ফিগারের ম্যাম! আমি কি তোর শত্রু? একজন জানতে চেয়েছিলো এটি বিহাহিত নাকি অবিবাহিত? আমি বলতে পারিনি। যেহেতু তুই নারী তাই জিজ্ঞেস করছি। জানলে উত্তর দিয়ে আমাকে একটু উদ্ধার কর। কথা দিচ্ছি তোদের টেন্ডারের দায়িত্ব আমার।

ফারহানা রুনু প্রশাসকের ভঙ্গিতে বললো, দয়া করে বলেন আপনারা আধা ঘণ্টা সময় ধরে এই গবেষণা কর্ম চালিয়ে যাচ্ছিলেন?

সালাম কোরেসী মাথা হেলিয়ে জবাব দিলেন, জ্বি ম্যডাম।

এমডি সাহেবের হাতের কোমল স্পর্শে ওই নারীর বক্ষ এবং নিতম্ব ধন্য হয়ে উঠেছে। রুনু ম্যাম ভাব নিয়ে বললেন এইচ আর ডিপার্ডমেন্ট এই কর্ম অবহেলা কোনো অবস্থাতেই মেনে নবে না।

জাহিদ মল্লিক রুনু ম্যাডামের দিকে দৃষ্টি তাক করেন, ম্যাডাম আপনি কি মনে করেন এই ভাষ্কর্যটি মডেল ছাড়া সৃষ্টি হয়েছে? আমি জানতে চাচ্ছি এর মডেল যদি বিবাহিত হয় তাহলে এও বিবাহিত এবং যদি অবিবাহিত হয় তাহলে এই ভাষ্কর্যটিও অবিবাহিত। আপনি কী বলেন ? রুনু ম্যাডাম দুজনকেই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন, আপনাদের বিবাহিত জীবনের বয়স কতো?

সালাম কোরেসী বললো ডিমেস্বরে ২০ বছর পূর্ণ হবে।

ভ্রু কুচকিয়ে মল্লিক সাহেবে দিকে রুনু ম্যাডাম তাকাতেই মল্লিক সাহেব বলছেন: এখানেও আমি সিনিয়র। জুনেই ২৩ বছর কেটে গেছে! ফারাহানা রুনু বিজ্ঞের সঙ্গে বললেন, ভাসস্কর্যটি বিবাহিত কিংবা অবিবাহিত আপনাদেরই জানা উচিত। অভিজ্ঞতা বলে একটি কথা আছে না?

রুনু তুই নারী হাতের ভাস্কর্যটাও নারী সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তোর কাছে জানতে চেয়েছি, বিবাহিত নাকি অবিবাহিত।

মিউ মিউ করিস না। পুরুষ মানুষের নেকামী একদম ভাল্লাগে না। যা আগে বাসায় যা। গিয়ে আজ রাতে দুজনেই তোদেও বউদের শরীরের কাঠামোর দিকে তাকাবি মনোযোগ দিয়ে। তাহলে বুঝতে পারবি ভাস্কর্যটি কুমারী নাকি বিবাহিত।

সারারাত সালাম কোরেসী এবং জাহিদ মল্লিক ভাস্কর্যের শরীরে ডুবে থাকেন। রাত গাঢ় হয়। অন্ধকারের ভেতর কোরেসী স্ত্রীর শরীরের বাঁকে তাকিয়ে কিছু একটা বুঝতে চান। কোরেসীর চোখে ভেসে ওঠে একটি মৃত নদীর রেখা। ক্লান্ত হয়ে শুয়ে আছেন জাহিদ মল্লিক। সকালেই সালাম কোরেসী এবং জাহিদ মল্লিক অফিসে পৌছে যান। পরস্পরের ব্যর্থতা দুজনের চোখেই ফুটে ওঠে। একটু পরই ফারহানা রুনু ভেজা চুল হাতে নাড়তে নাড়তে জাহিদ মল্লিকের রুমে ঢোকেন। সালাম কোরেসী কিছু একটা করার ব্যস্ততা দেখাচ্ছেন। স্তব্ধতা ভেঙ্গে ফারহানা রুনু ম্যাডাম বললেন, ভেরেন্ডাদ্বয় ভাস্কর্যটি বিবাহিত নাকি অবিবাহিত তার উত্তর পেয়েছেন?

