‘প্রতারণার’ উদ্দেশ্যেই ইভ্যালির সৃষ্টি, ‘সহযোগিতা’ করেছে মার্চেন্টরাও

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির পরিচালনা বোর্ড থেকে পদত্যাগ করেছেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকসহ পাঁচ সদস্য। গতকাল তারা আদালতে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। পদত্যাগ পত্রে তিনি উল্লেখ্য করেছেন, আসলে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করার উদ্দেশ্যেই ইভ্যালি সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে সহযোগিতা করেছে মার্চেন্টরা।

ফেসবুকে বিষয়টি জানিয়ে পদত্যাগ করা বোর্ডের সদস্য ও অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন বলেন, ‘অডিট রিপোর্ট, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মতামত, পরিচালনা বোর্ডের মতামত (যেভাবে মহামান্য আদালত থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে) এবং হাইকোর্ট নির্দেশিত পরিচালনা বোর্ডের সব সদস্যের পদত্যাগ আজ মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে জমা দেয়া হলো। আগামীকাল ইভ্যালির নতুন বোর্ড দায়িত্ব নেবেন।’

ইভ্যালি পরিচালনার জন্য ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের বোর্ড গঠন করে দেয় হাইকোর্ট। মানিক ও মিলন বাদে বোর্ডের অন্য সদস্যরা ছিলেন স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগের সাবেক সচিব মোহাম্মদ রেজাউল আহসান, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফখরুদ্দিন আহম্মেদ এবং কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।

পদত্যাগের বিষয়ে বিচারপতি মানিক বলেন, ‘আজকে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। আমাদের অডিট রিপোর্ট, আমাদের প্রতিবেদনও জমা দিয়েছি। সারসংক্ষেপ হলো এই কোম্পানির দুর্দশার জন্য রাসেলই দায়ী। কোম্পানি প্রতিষ্ঠাই করছে প্রতারণার জন্য। কোন সৎ উদ্দেশে করে নাই। মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পয়সা বানিয়েছে। তার সঙ্গে মার্চেন্টরা সহযোগিতা করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতারণার জন্য মার্চেন্টরাও দায়ী। কারণ তারাই সুযোগটা করে দিয়েছে। রাসেল কেনে আইন, বিধি মানে নাই। একাই চালাত কোম্পানিটা। সে অনেক ভাউচার দিয়েছে। সেই টাকা কেন দিয়েছে, কাকে দিয়েছে, তার কিছুই উল্লেখ নেই। ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছে, কিন্তু কাকে দিয়েছে, তাও উল্লেখ নেই। ফলে আমরা বলছি, এটা ভাবা স্বাভাবিক যে, ওরা মানিলন্ডারিং করেছে। এটা আমাদের অবজারভেশন।’

প্রতারণার অভিযোগে ইভ্যালির সিইও মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় মামলা করেন আরিফ বাকের নামের একজন গ্রাহক। মামলার পরদিন বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের বাসা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে তাদের বিভিন্ন মামলায় রিমান্ডে নেয়া হয়। এর মধ্যে সবগুলো মামলায় জামিন পেয়ে গত ৬ এপ্রিল কারামুক্ত হন শামীমা। রাসেল এখনও কারাবন্দী।

ইভ্যালি ফের চালুর বিষয়ে নতুন বোর্ডে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন, তার মা ও বোনের স্বামীকে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। শামীমা নাসরিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ আগস্ট বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে আদেশ দেন। সম্প্রতি আদেশের লিখিত অনুলিপি সংবাদমাধ্যমের হাতে আসে। শামীমার আইনজীবী আহসানুল করিম গত সোমবার আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৬ আশ্বিন ১৪২৯ ২৪ সফর ১৪৪৪

‘প্রতারণার’ উদ্দেশ্যেই ইভ্যালির সৃষ্টি, ‘সহযোগিতা’ করেছে মার্চেন্টরাও

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির পরিচালনা বোর্ড থেকে পদত্যাগ করেছেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকসহ পাঁচ সদস্য। গতকাল তারা আদালতে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। পদত্যাগ পত্রে তিনি উল্লেখ্য করেছেন, আসলে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করার উদ্দেশ্যেই ইভ্যালি সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে সহযোগিতা করেছে মার্চেন্টরা।

ফেসবুকে বিষয়টি জানিয়ে পদত্যাগ করা বোর্ডের সদস্য ও অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন বলেন, ‘অডিট রিপোর্ট, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মতামত, পরিচালনা বোর্ডের মতামত (যেভাবে মহামান্য আদালত থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে) এবং হাইকোর্ট নির্দেশিত পরিচালনা বোর্ডের সব সদস্যের পদত্যাগ আজ মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে জমা দেয়া হলো। আগামীকাল ইভ্যালির নতুন বোর্ড দায়িত্ব নেবেন।’

ইভ্যালি পরিচালনার জন্য ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের বোর্ড গঠন করে দেয় হাইকোর্ট। মানিক ও মিলন বাদে বোর্ডের অন্য সদস্যরা ছিলেন স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগের সাবেক সচিব মোহাম্মদ রেজাউল আহসান, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফখরুদ্দিন আহম্মেদ এবং কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।

পদত্যাগের বিষয়ে বিচারপতি মানিক বলেন, ‘আজকে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। আমাদের অডিট রিপোর্ট, আমাদের প্রতিবেদনও জমা দিয়েছি। সারসংক্ষেপ হলো এই কোম্পানির দুর্দশার জন্য রাসেলই দায়ী। কোম্পানি প্রতিষ্ঠাই করছে প্রতারণার জন্য। কোন সৎ উদ্দেশে করে নাই। মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পয়সা বানিয়েছে। তার সঙ্গে মার্চেন্টরা সহযোগিতা করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতারণার জন্য মার্চেন্টরাও দায়ী। কারণ তারাই সুযোগটা করে দিয়েছে। রাসেল কেনে আইন, বিধি মানে নাই। একাই চালাত কোম্পানিটা। সে অনেক ভাউচার দিয়েছে। সেই টাকা কেন দিয়েছে, কাকে দিয়েছে, তার কিছুই উল্লেখ নেই। ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছে, কিন্তু কাকে দিয়েছে, তাও উল্লেখ নেই। ফলে আমরা বলছি, এটা ভাবা স্বাভাবিক যে, ওরা মানিলন্ডারিং করেছে। এটা আমাদের অবজারভেশন।’

প্রতারণার অভিযোগে ইভ্যালির সিইও মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় মামলা করেন আরিফ বাকের নামের একজন গ্রাহক। মামলার পরদিন বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের বাসা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে তাদের বিভিন্ন মামলায় রিমান্ডে নেয়া হয়। এর মধ্যে সবগুলো মামলায় জামিন পেয়ে গত ৬ এপ্রিল কারামুক্ত হন শামীমা। রাসেল এখনও কারাবন্দী।

ইভ্যালি ফের চালুর বিষয়ে নতুন বোর্ডে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন, তার মা ও বোনের স্বামীকে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। শামীমা নাসরিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ আগস্ট বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে আদেশ দেন। সম্প্রতি আদেশের লিখিত অনুলিপি সংবাদমাধ্যমের হাতে আসে। শামীমার আইনজীবী আহসানুল করিম গত সোমবার আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।