ডানে বামে দুজনেই মাথা নাড়ালেন।

রুনু ম্যাডাম পেলব কণ্ঠে বলনেন, ভাষ্কর্যটি বিবাহিত। বিবাহিত নারীদের কোনো কোনো বিশেষ অংশ ভেঙে যায়। কোনো কোনো বিশেষ অংশে নদীর বুকের কাঁদার মতো মেদ জমে ওঠে। তার মানে সালাম কোরেসী প্রেম করে বিয়ে করলেও ভাবীকে প্রেমিক হিসেবে ভালোবাসতে পারেননি। শুধু সংসারটাই করে গেছেন। এমডি স্যার আপনি কেন পারলেন না বলেন তো? ফারহানা রুনু তাড়াহুড়া করে রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন।

সালাম কোরেসী জিরো ফিগারের ম্যাম বলে ফারহানাকে ডাকলেন। এবং জানতে চাইলেন মিঃ মাওলা কি ভাস্কর্যটি বিবাহিত নাকি অবিবাহিত তা বলেতেন পারতেন?

পেছন ফিরে ঠোঁট উল্টিয়ে ফারহানা রুনু ম্যাডাম দীর্ঘশ^াস ছেড়ে উত্তর দিলেন, প্রত্যেকটি পুরুষই প্রবল ক্ষুধায় আক্রান্ত এক ধরনের প্রাণী। যখন খেতে আসে তখন খেতেই থাকে। তার চোখ থাকে অন্ধ...

বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৬ আশ্বিন ১৪২৯ ২৪ সফর ১৪৪৪

সম্পর্কের নাম টিকে থাকা

আদিত্য নজরুল

গেস্ট চেয়ারে বসে পেপার ওয়েটের রঙিন ডলফিন নেড়েচেড়ে দেখছেন সালাম কোরেসী। হোস্ট চেয়ারে এমডি সাহেব মনের অজান্তেই তরুণী মেয়েটির বক্ষে, নিতম্বে আলতো হাত বুলাচ্ছেন। রুমজুড়ে কেবল স্তব্ধতা। দুজনের মুখেই গভীর চিন্তার ভাঁজ। দু’জনেই সামনে ঝুকে আছে শান্ত দিঘির জলের উপর নুয়ে থাকা দুটি হিজল গাছের মতো। কারো মুখে কোনো কথা নেই। দুজনেই গভীর মগ্নতায় দুজনের ভেতর ডুবে আছেন।

হঠাৎ রুমে ঢুকলেন ফারজানা রুনু ম্যাম। দু’জনেকেই ইংগীত করে বলনেন এতো চিন্তা করে কোনো লাভ নেই। বরং একটি সুইটেবল কৌশল বের করুন। একটি শব্দবোমা বিষ্ফোরণে দুজনেই রুনু ম্যামের দিকে তাকাতে বাধ্য হলেন। রুনু ম্যাডাম লিজেন্ড কনস্ট্রাশন কোম্পানির প্রধান আরকিটেক্ট। সামলাচ্ছেন এইচ আর ডিপার্ডমেন্ট। সালাম কোরেসী সেলস এন্ড মার্কেটিং ডিপার্ডমেন্টর পরিচালক। জাহি মল্লিক কোম্পানির এমডি। ফারহানা রুনু, সালাম কোরেসী, জাহিদ মল্লিক তিনজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। স্বাধীনচেতা। ইউনিভার্সিটি জীবন শেষ করে তিনজন বিজনেস শুরু করেছিলো সেই ছোট্ট বিজনেস এখন কয়েশো কোটি টাকার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি। তিন বন্ধু যখন গালগল্পে মেতে ওঠে তখন ফারহানা রুনুকে বাকি দুই বন্ধু দুকুমি করে বলে, তুই আর্কিটেক বলে নিজের শরীরটাও এমন বাঙ্গময় করে বানিয়ে নিবি তা তো হয় না বন্ধু। তারপর হো হো করে হাসি।

আজ ব্যতিক্রম। তিনজনই বেশ চিন্তিত। রুনু ম্যাম একটি জরুরি ফাইল জাহিদ মল্লিকের টেবিলে দিয়েই রুম থেকে বের হয়ে যেতে যেতে বললো ঠিক আধা ঘণ্টা। এরই মধ্যে ফাইল ওয়ার্ক শেষ করে বের হতে হবে। মনে থাকে যেনো। রুনু ম্যাম রুম থেকে বের হচ্ছেন, ঠিক তখন দুজনেই তার পেছনে মুগ্ধতা নিয়ে তাকায়। দুই বন্ধুর চোখে চোখ পড়তেই মৃদু হাসি দিয়ে পূর্বের অবস্থানে ফিরে মগ্নতায় ডুবে যায় দুজন। বক্ষ, নিতম্বÑ। হঠাৎ মল্লিক সাহেবে হাতের আঙ্গুল যেনো তাকে বললোÑ থামো। কী করে এতক্ষণ একটি মেয়ের নিতম্বে এবং বুকে হাত বুলাচ্ছিল এই নিয়ে নিজে নিজেরই কাছে লজ্জা পায় মল্লিক।

নীরবতা ভেঙে এমডি সাহেব বন্ধু মল্লিকের আচরণ নিয়ে বলে ওঠে আচ্ছা দোস্ত বল তো এই ভাস্কর্যটি বিবাহিত না অবিবাহিত? সালাম কোরেসী একটু ধমক দিয়ে বলে, এই বেটা তুই না এতোক্ষণ মজা করে হাত বুলাচ্ছিলি গোপন সব জায়গাতে, তাহলে আমি কী করে বলবো এই ভাস্কর্য বিবাহিত না অবিবাহিত? তাছাড়া ভাষ্কর্য তো নারী নয় যে, সে সংসারী হবে। বিয়ে করবে।

মল্লিক হাসতে হাসতে বললো, গতবার যখন আইভি অস্ট্রেলিয়া থেকে এলো এই ভাষ্কর্যটি আমাকে উপহার দিয়ে যায়। ভাষ্কর্যটি হাতে তুলে দিয়ে বলেছিলো নিজেকে তো পরলাম না, নাও আমার প্রিয় এই ভাষ্কর্য তোমার হাতে তুলে দিয়ে গেলাম। যতেœ রেখো। এবং গোপনেও। যাবার সময় আমাকে সে ঠিক এই প্রশ্নটি করে ধাধার মধ্যে রেখে গেছে। এটি কি বিবাহিত নাকি অবিবাহিত?

আমি বলেছিলাম ভাষ্কর্য নারী নয় যে, সে বিয়ে করবে। আইভি আমার উত্তর শুনে বলেছিলো প্রত্যেক শিল্পীই একজন মডেল সামনে রেখে তার শিল্পকর্ম তৈরি করেন। মডেলটি বিবাহিত এবং অবিবাহিতও হতে পারে। এবং ভাষ্কর্যটি হলে সেই মডেলের প্রতিকৃতি।

সালাম কোরেসী ভরা কণ্ঠে মল্লিককে বলে, রাখ মিয়া তোমার আতলমী। টেনশনে বাঁচি না। এতো বড় টেন্ডার যদি হাতছাড়া হয়ে যায় তাহলে তোমার খবর আছে! টেন্ডার নিয়ে চিন্তা বাদ দিয়ে তুমি পড়ে আছো ভাষ্কর্য বিবাহিত না কি অবিবাহিত এই নিয়ে।

জাহিদ মল্লিক এবার হাসতে হাসতে বলেন, শালা তুই এর সঠিক জবাব দে, আমি তোর টেন্ডারের ব্যবস্থা করছি। শোন, প্রেম ছাড়া এই জাহিদ মল্লিকের হাত থেকে অন্য কিছুই ফসকে যেতে পারেনি। দোস্ত টেন্ডার হবে, টেন্ডারের আব্বাও হবে। একদম চিন্তা করিস না। এরই মধ্যে ত্রিশ মিনিট কখন কী করে কেটে গেলো দুজনের কেউই টের পায়নি।

রুনু ম্যাম মল্লিকের চেম্বারে ঢুকেই পরিবেশের একটু পরিবর্তন লক্ষ্য করলেন। হেঁয়ালি করে বললেন, মিঃ এমডি সাহেব হয়েছে আমার ফাইলটি? ম্যাডাম টু পাইস ছাড়া এই জাহিদ মল্লিক ফাইল ছাড়ে না, এটা কি আপনার জানা নেই। আসেন জনাবা ফাজানা ম্যাডাম... আসেন...। আগে টু-পাইস দেন। তারপর দেখি দিলে রহম-টহম হয়নি। হাসতে হাসতে রুনু ম্যাডাম সালাম কোরেসীর পাশের চেয়ারে বসলেন। একটু হেঁয়ালী করে জানতে চাইলেন একটু আগেই দেখলাম হমহম মেঘ ডাকছে। এখন দেখছি ফুরফুরে রোদ্দুর। বিষয়টা কী? কিছুই তো বুঝলাম না! ভাষ্কর্যটি রুনু ম্যাডামের হাতে দিয়ে বন্ধুত্বের চাওয়া থেকে মল্লিক বললো আচ্ছা দোস্ত ফারহানা রুনু ম্যাডাম বলেন তো, এই মেয়েটি কি বিবাহিত না অবিবাহিত?

রুনু আড় চোখে দুজনের দিকেই তাকিয়ে বললো, অফিসের কাজ রেখে ইয়ার্কি হচ্ছে না? ভাবীকে কি একটি ফোন দিবো? এবার জাহিদ মল্লিক হাসতে হাসতে বললো রুটি পোড়া ম্যাডামের ভয় দেখিয়ে সুন্দর মুহূর্তকে কেন ম্লান্ত করে দিতে চাচ্ছ জিরো ফিগারের ম্যাম! আমি কি তোর শত্রু? একজন জানতে চেয়েছিলো এটি বিহাহিত নাকি অবিবাহিত? আমি বলতে পারিনি। যেহেতু তুই নারী তাই জিজ্ঞেস করছি। জানলে উত্তর দিয়ে আমাকে একটু উদ্ধার কর। কথা দিচ্ছি তোদের টেন্ডারের দায়িত্ব আমার।

ফারহানা রুনু প্রশাসকের ভঙ্গিতে বললো, দয়া করে বলেন আপনারা আধা ঘণ্টা সময় ধরে এই গবেষণা কর্ম চালিয়ে যাচ্ছিলেন?

সালাম কোরেসী মাথা হেলিয়ে জবাব দিলেন, জ্বি ম্যডাম।

এমডি সাহেবের হাতের কোমল স্পর্শে ওই নারীর বক্ষ এবং নিতম্ব ধন্য হয়ে উঠেছে। রুনু ম্যাম ভাব নিয়ে বললেন এইচ আর ডিপার্ডমেন্ট এই কর্ম অবহেলা কোনো অবস্থাতেই মেনে নবে না।

জাহিদ মল্লিক রুনু ম্যাডামের দিকে দৃষ্টি তাক করেন, ম্যাডাম আপনি কি মনে করেন এই ভাষ্কর্যটি মডেল ছাড়া সৃষ্টি হয়েছে? আমি জানতে চাচ্ছি এর মডেল যদি বিবাহিত হয় তাহলে এও বিবাহিত এবং যদি অবিবাহিত হয় তাহলে এই ভাষ্কর্যটিও অবিবাহিত। আপনি কী বলেন ? রুনু ম্যাডাম দুজনকেই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন, আপনাদের বিবাহিত জীবনের বয়স কতো?

সালাম কোরেসী বললো ডিমেস্বরে ২০ বছর পূর্ণ হবে।

ভ্রু কুচকিয়ে মল্লিক সাহেবে দিকে রুনু ম্যাডাম তাকাতেই মল্লিক সাহেব বলছেন: এখানেও আমি সিনিয়র। জুনেই ২৩ বছর কেটে গেছে! ফারাহানা রুনু বিজ্ঞের সঙ্গে বললেন, ভাসস্কর্যটি বিবাহিত কিংবা অবিবাহিত আপনাদেরই জানা উচিত। অভিজ্ঞতা বলে একটি কথা আছে না?

রুনু তুই নারী হাতের ভাস্কর্যটাও নারী সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তোর কাছে জানতে চেয়েছি, বিবাহিত নাকি অবিবাহিত।

মিউ মিউ করিস না। পুরুষ মানুষের নেকামী একদম ভাল্লাগে না। যা আগে বাসায় যা। গিয়ে আজ রাতে দুজনেই তোদেও বউদের শরীরের কাঠামোর দিকে তাকাবি মনোযোগ দিয়ে। তাহলে বুঝতে পারবি ভাস্কর্যটি কুমারী নাকি বিবাহিত।

সারারাত সালাম কোরেসী এবং জাহিদ মল্লিক ভাস্কর্যের শরীরে ডুবে থাকেন। রাত গাঢ় হয়। অন্ধকারের ভেতর কোরেসী স্ত্রীর শরীরের বাঁকে তাকিয়ে কিছু একটা বুঝতে চান। কোরেসীর চোখে ভেসে ওঠে একটি মৃত নদীর রেখা। ক্লান্ত হয়ে শুয়ে আছেন জাহিদ মল্লিক। সকালেই সালাম কোরেসী এবং জাহিদ মল্লিক অফিসে পৌছে যান। পরস্পরের ব্যর্থতা দুজনের চোখেই ফুটে ওঠে। একটু পরই ফারহানা রুনু ভেজা চুল হাতে নাড়তে নাড়তে জাহিদ মল্লিকের রুমে ঢোকেন। সালাম কোরেসী কিছু একটা করার ব্যস্ততা দেখাচ্ছেন। স্তব্ধতা ভেঙ্গে ফারহানা রুনু ম্যাডাম বললেন, ভেরেন্ডাদ্বয় ভাস্কর্যটি বিবাহিত নাকি অবিবাহিত তার উত্তর পেয়েছেন?

ডানে বামে দুজনেই মাথা নাড়ালেন।

রুনু ম্যাডাম পেলব কণ্ঠে বলনেন, ভাষ্কর্যটি বিবাহিত। বিবাহিত নারীদের কোনো কোনো বিশেষ অংশ ভেঙে যায়। কোনো কোনো বিশেষ অংশে নদীর বুকের কাঁদার মতো মেদ জমে ওঠে। তার মানে সালাম কোরেসী প্রেম করে বিয়ে করলেও ভাবীকে প্রেমিক হিসেবে ভালোবাসতে পারেননি। শুধু সংসারটাই করে গেছেন। এমডি স্যার আপনি কেন পারলেন না বলেন তো? ফারহানা রুনু তাড়াহুড়া করে রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন।

সালাম কোরেসী জিরো ফিগারের ম্যাম বলে ফারহানাকে ডাকলেন। এবং জানতে চাইলেন মিঃ মাওলা কি ভাস্কর্যটি বিবাহিত নাকি অবিবাহিত তা বলেতেন পারতেন?

পেছন ফিরে ঠোঁট উল্টিয়ে ফারহানা রুনু ম্যাডাম দীর্ঘশ^াস ছেড়ে উত্তর দিলেন, প্রত্যেকটি পুরুষই প্রবল ক্ষুধায় আক্রান্ত এক ধরনের প্রাণী। যখন খেতে আসে তখন খেতেই থাকে। তার চোখ থাকে অন্ধ...